জার্মানিতে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ জার্মানির ক্রিমিনাল পুলিশ বিকেএ-র প্রথমবারের মতো প্রকাশিত ‘‘নারীর বিরুদ্ধে লিঙ্গভিত্তিক অপরাধ ২০২৩'' প্রতিবেদন বলছে সেবছর ৩৬০ নারীকে হত্যা করেছেন পুরুষরা৷ এসবের অধিকাংশ ঘটেছে দাম্পত্য কলহ বা বিচ্ছেদের সময়৷
প্রতিবেদনটি অক্টোবরে প্রকাশের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেইজার বলেন, ‘‘আমরা প্রায় প্রতিদিনই জার্মানিতে একজন করে নারী খুন হতে দেখছি৷ তারা নারী বলে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন৷ এটা অসহনীয় ব্যাপার৷''
বিকেএ-র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১৫৫ নারী তাদের সঙ্গী বা প্রাক্তন সঙ্গীর হাতে খুন হয়েছেন৷
যুক্তরাষ্ট্রে নারীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ সহিংসতা
ভায়োলেন্স পলিসি সেন্টারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মহামারির মতো বাড়ছে৷ এখন পরিচিত পুরুষদের কাছেও নারী আর নিরাপদ নয়৷ নিহত ও তাদের পরিবারকে নিয়ে তৈরি করা ছবিঘরে জানুন বিস্তারিত...
ছবি: REUTERS
মা হারানো নিকোল
ভায়োলেন্স পলিসি সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে খুন হওয়া ৯০ ভাগ নারীরই ঘাতক তাদের পরিচিত পুরুষ৷ ওপরের ছবিতে মা হিদার হার্লির ছবি দেখাচ্ছেন নিকোল শার্প৷ নিকোল যখন কিশোরী, তখনই নিউইয়র্কে মাকে খুন করে তার বাবা উইনস্টন রিচার্ডস৷
ছবি: Magali Druscovich/REUTERS
বাবার কারাদণ্ড
নিকোলের বিছানায় হিদার হার্লির বিয়ের পোশাক৷ এখন ছবি, পোশাক ইত্যাদির মাঝেই মা-কে খোঁজেন নিকোল৷ মা-কে হত্যার দায়ে বাবার ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয় ১৯৯৩ সালে৷
ছবি: Magali Druscovich/REUTERS
সন্তানহারা মা
মেয়ে জ্যাকি ডেফো এবং নাতি কেভিন শ্যাবিয়াশের সমাধিতে ট্যামি সুয়োমি৷ জ্যাকি আর কেভিনকে হত্যার অভিযোগে শেলডন থম্পসনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ মামলার শুনানি চলছে মিনেসোটার ডুলুথ শহরের আদালতে৷ ২০২০ সালের মার্চে ১৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা জ্যাকি আর তার ২১ মাসের সন্তান কেভিনকে পিটিয়ে, ছুরি মেরে হত্যা করে শেল্ডন থম্পসন৷
ছবি: Magali Druscovich/REUTERS
হাসিখুশি জ্যাকি
ট্যামি সুয়োমির সারাক্ষণের সঙ্গী এখন মেয়ে জ্যাকি আর নাতি কেভিনের স্মৃতি৷ ওপরে কিশোরী জ্যাকি ডেফোর কয়েকটি ছবি৷
ছবি: REUTERS
ঘাতক যখন বয়ফ্রেন্ড
ডেল কুক এই নেকলেস কখনো খোলেন না৷ সবসময় এটা পরে থাকেন, কারণ, এতে আছে তার মেয়ে হেলেন বুচেল আর নাতনি ব্রিটানি প্যাসালাকুয়ার ছবি৷ হেলেনের বয়স যখন ৩৪ আর ব্রিটানির ১২, তখন তাদের ছুরি মেরে হত্যা করে জন ব্রাউন৷ জন ছিলেন হেলেনের বয়ফ্রেন্ড৷ ২০১০ সালে ৪০ বছরের কারাদণ্ড হয় তার৷
ছবি: REUTERS
বন্ধুর ভালোবাসা
ট্যামি সুয়োমির সারা বাড়িতেই এখন মেয়ে ক্যাকি ডেফো এবং নাতি কেভিন শ্যাবিয়াশের স্মৃতি৷ নিহত মা-ছেলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নানা কিছু তৈরি করে নিয়ে আসেন বন্ধুরা৷ ওপরের ছবিতে তারই কিছু নিদর্শন৷
ছবি: REUTERS
6 ছবি1 | 6
আইনজীবী কোরিনা ভেরান ইটসচার্ট কয়েকটি ছোট শিশুসহ এক নারীর কথা স্মরণ৷ বিচ্ছেদের দুই বছর কোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাকে তার স্বামী অনুসরণ করতেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সেই নারীর স্বামী তাকে বাড়ির প্রবেশমুখে হত্যা করেন৷''
এরকম ঘটনা আরো বেশ কয়েকটি ঘটেছে৷ নারীদের জন্য সুরক্ষাকেন্দ্র থাকলেও হত্যা থেমে নেই৷
জার্মানিতে নারী হত্যাকে আলাদা কোনো ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত করা হয় না৷ খুনিদের বিরুদ্ধে খুন বা নরহত্যার অভিযোগ আনা হয়৷
এক জরুরী চিঠিতে বিভিন্ন অধিকার সংগঠন এবং ত্রিশ হাজারের মতো একক ব্যক্তি জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারকে ২০২১ সালে জোট গড়ার সময়ের এক ঐক্যমত্যের কথা উল্লেখ করে দিয়েছেন৷ জোট সরকারে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো সেসময় ‘‘সহিংসতার শিকারদের আরো ভালো সুরক্ষা দেয়ার জন্য আইন তৈরির'' কথা বলেছিল৷ গৃহনির্যাতনবিরোধী সেই আইনের খসড়া তৈরি হলেও তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতার জন্য ঝুলে আছে৷
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে যে দশটি কাজ করতে পারেন
বিশ্বের সবদেশেই কমবেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে তাদের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে উঠেছে৷ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইম্যান নারীদের সুরক্ষায় সহায়তার দশটি উপায়ের কথা জানিয়েছে৷
ছবি: Daniel Mihaulescu/AFP/Getty Images
ভুক্তভোগীর কথা শুনুন
একজন নারী সহিংসতার শিকার হওয়ার পর মুখ খোলার অর্থ হচ্ছে, তিনি সেই সহিংস পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছেন৷ তখন সমাজের সবার উচিত তিনি যাতে তার কথা বলতে পারেন, সেরকম নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং তার কথা শোনা৷ এক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার নারীর পোশাক, যৌন পরিচয় বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকেই দায়ী করার চেষ্টার বিপরীতে অবস্থান নিতে হবে৷
ছবি: Maurizio Gambarini/dpa/picture alliance
পরবর্তী প্রজন্মকে শেখান
আমরা পরবর্তী প্রজন্মের সামনে যে উদাহরণগুলো তৈরি করবো সেগুলো ভবিষ্যতে লিঙ্গ, সম্মান এবং মানবাধিকার বিষয়ে তাদের মনোভাব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে৷ যেসব প্রচলিত ধ্যানধারণায় ভুল আছে, সেগুলো সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করতে হবে৷ তাদের মধ্যে যে যেমন, তাকে সেভাবে গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে৷ পাশাপাশি পৃথিবী সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মের মতামতও শুনতে হবে৷
ছবি: Aref Karimi/DW
ভুক্তভোগীর সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি করুন
সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তি যাতে দ্রুত সহায়তা পেতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে৷ দ্রুত সহায়তা বলতে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, হটলাইন, পরামর্শের মতো বিষয়গুলো, যাতে ভুক্তভোগীর নাগালের মধ্যে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. May
সম্মতির বিষয়টি বুঝতে হবে
একজন মানুষ মুক্তভাবে এবং উৎসাহের সাথে সম্মতি দিচ্ছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷ যৌনতায় একজন নারী সম্মতি দিচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হবে৷ ‘‘সে এটা চেয়েছিল’’ বা ‘‘ছেলেরা এমনই’’ এ ধরনের কথাবার্তা বলে একজন নারীর সম্মতি প্রদানের বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ তৈরি করা যাবে না৷
নিগ্রহের নানা রূপ আছে এবং নির্যাতনের কারণে ভুক্তভোগীর উপর মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়তে পারে৷ আপনার যদি মনে হয় যে, আপনার কোনো বন্ধু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাহলে তাকে সহায়তার চেষ্টা করুন৷ আপনার যদি মনে হয় কেউ আপনাকে নিপীড়ন করছে, তাহলে তা প্রতিরোধে সহায়তা নিন৷
ছবি: Imago Images/Panthermedia
আলোচনা করুন
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘন, যা দশকের পর দশক ধরে ঘটছে৷ এই চর্চা বিস্তৃত হলেও অবধারিত নয়, যদি আমরা চুপ না থাকি৷ ফলে নারীর প্রতি সহিংতার বিপরীতে শক্তভাবে অবস্থান নিন৷
ছবি: Frank Hoermann/Sven Simon/imago images
প্রতিবাদ করুন
ধর্ষণ সংস্কৃতি হচ্ছে এমন এক সামাজিক পরিবেশ, যেখানে যৌন সহিংসতাকে স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ যুগ যুগ ধরে চলে আসা লিঙ্গ-বৈষম্য আর লিঙ্গ ও যৌনতা বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণার কারণে বিষয়টি এমন হয়েছে৷ ধর্ষণ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে সবার উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Christin Klos/dpa/picture alliance
নারী বিষয়ক সংগঠনগুলোকে সহায়তা করুন
নারী অধিকার এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করা স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সাধ্যমতো সহায়তা করতে পারেন৷ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এই বিষয়ক স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছে৷
ছবি: Asif Hassan/AFP/Getty Images
জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন
কর্মক্ষেত্রে বা জনপরিসরে যৌন নিপীড়নসহ সহিংসতা নানাভাবে ঘটতে পারে৷ আপনার সামনে আপত্তিকর কিছু ঘটলে প্রতিবাদ করুন৷ এভাবে সবার জন্য নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করতে পারেন আপনি৷
ছবি: Beata Zawrzel/NurPhoto/picture alliance
পরিসংখ্যান দেখুন এবং আরো দাবি করুন
লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হলে বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে৷ আর এজন্য এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানলে সে অনুযায়ী উদ্যোগী হওয়া সম্ভব