আসন্ন পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে সংরক্ষিত নারী আসনের প্রতীক নিয়ে তোপের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন৷ তারা এমন সব প্রতীক রেখেছে, যা নারীর জন্য সমতানীতির শুধু পরিপন্থিই নয়, এতে তাদের সনাতনী চিন্তারও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে৷
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশন বা ইসি বাংলাদেশের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের জন্য মোট ১০টি নির্বাচনি প্রতীক বরাদ্দ করেছে৷ এই প্রতীকগুলো হলো: গ্যাসের চুলা, চকলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটি ব্যাগ, আঙুর, কাঁচি, মৌমাছি এবং হারমোনিয়াম৷ এর আগে গত সিটি কর্পোরেশ নির্বাচনেও সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য একই ধরণের প্রতীক রেখে সমালোচনায় পড়েছিল নির্বাচন কমিশন৷ তারপরও তারা সচেতন না হয়ে একই ধরণের প্রতীক রেখেছে পৌর নির্বাচনের জন্য৷
নারীর প্রতীক চুলা, চুড়ি, পুতুল কেন?
এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘‘নারী আজ কেবল চুড়ি পরে ঘরের মধ্যে বন্দি নয়৷ নারীরা আজ বিমান চালাচ্ছে, ট্রেন চালাচ্ছে, রাইফেল, স্টেনগানও চালাচ্ছে৷ তাই আজকের যুগে নারীর প্রতীক শুধুমাত্র চুড়ি, পাটাপুতা ও হাড়ি-পাতিল নয়৷ নারী এখন সব কিছুরই প্রতীক৷'' তাই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘নারীর প্রতীক চুড়ি না হয়ে কেন বিমান হবে না?''
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের এই রকমের দায়িত্বহীনতা দুঃখজনক৷ তিনি একজন নারীকে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘কমিশনার নারী হলে এই সব স্পর্শকাতর বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারবেন৷''
এদিকে মানবাধিকার ও নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন এইসব প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে প্রমাণ করলো যে, তাদের মানসিকতায় কোনে পরিবর্তন হয়নি৷ তারা এখনো ‘জেন্ডার বায়াসড' সমাজের প্রচলিক ধারণা থেকেই নারীদের প্রতীক বরাদ্দ করেছেন৷'' তাই এই প্রতীক বরাদ্দের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং প্রতীক বাতিলের দাবি জানান তিনি৷
কাউকে হেয় করার জন্য প্রতীক নির্ধারণ করিনি
এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা কাউকে হেয় করার জন্য এই প্রতীকগুলো নির্ধারণ করিনি৷ শুধমাত্র একজন প্রার্থীকে চিহ্নিত করার জন্য প্রতীকগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে৷ তাছাড়া এই ১০টি প্রতীকের বাইরেও কিছু প্রতীক আছে৷ কেউ চাইলে সেগুলো পছন্দ করতে পারেন৷''
সিটি নির্বাচনেও প্রতীক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল৷ অথচ তারপরও কেন নির্বাচন কমিশন প্রতীক সংশোধন করেনি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সিটি নির্বাচনের পর নানা কাজের চাপে কমিশন এদিকে খেয়াল রাখতে পারেনি৷ তবে ভবিষ্যতে কাউকে যাতে প্রতীক নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবে নির্বাচন কমিশন৷ এবার অবশ্য প্রতীক পরিবর্তন সম্ভব নয়৷ কারণ প্রতীন পরিবর্তন করতে হলে আরো অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হবে, যা এত অল্প সময়ে সম্ভব নয়৷''
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০শে ডিসেম্বর দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা৷
বাঙালি নারীর দশ গুণ
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ নারীর গুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের পাঠকরা৷ তাঁদের মতামত এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাঙালি নারীর দশগুণ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
আবেগী, স্বাধীনচেতা
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ আবেগ যেমন তাঁদের দ্রুত স্পর্শ করে, তেমনি স্বাধীনতার প্রশ্নে কিন্তু তাঁরা সত্যিকার অর্থে অনড়৷ নিজের সত্ত্বা নিয়ে অহংকার তাঁদের আছে বটে, তবে তার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে রয়েছে অসীম ধৈর্য্য৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
শাড়িতে সবচেয়ে সুন্দর
বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শাড়ি৷ সেই শাড়ি বাঙালি নারীর সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলে চমৎকারভাবে৷ বিভিন্নভাবে শাড়ি পরতে জানেনও তাঁরা৷ আর ‘উপহার হিসেবে শাড়ি’? – কোন বাঙালি মেয়ে না চায় বলুন?
ছবি: DW/A. Islam
উৎসব প্রেমী
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন৷ নববর্ষ, ঈদ কিংবা দুর্গা পূজা – সব উৎসবই যেন বাঙালি নারীর জন্য তৈরি৷ প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরতে এবং সেই উৎসবের উপযুক্ত রান্নায় পারদর্শী তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের পাঠক সুজন খানের কথায়, ‘‘বঙ্গের নারী লাজুক প্রকৃতির, কিন্তু যে কোনো উপলক্ষ্যেই প্রাণ খোলা হাসি উপচে পড়ে তাঁদের৷’’
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
‘নো ডায়েট’
বাঙালি নারী ‘ডায়েট’ করছেন, এমনটা বেশ বিরল৷ তাই খাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা বেশ উদার৷ কথায় বলে না, মাছে-ভাতে বাঙালি? অবশ্য মাছ-ভাতের পাশাপাশি ফুসকা কিংবা চটপটি পেলে তো আর কথাই নেই৷ আসলে টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি, এমনকি তেতোও পছন্দ এই নারীদের৷
ছবি: Debarati Mukherji
রান্নার শখ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই ধরুন৷ দেশ সামলানোর কঠিন দায়িত্ব পালনের মাঝেও রান্না ঘরে যেতে ভোলেন না তিনি৷ গত বছর ছেলের জন্য রান্না করার সময় তোলা তাঁর এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছিল৷ বাঙালি মেয়েরা রাঁধতে যে ভীষণ ভালোবাসেন!
ছবি: Sajeeb Wazed
অল্পতেই সন্তুষ্ট
বাঙালি মেয়েদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা কি খুব কঠিন? না৷ সকলেই জানেন যে, কাজটা সহজই৷ একটি লাল গোলাপ পেলে কিংবা প্রিয় রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলেই তাঁরা সন্তুষ্ট৷ ডয়চে ভেলের পাঠক রন্জু খালেদের মতে, বাঙালি নারীর মধ্যে ‘একইসাথে দৃঢ়তা ও নমনীয়তা এবং প্রজাপতির চপলতা’ রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
কাজল কালো চোখ
জীবনানন্দ দাসের ‘বনলতা সেন’ কিংবা রবি ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’ – বাঙালি নারীর কাজল কালো চোখের প্রশংসা পাবেন অনেক কবির কবিতাতেই৷ সত্যি বলতে কি, বাঙালি নারীর চোখ পুরুষকে টানে সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: N.Seelam/AFP/GettyImages
বাকপটু
বাংলাদেশের কিংবা ভারতের মেয়েরা চুপ করে বসে আছেন – এমন দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন৷ তাঁরা কথা বলতে ভালোবাসেন৷ রান্না থেকে রাজনীতি – সব বিষয়েই একটা মতামত আছে তাঁদের৷ ডয়চে ভেলের পাঠক জিএনএস নয়নের কথায়, ‘‘নারী পুরুষের যে কোনো কষ্ট অতি সহজে ভুলিয়ে দিতে পারে৷ এই গুণই আমাকে মুগ্ধ করে, আবার সাথে অবাকও করে৷’’
ছবি: DW/A. Islam
নারীবাদী
বাঙালি মেয়েরা নারীবাদী৷ বিতর্কিত বাঙালি লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁদের অনেকেরই প্রিয়৷ নাসরিনের ‘আমার মেয়েবেলা’ পড়েনি এমন নারী পাওয়া মুশকিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
ভ্রমণপ্রিয়
বাংলাদেশি কিংবা ভারতীয় বাঙালি নারীর গুণ কি আর অল্পতে জানানো যায়, বলুন? কিছু গুণ না হয় অজানাই থাক৷ তবে একটির কথা বলে শেষ করি, বাঙালি মেয়েরা কিন্তু ঘুরতে খুব ভালোবাসেন৷ তথ্য সহায়তা: ডয়চে ভেলে ফেসবুক পাতা, ইন্ডিয়াওপাইন্স, স্কুপহুপ
ছবি: DW/A. Islam
10 ছবি1 | 10
বন্ধুরা, আপনার মতে নারীর প্রতীক কী হওয়া উচিত? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷