পুরুষদের চেয়ে ৬১ বছর পর বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেলেও অগ্রগতির দ্রুততায় কিন্তু বিস্ময় জাগাচ্ছে নারীরাই৷ তাই মাঠে এবং মাঠের বাইরের সব ক্ষেত্রেই নারী অচিরেই সমান বা অগ্রগণ্য হবেন- এমন আশা কিন্তু খুব অমূলক নয়৷
বিজ্ঞাপন
সেরকম সুদিনের উজ্জ্বল আশা জাগিয়েই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে শুরু হয়েছে নারীদের বিশ্বকাপের নবম আসর৷ ৩২টি দেশের শ্রেষ্ঠত্বের এ লড়াইয়ে থাকছে নতুন আটটি দেশ হাইতি, মরক্কো, পানামা, ফিলিপাইন্স, পর্তুগাল, রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়া৷ ফুটবলের সেরা আসরে প্রথম এসেই চমক দেখাতে শুরু করেছে নতুনেরা৷ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দলকে মরক্কোর হারিয়ে দেয়া সেরকমই এক চমক৷
বরাবরের মতো এবারও স্বাগতিক দেশের প্রায় সব ম্যাচেই গ্যালারিতে থাকছে উপচে পড়া ভিড়৷ ভিড় থাকছে অন্য ম্যাচেও৷ তাই এবারের প্রথম ১৬ ম্যাচে দর্শক উপস্থিতি ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত গত আসরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে৷ এবার অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম ১৬ ম্যাচে মোট দর্শক হয়েছে চার লাখ ৫৯ হাজার ৫৭৪ জন – ২০১৯ সালে ১৬ ম্যাচে দর্শক ছিল এর চেয়ে অন্তত ৫৪ শতাংশ কম! টিকিটের চাহিদা এবং দর্শকের এমন উপস্থিতি দেখে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও অবাক৷ বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় ও আনন্দ প্রকাশ করে আয়োজক দুই দেশকে এরইমধ্যে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি৷
বিশ্বের অন্তত ২০০টি দেশে ১৩০টি সম্প্রচার মাধ্যমফুটবলপ্রেমীদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে নারীদের বিশ্বকাপের ম্যাচ৷ ম্যাচ দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন সবাই৷ প্রতিদিন পর্দায় চোখ রাখছেন নতুন করে মুগ্ধ হবার আশা নিয়ে৷
ম্যাচ পরিচালনাতেও এবার থাকছে নতুনের ছোঁয়া৷ নারীদের ফুটবলে এবার নারী রেফারি থাকছেন চারজন- চেরিল ফস্টার ( ওয়েলস), স্টেফানি ফ্রাপার্ট (ফ্রান্স), মার্তা উয়ের্তা দে আসা (স্পেন) এবং লিনা লেহতোভারা (ফিনল্যান্ড)৷
এত রেকর্ড, এত নতুনের এ আসর কি এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে পারে? সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না মোটেই৷ এটা ঠিক, ১৯৯১ সালে চীনে মেয়েদের বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকে এখানে যুক্তরাষ্ট্রের বলতে গেলে একক দাপটই লক্ষ্য করা গেছে৷ গত আট আসরের চারটিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যুক্তরাষ্ট্র এবারও টপ ফেভারিট৷ দুইবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, একবার করে বিশ্বসেরা হওয়া নরওয়ে ও জাপানও রয়েছে ফেভারিটের তালিকায়৷ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশে থাকা সুইডেন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, ক্যানাডা, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়াকেই বা বাদ দেবেন কিভাবে?
প্রতি আসরে নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবার সম্ভাবনায় নারীদের বিশ্বকাপ আসলে পুরুষদের বিশ্বকাপের চেয়ে অনেক এগিয়ে৷ পুরুষদের আসরে এশিয়ার কোনো দেশ এখনো যেখানে ফাইনালেই যেতে পারেনি, নারীদের বিশ্বকাপে জাপান সেই কৃতিত্ব অর্জন করেছে ১২ বছর আগে৷
পুরুষদের আসরে নরওয়ে তো দূরের কথা, যুক্তরাষ্ট্রেরও সেমিফাইনালে ওঠা প্রায় চন্দ্রাভিযানের মতো কষ্টসাধ্য, নারীদের আসরে দুটি দেশই কিন্তু পরাশক্তি৷ ফলে এবারও যে নতুন কোনো দেশের নারীরা বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরবেন না তা কে বলতে পারে!
নারী ফুটবল বিশ্বকাপের তারকারা
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০২৩ সালের নারীদের ফুটবল বিশ্বকাপ৷ ছবিঘরে দেখুন এবারের তারকা খেলোয়াড়দের৷
ছবি: Aaron Doster/AP Photo/picture alliance
জার্মানির আলেকজান্ড্রা পপ
২০২২ সালের ইউরো কাপে ‘পপি’ জার্মানিকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে নিয়ে যান৷ জার্মান দলকে এবারের বিশ্বকাপেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই ৩২ বছর বয়েসি স্ট্রাইকার৷
ছবি: Brooks Von Arx/ZUMAPRESS.com/picture alliance
স্পেনের আলেক্সিয়া পুতেয়াস
২৯ বছর বয়েসি বার্সেলোনার এই খেলোয়াড় চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জেতান তার দলকে৷ ২০২১ ও ২০২২ ব্যালন ডি’ওর পুরস্কার পান৷
ছবি: Joaquin Corchero/ZUMA Wire/IMAGO
নাইজেরিয়ার আসিসাত ওশোয়ালা
২৮ বছর বয়েসি আসিসাত আফ্রিকান নারী ফুটবলের কিংবদন্তী খেলোয়াড়৷ ২০১৪ সালে তিনি আফ্রিকান বর্ষসেরা নারী ফুটবলারের পুরস্কার পান৷
ছবি: Shengolpixs/IMAGO
ব্রাজিলের মার্তা
৩৭ বছরের মার্তা এবার তার জীবনের ষষ্ঠ বিশ্বকাপে অংশ নেবেন৷ হয়তো এটাই মার্তার খেলোয়াড় জীবনের শেষ বিশ্বকাপ৷
এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে আলোচিত নামগুলির মধ্যে জ্বলজ্বল করছে মর্গানের নাম৷ ২০১৫ ও ২০১৯ সালের পর এবার আবার তার দেশের দলকে জেতানোর জন্য লড়বেন তিনি৷
ছবি: Aaron Doster/AP Photo/picture alliance
অস্ট্রেলিয়ার স্যাম কের
দুনিয়ার সেরা স্ট্রাইকারদের তালিকায় অবশ্যিই থাকবে স্যাম কেরের নাম৷ ২৯ বছর বয়েসি এই খেলোয়াড় চেলসি ক্লাবের জন্যেও খেলেন৷
ছবি: Liam Ayres/SPP/IMAGO
ডেনমার্কের পেরনিল হার্ডার
২০২২ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় ছিলেন পেরনিল৷ ২০২০ সালে সাড়ে তিন লাখ ইউরো দিয়ে তাকে ‘কেনে’ চেলসি৷ বিশ্বকাপ শেষে তাকে দেখা যাবে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের জন্য খেলতে৷
২৮ বছর বয়েসি আদার ঝুলিতে যত পুরস্কার আছে, তা আসলেই চোখ ধাঁধানোর মতো৷ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ছয়বার, অলিম্পিক লিওঁ ছয়বার ও ফরাসী চ্যাম্পিয়নশিপ আটবার জিতেছেন তিনি৷
ছবি: Lise Aaserud/NTB/picture alliance
ক্যানাডার ক্রিস্টিন সিনক্লেয়ার
৪০ বছর বয়েসি এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়৷ ১৪বার ক্যানাডার বর্ষসেরা ফুটবলার শিরোপা জিতেছেন তিনি৷ এবারের বিশ্বকাপে গোল দিলে বিশ্বরেকর্ড গড়বেন তিনি৷ এর আগে পুরুষ বা নারী, কোনো খেলোয়াড়ই ছয়টি বিশ্বকাপেই গোল দেননি৷
ছবি: Fernando Llano/AP/picture alliance
ইংল্যান্ডের কিরা ওয়ালশ
২০২২ সালে পেরনিল হার্ডারকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়ের খেতাব ছিনিয়ে নেন৷ ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ক্লাব থেকে এফসি বার্সেলোনায় যান তিনি, ক্লাবের খরচ হয় চার থেকে পাঁচ লাখ ইউরো!
ছবি: Paul Terry/Newscom/picture alliance
জাপানের সাকি কুমাগা
দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জেতার জন্য খেলবেন ৩২ বছর বয়েসি এই জাপানি খেলোয়াড়৷ ডিফেন্স বিশেষজ্ঞ কুমাগা ২০০৮ সালে জাপানের জাতীয় দলের সাথে খেলা শুরু করেন তিনি৷ শুটআউট রাউন্ডে তার খেলা চমক দেখায়৷