বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সারা দেশে গত ১৩ মাসে গণপরিবহনে ২১ নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ তবে প্রকৃত অবস্থা আরো খারাপ বলে মনে করে তারা৷
বিজ্ঞাপন
গনমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পর্যবেক্ষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, গত ১৩ মাসে বাস চালক-হেলপার ও তাদের সহযোগীরা ৯টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ৮টি ধর্ষণ ও ৪টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটিয়েছে৷ এসব ঘটনায় ৫৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে৷ এরমধ্যে ৯ এপ্রিল মানিকগঞ্জে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি৷ যাত্রী কল্যাণ সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব ঘটনার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণও দিয়েছে৷
গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর দারুসসালামে চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির অভিযোগে গাবতলী-নবিনগর রুটের বাসচালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী৷ এই ঘটনায় পুলিশ চালক ও হেলপারকে আটক করেছে৷
২০১৭ সালের ১৩ মার্চ ইজিবাইকে করে চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে আলমডাঙ্গায় ফিরছিলেন এক স্কুল ছাত্রী৷ ইজিবাইকের ভাড়া মেটাতে না পারার অজুহাতে চালকসহ চার জনের ধর্ষণের শিকার হন ওই স্কুল ছাত্রী৷
যুদ্ধে নারী, নারী যোদ্ধা
২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ইসলামিক স্টেট উত্তর ইরাকের ইয়াজিদি এলাকাগুলি দখল করে৷ হাজার হাজার ইয়াজিদি মহিলা ও কিশোরীকে ধরে নিয়ে গিয়ে দাসী হিসেবে রাখা হয় ও ধর্ষণ করা হয়৷ আজ সেই ইয়াজিদি নারীরাই সন্ত্রাসবাদিদের বিরুদ্ধে লড়ছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
শত্রুর খোঁজ
শত্রু বাইরে কোথাও - কুর্দি নারী যোদ্ধা হাসেবা নৌজাদ ইরাকের মোসুল শহরের কাছে চোখে দুরবিন লাগিয়ে ‘ফ্রন্ট লাইন’ পরখ করে দেখছেন৷ কুর্দ এলাকা ও আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্যে সীমারেখা হলো এই ফ্রন্ট৷ কুর্দিরা ইরাকি সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় ক্রমেই আরো এগিয়ে যাচ্ছে, পিছু হটছে ইসলামিক স্টেট৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
গুপ্তপ্রতিরোধের ভ্যানগার্ড
শত্রু নজরে পড়েছে, এবার তাদের দিকে গুলি চালানো হবে৷ হাসেবা নৌজাদ দেখাচ্ছেন কোনদিকে; আসেমা দাহির (ডান দিক থেকে তৃতীয়) ও অন্যান্য ইয়াজিদি নারী যোদ্ধারা নিশানা ঠিক করছেন৷ শুধুমাত্র বিমান থেকে আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লাভ নেই৷ তাই ইয়াজিদি আর কুর্দ মহিলাদের নিয়ে রণক্ষেত্রে এই ভ্যানগার্ড তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
সুন্দর দেখানোর জন্য নয়
বন্দুক নিয়ে ঠিকমতো নিশানা করার জন্য মাথার চুল কপালে বা চোখে পড়লে চলবে না৷ তাই চুল টান টান করে বেঁধে নেন হাসেবা নৌজাদ, ‘মিলিটারি লুক’ ফ্যাশনের জন্য নয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
লাকি চার্ম
যুদ্ধের ফাঁকে আসেমা দাহির৷ হাতে যে লাল রঙের টেডি বেয়ারটি রয়েছে, সেটা হয়তো অতীতের সেই সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দিনগুলির প্রতীক, যখন আইএস ইয়াজিদিদের স্বদেশকে দখল করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে সেই শান্তি শেষ হয়ে যায়, শুরু হয় আইএস-এর সন্ত্রাস৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
পালানো ছাড়া পথ ছিল না
শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ, আইএস কাউকে ক্ষমা করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে লক্ষ লক্ষ ইয়াজিদি বাস্তু ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, তাদের পিছনে আইএস৷ এক বৃদ্ধ ও দুই তরুণীর এই ছবিটি যেন বিশ্বের সামনে ইয়াজিদিদের যন্ত্রণাকে তুলে ধরে৷
ছবি: Reuters
বিভীষিকা
এই ইয়াজিদি কিশোরী ক্যামেরার সামনে তার মুখ দেখাতে চায় না৷ ২০১৪ সালে এই ১৫ বছর বয়সের মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে একজন আইএস যোদ্ধার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ তার দু’মাস পরে মেয়েটি পালাতে সমর্থ হয়৷ আজ সে আবার নিজের পরিবারের সঙ্গেই বাস করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bennett
ধ্বংসস্তূপ
উত্তর সিরিয়ার কোবানি শহরটি তুর্কি সীমান্তের অদূরে৷ আইএস যোদ্ধারা মাসের পর মাস শহরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল৷ কুর্দিরা সব কিছুর পরও প্রতিরোধ চালিয়ে যায় ও শেষমেশ মার্কিন বিমানবাহিনীর সাহায্যে সন্ত্রাসবাদীদের পরাজিত করতে সমর্থ হয়৷ পড়ে থাকে একটি শহর নয়, যেন শহরের ধ্বংসস্তূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Akgul
সবে মিলে করি কাজ
যারা আইএস-এর আদর্শে বিশ্বাস করে না, আইএস-এর দৃষ্টিতে তারা সবাই শত্রু৷ বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করাই হলো আইএস-এর উদ্দেশ্য৷ সে উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে সফল হয় না৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, এক অর্থে তা আইএস-এর প্রতীকী পরাজয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
স্বাধীনতার সড়ক
শুধু অস্ত্র দিয়ে আইএস-কে হারানো যাবে না৷ সিরিয়া আর ইরাকের অনেক এলাকা এখনও আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েরাও তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে৷ তাদের প্রতিরোধের আর একটি শিক্ষা হলো, মেয়েরা পুরুষের দাস নয় - সন্ত্রাসবাদিদের যা কাজে লাগার কথা!
ছবি: Reuters/A. Jadallah
9 ছবি1 | 9
সে বছরেরই ৯ এপ্রিল ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এসআই পরিবহনের চলন্ত বাসে স্বামীর সামনে এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷
৩১ জুলাই কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পদ্মা পরিবহনের একটি বাসে ঢাকা আসার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী গৃহকর্মী৷
এক মাস পর, অর্থাৎ গত আগষ্টে গাজীপুর থেকে নারায়নগঞ্জ আসার পথে ট্রাকের চালক মেহেদী হাসান ও হেলপার সোহান মিলে এক কিশোরীকে চলন্ত ট্রাকে ধর্ষণ করে৷ পরে পুলিশ ট্রাকের চালককে আটক করে৷
আগষ্টেই রাজধানীর বনানীতে এক তরুণীকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যৌন হয়রানির চেষ্টা চালায় ইমরান হোসেন নামের এক ব্যক্তি৷ এই ঘটনায় ইমরানরকে গ্রেপ্তার ও গাড়িটি জব্দ করে পুলিশ৷
আগস্টেরই আরেক ঘটনা৷ ১১ আগষ্ট ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় লেগুনার চালক জয়নাল আবেদিন ও হেলপার রিপন ওই এলাকার ৭ম শ্রেণির এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করে৷ ছাত্রীর চাচা বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ চালক ও হেলপারকে আটক করে৷
দু' সপ্তাহের মধ্যেই ঘটে ধর্ষণের আরেকটি ঘটনা৷ ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় চলন্তবাসে জাকিয়া সুলতানা রুপা নামে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়৷
এরপর ১২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়া যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বাসে এক গৃহবধুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে বাসের চালক জনি বডুয়া ও হেলপার মো. এহসানকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালত এক বছরের কারাদণ্ড দেয়৷
২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে বহদ্ধারহাটে যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে চালক রাশেদুল ইসলাম ও সহকারি ইমতিয়াজ উদ্দীন এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে৷ তরুণী থানায় মামলা করলে পুলিশ ওই দু'জনকে আটক করে৷
৩ নভেম্বর, রবিবার গাজীপুর বাইমাইল এলাকায় নৌকায় তুলে এক পোশাক শ্রমিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে চার দুর্বৃত্ত৷ ২১ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আনন্দ পরিবহনের বাসে ৮ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে বাস চালক পারভেজ৷
‘সব ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয় না’
এর আগে গত বছরের ২২ জানুয়ারি কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে নদীয়ার রেল ষ্টেশনে বাংলাদেশি এক নারী যাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন৷
একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীতে বাসের ভেতরে এক নারীকে যৌনহয়রানি করে বাসের চালক ইসমাইল হোসেন ও তার চার সহযোগী৷ ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকায় বাসে আটকে রেখে ১৩ বছরের এক কিশোরী পোশাককর্মীকে ধর্ষণ করে বাসের হেলপার হাফিজুল ইসলাম৷
এছাড়াও ২১ মে কুড়িল বিশ্বরুটে মাইক্রোবাসে এক গারো তরুণী ধর্ষণের শিকার হন৷ ১৩ মে ময়মনসিংহের চুলখাই এলাকায় বাসচালক ও হেলপার মিলে ধর্ষণ করে এক তরুণীকে৷ ১১ মে ঢাকার অদূরে সোনারগাঁওয়ে বাসের মধ্যে এক তরুণীকে ধর্ষণ করে বাসচালক ও তার সহযোগী, ৩ মে আশুলিয়ার বাস কাউন্টার থেকে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়৷ ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৷ ২৫ এপ্রিল খিলগাঁওয়ে এক গৃহবধুকে মাইক্রোবাসে যৌন নির্যাতনের পর ওই মাইক্রোবাসে চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়৷ ১৯ এপ্রিল ঢাকা থেকে জামালপুরগামী ট্রেনে দুর্বৃত্তদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হন এক নারী৷
যাত্রী কল্যান সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছি৷ আর এইসব ঘটনায় পুলিশ সক্রিয় হয়েছে৷ অভিযোগ বা মামলাও করা হয়েছে৷ কিন্তু আমরা মনে করি, এটা প্রকৃত ঘটনা যা ঘটে তার চেয়ে অনেক কম৷ কারণ, সব ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয় না৷ আবার সবাই নানা কারণে পুলিশের কাছে অভিযোগও করেন না৷''
তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত গণপরিবহণের নারী যাত্রীরা নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত৷ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত নারীরা গণপরিবহণ ব্যবহার তেমন করেন না৷ তাই গণপরিবহণে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘সমস্যা হচ্ছে, পরিবহণে কোনো নারী যৌন হয়রানির শিকার হলে তিনি কোথায় অভিযোগ করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না৷ এজন্য মোবাইলকোর্ট সক্রিয় করা উচিত৷ রুট অনুযায়ী মোবাইল কোর্টের ফোন নাম্বার গণপরিবহনের প্রকাশ্য স্থানে লিখে রাখতে হবে৷ আর মালিকদের উচিত হবে বাসের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, মোটিভেশন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করা৷''
‘এই ধরনের যৌন হয়রানির প্রচুর অভিযোগ পাই’
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘নারীদের জন্য আলাদা বাস, যেখানে ড্রাইভার, হেলপার সব নারী হবে, এটা একটা সমাধান হতে পারে৷ কিন্তু এটা হয়তো ঢাকায় হতে পারে, সারাদেশে সম্ভব নয়৷ আর তাতে বাস থেকে নামার পর তাঁদের নিরাপত্তা দেবে কে? তাই সার্বিকভাবে নারীদের নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি৷ সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে৷''
টাঙ্গাইলে চলন্তবাসেরূপা হত্যা এবং ধর্ষণ মামলার রায়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি চার জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত৷ একজনকে দেয়া হয়েছে সাত বছরের কারদণ্ড৷ গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে কর্মস্থল ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে জাকিয়া সুলতানা রূপা পরিবহণ শ্রমিদের সংঘদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন৷ বাসেই হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রুপার মরদেহ ফেলে দেয়া হয়েছিল৷
মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এবং মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘রূপা হত্যা এবং ধর্ষণের বিচার হয়েছে৷ এটা হয়তো আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে৷ কিন্তু গণপরিবহণে তাতে যৌন হয়রানি কমবে বলে মনে হয় না৷ আমরা এই ধরনের যৌন হয়রানির প্রচুর অভিযোগ পাই৷ আসলে অভিযোগ জানানোর বিষয়টি সহজ করতে হবে৷ কারণ, চলন্ত বাসে ঘটনা কোন থানা এলাকায় তা নিয়ে পুলিশের আইনি দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত অনেক ঘটনায়ই আর অভিযোগ হয় না৷ তাই এইসব ব্যাপারে তাৎক্ষণিক অভিযোগ নেয়ার কোনো একক ব্যবস্থা চালু করতে হবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘নারীদের জন্য নারী ড্রাইভার ও হেলপার দিয়ে যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস নামানো যায়, তাহলে হয়তো কিছুটা সমাধান আশা করা যায়৷ কিন্তু তারপরও সমস্যা থেকে যাবে৷ অভিযোগ দায়ের এবং অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হলে আমি মনে করি, এই ধরনের ঘটনা কমে আসবে৷ আর বাসে নারীদের যে আসন সংরক্ষণের বিধান আছে, তা সঠিকভাবে কার্যকর করতে হবে৷''
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
11 ছবি1 | 11
বাংলাদেশে গণপরিবহন নারীদের জন্য কতটুকু নিরাপদ? মন্তব্য লিখুন নিচের ঘরে৷