টোয়েন্টিফোর-সেভেন, মহিলারা তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে পারেন এই নম্বরে, যে সব মহিলারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন এই জার্মানিতেই৷ ১৫টি ভাষায় তাঁদের পরামর্শ, সান্ত্বনা কিংবা সাহায্য দেবার জন্য রয়েছেন কর্মীরা৷
বিজ্ঞাপন
এক মহিলাকে তাঁর স্বামী পেটে লাথি মেরে একাই ছুটি কাটাতে চলে গেছে৷ যাবার সময় মহিলার ব্যাংক কার্ড ও বাড়ির চাবি, দুটোই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছে আর দশ ইউরো দিয়ে গেছে কুকুরের খাবার কেনার জন্য৷ তারপর নিপীড়িতা মহিলা ‘‘নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা'' ত্রাণ-টেলিফোনের শরণাপন্ন হয়েছেন৷ টেলিফোনে তাঁকে পেটের ব্যথার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে বলা হয়৷ এছাড়া তাঁকে উইমেন্স সেন্টার আউটরিচ ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়৷
এ যাবৎ ১২ হাজার মহিলা এই সরকারি ত্রাণ-টেলিফোনের সাহায্য নিয়েছেন৷ এই টেলিফোন সম্পূর্ণ গোপনীয়, দাতব্য এবং ২৪ ঘণ্টা ধরে এখানে লোক থাকে৷ মহিলারা কী এবং কতটা বলতে চান, তাঁদের নামধাম, বয়স, ঠিকানা গোপন রাখতে চান কিনা, এ সবই তাঁরা নিজেরাই নির্ধারণ করেন৷ তাঁদের কাহিনিও হয় সেইরকম বিচিত্র: শারীরিক নিপীড়ন, জোর করে বিয়ে দেওয়া, ‘স্টকিং' অর্থাৎ পিছু নেওয়া থেকে শুরু করে মানুষ পাচার অর্থাৎ বেশ্যাবৃত্তি, সবরকমের জগৎ ও অভিজ্ঞতা৷ বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী জার্মানিতে প্রত্যেক তৃতীয় মহিলা কখনো না কখনো সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷
জার্মানিতে পতিতাবৃত্তির বিরোধিতা
পতিতাবৃত্তি আইন পুনর্বিবেচনা করার পরিকল্পনা করছে জার্মানির ভবিষ্যত সরকার৷ নারী অধিকার কর্মীরা চান আইন করে এই পেশায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক৷
ছবি: AFP/Getty Images
পতিতাবৃত্তি আইন পুনর্বিবেচনা
পতিতাবৃত্তি আইন পুনর্বিবেচনা করার পরিকল্পনা করছে জার্মানির ভবিষ্যত সরকার৷ রক্ষণশীল এবং সামাজিক গণতন্ত্রকামী যে দুটো দলের সমন্বয়ে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তারাই আইনটি পুনর্বিবেচনার পক্ষে৷
ছবি: Isabel Winarsch
বৈধ পেশা
জার্মানিতে পতিতাবৃত্তি বৈধ৷ ২০০২ সালে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি এবং গ্রিন পার্টি জার্মানিতে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দিয়ে একটি আইন পাস করে৷ এরপর থেকে এটি একটি বৈধ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে৷ যৌনকর্মীরা চাইলেই সামাজিক বিমা পেতে পারে এবং কোনো খদ্দের অর্থ না দিলে আদালতের দারস্থ হতে পারে৷
ছবি: imago/EQ Images
কোটি কোটি টাকার লেনদেন
জার্মান কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে কেবল পতিতাবৃত্তিতেই লেনদেন হয় ১৫শ কোটি ইউরো৷ তবে ঠিক কত নারী এই পেশায় জড়িত তা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও ধারণা করা হয় অন্তত ৪ লাখ নারী এ পেশায় জড়িত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অর্ধেক অভিবাসী
প্রায় চার লাখ যৌনকর্মীর অর্ধেকই এসেছে বিভিন্ন দেশ থেকে৷ অর্থাৎ জার্মানিতে তারা অভিবাসী৷ অনেককে পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করা হয়েছে৷ এখন তারা আর চাইলেও সেখান থেকে বের হতে পারছে না৷ আবার কেউ রয়েছেন যারা কেবল অর্থ রোজগারের আশায় এই পথ বেছে নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance / rolf kremming
নিবন্ধিত না হওয়া
যৌনকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের বেশিরভাগই নিবন্ধিত নন এবং তাদের কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই৷ কেন্দ্রীয় পেশাজীবী সংস্থা বলছে, শতকরা মাত্র ৪৪ জন যৌনকর্মী সামাজিক বিমা করেছেন৷
ছবি: Reuters
নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি
নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, বেশিরভাগ নারীই নিজের ইচ্ছায় এই পেশায় আসেন না৷ ইউরোপের পূর্বাঞ্চল থেকে অনেক নারীদের জোর করে এই ব্যবসায় নামানো হয়৷ তারা এটাকে আধুনিক দাসপ্রথা হিসেবে উল্লেখ করে এই পেশায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন৷ সেইসাথে আইনটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তারা৷
ফ্রান্সের পতিতাবৃত্তি
ফ্রান্সে গত কয়েক দশক ধরেই যৌন পল্লি এবং যৌন ব্যবসা দুটোই নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ খদ্দেরদের হাতেনাতে ধরতে পারলে ১,৫০০ ইউরো জরিমানা ধার্য করে আইন করেছে সরকার৷ সমালোচকরা বলছেন, এর অর্থ নারীরা খদ্দেরদের সেবা দিতে প্রস্তুত, কিন্তু খদ্দেররা তা নিতে পারবে না৷ তাই বিলটি নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে৷
ছবি: picture-alliance/rolf kremming
সুইডেনের আইনে ফ্রান্স
ফ্রান্স এই আইন করেছে মূলত সুইডেনের আইন পর্যালোচনা করে৷ সেখানে ১৯৯৯ সাল থেকে যৌন ব্যবসার খদ্দেরদের শাস্তির আওতায় আনা হয়৷ সেসময় সুইডেনে পতিতাবৃত্তির বৈধতা দেয়া হয়৷ তবে এর ফলে এইসব পতিতাদের উপর নির্যাতন ও ধর্ষণের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে বলে জার্মান পত্রিকা ডের স্পিগেলকে জানিয়েছেন হাসপাতালের একজন নার্স৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
‘‘নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা'' টেলিফোনের নম্বর বাস-ট্রাম-মেট্রো ছাড়াও রাস্তার বিজ্ঞাপনে কিংবা ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে৷ অনেক মহিলার পক্ষেই এই টেলিফোন হলো সহিংসতার হাত থেকে মুক্তি পাবার পথে প্রথম পদক্ষেপ৷ অপরদিকে ত্রাণ-টেলিফোনে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের পক্ষে এই প্রথম সংযোগটাই বহুক্ষেত্রে শেষ সংযোগ, কেননা সাহায্যপ্রার্থী মহিলাদের জীবনের পরের পদক্ষেপগুলির হিসাব রাখা তাঁদের কাজ নয়: তাঁরা হলেন এক ধরণের ফার্স্ট এইড৷
ইন্টারনেটের যুগে টেলিফোনের মতো ই-মেলের মাধ্যমেও পরামর্শ নেওয়া চলে৷ অপরদিকে জার্মানিতে অভিবাসী পরিবারগুলির সদস্য মহিলাদেরও সাহায্য করার প্রয়োজন এবং প্রচেষ্টা আছে, যে কারণে এই ত্রাণ টেলিফোনে মাত্র ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে একজন অনুবাদক, অর্থাৎ দোভাষীরও ব্যবস্থা করা যায় – এবং সেটা ১৫টি বিভিন্ন ভাষায়৷ এ যাবৎ তুর্কি এবং পোলিশ ভাষাতেই সবচেয়ে বেশি দোভাষীর প্রয়োজন পড়েছে, তার পরে আসছে আরবি, ইংরিজি ও রুশ ভাষা৷ ত্রাণ-টেলিফোনের ওয়েবসাইটটিও জার্মান ছাড়া ইংরিজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, রুশ ও তুর্কি ভাষায় দেখা যায়৷
২০১৩ সালের ৬ই মার্চ এই ত্রাণ-টেলিফোন চালু হওয়ার পর প্রথম আধ ঘণ্টায় টেলিফোন বেজেছিল ২০ বার৷ আজ দিনে শ'দেড়েকের বেশি ফোন আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়৷