সাইবার জগতে নিরাপত্তা সবসময়ই ঝুঁকির মুখে৷ নামে-বেনামে অপতৎপরতায় সক্রিয় অনেক লোক৷ নারীরা কিভাবে নিজেদের রক্ষা করবেন? সাংবাদিক, সংগীত শিল্পী ও অভিনেত্রী এলিটা করিম মনে করেন সাইবার দুনিয়ায় আত্মরক্ষা সহজেই সম্ভব৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে দেয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারে মূলত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তি নিরাপত্তার বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন বাংলাদেশের পাঠকপ্রিয় একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক এলিটা করিম৷ তাঁর কথায় শুরুতেই উঠে আসে ধোঁকা দিয়ে অর্থ আদায় করার প্রসঙ্গ৷
এলিটা জানান, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান তাঁর ফেসবুক বন্ধু৷ সাকিব বাংলাদেশের ম্যাচ চলার সময় আজকাল বাধ্য হয়ে তাঁর ফ্যানপেজ বন্ধ রাখেন৷ উদ্দেশ্য – হয়রানি এড়ানো৷ কয়েকজন জাতীয় ক্রিকেটারের নামে ফেসবুক পেজ খুলে সরল ক্রিকেটভক্তদের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা আদায়ের ঘটনারও উল্লেখ করেছেন এলিটা৷
এলিটা করিম
প্রতারক চক্র ক্রিকেটারদের নামে ভুয়া পেজ খুলে সরলপ্রাণ ভক্তদের সঙ্গে ‘চ্যাট' শুরু করে৷ কয়েকদিন আলাপের পর ভক্ত দেখা করতে চায়৷ তখনই তারকা ক্রিকেটারের নামের আড়ালের প্রতারক নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিয়ে ভক্তকে হাজির হতে বলে৷ যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁরাই ঠকেন৷
ভুয়া প্রোফাইল খুলে দিনের পর দিন কিছু লোক অন্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে চলেছে৷ এলিটা করিম মনে করেন, টাকা এবং ‘ইমেজ' রক্ষা করা মোটেই কঠিন নয়৷ বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হলে আর নিয়মিত প্রোফাইল বা ফ্যানপেজে চোখ রাখলেই এ ধরণের বিড়ম্বনা এড়ানো সম্ভব৷
সাক্ষাৎকারে সাইবার জগতে নিজেকে নিরাপদ রাখার কয়েকটি উপায়ের কথাও বলেছেন এলিটা৷ প্রথম পরামর্শ, যাকে-তাকে, বিশেষ করে অচেনা লোককে বন্ধু বা কোনো নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত না করা৷ অপরিচিতজনকে বন্ধু না করলে, তারকার নামেই অন্ধ না হলে অনেক ক্ষতি এড়ানো যায় বলে এলিটার ধারণা৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
এলিটা করিমের সবচেয়ে বড় পরামর্শটা হলো, সজাগ, সচেতন থেকে, প্রতিকারে উদ্যোগী হওয়া৷ মাঝে মাঝে নিজের নামে ‘সার্চ' দিয়ে দেখে নেয়া যায় অন্য কেউ ওই নাম নিজের বলে ব্যবহার করছে কিনা৷ তেমন কিছু ধরা পড়লেই জানিয়ে দিতে হবে সাইবার নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাকে৷ বাকি কাজ, অর্থাৎ অপরাধীকে খুঁজে বের করার দায়িত্বটা তাঁদের৷
বন্ধুরা, আপনারা কি এলিটা করিমের সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷