নারীর প্রতি সম্মানই পারে সহিংসতা বন্ধ করতে: জাতিসংঘ মহাসচিব
২৫ নভেম্বর ২০১৮
যতদিন নারীরা নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না, যতদিন নারীদের নিরাপত্তা ও সহিংসতা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হবে, ততদিন বিশ্ব নারীদের সমানাধিকারের ব্যাপারে অহংকার করতে পারবে না, বলেন জাতিসংঘ মহিসচিব৷
বিজ্ঞাপন
যতদিন নারীরা নির্ভয়ে এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না, যতদিন নারীদের নিরাপত্তা এবং সহিংসতা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হবে, ততদিন বিশ্ব নারীদের সমানাধিকারের ব্যাপারে অহংকার করতে পারবে না৷
২৫ শে নভেম্বর ‘আন্তর্জাতিক নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা অবসান দিবস'৷ এ উপলক্ষ্যে চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ মহিসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই কথাগুলো বলেন৷
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে দিবসটি উপলক্ষ্যে এক বিশেষ আয়োজনে গুতেরেস বলেন, ‘‘নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বিশ্বব্যাপী মারণব্যাধি ক্যানসারের মতো রূপ নিয়েছে৷ এর ফলে অনেক নারী অল্পবয়সে মৃত্যুবরণ করছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি এত সহিংসতা বাড়ার কারণ হলো নারী ও মেয়েদের প্রতি সম্মানের অভাব এবং পুরুষরাই এজন্য দায়ী৷ কেননা তারা সমাজে নারীদের সমানাধিকার দিতে প্রস্তুত নয় এবং নারীদের প্রাপ্য সম্মানটুকু তারা দেয় না৷ ''
জাতিসংঘ মহাসচিবের তত্ত্বাবধানে দিবসটি উপলক্ষ্যে ১৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে৷ এই প্রচারণার নাম দেয়া হয়েছে ‘ইউনিটি ক্যাম্পেইন'৷ এর আওতায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে তারা বিশ্বব্যাপী নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়৷
এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘‘অরেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড: হ্যাশট্যাগ হেয়ারমিটু''৷ বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ‘কমলা' রংকে বেছে নেয়া হয়েছে গতবছরের মতো৷ বিশ্বের সব দেশের নারী, যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন বা বেঁচে ফিরে এসেছেন তাদের কথা বলার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে জাতিসংঘ৷
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
নারী বিষয়ক অধিকার নিয়ে কাজ করা ৫৫০ বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রেক্ষিতে পরিচালিত এক জরিপের ফলে ‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক’ দেশের তালিকার শীর্ষে এসেছে ভারত৷ থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের জরিপটি ছবিঘরে দেখে আসি জরিপের খুঁটিনাটি৷
ছবি: Imago/Indiapicture
ভারতীয় নারী
‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত ভারতে প্রতিদিন একশ’ নারীর ওপর যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের অভিযোগ পায় পুলিশ৷ ২০১৬ সালে ভারতের পুলিশ প্রায় ৩৯ হাজার নারীর ওপর আক্রমণ বা হয়রানির অভিযোগ পেয়েছিল, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি ছিল৷ ভারতের নারীরা যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ ছাড়াও, পাচার, জোর করে কাজ করানো, আয় বৈষম্য, অ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Reuters/P. Ravikumar
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান
২০১১ সালে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন পরিচালিত একই শিরোনামের প্রথম জরিপটিতে নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় আফগানিস্তান ছিল প্রথমে৷ এবার তালিকায় তাদের অবস্থান দুই নম্বরে৷ তালিকায় যে সাতটি বিষয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়েছিল, তার চারটি বিষয়ে আফগানিস্তান সবচেয়ে কম পয়েন্ট পেয়েছে৷ লৈঙ্গিক নিপীড়ন, ব্যবহার, নিরক্ষরতা, দারিদ্র ইত্যাদি প্রশ্নে আফগানিস্তান এখনো নারীদের জন্য নরক৷
ছবি: AP
সিরিয়া
সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর উত্থান এবং যুদ্ধ সেদেশের নারীদের জন্য তৈরি করেছে ভয়ংকর পরিবেশ৷ ২০১১ সালে একই তালিকায় সিরিয়া প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ছিল না৷ তারাই এবার উঠে এসেছে তিন নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/Anadolu Agency/M. Abdullah
আফ্রিকার তিন দেশ
সোমালিয়া, কঙ্গো আর নাইজেরিয়ার নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় যথাক্রমে চতুর্থ, সপ্তম এবং নবম স্থানে রয়েছে৷ এদের মধ্যে সোমালিয়া প্রায় দুই দশক ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত৷ এর আগের তালিকায় সোমালিয়ার অবস্থান ছিল ৫ নম্বরে৷ এদিকে ২০১১ সালের তুলনায় জরিপের ফল অনুযায়ী রিপাবলিক কঙ্গোর অবস্থান কিছুটা ভালো হয়েছে৷ তারা এর আগে তালিকায় দুই নম্বরে ছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
সৌদি ও পাকিস্তান
আগের তালিকায় পাকিস্তান ছিল তিন নম্বরে, অর্ধযুগের বেশি সময় পরে চালানো জরিপে তাদের অবস্থান ছয় নম্বরে৷ এদিকে সম্প্রতি নারীবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিলেও সৌদি আরব নারী অধিকার ও নিপীড়নের প্রশ্নে, এখনো বিশ্বে নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশের তালিকাতে শীর্ষের দিকেই রয়ে গেছে৷ সৌদির অবস্থান নতুন তালিকায় ৬ নম্বরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
জরিপ
জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ টি দেশের ওপর এই জরিপ চালানো হয়৷ জরিপে তালিকার শীর্ষের দেশগুলো আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের৷ যে যে বিষয় জরিপে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: স্বাস্থ্যখাত, নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক চর্চা, যৌন নিপীড়ন, যৌনতা ছাড়া অন্যান্য নিপীড়ণ এবং নারী পাচার৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTO
অ্যামেরিকাও তালিকায়
পশ্চিমের একমাত্র দেশ হিসেবে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় অ্যামেরিকা এসেছে ১০ নম্বরে৷ সম্প্রতি ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন এবং ‘টাইমস আপ’ ক্যাম্পেইনে নারীদের ওপর দেশটিতে প্রচুর যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করায় তালিকায় এসেছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/R. Tivony
7 ছবি1 | 7
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে গঠিত জাতিসংঘ ট্রাস্ট তহবিল বিভিন্ন সংস্থাকে তাদের উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডের জন্য প্রতি বছর পুরস্কৃত করে থাকে৷ গত দুই দশক ধরে এই ট্রাস্ট ১৩৯টি অঞ্চলের ৪৬০টি প্রকল্পে সহায়তা দিয়েছে এবং গত বছর ৬০ লাখ মানুষকে সাহায্য করেছে৷
এত উদ্যোগ সত্ত্বেও লাখো-কোটি নারী প্রতিবছর সহিংসতার শিকার হচ্ছেন৷ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট মারিয়া ফার্নান্দো এসপিনোসা যে পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলেন, তা রীতিমত আতঙ্কজনক৷ তিনি জানান, বিশ্বের ৩৫ ভাগ নারী কোনো না কোনোভাবে শারীরিক ও যৌন হয়রানির শিকার এবং ৩৮ শতাংশ নারীর মৃত্যু হয় স্বামী বা সঙ্গীর নির্যাতনে৷