সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ভারতে নারী সুরক্ষা নিয়ে ন্যাশনাল অ্যানুয়াল রিসার্চ অ্যান্ড ইনডেক্স ২০২৫ (নারী ২০২৫)। ভারতের ৩১টি শহর জুড়ে ১২ হাজার ৭৭০ জন নারীর সঙ্গে কথা বলে তৈরি এই রিপোর্টটি জানাচ্ছে দিল্লির পাশপাশি কলকাতাও নারী নিরাপত্তায় পিছিয়ে পরা শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। এমনকী তুলনায় সুরক্ষিত বলে ঘোষিত মুম্বই, কোহিমা, গ্যাংটক, ইটানগরসহ সুরক্ষিত শহরেও নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না ৪০ শতাংশ নারী।
জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান বিজয়া কিশোর বৃহস্পতিবার এই রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আনেন। তার পর থেকেই কলকাতার নারী সুরক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত সমাজের বিভিন্ন মহল।
'বেড়েছে অপরাধ, এবং অপরাধ নথিভুক্ত করার সাহস'
রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন নারীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, বিগত নয় বছরে অন্তত তিনগুণ বেড়েছে অভিযোগের সংখ্যা। তিনি বলেন, "আমরা গতকালই আলোচনা করছিলাম। আগের তুলনায় আমরা অনেক বেশি অভিযোগ পাচ্ছি।" তবে অভিযোগের সংখ্যাকে সরাসরি অপরাধ বাড়ার মাপকাঠি হিসেবে মানতে তিনি নারাজ।
তিনি মনে করেন, "আগের থেকে অনেক বেশি মেয়েরা সাহস করে মুখ খুলছেন, অভিযোগ লিপিবদ্ধ করছেন। আগে নারী কমিশন নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না সাধারণ মানুষের মধ্যে। এখন অনেকেই সাহস করে এগিয়ে আসছেন। সচেতনা বাড়ানোর জন্যও আমরা অনেক কাজ করেছি।"
তবে তিনি স্বীকার করেছেন অপরাধের সংখ্যাও বেড়েছে। লীনা বলেন, "মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে।"
"কলকাতায় নারীরা নিরাপদ মনে করেন না"
গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে গত অগাস্ট মাসে আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারধর্ষনের ঘটনায় উত্তাল হয় দেশ। তার পর থেকে একাধিক ধর্ষণের ঘটনা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে নারী নিরাপত্তাকে। নারী সুরক্ষা নিয়ে যে সব এনজিও কাজ করে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছে।
রাতের কলকাতা নারীদের কাছে কতটা নিরাপদ?
05:55
This browser does not support the video element.
নারী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে স্বয়ম। তার ডিরেক্টর অমৃতা দাশগুপ্ত এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে ডিডাব্লিউকে বলেন, "এতে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। আমি অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সাধারণ ভাবে নারীরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করেন। নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ান না। সেই সুরক্ষার বলয়ের ভিতরেই নিরাপত্তার অভাব তৈরি হয়। এখনো অনেকেই নারীদের সঙ্গে কেমন করে কথা বলতে হয় সেই বিষয় সচেতন নন। তবে আরজি করের পর অনেক পরিবর্তন দেখা গেছে। আগে অনেক নারী নিজেদের সুরক্ষিত মনে করতেন। তারা আর নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না। অনেক পুরুষ মহিলাকে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত করার চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের বোঝাচ্ছি, বাড়িতে বন্দি করলেই নারীকে নিরাপত্তা দেওয়া যায় না।"
কর্মক্ষেত্রে হয়রানি
নারী ২০২৫-এর রিপোর্ট আরো জানাচ্ছে কর্মক্ষেত্রে প্রিভেনশন অফ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বা 'পশ' সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা নেই প্রায় ৫৩ শতাংশ নারীর। অমৃতা বলেন, "এই অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি হলে কোথায় নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ জানাতে হবে, কী তার পদ্ধতি সেই নিয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা দেওয়া হয় না। ফলে হয়রানি আজও বিদ্যমান।"
আইন কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণ : যা হয়েছে, যা হচ্ছে
আরজি করের ঘটনা দেখিয়েছিল, কলকাতার হাসপাতালে নারী সুরক্ষিত নয়। ল কলেজের ঘটনা দেখালো, পথে-ঘাটে তো বটেই, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নারীরা অসুরক্ষিত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আবার ধর্ষণ
কলকাতা আছে কলকাতাতেই। আরজি কর নিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, অসংখ্য প্রতিশ্রুতি, সমালোচনার পরও কলকাতায় ধর্ষণ কমেনি। বরং সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ছাত্রীকে প্রাক্তন ছাত্র ও বর্তমানে কলেজের অস্থায়ী কর্মী ও তার দুই সঙ্গীর ধর্ষণ দেখিয়ে দিলো, কলকাতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নারীরা সুরক্ষিত নয়। একসময় নারী-সুরক্ষা নিয়ে গর্ব করা এই শহরের পরিস্থিতি এখন কতটা খারাপ, তা একের পর এক ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফর্ম ভরতে এসে
ওই ছাত্রী কলেজে ফর্ম ভরতে এসেছিলেন। অভিযোগ, তারপর তাকে অপেক্ষা করতে বলে ধর্ষক ও তার সঙ্গীরা। অনেকক্ষণ তাকে ইউনিয়ন রুমের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তারপর সন্ধ্যায় তাকে জোর করে গার্ডের ঘরে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। তারপর চলে অকথ্য নির্যাতন। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ভিতরে ধর্ষণ করা হয়। তার ভিডিও তুলে তাকে ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ। মেয়েটি পরে তার বাড়িতে ফোন করলে তারা পুলিশে অভিযোগ করেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশের এফআইআর
কসবা থানার পুলিশের কাছে ধর্ষিতা তিনজন অভিযুক্তর নাম নেন। তবে পুলিশ তিন অভিযুক্তের নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে 'এম', 'জি 'ও 'পি'-র বিরুদ্ধে এফআইআর করে। পরে পুলিশ আদালতে জানায় ও আদালতের নথিতে আছে, 'এম' হলো মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, 'পি' হলো প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও 'জি' হলো জাইব আহমেদ। ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। তিন অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন এফআইআরে নাম লেখা হলো না?
পুলিশের এফআইআর-এ কেন তিন অভিযুক্তের পুরো নাম লেখা হলো না? কেন তাদের নামের অদ্যাক্ষর লেখা হলো? তাহলে কি কিছু লুকাতে চাওয়া হচ্ছে,এ ই প্রশ্ন ওঠে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রূপেশ কুমার বলেছেন, ''মেয়েটি পুরো নামই নিয়েছিল। এফআইআর লেখার সময় তা যাচাই করার পর্যায়ে ছিল। অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে পুরো নাম লেখা যায় না। তাই এই সতর্কতা।'' আইনজীবীরা বলছেন, তারা এই ধরনের এফআইআর দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মূল অভিযুক্তর তৃণমূল যোগ
মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ দাস তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত। তৃণমূলের ছোট-বড় নেতার সঙ্গে সে নিয়মিত ছবি পোস্ট করত সামাজিক মাধ্যমে। সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে তার খুব প্রতাপ ছিল বলে অভিযোগ। সাবেক ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও তার অবাধ গতিবিধি ছিল। তাকে অস্থায়ী কর্মী হিসাবেও নিয়োগ করা হয়। কলেজে তার নামে এখনো পোস্টার আছে। কলেজে সে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে পরিচিত। ঘটনার পর তাকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ছাত্র থাকার সময়
মনোজিৎ ছাত্র থাকা অবস্থায় কলেজের প্রিন্সিপালকে সারারাত ঘেরাও করে রাখে। সাবেক প্রিন্সিপাল দেবাশিস চট্টোপাধ্য়ায়ের স্ত্রী নবনীতা টিভি৯কে বলেছেন, ''আমার স্বামী বারবার চেষ্টা করেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। মনোজিৎ দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রেখেছিল। রেজিস্টারকে বলেও লাভ হয়নি। পুলিশে বারবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।'' প্রশ্ন উঠেছে, কার আশকারায় মনোজিতের এই বাড়বাড়ন্ত?
ছবি: Satyajit Shaw/DW
একের পর এক প্রতিবাদ
এই ঘটনার পর একের পর এক ছাত্র সংগঠন কসবা থানার সামনে প্রতিবাদ দেখায়। কংগ্রেস, এসএফআই, ডিএসও, ডিওয়াইএফআই-এর তরফে প্রতিবাদ দেখানো হয়.। প্রশ্ন করা হয়, কেন ছাত্রীকে কলেজের ভিতরে ধর্ষণ করা হবে? কী করে এই সাহস পায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা? কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশ কিছু বলে না বলেই কি এরকম ঘটনা বারবার ঘটছে।? পুলিশ বলপ্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হাতাহাতিও হয়
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। আরজি করের সময়ও একই ধরনের ছবি দেখা গিয়েছিল। এই ধরনের ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যায়। কিন্তু প্রতিবাদ দেখাতে গেলেই পুলিশের লাঠি জোটে বিক্ষোভকারীদের।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মশাল মিছিল
রোববার রাতে কলকাতায় মশাল মিছিলও বের হয়। নারীদের সুরক্ষার দাবি, দোষীাদের শাস্তির দাবি নিয়ে সোচ্চার হন বিক্ষোভকারীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অভয়া মঞ্চের মিছিল
রাস্তায় নেমেছিল অভয়া মঞ্চও। আরজি করের ঘটনার পর কলকাতার সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখিয়েছিলেন। তাদের সেই দাবিপূরণ হয়নি। কিন্তু সেই জোরদার আন্দোলন এখন স্তিমিত। ল কলেজের ধর্ষণের পর সেই অভয়া মঞ্চও রাস্তায় নেমেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মামলা দায়েরের অনুমতি সুপ্রিম কোর্টে
সুপ্রিম কোর্টে সত্যম সিং নামে এক আইনজীবী এই ধর্ষণের ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা দায়ের করার অনুমতি চেয়েছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে। তিনি মামলা দায়ের করতে পারবেন। তারপর সর্বোচ্চ আদালত ঠিক করবে মামলা খারিজ করা হবে নাকি গ্রহণ করা হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মদন-বচন
তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বলেছেন, ''ওই মেয়েটি যদি না যেত, তাহলে তো এই ঘটনা ঘটতো না। যাওয়ার সময় মেয়েটি কাউকে বলে গেলে, দুইজন বান্ধবী নিয়ে গেলে এরকম হতো না। আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, যে এই খারাপ কাজ করেছে, সে পরিস্থিতির সুয়োগ নিয়েছে।'' এরপর তৃণমূলের তরফ থেকে মদন মিত্রকে শো কজ ক,রা হয়েছে। বলা হয়েছে, তার মন্তব্য, অপ্রয়োজনীয় ও সংবেদনহীন। তিন দিনের মধ্যে জানাতে হবে, তিনি কেন এই মন্তব্য করেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কল্যাণ বন্দ্যোপাায়ের মন্তব্য
ডানকুনিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "লজ্জা ! এতদিন ধরে দল করছি, এখন এসব জিনিস দেখছি । কেন এই ধরনের বিকৃত মনস্ক মানুষ আমাদের দলে থাকবে? তাদেরকে চিহ্নিত করে বের করে দেওয়া উচিত। কোনো ভুসিমাল দলের মধ্যে রাখবেন না। এমন লোককে বের করে দিলে মানুষ খুশি হবে। কী এমন নেতা সে। পাশ করে চলে গিয়েছে, ওকালতি করে ৷ আবার একটা অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজও করে ? কী করে হয়?" তৃণমূল বলেছে, এটা কল্যাণের নিজস্ব মন্তব্য।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অগ্নিমিত্রা যা বলেছেন
বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বলেছেন, ''এই মামলার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার দরকার নেই। কারণ, আরজি করের তদন্ত নিয়ে সিবিআই কিছুই করেনি। পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলই তদন্ত করুক।'' এই ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত কলকাতা পুলিশের নয় সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল করছে। বিজেপি বলছে, এটা অগ্নিমিত্রার ব্যক্তিগত মন্তব্য, দলের নয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হাইকোর্টেও মামলা
কলকাতা হাইকোর্টেও কয়েকটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার বিচার দ্রুত করার আবেদনও জানানো হয়েছে। বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, মামলাগুলি নিয়ে বিরুদ্ধ পক্ষকে নোটিশ দিতে বলেছেন। দিন কয়েকের মধ্যে শুনানি হতে পারে।
ছবি: DW/P. Tewari
এক ছাত্রীর ভাবনা
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সায়ন্তনী কলাপাত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমাদের দাবি, সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে, বহিরাগতদের ঢুকতে দেয়া যাবে না। ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত ক্লাস করতে হবে।'' তবে রাজ্যের সব কলেজের দাবি এটাই, ছাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। একের পর এক ধর্ষণ, সহিংসতার কাণ্ড হবে, তারপর রাজনীতির খেলায় মূল প্রশ্নটা পিছনে চলে যাবে, এটা হয় না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
16 ছবি1 | 16
একই সঙ্গে অমৃতা জানান, "'আধুনিক' নারী সম্পর্কে এক শ্রেণির মানুষের বৈরী মনোভাব প্রকাশ পায়। শহরের চাকুরিরতা আধুনিক নারীর জীবনযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন অনেকে।" তার মতে নারীর উপর নির্যাতন সবক্ষেত্রে শারীরিক হয় না। মানসিক নির্যাতনও সমানও ভাবে ঘটে চলে।
'প্রশাসনের দায়'
তবে কলকাতা শহরেই কেবলমাত্র নয়, শহরতলি, গ্রামাঞ্চলেও নারীদের উপর আক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বেশ কিছু এনজিও। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমাজকর্মী বলেন, "কলকাতা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরে মফস্বল এবং গ্রামে কাজ করার অভিজ্ঞতা সাংঘাতিক। রাজনৈতিক এবং বিত্তবানদের চাপে নারী নির্যাতনের একটা বড় অংশের অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয় না। আমরা যারা এনজিওতে কাজ করি তাদের প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হয় -- যেন সুতোর উপর হাঁটা। একটু ভুল হলেই আমাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।"
রাজ্যে নারীর সুরক্ষার দায়িত্ব মূলত প্রশাসনেরবলে মনে করেন সাবেক পুলিশকর্তা সলিল ভট্টাচার্য। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "যে তৎপরতায় প্রশাসনের অভিযোগ নথিভুক্ত করার কথা, তারা তা করে না। প্রত্যেকটি রাজ্যে স্টেট ক্রাইম ব্যুরো আছে। তাদের কাজ তথ্য সংগ্রহ করে ন্যাশানাল ক্রাইম ব্যুরোকে প্রদান করা। আমাদের রাজ্যে প্রশাসন সঠক তথ্য দেয় না। কারণ প্রত্যেকটি অভিযোগ লিপিবদ্ধ করলে তাদের উপর, এবং সরকারের উপর চাপ বাড়ে। রাজ্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। সাপ্রেশন অফ কেসেস এর কারণে ন্যাশানাল ক্রাইম ব্যুরো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনে গাফিলতি হলে অপরাধ বাড়বে। নিরাপত্তা কমবে। এটাই স্বাভাবিক।"
বিজ্ঞাপন
'কলকাতায় নিরাপত্তার বলয় আছে'
তবে কলকাতাকে অসুরক্ষিত মানতে নারাজ অনেকেই। অভিনেত্রী চৈতী ঘোষাল বলেন, "আমি যেহেতু কলকাতাতেই জন্মেছি, বড় হয়েছি, আমার নিজেকে এখানে নিরাপদ মনে হয়। তবে একথাও সত্যি, আমি ৩০ বছর ধরে পরিচিত মুখ। পরিচিতি আমাকে একটা নিরাপত্তার বলয়ে আটকে রাখে। আমি গাড়িতে যাতায়াত করি। ফলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি না। অন্যদিকে, সম্প্রতি মুম্বইতে আমি একাধিকবার মধ্যরাতে অটোতে যাতায়াত করেছি। অত্যন্ত নিরাপদ মনে হয়েছে। সামগ্রিক ভাবেই দেশে নারী নিরাপত্তা কমেছে। তার জন্য বিচারব্যবস্থাসহ নানাবিধ কারণ দায়ী বলে মনে হয় আমার।"
নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে লীনা বলেন, 'আমার নিজের অভিজ্ঞতায় কলকাতা নারীদের জন্য একেবারে অপ্রীতিকর হয়ে ওঠেনি। আমার বন্ধু পরিসরে অনেক নারী কাজ সেরে রাতে বাড়ি ফেরেন। সারা রাত না হলেও ১১ টা পর্যন্ত নিশ্চিন্তেই চলাফেরা করেন তারা। তবে এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। এর থেকে নির্দিষ্ট করে কিছু প্রমাণ হয় না।"
১২০ কোটি মানুষের দেশে ১৩ হাজার নারীকে নিয়ে করা এই সমীক্ষার ফল নিয়েও অবশ্য সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। ২০২২-এর পর্ব থেকে ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য সামনে আসেনি। তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হলেও, মুম্বই, কোহিমা বা বিশাখাপত্তনমের নারীরাও যে নিরাপদ মনে করেন না সে কথা স্পষ্ট করেছে এই সমীক্ষা। তাতেই চিন্তার ভাজ পড়েছে সমাজবিজ্ঞানীদের কপালে।