ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বাগেরহাটের দুই শিক্ষককে জেলে পাঠানোর পরই আবার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ৷ এবার নারায়ণগঞ্জ৷ সেখানে মসজিদে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয় শিক্ষককে৷
অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ইরেশ জাকেরছবি: Privat
বিজ্ঞাপন
গত ১৩ মে, শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের কল্যাণদি এলাকার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তর বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে তাঁকে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়৷ অথচ সেই স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষকও বলছেন, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্মের অবমাননা হওয়ার মতো কিছু বলেছেন বলে তিনি শোনেননি৷ ধর্মীয় শিক্ষক আরো জানিয়েছেন, যে শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ তুলেছে বলে সেদিন রটানো হয় সে-ও তাঁকে তেমন কোনো অভিযোগের কথা বলেনি৷ প্রধান শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-বস করানোর সেই দৃশ্য এবং ধর্মীয় শিক্ষকের বক্তব্য নীচের এই ইউটিউব লিঙ্কে দেখা যাবে৷
রিফাত নামের এক শিক্ষার্থী শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলেছে বলে প্রচার করা হলেও রিফাত নিজে এবং স্থানীয়রাও বলেছেন এমন কোনো কথা অভিযুক্ত শিক্ষক বলেননি৷ রিফাত এবং স্থানীয়দের বক্তব্য শুনতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন৷
অথচ ধর্ম অবমাননার অভিযোগ খতিয়ে দেখার আগেই স্কুল সংলগ্ন মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা করা হয়, শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্ম অবমাননা করেছেন৷ তাঁকে শাস্তি দেয়ার জন্য সবাইকে স্কুল প্রাঙ্গনে সমবেত হবার আহ্বানও জানানো হয়৷ সেই আহ্বান শুনে স্কুলে ছুটে আসে কয়েক হাজার মানুষ৷ মসজিদের মাইক থেকে প্রচার করা বক্তব্য শুনে উত্তেজিত হয়ে ছুটে আসা মানুষদের কেউ কেউ তখন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রহার করেছে বলেও জানা গেছে৷ শেষমেশ সেখানে হাজির হন স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান৷ তাঁর তদারকিতেই শত শত মানুষের সামনে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয় শ্যামল কান্তি ভক্তকে৷
সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশের পর থেকেই হ্যাশট্যাগ সরিস্যার (#SorrySir) দিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিবাদ৷
এদিকে অনেকেই নিজের কান-ধরে বসা ছবি ফেসবুকে আপলোড করে নারায়ণগঞ্জে ধর্ম অবমাননার ধুয়া তুলে শিক্ষকের মর্যাদাহানির প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ অভিনেতা, প্রযোজক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ইরেশ জাকেরসহ অনেকেই যোগ দিয়েছেন অভিনব এই প্রতিবাদে৷ তাঁরাও মনে করেন, শিক্ষক কোনো অন্যায় করে থাকলে প্রচলিত আইনে তাঁর বিচার হতেই পারে, তবে ধর্ম অবমাননার কথা মসজিদের মাইকে প্রচার করেই একজন শিক্ষককে এভাবে যারা অসম্মান করেছেন তারা আসলে গোটা বাংলাদেশকেই সারা বিশ্বের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন৷
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ খতিয়ে না দেখেই শিক্ষককে এভাবে কান ধরে ওঠ-বস করানোকে কি আপনি সমর্থন করেন? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
শিশুকে মারলে সে অংকে খারাপ করে
ইউনিসেফ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে শিশুকে মারধর করলে কিংবা তাকে মানসিকভাবে শাস্তি দিলে পরবর্তীতে সেটা তার লেখাপড়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷
ছবি: picture alliance/dpa
শারীরিক শাস্তি
ইউনিসেফ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ২ থেকে ১৪ বছর বয়সি প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ছয়জনকে নিয়মিতভাবে শারীরিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়৷ শিশুদের যাঁরা দেখাশোনা করেন তাঁরাই এই শাস্তি দিয়ে থাকেন৷ শারীরিক শাস্তি বলতে ইউনিসেফ বুঝিয়েছে এমন শাস্তি যেটা দিলে শিশু শরীরে ব্যথা কিংবা অস্বস্তি অনুভব করে৷ এমন শাস্তির মধ্যে রয়েছে শিশুর হাত, পা, মুখ, মাথা, কান কিংবা নিতম্ব ধরে ঝাঁকানো বা মার দেয়া৷
ছবি: Fotolia/Firma V
মানসিক শাস্তি
কোনো অপরাধের প্রেক্ষিতে শিশুর সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলা, তার কাছ থেকে কোনো সুযোগ কেড়ে নেয়া যেন শিশুটি মানসিকভাবে কষ্ট পায় ইত্যাদিকে মানসিক শাস্তি হিসেবে মনে করে ইউনিসেফ৷ তাদের গবেষণা বলছে, বিশ্বের ৮০ শতাংশ শিশুকে বোঝানো হয়েছে যে, তারা (শিশু) যেটা করেছে সেটা ঠিক নয়৷ ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে চিৎকার করে সেটা করা হয়েছে৷ এছাড়া ৪৮ শতাংশের ক্ষেত্রে শিশুদের কিছু সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/ANP/R. Koole
সবচেয়ে বেশি ইয়েমেনে
বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে অভাগা বলতে হবে এই দেশের শিশুদের৷ কেননা সেখাকার প্রায় ৯৫ জন শিশুকেই তাদের অপরাধের জন্য শারীরিক ও মানসিক শাস্তি পেতে হয়৷ অভাগাদের তালিকায় এরপর ক্রমান্বয়ে আছে ঘানা, টিউনিশিয়া, টোগো, ক্যামেরুন ও ফিলিস্তিনের শিশুরা৷ এই গবেষণা সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
বাংলাদেশ বিষয়ক তথ্য
ইউনিসেফ-এর সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের দুই-তৃতীয়াংশকে মারধর করেন মা-বাবাসহ অভিভাবকেরা৷ আর ৭৪.৪ শতাংশ শিশুকে মানসিক চাপ দিয়ে শৃঙ্খলা শেখানো হয়৷ শৃঙ্খলা বলতে শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগী করাসহ অভিভাবকদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজকে বোঝানো হয়েছে৷ এছাড়া প্রতি তিনজন মায়ের মধ্যে একজন বিশ্বাস করেন, নিয়মকানুন শেখাতে সন্তানদের শাস্তি দেয়া প্রয়োজন৷
ছবি: picture alliance/ANP/R. Koole
অংক স্কোর কম করে!
শিশুদের উপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তির প্রভাব নিয়ে আরেকটি গবেষণা করেছে ইউনিসেফ৷ তাতে দেখা গেছে, ৮ বছর বয়সে যেসব শিশু এ ধরণের শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে তারা ১২ বছর বয়সে গিয়ে স্কুলে অংকে খারাপ স্কোর করেছে৷ শব্দভাণ্ডার গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তাদের অনীহা দেখা গেছে৷ শিশুকে শাস্তি দেয়ার এটি একটি নেতিবাচক প্রভাব বলে উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture alliance/dpa
ইউনিসেফ-এর উদ্যোগ
শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেয়া নিষিদ্ধ করতে জাতিসংঘের এই সংস্থাটির ‘কনভেনশন অন দ্য রাইটস অফ দ্য চাইল্ড’ রয়েছে৷ এখন পর্যন্ত ১৪০টি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে৷ তবে এর মাধ্যমে বিশ্বের মাত্র ৮ শতাংশ শিশুকে শারীরিক শাস্তির হাত থেকে রক্ষা করা গেছে বলে জানিয়েছেন ইউনিসেফ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেল রুটস্টাইন৷ ১৯৮৯ সালে গৃহীত এই কনভেনশনে ১৯৯০ সালে সই করে বাংলাদেশ৷