সোমবার রাতে জারি করা বেশ কয়েকটি রাজকীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে সৌদি আরবের সামরিক বাহিনী ও প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ এর আওতায় এবার এক নারীকে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
তামাদার বিনতে ইউসেফ আল-রামাহকে শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ রক্ষণশীল দেশটিতে সরকারের এমন উঁচু পদে একজন নারীর নিয়োগ বিরল ঘটনা৷ তবে এই সিদ্ধান্তকে দেশটিতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ চলতি বছরেই সেখানে নারীদের গাড়ি চালানো শুরু করার কথা রয়েছে৷
সৌদি আরবের সরকারি বার্তা সংস্থা ‘সৌদি প্রেস এজেন্সি' বা এসপিএ রাজকীয় অধ্যাদেশগুলো প্রকাশ করেছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, দেশটির সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ সেখানে জেনারেল আব্দুল রহমান বিন সালেহ আল-বুনিয়ানের জায়গায় জেনারেল ফায়াদ বিন হামিদ আল-রাওয়াইলিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ জেনারেল আল-রাওয়াইলি একসময় রয়েল সৌদি এয়ারফোর্সের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ আর সাবেক চিফ অফ স্টাফ জেনারেল আল-বুনিয়ানকে রয়েল কোর্টের উপদেষ্টার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷
এছাড়া প্রশাসনের তরুণ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, যেমন উপমন্ত্রী, রাজ্যের ডেপুটি গভর্নর, রয়েল কোর্টের উপদেষ্টা, ইত্যাদি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷
৩৯টি রাজকীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে এসব রদবদলের খবর দেয়া হলেও সেখানে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি৷
উল্লেখ্য, মোহাম্মেদ বিন সালমান ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সৌদি আরবে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন৷ তিনি নিজে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ ইয়েমেনে সৌদি জোটের নেতৃত্বে যে অভিযান চলছে তার রূপকার হচ্ছেন ক্রাউন প্রিন্স সালমান৷
তবে সেই অভিযানের সঙ্গে সামরিক বাহিনীতে পরিবর্তন আনার বিষয়টি মিলিয়ে দেখা উচিত হবে না বলে মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক বেকা ওয়াসার৷ তিনি ওয়াশিংটনভিত্তিক ব়্যান্ড কর্পোরেশনে কাজ করেন৷ ওয়াসার মনে করছেন, সামরিক বাহিনীতে সংস্কার আনা এবং নতুন পরিকল্পনার কথা শোনা ও বাস্তবায়নে আগ্রহী নেতৃত্ব আনার লক্ষ্যে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে৷
আরেক বিশ্লেষক রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো ক্রিস্টিয়ান কোটস উলরিশসেন বলছেন, ক্রাউন প্রিন্স সালমান দেশের নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মকে আনতে চাইছেন৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, এপি)
যে ১০টি অধিকার পেয়েছেন সৌদি আরবে নারীরা
ছবিঘরে দেখে নিন কবে আর কী কী অধিকার পেয়েছেন সৌদি নারীরা, সে দেশের নারী জাগরণে যা মাইলফলক হয়ে থাকবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৫৫: মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল, ১৯৭০: মেয়েদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এখন বিপুল সংখ্যক ছাত্রীকে স্কুলে যেতে দেখা যায়৷ কিন্তু আজ থেকে ৬২ বছর আগে চিত্রটা এমন ছিল না৷ সৌদি আরবে মেয়েদের প্রথম স্কুল দার আল হানান৷ আর রিয়াদ কলেজ অফ এডুকেশন সৌদি নারীদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি চালু হয় ১৯৭০ সালে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
২০০১: নারীদের জন্য পরিচয়পত্র
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷ সৌদি আরবে নারীদের পরিচয়পত্র নিতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হতো৷ ২০০১ সালে সৌদি নারীরা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই পরিচয়পত্র নেয়ার সুযোগ পান৷
ছবি: Getty Images/J. Pix
২০০৫: জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ
২০০৫ সালে সৌদি আরবে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ হয়৷
ছবি: Getty Images/A.Hilabi
২০০৯: প্রথম নারী মন্ত্রী
২০০৯ সালে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রথম নারী মন্ত্রী নিয়োগ করেন৷ নূরা আল কায়েজ নারী বিষয়ক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সে বছর সরকারে যোগ দেন৷
ছবি: Foreign and Commonwealth Office
২০১২: অলিম্পিকে প্রথম নারী অ্যাথলিট
২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নেন সৌদি নারীরা৷ তাঁদের মধ্যে সারাহ আত্তার নারীদের ৮০০ মিটার দৌড়ে লন্ডন অলিম্পিকের ট্র্যাকে নেমেছিলেন হিজাব পড়ে৷ আসর শুরুর আগে নারীদের অংশগ্রহণ করতে না দিলে সৌদি আরবকে অলিম্পিক থেকে বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছিল আইওসি৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.-G.Mabanglo
২০১৩: সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি
ঐ বছর সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি পান সৌদি নারীরা৷ তবে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় এবং ইসলামি রীতিতে পুরো শরীর ঢেকে এবং কোনো পুরুষ আত্মীয়ের উপস্থিতিতে তা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
২০১৩: শুরায় প্রথম নারী
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের রক্ষণশীল কাউন্সিল ‘শুরা’য় প্রথমবারের মতো ৩০ জন নারীকে শপথ বাক্য পাঠ করান৷
ছবি: REUTERS/Saudi TV/Handout
২০১৫: ভোট দেয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার
২০১৫ সালে সৌদি আরবের পৌরসভা নির্বাচনে নারীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান৷ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড নির্বাচনে নারীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করেছিল ১৮৯৩ সালে, জার্মানিতে তা চালু হয় ১৯১৯ সালে৷ ২০১৫ সালে সৌদি আরবের ঐ নির্বাচনে ২০ জন নারী নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Batrawy
২০১৭: সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম নারী
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারপার্সন হিসেবে সারাহ আল সুহাইমির নাম ঘোষণা করে আরেক ইতিহাস রচনা করে৷
ছবি: pictur- alliance/abaca/Balkis Press
২০১৮: গাড়ি চালানোর অনুমতি
গত ২৬শে সেপ্টেম্বর সৌদি আরব নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করে৷ ২০১৮ সালের জুন মাসে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে৷ এর ফলে নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না এবং স্বতন্ত্র লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা৷