নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে মাঝেমধ্যেই নানান গালভরা কথা শোনা যায়৷ কিন্তু সংসদে এবং রাজ্য আইনসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ বিলটি দু'দশক ধরে হিমঘরে আটকা পড়ে আছে, মূলত রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছার অভাবে৷
বিজ্ঞাপন
ভারতে কোনো রাজনৈতিক দলই ঐ বিল পাশ করাতে তেমন গা করেনি, অন্তত এখনও পর্যন্ত৷ কিন্তু কেন করেনি? প্রশ্ন সেটাই৷ ১৯৯৬ সালে কিন্তু নারীর জন্য জাতীয় ও রাজ্য আইনসভায় ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের উদ্দেশ্য সংবিধান সংশোধনীর বিল আনা হয়৷ তবে রাজনৈতিক দলগুলির ঐকমত্যের অভাবে তা ধামাচাপা পড়ে যায়৷
২০১০ সালে তা সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাশ হলেও, নিম্নকক্ষ লোকসভায় তা আটকে যায়, মূলত সরকার পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায়৷ কিন্তু বর্তমান সংসদে মোদী সরকারের তো সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে৷ তাহলে এখন বিলটি পাশ করাতে বাধা কোথায়? তাহলে কি বুঝতে হবে যে, মহিলাদের ক্ষমতায়ন পুরুষপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলি মন থেকে চায় না? দেখা গেছে, স্থানীয় এবং পঞ্চায়েত স্তরে নির্বাচিত মহিলারা পুরুষদের তুলনায় দক্ষতার বিচারে এগিয়ে আছে৷ তাই প্রথমেই যা করণীয়, তা হলো – রাজনৈতিক দলগুলির নিজেদের অবস্থানটা কী, সেটা স্পষ্ট করা৷ এ জন্য দলের ভেতরে মহিলাদের সরব হতে হবে৷ তার জন্য দায়বদ্ধ থাকতে হবে দলীয় নেতৃত্বকে৷ এখানে অবশ্য একটা প্রশ্ন করা যেতেই পারে৷ আর তা হলো, নিজে মহিলা হয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী কেন এতদিন নীরব ছিলেন?
বিশ্বের যত নারী প্রেসিডেন্ট এবং নারীর ক্ষমতায়ন
নারীর ক্ষমতায়নের পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল নেপাল৷ এই প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ বিদ্যা ভান্ডারি’র রাষ্ট্রপতি হওয়াকে উপলক্ষ্য করে সারা বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নের খণ্ডচিত্রটাও একটু দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট আর্জেন্টিনার ইসাবেল পেরন৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরনের তৃতীয় স্ত্রী ইসাবেল প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান৷ পরে ১৯৭৪ সালের ১লা জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টও ছিলেন৷ বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে৷ তিন দফা (১৯৬০-৬৫, ১৯৭০-৭৭, ১৯৯৪-২০০০) দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ ওপরে তাঁরই ছবি৷
ছবি: picture alliance/Sven Simon
হিমালয় কন্যা বিদ্যা ভান্ডারি
অবশেষে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেলো নেপাল৷ সাংসদ এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সিপিএন-ইউএমএল) -এর ভাইস চেয়ারপারসন বিদ্যা ভাণ্ডারিকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেছে সে দেশের সংসদ৷ নেপালের রাষ্ট্রপতি এখন রাম বরণ যাদব৷ ২৪০ বছর রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি৷ তাঁর কাছ থেকেই দেশের প্রথম নারী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ৫৪ বছর বয়সি বিদ্যা ভান্ডারি৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে নারীকে প্রেসিডেন্ট করেছে ভারত৷ ২০০৭ সালে সে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হন প্রতিভা পাতিল৷ ভারতের দ্বাদশ প্রেসিডেন্ট প্রতিভা ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন৷ তাঁর কাছ থেকেই দায়িত্ব নিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি৷ ছবিতে প্রতিভা পাতিলের কাছ থেকে প্রণব মুখার্জির দায়িত্ব নেয়ার মুহূর্ত৷
ছবি: Reuters
১৪টি দেশে নারী প্রেসিডেন্ট
এ মুহূর্তে ১৪ দেশের প্রেসিডেন্ট নারী৷ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, কসোভো, লাইবেরিয়া, লিথুয়ানিয়া, মাল্টা, মরিশাস, স্যান মারিনো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বুধবার যোগ হলো নেপাল৷ ওপরের ছবিতে মরিশাসের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমিনা ফিরদাউস গারিব ফাকিম৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশ এখনো অপেক্ষায়
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিচারপতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ পদেই নারী পেয়েছে বাংলাদেশ৷ তবে এ পর্যন্ত ২০ জন রাষ্ট্রপতি পেলেও এ দায়িত্বে এখনো কোনো নারীকে দেখা যায়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অনন্য সুইডেন ও ফিনল্যান্ড
নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য এক নজির রেখেছে সুইডেন৷ ১৯৯৯ সালে সে দেশের মন্ত্রীপরিষদে পুরুষের চেয়ে নারী সদস্যই ছিল বেশি৷ ১১ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ ছিলেন ৯ জন৷ এমনটি আগে কোনো দেশেই দেখা যায়নি৷ পরে ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীপরিষদেও নারীর আধিক্য দেখা গেছে৷ ২০০৭ সালে ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীপরষদের শতকরা ৬০ ভাগ সদস্যই ছিলেন নারী৷ ছবিতে সুইডেন ও ডেনমার্কের দুই নারী নেত্রী৷
ছবি: AP
যারা অনেক পিছিয়ে
বিশ্বের সব দেশ নারীর ক্ষমতায়নে কম-বেশি উদ্যোগী হলেও ব্রুনাই এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি পিছিয়ে৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে নারীকে এখনো উপমন্ত্রীর চেয়ে বড় দায়িত্ব দেয়া হয়নি৷ তবে এ মুহূর্তে অ্যাঙ্গোলা, ভুটান, কোমোরো আইল্যান্ড, কুক আইল্যান্ড, লেবানন, মঁসেরাত এবং সলোমন আইল্যান্ডই সবচেয়ে বেশি নারীবিমুখ৷ এই দেশগুলোর মন্ত্রীপরিষদ, এমনকি সংসদেও এই মুহূর্তে কোনো নারী নেই৷ছবিতে ব্রুনাইয়ের কয়েকজন নারী৷
ছবি: AP
মালালা ও তাঁর প্রজন্ম
সাম্প্রতিক সময়ে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ অনেক দেশেই মাথা চাড়া দিয়েছে৷ তবে শান্তির পথে, মানবতার পথে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নারীর দৃপ্ত পদচারণাও দেখা যাচ্ছে৷ গত বছর (২০১৪) সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল জয় করেছেন মালালা ইউসুফজাই৷ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন রাজ্য তাঁর জন্মস্থান৷ সেখানে হত্যার উদ্দেশ্যে তালেবান তাঁর ওপর হামলাও চালিয়েছিল৷ মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে মালালা এখন প্রজন্মের মুক্তচিন্তার মুক্তির প্রতীক৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
8 ছবি1 | 8
অথচ মঙ্গলবার, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে, সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় সরব হয়ে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা মহিলা সংরক্ষণ বিলটি দ্রুত পাশ করাতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি৷ সংসদে রাখা তাঁর বক্তব্যে সোনিয়া গান্ধী মহিলাদের বৈধ ও প্রাপ্য অধিকার দিতে মোদী সরকারের কাছে দাবি জানান৷ এই ইস্যুতে তিনি মোদী সরকারের ‘সর্বাধিক সুশাসন, সর্বনিম্ন সরকার' স্লোগানের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘সরকার মুখে যেটা বলছে, কাজে সেটা করছে না৷ এই দ্বিচারিতা কাম্য নয়৷''
এই প্রসঙ্গে বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যের উল্লেখ করেন সোনিয়া গান্ধী৷ যেমন হরিয়ানা অথবা রাজস্থান৷ সেখানে মহিলাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করার ফলে মহিলারা, বিশেষ করে তপশিলি জাতি-উপজাতির মহিলারা নির্বাচনি প্রার্থী হতে পারছেন না৷ ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এটার সংশোধন দরকার৷ বক্তব্যে তিনি কন্যা সন্তানের সমঅধিকার, কন্যাভ্রুণ হত্যা নিবারণ, পণপ্রথার অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করার বিষয়গুলিও তুলে ধরেন৷
সরকারের তরফে সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাখভি অবশ্য আশা দিয়েছেন যে, বিলটি নিয়ে আলোচনা হবে এবং চলতি অধিবেশনেই তা পাশ হবে৷ তবে কথায় বলে না, ‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই'৷