বেসরকারি বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চপদে নারীদের কোটা নির্ধারণ করেছে জার্মান সরকার৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বুধবার পার্লামেন্টে এই সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন৷ ২০১৬ সালে এই আইন কার্যকর হবে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার রাতে পার্লামেন্ট সদস্যদের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনার পর কোটা নির্ধারণের বিষয়ে একমত হয় জার্মানির জোট সরকার৷ ম্যার্কেল বলেন, ‘‘নারীদের যোগ্যতার বিষয়টি আমরা অস্বীকার করতে পারি না৷ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটা করব এবং এটা বাস্তবায়িত হবে৷''
এই আইন বাস্তবায়িত হলে যেসব কোম্পানী তাদের বোর্ডের জন্য উপযুক্ত নারী প্রার্থী পাবে না তারা সেই সব পদ খালি রাখবে৷ তবে এই আইনের বিরোধিতা করে এরই মধ্যে বিবৃতি দিয়েছে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান৷ বুধবারে এক বিবৃতিতে ফেডারেশন অফ জার্মান ইনডাস্ট্রি বিডিআই এবং দ্য এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন বিডিএ নতুন এই আইনের সমালোচনা করেছে৷ তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ ধরনের কোটা ব্যবস্থার ফলে যোগ্যতম ব্যক্তিরা সুযোগ হারাবে৷
মেয়েদের রূপ না গুণ, কোনটা আগে ?
গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু মডেলদের মতো সুন্দর ফিগার বা মেকআপ নয়, বরং ব্যক্তিত্বই মানুষকে আকর্ষণীয় করে তোলে৷
ছবি: picture-alliance/ ZB
রূপ, না গুণ?
ছেলেরা মুখে বলে যে, তারা কোনো মেয়ের ভেতরের সৌন্দর্য্যটাই চায়৷ তবে আসলে নাকি তারা মেয়েদের শারীরিক সৌন্দর্য্যের দিকেই তাকিয়ে থাকে এবং গুরুত্ব দেয়৷ সঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রেও কি এই কথা প্রযোজ্য?
ছবি: imago/CHROMORANGE
প্রযুক্তির ব্যবহার
আজকের দিনে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে শরীর বা চেহারাকে ইচ্ছেমতো বদলে ফেলা যায়৷ আর ছবিতে স্থূল আকৃতির নারীকে স্লিম করা বা বেশি স্লিম মেয়েকে খানিকটা মোটা করা কোনো ব্যাপারই নয়! তাই ছবি দেখিয়ে কাউকে মুগ্ধ করতে চাইলে ফটোশপের মাধ্যমে চেহারার অনেক ক্রুটি ঢেকে নিজেকে রূপসীভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব৷
ছবি: Beautycheck
অন্তরের সৌন্দর্য্যই আসল সৌন্দর্য্য
কথায় বলে ‘অন্তরের সৌন্দর্য্যই আসল সৌন্দর্য্য’৷ কথাটা কতখানি সত্যি? এটা কি একটু পুরনো আমলের কথা বলে মনে হয়? আসলে মোটেও তা নয়৷ অন্তত লন্ডনের ওয়েষ্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড. ভিরেন স্বামীর করা গবেষণা তাই বলে৷ অন্তরের সৌন্দর্য্যই আসল, বলেন তিনি৷
ছবি: Fotolia/Paul Schwarzl
ব্যক্তিত্ব নাকি ফিগার, কোনটা আগে?
ড. স্বামীর গবেষণায় প্রায় দুই হাজার পুরুষকে প্রথমে স্থূল, রোগা, স্লিম সব ধরণের নারীর দৈহিক সৌন্দর্য্যের ছবি দেখানো হয়েছিলো৷ এরপর ছবির সঙ্গে তাদের পরিচয়, ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ইত্যাদিও জানানো হয়৷ গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিতীয়বার সব পুরুষের মনেই নারী চরিত্রের প্রভাব বেশি পড়েছে অর্থাৎ চেহারার চেয়ে স্বভাব-চরিত্রকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন গবেষণায় অংশ নেয়া পুরুষরা৷
ছবি: FRED DUFOUR/AFP/Getty Images
মতের পরিবর্তন হতে পারে দ্রুত
গবেষণাটি ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল৷ তারপর থেকে এর বিপক্ষে তেমন কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি৷ তবে অ্যামেরিকার নিউ জার্সির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড. গ্যারি লেভান্ডভস্কি বলেন, ‘‘একজন নারীকে প্রথমবার খুব সুন্দর লাগলেও পরেরবার তাকে তেমন সুন্দর লাগে না, এমনটাও হতে দেখা যায়৷’’
ছবি: Fotolia/pressmaster
নারীর চেহারা
Gary Lewandowski বলেন ‘‘আমি গবেষণায় দেখেছি, কোন পুরুষের কাছে একজন নারীকে চেহারা পছন্দ হলেও পরের বার সে, নারীর আন্তরিকতা, মন এবং বুদ্ধির দিকে খেয়াল করেছেন৷ প্রথম ওপর এবং পরমুহুর্তেই অন্তরের বা ভেতরের খবর জানতে চান৷ যা দেখে আমি নিজেই বেশ অবাক হয়েছি৷’’
ছবি: Fotolia/Peter Atkins
সুন্দর ব্যবহার
ভাল ব্যবহার, আন্তরিকতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোনো নারীকে যখন ভালো লেগে যায় তখন তাঁর নাকটা একটু বাঁকা নাকি সে দেখতে একটু মোটা, তা নগণ্য হয়ে যায়৷ প্রথম পরিচয়ে তো আর কেউ শুধু গায়ের রং বা চেহারা দেখে না, ব্যবহারটাও তখন বড় ব্যাপার হয়, যা কিছুটা মেশা বা কথাবার্তা বলে তবেই বোঝা সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/GordonGrand
সুন্দর হাসির জয় সর্বত্র
সুইজারল্যান্ডের বার্ন বিশ্ববিদ্যালের মনোবিজ্ঞানী ইয়ানেক লোম্বায়ের বলেন, ‘‘সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীর হাসি মুখের কদর পুরুষদের কাছে অনেক বেশি৷ শতকরা প্রায় ৯০ জন পুরুষই হাসি মুখের পক্ষে৷ এমনও দেখা গেছে, হাসি মুখের নারীটি হয়তো হাসি ছাড়া নারীর চেয়ে কম সুন্দরী তবুও৷ আসলে মানুষ হাসলে অন্যের কাছে সে সহজে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং তাকে কিছুটা নরম ও বন্ধুত্বসুলভ বলে মনে হয়৷’’
ছবি: Fotolia/Syda Productions
মেকআপ-বাড়ির পেন্টিং-এর মতো
নারীদের প্রতি, মনোবিজ্ঞানী ড. গ্যারি লেভান্ডভস্কি-র পরামর্শ – যদি নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় দেখাতে চান তাহলে আপনার ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ও সুন্দর ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিন৷ মূল কথা, নিজেকে গ্রহণযোগ্য করতে প্রয়োজন সুন্দর অন্তরের, ওপরের মেকআপ নয়! মেকআপ হচ্ছে অনেকটা বাড়ির পেন্টিং-এর মতো৷
ছবি: picture-alliance/ ZB
9 ছবি1 | 9
পরিচালকমণ্ডলীতে নারী ৩০ ভাগ
২০১৬ সাল থেকে জার্মানির বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকমণ্ডলীর মধ্যে নারীদের কোটা থাকবে ৩০ ভাগ৷ এই তালিকায় ১০৮টি কোম্পানি রয়েছে, যার পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য হতে পারলেও নির্বাহী পরিচালকের পদে কোন কোটা থাকবে না৷
অবশ্য এই কোটা বিষয়ে এক বছর আগে থেকেই আলোচনা হচ্ছিল৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের রক্ষণশীল জোটের দুই দল খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাটিক সিডিইউ এবং খ্রিষ্টান সোশাল ইউনিয়ন সিএসইউ অতীতে আইন করে কোটা করার জন্য একমত হয়েছিল৷ তালিকাবদ্ধ ১০৮টি কোম্পানির জন্য এই কোটা পদ্ধতি বহাল থাকবে৷ এছাড়া কয়েক হাজার মাঝারি যেসব কোম্পানি রয়েছে তারা নির্বাহী ও পরিচালকমণ্ডলীতে নিজেদের মত করে কোটা পদ্ধতি করতে পারবে৷
বর্তমান পরিস্থিতি:
জার্মান বড় বড় কোম্পানিরগুলোর পরিচালকমণ্ডলীতে এখনো পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৮০ ভাগ৷ ডিআইডাব্লিউ ইকোনমিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এর তথ্য অনুযায়ী জার্মানির বৃহত্তম ৩০টি কোম্পানিতে নির্বাহী পদে নারীরা মাত্র ৭ ভাগ জায়গা দখল করে আছে ৷
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে গত বছর নির্বাহী পদে নারীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে৷ তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সে তুলনায় উচ্চপদে নারীদের অবস্থান বেশি৷ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে এই হার ১৮.৯ ভাগ, তিন বছর আগে যা ছিল মাত্র ১০ ভাগ৷
তবে জার্মানির কট্টরপন্থি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মালিকরা এই আইনের সমালোচনা করে বলেছেন, এ ধরনের বৈধ কোটার কোন প্রয়োজন আমরা দেখছি না৷