নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা: অস্ট্রেলিয়ায় পর্ন সাইটেও নজরদারি
১ মে ২০২৪
প্রায় ১০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বিনিয়োগ করে দেশে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ঠেকাতে চায় অস্ট্রেলিয়া৷ ইন্টারনেটে সহিংস আচরণ ও পর্নোগ্রাফিতেও নজরদারি বাড়াবে তারা৷
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলছে, দেশটিতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বর্তমানে ‘জাতীয় সংকটে' পরিণত হয়েছে৷ পারিবারিক সহিংসতার শিকার যারা, তাদের জন্য প্রায় এক বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার খরচ করবে সরকার৷
শনিবার নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার রাজপথে নামেন কয়েক হাজার মানুষ৷ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে এ বছর প্রতি চার দিনে এক নারী প্রাণ হারিয়েছেন সহিংসতার কারণে৷
এপ্রিল মাসে একটি ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মারা যান পাঁচ নারী৷ একই মাসে আরেকটি আলোচিত ঘটনা থেকে উঠে আসে দেশের সংসদের ভেতর ঘটে যাওয়া একটি ধর্ষণের খবরও৷
সমাধানের যে পথ দেখালেন প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় ও আঞ্চলিক নেতৃত্বের সাথে একটি জরুরি বৈঠকের পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যানথনি অ্যালবানিজ পারিবারিক সহিংসতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাওয়া মানুষদের জন্য স্থায়ী অর্থ সাহায্য ঘোষণা করেন৷ তিনি জানান, এই খাতে সরকার ৯২৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ব্যয় করবে৷
অ্যালবানিজ বলেন, ‘‘দেশ হিসাবে, সমাজ হিসাবে আমরা কেমন, সেটাই আজ গুরুত্বপূর্ণ৷ এটা শুধু সরকারের নয়, গোটা সমাজের জন্যই একটা বিষয়৷ এটা সুশীল সমাজের বিষয়, গণমাধ্যমের বিষয়, সবার জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ এটা৷’’
ইন্টারনেটেও কড়াকড়ি
নতুন আইন প্রণয়ন করে পর্নোগ্রাফিতে ডিপফেক প্রযুক্তির ব্যবহার ও অংশগ্রহণকারীদের সম্মতি ছাড়া পর্নছবি বানানো নিষিদ্ধ করবে অস্ট্রেলিয়া৷ ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ভিডিওতে আরেকজনের চেহারা বসানো যায়৷
২০২২ সালের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত, নিজের সঙ্গীর হাতে খুন হন ৩৪জন নারী, যা এর আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি৷ গোটা দেশে একই সময়ে খুনের হার বেড়েছে চার শতাংশ৷
এছাড়া ইন্টারনেটে ‘ক্ষতিকর ও চরমপন্থি পুরুষালী’ আচরণের সমালোচনা করে অ্যালবানিজ ইন্টারনেটে পর্ন ব্যবহারে কড়াকড়ি বাড়ানোর কথা বলেন৷ সাথে ডিজিটাল দুনিয়ায় নারীর প্রতি সুআচরণ বজায় রাখতেও উৎসাহিত করেন তিনি৷
প্রথমে সাড়ে ষাট লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার বিনিয়োগ করে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হবে, যা শিশুদের ইন্টারনেটে অনুপযুক্ত কন্টেন্ট থেকে দূরে রাখবে৷ এই প্রকল্পের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নতুন নিয়ম চালু হবে অনলাইন সংস্থাগুলোর জন্য, যেটি ঠিক করবে দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা পরিচালন সংস্থা বা ই-সেফটি কমিশনারের কার্যালয়৷
কিন্তু এই কাজ যে সহজ নয়, তার স্পষ্ট উদাহরণ সাম্প্রতিক একটি মামলা৷
অস্ট্রেলিয়ার ই-সেফটি কমিশনার বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) প্রকাশিত একটি পোস্ট নিয়ে আইনি মারপ্যাঁচে পড়েছেন৷ সেই পোস্টে এক পাদ্রীকে প্রার্থনা চলাকালীন ছুরিকাঘাতের ভিডিও রয়েছে৷ এক্স-এর তরফে ইলন মাস্ক বলছেন, এই ভিডিও সরানো আসলে ‘সেন্সরশিপ' বা মতপ্রকাশে বাধা৷
প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, ইন্টারনেট কন্টেন্টে নজরদারি যে সত্যিই কঠিন, সে বিষয়ে সরকার অবগত এবং তারা বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না৷
অ্যালবানিজ বলেন, ‘‘সবার জন্য উন্মুক্ত ইন্টারনেটের যে ঠিক কেমন প্রভাব পড়ে, তা ডিজিটাল সংস্থাগুলোর বুঝতে হবে৷’’
এসএস/এসিবি (রয়টার্স)
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে যে দশটি কাজ করতে পারেন
বিশ্বের সবদেশেই কমবেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে তাদের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে উঠেছে৷ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইম্যান নারীদের সুরক্ষায় সহায়তার দশটি উপায়ের কথা জানিয়েছে৷
ছবি: Daniel Mihaulescu/AFP/Getty Images
ভুক্তভোগীর কথা শুনুন
একজন নারী সহিংসতার শিকার হওয়ার পর মুখ খোলার অর্থ হচ্ছে, তিনি সেই সহিংস পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছেন৷ তখন সমাজের সবার উচিত তিনি যাতে তার কথা বলতে পারেন, সেরকম নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং তার কথা শোনা৷ এক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার নারীর পোশাক, যৌন পরিচয় বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকেই দায়ী করার চেষ্টার বিপরীতে অবস্থান নিতে হবে৷
ছবি: Maurizio Gambarini/dpa/picture alliance
পরবর্তী প্রজন্মকে শেখান
আমরা পরবর্তী প্রজন্মের সামনে যে উদাহরণগুলো তৈরি করবো সেগুলো ভবিষ্যতে লিঙ্গ, সম্মান এবং মানবাধিকার বিষয়ে তাদের মনোভাব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে৷ যেসব প্রচলিত ধ্যানধারণায় ভুল আছে, সেগুলো সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করতে হবে৷ তাদের মধ্যে যে যেমন, তাকে সেভাবে গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে৷ পাশাপাশি পৃথিবী সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মের মতামতও শুনতে হবে৷
ছবি: Aref Karimi/DW
ভুক্তভোগীর সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি করুন
সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তি যাতে দ্রুত সহায়তা পেতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে৷ দ্রুত সহায়তা বলতে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, হটলাইন, পরামর্শের মতো বিষয়গুলো, যাতে ভুক্তভোগীর নাগালের মধ্যে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. May
সম্মতির বিষয়টি বুঝতে হবে
একজন মানুষ মুক্তভাবে এবং উৎসাহের সাথে সম্মতি দিচ্ছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷ যৌনতায় একজন নারী সম্মতি দিচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হবে৷ ‘‘সে এটা চেয়েছিল’’ বা ‘‘ছেলেরা এমনই’’ এ ধরনের কথাবার্তা বলে একজন নারীর সম্মতি প্রদানের বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ তৈরি করা যাবে না৷
নিগ্রহের নানা রূপ আছে এবং নির্যাতনের কারণে ভুক্তভোগীর উপর মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়তে পারে৷ আপনার যদি মনে হয় যে, আপনার কোনো বন্ধু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাহলে তাকে সহায়তার চেষ্টা করুন৷ আপনার যদি মনে হয় কেউ আপনাকে নিপীড়ন করছে, তাহলে তা প্রতিরোধে সহায়তা নিন৷
ছবি: Imago Images/Panthermedia
আলোচনা করুন
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘন, যা দশকের পর দশক ধরে ঘটছে৷ এই চর্চা বিস্তৃত হলেও অবধারিত নয়, যদি আমরা চুপ না থাকি৷ ফলে নারীর প্রতি সহিংতার বিপরীতে শক্তভাবে অবস্থান নিন৷
ছবি: Frank Hoermann/Sven Simon/imago images
প্রতিবাদ করুন
ধর্ষণ সংস্কৃতি হচ্ছে এমন এক সামাজিক পরিবেশ, যেখানে যৌন সহিংসতাকে স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ যুগ যুগ ধরে চলে আসা লিঙ্গ-বৈষম্য আর লিঙ্গ ও যৌনতা বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণার কারণে বিষয়টি এমন হয়েছে৷ ধর্ষণ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে সবার উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Christin Klos/dpa/picture alliance
নারী বিষয়ক সংগঠনগুলোকে সহায়তা করুন
নারী অধিকার এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করা স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সাধ্যমতো সহায়তা করতে পারেন৷ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এই বিষয়ক স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছে৷
ছবি: Asif Hassan/AFP/Getty Images
জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন
কর্মক্ষেত্রে বা জনপরিসরে যৌন নিপীড়নসহ সহিংসতা নানাভাবে ঘটতে পারে৷ আপনার সামনে আপত্তিকর কিছু ঘটলে প্রতিবাদ করুন৷ এভাবে সবার জন্য নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করতে পারেন আপনি৷
ছবি: Beata Zawrzel/NurPhoto/picture alliance
পরিসংখ্যান দেখুন এবং আরো দাবি করুন
লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হলে বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে৷ আর এজন্য এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানলে সে অনুযায়ী উদ্যোগী হওয়া সম্ভব