নারীদের জন্য অনিরাপদ ভারত
২৮ জুন ২০১২থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের সহযোগী সংগঠন ‘ট্রাস্টল' পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীর সমান অধিকার, নারীর প্রতি সহিংসতা ও বঞ্চনা প্রতিরোধে শক্ত নীতিমালা এবং স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ বিষয়গুলি বিবেচনায় ধনী দেশগুলোর মধ্যে সেরা হয়েছে ক্যানাডা৷ অন্যদিকে, শিশুমৃত্যুর হার, কন্যা শিশু হত্যা, বাল্য বিবাহ এবং দাসত্বের মতো ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের জন্য নারীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে ভারতকে৷ জি টোয়েন্টি'র সদস্য দেশগুলোর মধ্যে নারীদের সুযোগ সুবিধার দিক থেকে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে খারাপ দেশ কোনটি - এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ‘ট্রাস্টল' বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নারীদের মধ্যে এই সমীক্ষা চালায়৷
নেতিবাচক দিক থেকে ভারতের চেয়ে এক ধাপ উপরে রয়েছে সৌদি আরব৷ রক্ষণশীল এই দেশটিতে যদিও এখনও নারীদের জন্য গাড়ি চালানোর অনুমতি নেই৷ এছাড়া সেদেশের নারীরা মাত্র গত বছর ভোটাধিকার লাভ করেছে৷ তবে সেখানকার নারীরা অধিকাংশই সুশিক্ষিত বলে তাদের পরিস্থিতি ভারতের চেয়ে একটু ভালো বলে ধরা হয়েছে৷ নারী অধিকার ও নারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার বিবেচনায় সৌদি আরবের চেয়ে এক ধাপ করে উপরে রয়েছে যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মেক্সিকো৷
৩৭০ জন জেন্ডার বিশেষজ্ঞের অংশগ্রহণে সম্পাদিত এই সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে ‘হাফ দ্য স্কাই: টার্নিং অপরেশন ইনটু অপরচুনিটি ফর উইমেন ওয়ার্ল্ডওয়াইড' শীর্ষক প্রতিবেদনে৷ এই প্রতিবেদনের অন্যতম লেখিকা ও সাংবাদিক নিকোলাস ক্রিস্টোফ বলেন, ‘‘সৌদি আরব অনেক ধনী দেশ এবং সে তুলনায় ভারত বেশ গরিব দেশ বলেই শুধু তাদের মধ্যে অবস্থানের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য হয়েছে৷ নচেৎ উভয় দেশেই একটি ব্যাপারে সাদৃশ্য রয়েছে যে, শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণেই একই যোগ্যতা সম্পন্ন পুরুষদের চেয়ে তাদের এক ভিন্ন মাত্রার ভবিষ্যতের দিকে এগুতে হয়৷''
সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইউকে'র স্বাস্থ্য কর্মসূচি উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা গুলশান রেহমান বলেন, ‘‘ভারতে এখনও নারীদের অস্থাবর সম্পত্তির মতো বিক্রি করা হয়, ১০ বছর বয়স হতে না হতেই বিয়ে দেওয়া হয়, যৌতুক নিয়ে দ্বন্দ্বের জের হিসেবে নারীদের পুড়িয়ে মারা হয়, তরুণীরা হয়রানি এবং বঞ্চনার শিকার হয়৷'' এমনকি ২০০৫ সালে নারীদের উপর সহিংসতা ঠেকাতে যুগান্তকারী ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট চালু করার পরেও পরিস্থিতি প্রায় একইরকম বলে মন্তব্য করেন রেহমান৷
তবে ভারতে দীর্ঘ চার দশক ধরে কর্মরত সমাজসেবী ও নারী নেত্রী অলকা মিত্র একান্ত সাক্ষাৎকারে ডিডাব্লিউ'কে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় ভারতে বর্তমানে শিক্ষার সম্প্রসারণ হয়েছে এবং সেটা প্রায় সর্বস্তরেই হয়েছে৷ তবে বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে বিদ্যালয় থেকে খুব তাড়াতাড়ি ঝরে পড়ার ঘটনা ঘটছে বেশি৷ এর ফলে মেয়েরা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়৷'' উইমেন ইন্টার-লিংক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন অলকা মিত্রের মতে, ‘‘পরিবার বা সংসারে নারীর উপর যে নির্যাতন বা সহিংসতার কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে সবদেশেই রয়েছে৷ তবে উন্নত দেশগুলোতে নারীরা স্বাধীনভাবে পৃথক হয়ে আলাদাভাবে বসবাস করার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে, যেটা ভারতের মতো দেশগুলোতে এখনও ততোটা সহজ নয়৷ ফলে এখানে নারীদের এসব নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে৷''
এছাড়া ভারতে নারী ও শিশু পাচার এবং বিভিন্ন অঞ্চলে মেয়ে শিশু হলে পরিবার ও সমাজে বোঝা মনে করে জন্মের আগেই সন্তান নষ্ট করে ফেলার হার এখনও উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন মিত্র৷ অবশ্য,নারীর বিরুদ্ধে এসব সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি৷
যাহোক, সমীক্ষাটির ফলাফলে দেখা গেছে, নারীদের জন্য সুযোগ সুবিধার দিক থেকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম দশের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইটালি, আর্জেন্টিনা এবং দক্ষিণ কোরিয়া৷ আর এই সমীক্ষার সাথে জাতিসংঘের লিঙ্গ বৈষম্য সূচক তথা জিআইআই এর ফলাফলেরও সাদৃশ্য দেখা গেছে৷ জিআইআই অনুসারেও ভারত, সৌদি আরব এবং ইন্দোনেশিয়া নারীদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ দেশ৷ তবে তাদের হিসাবে, ভারতের পরিস্থিতি সৌদি আরবের চেয়ে কিছুটা ভালো৷
এএইচ / জেডএইচ (রয়টার্স)