জার্মানিতে প্রতিদিন একজন পুরুষ তার বর্তমান বা সাবেক পার্টনারকে হত্যা করার চেষ্টা করে থাকে৷ আর এ ধরনের অপরাধীরা প্রতি তিনদিনের একদিন সফল হয়ে থাকে৷ এসব অপরাধীদের জন্য যথেষ্ট শাস্তি নেই বলে অভিযোগ দেশের নারী অধিকার সংগঠনের৷
বিজ্ঞাপন
প্রায় দু'বছর আগে ফ্রাংকফুর্ট শহরে ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৫ বছর বয়সি একজন ডাক্তারকে তার সাবেক পার্টনার ১৮ বার ছুরিকাঘাত করে ৷ তার কয়েক মিনিট পরেই এই নারীকে বাড়ির সামনে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ৷সেসময় প্রসিকিউটর ইউলিয়া শেফার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ ওই হত্যাকাণ্ডকে একটি বিশেষ ঘটনা ছিলো বলে উল্লেখ করে ইউলিয়া শেফার বলেন, হত্যাকারী এবং তার সাবেক পার্টনারের মধ্যে যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা ছিলো, পুলিশ তা জানত৷ তা সত্ত্বেও পুরুষটি তার সাবেক সঙ্গীকে ফিরে পেতে চেয়েছে৷ হত্যার দিন তাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে বলে নারীটি জানালে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়৷
হেসে রাজ্যের আইন মন্ত্রণালয়ের ঘরোয়া সহিংসতা বিষয়ক অফিসের প্রধান ইউলিয়া শেফার বলেন ‘‘পার্টনারকে হত্যা করার ঘটনা কখনো হঠাৎ করে ঘটেনা, এগুলোর শুরু সাধারণত ঘরোয়া সহিংসতা, অপমান, লাঞ্ছনা এবং অর্থনৈতিক চাপের কারণে হয়৷ এর পেছনে থাকে দীর্ঘ ইতিহাস৷’’
জার্মান ফুটবলে যৌন সহিংসতা
জার্মানিতে ফুটবল খেলা দেখতে গিয়ে নারীরা বাজে মন্তব্য, যৌন হয়রানি এমনকি ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন৷ নারী ফুটবল ভক্তদের একটি নেটওয়ার্ক জানিয়েছে এমন সব ঘটনার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
বাজে অভিজ্ঞতা
লেনা বহু বছর ধরে মাঠে গিয়ে খেলা দেখেন৷ চলতি মাসে খেলা দেখতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হন তিনি৷ তার সাথে সাথে বন্ধু-বান্ধবী ছাড়া কেউ কোন প্রতিবাদ করেনি৷ বরং তার দিকে আঙ্গুল উচিয়ে হাসাহাসি করছিলো অনেকে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে লেখার পর লেনার অভিজ্ঞতা সত্যি কিনা তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
জরিপ নেই
কত নারী ফুটবল খেলা দেখতে গিয়ে এ ধরণের যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তার নথিভুক্ত কোন সংখ্যা নেই৷ তবে লেনা জানিয়েছেন, তার বান্ধবীদের প্রত্যেকেরই এমন বাজে অভিজ্ঞতা আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Herbertz/MaBoSport
পুলিশের নথিতে যৌন হয়রানির ঘটনা নেই
জার্মান পুলিশ অফিস ফর স্পোর্টস অপারেশনস জেডআইএস এর ক্রিমিনাল রেকর্ডে কেবল ভাংচুর, মারামারি এ ধরনের ঘটনার উল্লেখ আছে, কিন্তু যৌন সহিংসতার কোন ঘটনার উল্লেখ নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে নেটওয়ার্ক
যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি নেটওয়ার্কে অনেকেই ফুটবল খেলা দেখতে গিয়ে যৌন সহিংসতার ঘটনার কথা জানিয়েছেন৷ কেবল ফুটবল ভক্তরাই নন, নারী কর্মীরাও জানিয়েছেন তাদের সঙ্গেও ঘটেছে যৌন হয়রানির ঘটনা৷ নেটওয়ার্কের সদস্য গ্রাবেনহোর্স্ট জানালেন, ধর্ষণের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে ফুটবল স্টেডিয়ামে৷
ছবি: Imago Images/Beautiful Sports
সরকারি পরিসংখ্যান
জার্মান সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি তিনজন নারীর একজন তার জীবনে যৌন হয়রানির শিকার হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hassenstein
২০১৮ সালে ধর্ষণের ঘটনা
২০১৮ সালের এপ্রিলে মিউনিখ থেকে ট্রেনে ফিরছিলো ম্যোনশেনগ্লাদবাখ ক্লাবের অন্তত ৭৫০ ভক্ত৷ ট্রেনে যৌন হয়রানির ঘটনা শুনে মাঝপথেই পুলিশ সেই ট্রেনের টয়লেট থেকে ১৯ বছরের এক নারীকে উদ্ধার করেছিল, যিনি জানিয়েছেন ধর্ষণ করা হয়েছিল তাকে৷ দোষী ব্যক্তিকে আদালত তিন বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড দিলেও আপিলে মুক্তি পায় সে, কারণে মেয়েটি যেহেতু তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে অনিচ্ছুক ছিলো না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিরাপত্তাহীনতা
ওই ঘটনার পর যৌন সহিংসতার শিকার অনেক নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷ তাদের অনেকেরই ধারণা পুলিশের কাছে গেলেও কোন বিচার হবে না৷
ছবি: Imago/Zuma
খোলাখুলি কথা বলা
যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে যে নেটওয়ার্কটি কাজ করছে তারা একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে এ ধরনের সমস্যায় পড়লে নারীরা কি করবে সে বিষয়ে৷ এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে তারা তাৎক্ষণিক সাহায্য চাইতে পারে৷ তবে এ বিষয়ে নারীদের খোলাখুলি কথা বলার পরামর্শ দিয়েছে তারা৷
ছবি: AFP/I. Fassbender
পদক্ষেপ
জার্মানির বেশ কয়েকটি এরই মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে৷ চালু করা হয়েছে নারীদের সাহায্যের জন্য হেল্পলাইন, আলাদা বসার জায়গা৷
ছবি: Imago Images/R. Peters
সবাইকে কথা বলতে হবে
যৌন সহিংসতার শিকার নারীরা যখন অনলাইনে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন. অনেক বাজে মন্তব্য করা হয়৷ তাই নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন কেবল ভুক্তভোগীরাই নন, সবাইকে এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে৷
ছবি: imago/IPON
10 ছবি1 | 10
এসব হত্যার ঘটনাগুলো প্রায়ই পারিবারিক ট্র্যাজেডি, হিংসা বা প্রেমের নাটক অভিহিত করে দেশের গণমাধ্যমকে জানানো হয় বলে অভিযোগ করে জার্মানির নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলো৷ নারী অধিকার সংগঠন টেরে ডেস ফেমেস এর ভানেসা বেল এ বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, গণমাধ্যমকে সেসব কথা বলার কারণে এসব খুন সামগ্রিকভাবে সমাজের সমস্যার চেয়ে ব্যক্তিগত বিষয় এবং একক ঘটনা হয়ে ওঠে৷ নারী সংহিসতার বিষয়গুলো এখনো জার্মানিতে ট্যাবু বিষয় ৷ ২০১৪ সালের ইইউ-এর করা এক গবেষণায় জানা যায়, ঘরোয়া সহিংসতা বা গৃহ নির্যাতনের ঘটনার প্রতি তিনটির একটি পুলিশকে রিপোর্ট করা হয়ে থাকে৷ ফ্রাংকফুর্টের ঘটনায় হত্যার দায়ে অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ঠিকই তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এধরনের অপরাধীরদের দশ বছরের কারাবাসের শাস্তি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তাদের৷
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা সব সমাজের সকল শ্রেণিতেই ঘটে থাকে এবং সর্বত্রই তা প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন ভেনেসা বেল ৷ আইনজীবী জুলিয়া শোফার বলেন, ‘‘ঘরোয়া সহিংসতা ধর্ম, জাতীয়তা বা শিক্ষার প্রশ্ন নয়৷ অনেকেই গৃহ নির্যাতনের ঘটনাকে পারিবারিক বিষয় বলে দূরে সরে থাকেন৷ বরং নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে সকলকেই এগিয়ে আসা উচিত৷’’
জার্মানির নারী অধিকার সংগঠনগুলো আশা করে যে, আগামীতে নারী সহিংসতার বিষয়ে বিচারক এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ আরো জোরদার করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানসিক এবং আইনি পরামর্শের প্রসার ঘটবে৷ জার্মানিতে গৃহ নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য যেসব আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোতে প্রতি বছর ১৬ হাজার নারী আশ্রয় নেয়৷ সেখানে বর্তমানে প্রয়োজন দ্বিগুণ জায়গার৷