1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারীদের জন্য কম সুরক্ষিত কলকাতা? কী বলছে নাগরিক সমাজ?

শময়িতা চক্রবর্তী
৩০ আগস্ট ২০২৫

নারী সুরক্ষা নিরিখে দিল্লির মতোই অসুরক্ষিত কলকাতা। তুলনায় ভালো জায়গায় মুম্বই, গ্যাংটক, কোহিমা, ইটানগরের মতো শহরগুলি।

কলকাতার নারী সুরক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত সমাজের বিভিন্ন মহল।
গত অগাস্ট মাসে আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার ধর্ষনের ঘটনায় উত্তাল হয় দেশ।ছবি: Samir Jana/Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ভারতে নারী সুরক্ষা নিয়ে ন্যাশনাল অ্যানুয়াল রিসার্চ অ্যান্ড ইনডেক্স ২০২৫ (নারী ২০২৫)। ভারতের ৩১টি শহর জুড়ে ১২ হাজার ৭৭০ জন নারীর সঙ্গে কথা বলে তৈরি এই রিপোর্টটি জানাচ্ছে দিল্লির পাশপাশি কলকাতাও নারী নিরাপত্তায় পিছিয়ে পরা শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। এমনকী তুলনায় সুরক্ষিত বলে ঘোষিত মুম্বই, কোহিমা, গ্যাংটক, ইটানগরসহ সুরক্ষিত শহরেও নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না ৪০ শতাংশ নারী।

জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান বিজয়া কিশোর বৃহস্পতিবার এই রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আনেন। তার পর থেকেই কলকাতার নারী সুরক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত সমাজের বিভিন্ন মহল।

'বেড়েছে অপরাধ, এবং অপরাধ নথিভুক্ত করার সাহস'

রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন নারীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, বিগত নয় বছরে অন্তত তিনগুণ বেড়েছে অভিযোগের সংখ্যা। তিনি বলেন, "আমরা গতকালই আলোচনা করছিলাম। আগের তুলনায় আমরা অনেক বেশি অভিযোগ পাচ্ছি।" তবে অভিযোগের সংখ্যাকে সরাসরি অপরাধ বাড়ার মাপকাঠি হিসেবে মানতে তিনি নারাজ।

তিনি মনে করেন, "আগের থেকে অনেক বেশি মেয়েরা সাহস করে মুখ খুলছেন, অভিযোগ লিপিবদ্ধ করছেন। আগে নারী কমিশন নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না সাধারণ মানুষের মধ্যে। এখন অনেকেই সাহস করে এগিয়ে আসছেন। সচেতনা বাড়ানোর জন্যও আমরা অনেক কাজ করেছি।"

তবে তিনি স্বীকার করেছেন অপরাধের সংখ্যাও বেড়েছে। লীনা বলেন, "মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে।"

"কলকাতায় নারীরা নিরাপদ মনে করেন না"

গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে গত অগাস্ট মাসে আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারধর্ষনের ঘটনায় উত্তাল হয় দেশ। তার পর থেকে একাধিক ধর্ষণের ঘটনা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে নারী নিরাপত্তাকে। নারী সুরক্ষা নিয়ে যে সব এনজিও কাজ করে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছে।

রাতের কলকাতা নারীদের কাছে কতটা নিরাপদ?

05:55

This browser does not support the video element.

নারী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে স্বয়ম। তার ডিরেক্টর অমৃতা দাশগুপ্ত এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে ডিডাব্লিউকে বলেন, "এতে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। আমি অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সাধারণ ভাবে নারীরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করেন। নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ান না। সেই সুরক্ষার বলয়ের ভিতরেই নিরাপত্তার অভাব তৈরি হয়। এখনো অনেকেই নারীদের সঙ্গে কেমন করে কথা বলতে হয় সেই বিষয় সচেতন নন। তবে আরজি করের পর অনেক পরিবর্তন দেখা গেছে। আগে অনেক নারী নিজেদের সুরক্ষিত মনে করতেন। তারা আর নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না। অনেক পুরুষ মহিলাকে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত করার চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের বোঝাচ্ছি, বাড়িতে বন্দি করলেই নারীকে নিরাপত্তা দেওয়া যায় না।"

কর্মক্ষেত্রে হয়রানি

নারী ২০২৫-এর রিপোর্ট আরো জানাচ্ছে কর্মক্ষেত্রে প্রিভেনশন অফ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বা 'পশ' সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা নেই প্রায় ৫৩ শতাংশ নারীর। অমৃতা বলেন, "এই অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি হলে কোথায় নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ জানাতে হবে, কী তার পদ্ধতি সেই নিয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা দেওয়া হয় না। ফলে হয়রানি আজও বিদ্যমান।"

একই সঙ্গে অমৃতা জানান, "'আধুনিক' নারী সম্পর্কে এক শ্রেণির মানুষের বৈরী মনোভাব প্রকাশ পায়। শহরের চাকুরিরতা আধুনিক নারীর জীবনযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন অনেকে।" তার মতে নারীর উপর নির্যাতন সবক্ষেত্রে শারীরিক হয় না। মানসিক নির্যাতনও সমানও ভাবে ঘটে চলে।  

'প্রশাসনের দায়'

তবে কলকাতা শহরেই কেবলমাত্র নয়, শহরতলি, গ্রামাঞ্চলেও নারীদের উপর আক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বেশ কিছু এনজিও। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমাজকর্মী বলেন, "কলকাতা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরে মফস্বল এবং গ্রামে কাজ করার অভিজ্ঞতা সাংঘাতিক। রাজনৈতিক এবং বিত্তবানদের চাপে নারী নির্যাতনের একটা বড় অংশের অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয় না। আমরা যারা এনজিওতে কাজ করি তাদের প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হয় -- যেন সুতোর উপর হাঁটা। একটু ভুল হলেই আমাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।"     

রাজ্যে নারীর সুরক্ষার দায়িত্ব মূলত প্রশাসনেরবলে মনে করেন সাবেক পুলিশকর্তা সলিল ভট্টাচার্য। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "যে তৎপরতায় প্রশাসনের অভিযোগ নথিভুক্ত করার কথা, তারা তা করে না। প্রত্যেকটি রাজ্যে স্টেট ক্রাইম ব্যুরো আছে। তাদের কাজ তথ্য সংগ্রহ করে ন্যাশানাল ক্রাইম ব্যুরোকে প্রদান করা। আমাদের রাজ্যে প্রশাসন সঠক তথ্য দেয় না। কারণ প্রত্যেকটি অভিযোগ লিপিবদ্ধ করলে তাদের উপর, এবং সরকারের উপর চাপ বাড়ে। রাজ্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। সাপ্রেশন অফ কেসেস এর কারণে ন্যাশানাল ক্রাইম ব্যুরো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনে গাফিলতি হলে অপরাধ বাড়বে। নিরাপত্তা কমবে। এটাই স্বাভাবিক।"

'কলকাতায় নিরাপত্তার বলয় আছে'  

তবে কলকাতাকে অসুরক্ষিত মানতে নারাজ অনেকেই। অভিনেত্রী চৈতী ঘোষাল বলেন, "আমি যেহেতু কলকাতাতেই জন্মেছি, বড় হয়েছি, আমার নিজেকে এখানে নিরাপদ মনে হয়। তবে একথাও সত্যি, আমি ৩০ বছর ধরে পরিচিত মুখ। পরিচিতি আমাকে একটা নিরাপত্তার বলয়ে আটকে রাখে। আমি গাড়িতে যাতায়াত করি। ফলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি না। অন্যদিকে, সম্প্রতি মুম্বইতে আমি একাধিকবার মধ্যরাতে অটোতে যাতায়াত করেছি। অত্যন্ত নিরাপদ মনে হয়েছে। সামগ্রিক ভাবেই দেশে নারী নিরাপত্তা কমেছে। তার জন্য বিচারব্যবস্থাসহ নানাবিধ কারণ দায়ী বলে মনে হয় আমার।"                

নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে লীনা বলেন, 'আমার নিজের অভিজ্ঞতায় কলকাতা নারীদের জন্য একেবারে অপ্রীতিকর হয়ে ওঠেনি। আমার বন্ধু পরিসরে অনেক নারী কাজ সেরে  রাতে বাড়ি ফেরেন। সারা রাত না হলেও ১১ টা পর্যন্ত নিশ্চিন্তেই চলাফেরা করেন তারা। তবে এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। এর থেকে নির্দিষ্ট করে কিছু প্রমাণ হয় না।"

১২০ কোটি মানুষের দেশে ১৩ হাজার নারীকে নিয়ে করা এই সমীক্ষার ফল নিয়েও অবশ্য সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। ২০২২-এর পর্ব থেকে ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য সামনে আসেনি। তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হলেও, মুম্বই, কোহিমা বা বিশাখাপত্তনমের নারীরাও যে নিরাপদ মনে করেন না সে কথা স্পষ্ট করেছে এই সমীক্ষা। তাতেই চিন্তার ভাজ পড়েছে সমাজবিজ্ঞানীদের কপালে।    

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ