জাতিসংঘের এক নতুন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য৷ বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বিষয়ে নারীদের চেয়ে পুরুষদের উপরই বেশি ভরসা করেন৷
বিজ্ঞাপন
যে গবেষণা এই প্রতিবেদনের ভিত্তি, সেই জরিপে রয়েছে বিশ্বের ৭৫টি দেশের তথ্য৷ প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এখনও নারীদের চেয়ে পুরুষদের প্রতি বেশি পক্ষপাতদুষ্ট৷
শুধু তাই নয়, প্রতিবেদনটি বলছে, বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষের মতে, স্বামীর হাতে স্ত্রীর প্রহৃত হওয়ার পেছনে অবশ্যই কোনো না কোনো যুক্তি রয়েছে৷
জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পেড্রো কনসেইসাওর মতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণের মতো বিষয়ে গত কয়েক বছরে উন্নতি হলেও ক্ষমতার ব্যাপক ব্যবধান থাকায় এখনও রয়ে গেছে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য৷ অব্যাহত রয়েছে নারীদের পিছিয়ে পড়ার ধারা৷
কয়েক দশক ধরে নারীর ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সত্ত্বেও এখনও বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার মতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় দুর্বল রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন৷
বর্তমান বিশ্বের সংসদ আসনের মাত্র ২৪ শতাংশ রয়েছে নারীদের দখলে৷ অন্যদিকে, বিশ্বের ব্যবসায়ী সংস্থাগুলোর মাত্র ছয় শতাংশের শীর্ষে রয়েছেন নারীরা৷
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, জর্ডান, কাতার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও জিম্বাবোয়েতে নারীরা ক্ষমতা থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে অবস্থান করেন৷ উল্টোদিকে, অ্যান্ডোরা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও সুইডেনে নারী-পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে কম লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে৷
এসএস/জেডএইচ (ডিপিএ, রয়টার্স)
দক্ষিণ এশিয়ার সফল নারী রাজনীতিকরা
উন্নত দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নের হার কম৷ তবে এ অঞ্চল থেকেও উঠে এসেছেন অনেক নারী রাজনীতিবিদ৷ তাঁদের কারো কারো সাফল্য খুব উল্লেখযোগ্য৷ এমন নারী রাজনীতিবিদদের নিয়েই এই ছবিঘর...
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
ইন্দিরা গান্ধী, ভারত
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬ সালে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া ইন্দিরা ভারতের ‘লৌহমানবী’ নামে খ্যাত৷ ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও পরে ১৯৮৪-তে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’-এর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের জন্য সমালোচিত হলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/KPA
শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা৷ ২০১৬ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাশালী নারী তালিকায় ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা৷ সবচেয়ে বেশি সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ডও তাঁর দখলে৷
ছবি: Reuters/A. Alfiky
খালেদা জিয়া, বাংলাদেশ
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রথম নারী হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন৷ প্রথমবারে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ও পরে আবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷
ছবি: Bdnews24.com
বেনজির ভুট্টো, পাকিস্তান
১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ ও ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া বেনজির ভুট্টো কোনো মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী৷ সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী এই নেত্রী ২০০৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর দল ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি’র নেতৃত্ব দেন৷ রাজনীতির প্রথম পাঠ তিনি তাঁর পিতা, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর কাছে পেয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে, শ্রীলঙ্কা
বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে৷ তিন দফায় (১৯৬০-৬৫, ১৯৭০-৭৭, ১৯৯৪-২০০০) দ্বীপ দেশটির দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ শ্রীলঙ্কার সরকারী ভাষাকে ইংরেজি থেকে বদলে সিনহালা করার ফলে তিনি দেশের তামিল সংখ্যালঘুদের রোষের মুখে পড়েন৷
ছবি: picture alliance/Sven Simon
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারত
জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রেল, কয়লা, যুব, নারী ও শিশু বিষয়ক একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন পশ্চিমবঙ্গে প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
সোনিয়া গান্ধী, ভারত
প্রধানমন্ত্রী না হলেও ভারতের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক একটি নাম সোনিয়া গান্ধী৷ সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বামী রাজীব গান্ধী প্রয়াত হবার পর কংগ্রেসের দায়িত্বে আসেন তাঁর ইটালীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী সোনিয়া৷ ২০০৪ সালে সোনিয়ার নেতৃত্বেই কংগ্রেস দেশের ক্ষমতায় এলেও প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেন মনমোহন সিং-এর হাতে৷ প্রখর রাজনৈতিক বুদ্ধির কারণে তাঁর নাম স্থান পেয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Hadebe
জয়ললিতা, ভারত
পাঁচ দফায় দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জয়ললিতা৷ জনসাধারণের কাছে ‘আম্মা’ বা মা নামে খ্যাত এই নেত্রী এককালে দক্ষিণী চলচ্চিত্রের নামকরা অভিনেত্রীও ছিলেন৷ ২০১৬ সালে ৫ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন৷
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
মায়াবতী, ভারত
উত্তর প্রদেশ-কেন্দ্রিক বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) মুখ্যত দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পার্টি৷ ২০০১ সালে দলের ভার নেন মায়াবতী৷ বিভিন্ন দলের সমর্থনে চারবার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন মায়াবতী৷ রাজ্যের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর নাম ভারতের সর্বোচ্চ করদাতাদের তালিকায় বেশ কয়েকবার উঠে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Das
চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, শ্রীলঙ্কা
১৯৯৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি ছিলেন চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা৷ এছাড়া নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ১৯৯৪ সালে আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও তিনিই পালন করেন৷ দেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান ‘লিজোঁ অফ অনার’ পান ২০১৮ সালে৷ এই সম্মান পাওয়া প্রথম শ্রীলঙ্কার নাগরিক তিনিই৷
ছবি: picture-alliance/AP/Vincent Thian
হিনা রব্বানী খার, পাকিস্তান
২০১১- থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন হিনা রব্বানী খার৷ ৩৩ বছর বয়সি হিনা এই দায়িত্ব পেয়ে ইতিহাস গড়েন৷ পাকিস্তানে তিনিই প্রথম নারী হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হয়ে দেশের সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হবারও রেকর্ড গড়েন৷ দেশে ও বিদেশে যুবপ্রজন্মের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বিষয়ে বক্তব্য রাখা এই নেত্রী বর্তমানে পাকিস্তানের সংসদ সদস্য৷
ছবি: dapd
সুষমা স্বরাজ, ভারত
মোট দশবার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া প্রয়াত সুষমা স্বরাজ সবশেষ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন৷ রাজনীতিতে আসার আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুষমা মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে হরিয়ানার ক্যাবিনেট মন্ত্রী হন৷ ২০১৭ সালে মার্কিন পত্রিকা ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ বিজেপির এই রাজনীতিবিদকে ভারতের ‘সবচেয়ে প্রিয় রাজনীতিক’ আখ্যা দেয়৷ ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন৷