কলকাতা হাইকোর্টে নারদ মামলার শুনানি। শুভেন্দু সহ চার সাংসদকে হেফাজতে নিতে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দাবি সিবিআইয়ের।
বিজ্ঞাপন
বুধবার নারদ মামলার শুনানি কলকাতা হাইকোর্টে। পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী, এক বিধায়ক এবং এক নেতার জামিন হয় কি না, সে দিকে তাকিয়ে রাজ্য। তারই মধ্যে সিবিআই সূত্রে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে। এক, নারদ মামলায় জড়িত চার সাংসদকেও হেফাজতে পেতে চাইছে তদন্তকারী সংস্থাটি। সেই মোতাবেক লোকসভার স্পিকারের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে, মামলায় নাম ঢোকানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের।
সিবিআই সূত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে, লোকসভার স্পিকারের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে রাজ্যের চার সাংসদকে হেফাজতে নিতে চাওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। যার মধ্যে শুভেন্দু অধিকারীও আছেন। নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যের প্রভাবশালী নেতা শুভেন্দু। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছেন তিনি। জিতেওছেন। বিজেপি বিধানসভায় শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতা হিসেবে মনোনীত করেছে। কিন্তু এখনো সাংসদ পদ ছাড়েননি শুভেন্দু। দেশের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সাংসদকে গ্রেপ্তার করতে হলে লোকসভার স্পিকারের অনুমতি নিতে হয়। রাজ্যে অনুমতি নিতে হয় বিধানসভার স্পিকারের। তবে রাজ্যপাল অনুমতি দিলে গ্রেফতার করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের বিধায়কদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল অনুমতি দিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গে জয়ের প্রতিক্রিয়া, হারের সাফাই
পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করবে তৃণমূল। তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর কে কেমনভাবে হার বা জয়ের প্রতিক্রিয়া দিলেন?
ছবি: AP Photo/picture alliance
বাংলা পারে, বললেন মমতা
মমতা-ঝড়ে উড়ে গেছে মোদী-শাহের বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ''বাংলা পারে। এটা বাংলার জয়।'' পরে বললেন, ''এই জয় বাংলার মানুষকে বাঁচিয়ে দিল।'' নন্দীগ্রামের খবরে মমতা বললেন, ''আমরা পুনর্গণনা চাই।'' আদালতে যাওয়ার কথাও বললেন। তবে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, এখন বিজয় উৎসব নয়। এখন প্রথম কাজ, করোনার মোকাবিলা করা। তাই সকলের জন্য বিনা পয়সায় মোদীর কাছ থেকে টিকা চেয়েছেন। না দিলে ধরনার হুমকিও।
ছবি: AFP/Getty Images
মোদীর টুইট
পশ্চিমবঙ্গের ফল বেরনোর পর টুইট করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে মোদী বলেছেন, বিধানসভায় তাদের উপস্থিতি বিপুলভাবে বেড়েছে। বিজেপি এখন রাজ্যের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাবে। অমিত শাহও বলেছেন, বিজেপি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে রাজ্যের মানুষের স্বার্থে ও উন্নতির জন্য কাজ করবে।
ছবি: Kuntal Chakrabarty/IANS
দিলীপ ঘোষের সাফাই
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, তারা যে লক্ষ্য নিয়েছিলেন, সেই তুলনায় তাদের সাংগঠনিক শক্তি ছিল না। তাদের আরো লড়াই করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫ বছর লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছেন। বিজেপি-কেও রাজ্যে অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
অধীরের যুক্তি
অধীর চৌধুরী বলছেন, ''সাম্প্রদায়িক প্রচারের কাছে হেরেছি। মমতা সাম্প্রদায়িক প্রচার করলেন। মোদীকে ঠেকাতে দিদিকে ভোট দাও। কংগ্রেস যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মোদীর বিরুদ্ধে লড়ছে, লড়বে সেই ভরসা মুসলিমরা রাখতে পারলেন না। আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মুসলিমরা মারা গেলেন। প্রচার হলো, মোদী মুসলিমদের মারবে। এর মোকাবিলা আমরা করতে পারলাম না।''
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
হার স্বীকার রাহুল গান্ধীর
ভোটে বিপর্যয়ের পর রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''আমরা সবিনয়ে হার স্বীকার করে নিলাম। আমাদের নেতা ও কর্মী, যারা কাজ করেছেন এবং লাখ লাখ মানুষ যারা আমাদের সমর্থন করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আমাদের মতাদর্শ ও মূল্যবোধের লড়াই চালিয়ে যাব।''
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
বিমান বসুর বক্তব্য
জন্মলগ্নের পরে এই প্রথম বামেদের কোনো প্রতিনিধি বিধানসভায় থাকবেন না। বাম জোটের তরফে বিমান বসু বলেছেন, ''জনগণ বিজেপি-কে পরাস্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই তৃণমূল লাভবান হয়েছে। আমরা যৌথ পর্যালোচনা করব। এই হার থেকে শিক্ষা নেব। আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল।''
ছবি: UNI
আইএসএফ চুপ
ভোটের কিছুদিন আগে দল গঠন করেছিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। তারা হাত মেলায় বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে। জোটের হয়ে একমাত্র জয় আব্বাসের ভাই নওসাদ সিদ্দিকির। কিন্তু এরপর প্রতিক্রিয়া দেননি আব্বাস। তবে দিল্লিতে কংগ্রেস মুখপাত্র বলেছেন, আইএসএফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভালো হয়েছে না ভুল হয়েছে, তা পরে পর্যালোচনা করা হবে।
ছবি: Naushad Bhai
পিকে-র প্রতিক্রিয়া
তৃণমূলকে জেতানোর পিছনে তার কৌশলও কাজ করেছে। সেই প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-র প্রতিক্রিয়া, ''কঠিন লড়াই ছিল। নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা আছে বলে বিজেপি সব লড়াই জিতবে তার কোনো মানে নেই।'' পিকে দাবি করেছিলেন, বিজেপি একশ ছুঁতে পারবে না। সেটা মিলেছে। তারপরেও পিকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছেন, ''আমাদের প্রচার করতে অসুবিধা হচ্ছিল।'' তবে এই জয়ের পর তার ঘোষণা, আর কোনো দলের হয়ে কাজ করবেন না তিনি।
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
8 ছবি1 | 8
সিবিআই জানিয়েছিল, বিধানসভার স্পিকার তাদের চিঠির উত্তর দিচ্ছিলেন না। লোকসভাতেও একই ভাবে স্পিকারের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সিবিআই সূত্র দাবি করেছে। অনুমতি পেলে কি শুভেন্দুকে গ্রেপ্তার করা হবে? রাজ্য রাজনীতিতে এটাই এখন সব চেয়ে বড় প্রশ্ন। কারণ, অনেকেরই ধারণা, কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে শেল্টার দেওয়ার চেষ্টা করবে।
অন্যদিকে, বুধবারই কলকাতা হাইকোর্টে গ্রেফতার হওয়া চার নেতার জামিনের শুনানি। কিন্তু সিবিআই মামলাটি রাজ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছে। তাদের বক্তব্য, যে ভাবে নিজাম প্যালেসে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন, ব্যাঙ্কশাল কোর্টে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক উপস্থিত হয়েছেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছে, তারা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। সে কারণেই তারা মামলাটি রাজ্যের বাইরে নিয়ে যেতে চায়। একই সঙ্গে মামলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মলয় ঘটকের নাম জড়ানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে আটক বিধায়ক মদন মিত্রের প্রতিক্রিয়া, 'গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।' অন্য দিকে ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে শুনানি শুরুর আগে তৃণমূলকর্মীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, নারদ মামলা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত যে আরো বাড়বে, তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেছে।