আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস৷ মানলে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিন৷ তবে দিনটি পালন করা হলেও, গুরুত্ব মানা হয় না৷ নারী প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকারদের নিয়ে গর্বের ফানুস তাই বক্তৃতামুখর দিন শেষ হলেই চুপসে যায়৷
বিজ্ঞাপন
৭ এবং ৮ই মার্চ – বাংলাদেশের অন্যতম বক্তৃতামুখর দু'টি দিন৷ রমনার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক এক ভাষণ দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ৷ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ওই ভাষণ শোনা এবং শোনানোটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ প্রতিবছর ১৫ই আগস্ট, ১৬ই ডিসেম্বর, ৭ই মার্চ এবং ২৬ শে মার্চে নিয়ম করেই আমরা রাজপথে, শহর-গ্রামের অলিগলিতে কালজয়ী ঐ ভাষণ শুনি৷ দিন ফুরোলেই ভুলে যাই সব৷
বিশ্বের যত নারী প্রেসিডেন্ট এবং নারীর ক্ষমতায়ন
নারীর ক্ষমতায়নের পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল নেপাল৷ এই প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ বিদ্যা ভান্ডারি’র রাষ্ট্রপতি হওয়াকে উপলক্ষ্য করে সারা বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নের খণ্ডচিত্রটাও একটু দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট আর্জেন্টিনার ইসাবেল পেরন৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরনের তৃতীয় স্ত্রী ইসাবেল প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান৷ পরে ১৯৭৪ সালের ১লা জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টও ছিলেন৷ বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে৷ তিন দফা (১৯৬০-৬৫, ১৯৭০-৭৭, ১৯৯৪-২০০০) দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ ওপরে তাঁরই ছবি৷
ছবি: picture alliance/Sven Simon
হিমালয় কন্যা বিদ্যা ভান্ডারি
অবশেষে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেলো নেপাল৷ সাংসদ এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সিপিএন-ইউএমএল) -এর ভাইস চেয়ারপারসন বিদ্যা ভাণ্ডারিকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেছে সে দেশের সংসদ৷ নেপালের রাষ্ট্রপতি এখন রাম বরণ যাদব৷ ২৪০ বছর রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি৷ তাঁর কাছ থেকেই দেশের প্রথম নারী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ৫৪ বছর বয়সি বিদ্যা ভান্ডারি৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে নারীকে প্রেসিডেন্ট করেছে ভারত৷ ২০০৭ সালে সে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হন প্রতিভা পাতিল৷ ভারতের দ্বাদশ প্রেসিডেন্ট প্রতিভা ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন৷ তাঁর কাছ থেকেই দায়িত্ব নিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি৷ ছবিতে প্রতিভা পাতিলের কাছ থেকে প্রণব মুখার্জির দায়িত্ব নেয়ার মুহূর্ত৷
ছবি: Reuters
১৪টি দেশে নারী প্রেসিডেন্ট
এ মুহূর্তে ১৪ দেশের প্রেসিডেন্ট নারী৷ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, কসোভো, লাইবেরিয়া, লিথুয়ানিয়া, মাল্টা, মরিশাস, স্যান মারিনো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বুধবার যোগ হলো নেপাল৷ ওপরের ছবিতে মরিশাসের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমিনা ফিরদাউস গারিব ফাকিম৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশ এখনো অপেক্ষায়
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিচারপতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ পদেই নারী পেয়েছে বাংলাদেশ৷ তবে এ পর্যন্ত ২০ জন রাষ্ট্রপতি পেলেও এ দায়িত্বে এখনো কোনো নারীকে দেখা যায়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অনন্য সুইডেন ও ফিনল্যান্ড
নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য এক নজির রেখেছে সুইডেন৷ ১৯৯৯ সালে সে দেশের মন্ত্রীপরিষদে পুরুষের চেয়ে নারী সদস্যই ছিল বেশি৷ ১১ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ ছিলেন ৯ জন৷ এমনটি আগে কোনো দেশেই দেখা যায়নি৷ পরে ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীপরিষদেও নারীর আধিক্য দেখা গেছে৷ ২০০৭ সালে ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীপরষদের শতকরা ৬০ ভাগ সদস্যই ছিলেন নারী৷ ছবিতে সুইডেন ও ডেনমার্কের দুই নারী নেত্রী৷
ছবি: AP
যারা অনেক পিছিয়ে
বিশ্বের সব দেশ নারীর ক্ষমতায়নে কম-বেশি উদ্যোগী হলেও ব্রুনাই এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি পিছিয়ে৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে নারীকে এখনো উপমন্ত্রীর চেয়ে বড় দায়িত্ব দেয়া হয়নি৷ তবে এ মুহূর্তে অ্যাঙ্গোলা, ভুটান, কোমোরো আইল্যান্ড, কুক আইল্যান্ড, লেবানন, মঁসেরাত এবং সলোমন আইল্যান্ডই সবচেয়ে বেশি নারীবিমুখ৷ এই দেশগুলোর মন্ত্রীপরিষদ, এমনকি সংসদেও এই মুহূর্তে কোনো নারী নেই৷ছবিতে ব্রুনাইয়ের কয়েকজন নারী৷
ছবি: AP
মালালা ও তাঁর প্রজন্ম
সাম্প্রতিক সময়ে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ অনেক দেশেই মাথা চাড়া দিয়েছে৷ তবে শান্তির পথে, মানবতার পথে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নারীর দৃপ্ত পদচারণাও দেখা যাচ্ছে৷ গত বছর (২০১৪) সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল জয় করেছেন মালালা ইউসুফজাই৷ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন রাজ্য তাঁর জন্মস্থান৷ সেখানে হত্যার উদ্দেশ্যে তালেবান তাঁর ওপর হামলাও চালিয়েছিল৷ মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে মালালা এখন প্রজন্মের মুক্তচিন্তার মুক্তির প্রতীক৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
8 ছবি1 | 8
৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসেও অনেক কথা শুনি৷ শুনি দেশের নারী অনেক এগিয়েছে৷ নারীর ক্ষমতায়নের পথে অগ্রগতির মাপকাঠি হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকারসহ সমাজের অনেক গণমান্য নারী৷ সব বক্তৃতায়, নানা ধরণের লেখায় উঠে আসে তাঁদের প্রশংসা৷
শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিমান বাহিনীর বৈমানিক নাইমা হক এবং তামান্না-ই লুতফী, ট্রেনচালক সালমা খাতুনেরা নিশ্চয়ই নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে নারী উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন৷ তবে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায়, সমাজে নারীর অবস্থান সুদৃঢ়করণে ক্ষমতায়নের এমন দৃষ্টান্ত বাড়ানোর পাশাপাশি পুরুষ আর নারীর সমতায়নের বাড়তি উদ্যোগও খুব দরকার৷
'মানসিকতা না বদলালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব'
সমাজে নারীর নিরাপত্তা কমছে এমনটি ভাবার কারণও আছে৷ শুধু সংবাদমাধ্যমে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যার সংবাদের আধিক্য নয়৷ বরং বড় বড় নারী নিপীড়নের ঘটনার দ্রুত বিচার না হওয়াই নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় বাড়ার অন্যতম কারণ৷ ভুরি ভুরি উদাহরণ দিয়ে তা বোঝানো যাবে৷ সব বাদ দিয়ে শুধু পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে প্রকাশ্যে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির বর্বরোচিত ঘটনাটির কথাই বলি৷ কী পেয়েছি আমরা গত এক বছরে? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং কয়েকজন মন্ত্রীর আজেবাজে কথার পরে কাজের কাজ কতটুকু হয়েছে? নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিলের ঘটনাটি আবার তদন্ত করে আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে, এইটুকুই তো?
কিছু ঘটনায় আমরা অতি দ্রুত মামলা হতে দেখি৷ তদন্তের আগে গ্রেপ্তার, রিমান্ডও দেখি৷ নারীর বেলায় অপরাধীর প্রতি নিষ্ঠুর হবার দরকার নেই৷ শুধু সহানুভূতিশীল না হলেই হলো৷ ঘটনাবিশেষে তো মনে হয় বিশেষ মহলের সহানুভূতি বা সুদৃষ্টির কারণেই অপরাধীরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায় সমাজে৷
নারী দিবসে নারীর ক্ষমতায়নের কিছু দৃষ্টান্ত বক্তৃতায়, লেখায় তুলে ধরলেই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে না৷ ক্ষমতায়নের পাশাপাশি সমতায়নের বিষয়টিকেও ভাবনায়, কাজে সমান গুরুত্ব দেয়া চাই৷ কিন্তু আমরা তা দিচ্ছি কই?
পরিবারে এখনো পুত্র সন্তানের আদরকদর বেশি৷ রাস্তায় এখনো মেয়েদের নিরাপত্তা কম৷ কর্মস্থলে এখনো নারী আর পুরুষের ব্যবধান অনেক৷ শুধু মন্ত্রীপরিষদে নারী নেতৃত্বের উজ্জ্বল উদাহরণ দেখালে হবে? ইউনিয়ন পরিষদের কী হাল? ব্যানারে-পোস্টারে শুধু দু-একজন শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া থাকলে হবে? সারাদেশে চাই অসংখ্য ‘পোস্টারগার্ল'৷ সর্বস্তরে চাই নারীর সমতায়ন৷
আপনি কি আশীষ চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে একমত? নারীর ‘সমতায়ন’ নিয়ে আপনার মতামত জানান নীচের ঘরে৷
নারীদের চলাফেরার জন্য বিপজ্জনক ৭টি শহর
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন এ নিয়ে সম্প্রতি একটি জরিপ করেছে৷ ৬,৫৫০ জন নারীর উপর চালানো ঐ জরিপে বলা হচ্ছে যে, বিশ্বের সাতটি শহরের পরিবহন ব্যবস্থা নারীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক৷
ছবি: Christophe Archambault/AFP/Getty Images
নতুন দিল্লি, ভারত
কোনো নারী যদি একা একা এই শহরটি ঘুরে বেড়াতে চান, তবে তা নাকি সম্ভব নয়৷ এই শহরে আড়াই কোটি মানুষের বাস, মানুষের বাসবাসের দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজধানী এটি৷ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে চলন্ত বাসে ২৩ বছরের এক তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনাই প্রমাণ করে যে শহরটির গণপরিবহন ব্যবস্থা কতটা অনিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোগোটা, কলম্বিয়া
নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিবহন ব্যবস্থার তালিকায় প্রথম স্থান বোগোটার৷ জরিপ বলছে, বোগোটায় ৯৬ লাখ মানুষের বাস৷ অথচ সেখানকার বাস ও ট্রেনের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ৷ বিশেষ করে রাতে কোনো নারী বাস ও ট্রেনে চলাফেরা করলে যৌন হয়রানি ও ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন৷
ছবি: Reuters/John Vizcaino
মেক্সিকো সিটি, মেক্সিকো
২ কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস মেক্সিকোর রাজধানীতে৷ জরিপ বলছে, এই শহরে যেসব নারী গণপরিবহনে চলাফেরা করেন তাঁরা প্রায়ই মৌখিক ও শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হন৷
ছবি: Reuters/Edgard Garrido
লিমা, পেরু
পেরুর রাজধানী লিমায় ৬২ লাখ মানুষের বাস৷ এই শহরের এক তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে৷ ফলাফল গণপরিবহনে নারীদের চলাচল এখানে ভয়াবহ বিপদজনক৷ ছিনতাই, যৌন হয়রানি, শ্লীলতাহানি এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা৷
ছবি: Reuters/Enrique Castro-Mendivil
জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া
জাকার্তার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভীষণ ত্রুটিপূর্ণ৷ গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি নিয়ে এরই মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে সেখানকার সরকার৷ তাই ট্রেনে নারী ও পুরুষের আলাদা বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ অফিস টাইমে ও অফিস ছুটির সময় মিনিবাসে পকেট কাটা খুবই সাধারণ ঘটনা৷
ছবি: Ulet Ifansasti/Getty Images
কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া
গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে দুইটি বিষয়ের দিকে নজর রাখা হয়েছে জরিপে৷ প্রথমত ঐ শহরে রাতের বেলায় গণপরিবহনে নারীরা নিরাপদ কিনা এবং দ্বিতীয়ত গণপরিবহনে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হন কিনা৷ মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে গণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নারীদের জন্য নিরাপদ নয়৷
ছবি: Manan Vatsyayana/AFP/Getty Images
ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যটকদের কাছে অন্যতম পছন্দের স্থান ব্যাংকক৷ কিন্তু সেখানেও গণপরিবহন নারীদের চলাচলের জন্য তেমন নিরাপদ নয়৷ বাস বা ট্রেনে পকেট কাটা ও যৌন হয়রানি এখানে হরহামেশাই হয়ে থাকে৷