1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারীর মর্যাদা: প্রত্যাশা অনেক, প্রাপ্তি নগণ্য

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশে নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করা নিয়ে নানা কথা আর আলোচনা হলেও বাস্তব চিত্র কি সন্তোষজনক? প্রতিদিনের নানা ঘটনায় কি আশাবাদী হওয়ার ইঙ্গিত আছে?

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বরে ঢাকায় জাতীয় সংসদের সামনে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

নাদিয়া শারমিন এখন একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার৷  ২০১৩ সালে তিনি একুশে টেলিভিশনের কাজ করতেন৷ ২০১৩ সালের ৬ মে হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরের ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি৷ তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল পুরানা পল্টন এলাকায়৷ অভিযোগ, নারী হয়ে হফাজতের কর্মসূচি কাভার  করতে যাওয়ার ‘অপরাধে' তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন৷  নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘‘যখন আমাকে আক্রমণ করা হয়, তখন প্রথমেই যে কথাটা বলা হয়, আপনি মহিলা মানুষ হয়ে এখানে কেন এসেছেন?’’

তিনি জানান, ওই দিন তিনি আক্রান্ত হওয়ার আগে একজন নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মীও আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন৷ আর সর্বশেষ হেফাজতের হরতালের সময়ও দুইটি বেসরকারি টেলিভিশনের দুইজন নারী সাংবাদিক আক্রান্ত হন৷

নাদিয়া শারমিনের আক্রান্ত হওয়ার সেই ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করেছিল৷ তার ওপর আক্রমণের ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ তিনি তখন পুলিশকে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু কোনো বিচার পাওয়া তো দূরের কথা তদন্তই হয়নি৷ নাদিয়া জানান, ‘‘আমি সুস্থ হওয়ার পর ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর একবার আমাকে পুলিশ ডেকেছিল৷ তারপর আট বছরেও আর কোনো খবর নাই৷’’

যে যার মতো তার স্বার্থ আদায় করে নেয়

This browser does not support the audio element.

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের এক রিসোর্টে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিতর্কিত ঘটনায় সব কিছুকে পিছনে ফেলে আলোচনায় চলে আসেন এক নারী৷ কিছু সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি, ভিডিও, নাম পরিচয় সবই প্রকাশ করা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, টেলিফোনে তার ব্যক্তিগত কথোপকথনের রেকর্ডও অবিকৃতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে৷ ওই  নারীর এক সন্তানের ছবি, ভিডিও এবং অডিও প্রকাশ করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘‘দিনের শেষে দেখবেন যতটা না মামুনুল হক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ওই নারী৷  তার সন্তানরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ তার সন্তানদের সারাজীবন ক্ষত বহন করতে হবে৷’’

‘‘আর এই ঘটনা আবার প্রমাণ করলো যে নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি,’’ বলেন তিনি৷

নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘‘নারী যদি ভিকটিম হন, তাহলে যেকোনোভাবে তার পরিচয় প্রকাশ করা সরাসরি আইন বিরুদ্ধ৷ তবে  প্রশ্ন হলো, নারী ভিকটিম, না কোনো অপরাধের সহযোগী? মামুনুল হকের ঘটনার কেন্দ্রে  সে নিজেই৷ কিন্তু ওই নারীর সংশ্লিষ্টতা কী? তিনি ভিকটিম হলে তার নাম পরিচয়, ছবি, ভিডিও এসবের কিছুই প্রকাশ করা ঠিক হয়নি৷”

নারীর প্রতি সম্মান দেখানো  নিয়ে অনেক কথা হলেও সার্বিক পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না৷ আর অসম্মানের বিষয়টি সবখানে৷ নারী চলাফেরা করতে গিয়ে, কর্মক্ষেত্রে অসম্মানের শিকার হচ্ছেন৷ নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে,  সংবাদমাধ্যমে ভাষার ব্যবহারেও অসম্মানের দিকটি স্পষ্ট৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ডা. সানজিদা আখতার বলেন, ‘‘আমাদের এখানে নারীর প্রতি সম্মান দেখানোর মানসিকতার যে একদম উন্নতি হচ্ছে না তা নয়৷ তবে তা এখনো বলার মতো না৷ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের আলাপচারিতা থেকে শুরু করে পাবলিক প্লেস সবখানেই নারীকে অসম্মান করার প্রবণতা স্পষ্ট৷ এমনকি ভাষার ব্যবহারেও জেন্ডার বৈষম্য আছে, যদিও সেখানে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে৷’’ যেমন: পতিব্রতা শব্দটাকে অনেক ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু স্ত্রৈণ শব্দটিকে নেতিবাচবভাবে দেখা হয়৷ স্বামীভক্ত হলে  ভালো, কিন্তু স্ত্রীভক্ত হলে খারাপ৷ নারীর চরিত্র নিয়ে বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ আছে, কিন্তু পুরুষদের জন্য নেই৷ প্রবাদ প্রবচনেও আছে নারীকে হেয় করার প্রবণতা৷ যেমন, ভাগ্যবানের বউ মরে অভাগার গরু৷

সানজিদা আখতার

This browser does not support the audio element.

রোকেয়া প্রাচী উদাহরণ দিয়ে বলেন, নারীকে হেয় করে অনেক বিজ্ঞাপন প্রচার করতে দেখা গেছে৷ সাবানের বিজ্ঞাপনে ওই সাবান ব্যবহার করলে মেয়েটার দিকে তাকায়, তা নাহলে তাকায় না৷ রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করলে নারী সাফল্য পায়, কালো মেয়েকে গুরুত্ব পেতে হলে ফর্সা হতে হয়৷ নাটক-সিনেমা ও সংবাদমাধ্যমে নারীকে অসম্মান করে উপস্থাপনের  অনেক উদাহরণ আছে৷  তার মতে, ‘‘এটা থেকে সবাই সুবিধা নিতে চায়, কেউ এর বিরুদ্ধে কথা বলে না৷ যে যার মতো তার স্বার্থ আদায় করে নেয় বলেই এই অবস্থা৷”

আর নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন সন্ত্রাস, ইভটিজিং তো বাংলাদেশের একটি সাধারণ চিত্র৷ বিশ্লেষকরা এই পরিস্থিতির জন্য শিক্ষা, মূলবোধ ও সচেতনার অভাবকে দায়ী করলেও সমাজবিজ্ঞানী, অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, ‘‘শিক্ষিতরাও নারীকে হেয় করেন৷ তারাও নারীকে অসম্মান করেন৷ অনেক উচ্চ শিক্ষিত আছেন, যারা তার স্ত্রীকে ঘরের কাজের লোক মনে করেন, নির্যাতন করেন৷ এর কারণ দীর্ঘকাল নারীর প্রতি সম্মানের চর্চা না থাকা৷ এটা মুখে বলার বিষয় নয়৷ আমাদের সংস্কৃতি এবং সামাজিক  ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়ই নারীর প্রতি অসম্মানের উপাদান আছে বছরের পর বছর ধরে৷”

সানজিদা আখতার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন নারীকে হেয় বা অসম্মান করার প্রবণতা অনেক বেশি৷ সিনেমা, নাটকে যারা করেন তারা তো করেনই, দর্শকরা সেটা উপভোগও করেন৷ এটা থেকেই মানসিকতা বোঝা যায়৷ পরিবার বা সমাজে নারীকে হেয় করে দেখার, বিকৃত বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে নেয়ার ‘সংস্কৃতি’ বহুকাল ধরে চলে আছে৷

এর সঙ্গে রাজনীতিও আছে বলে মনে করেন রোকেয়া প্রাচী৷  ভোটের জন্য সব রাজনৈতিক দল ধর্মীয় গোষ্ঠীতে আশ্রয় দেয়৷ তাই তারা বেড়ে উঠছে৷ পরিবারের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে নারীকে আটকে রাখার প্রবণতা৷ তার মতে, ‘‘আবার যে হিজাবের মধ্যে ঢুকছে নারী, এটা সবাই স্বেচ্ছায় করছে বলে মনে হয় না আমার৷ তাদের পারিবারিকভাবে বাধ্য করা হচ্ছে৷”

অধ্যাপক নেহাল করিম বলেন, বাঙালি মুসলমানের উত্থান ডান্ডাগুলি টু গলফ৷ ফলে অনেক বড় গ্যাপ আছে৷ তাই বড় ডিগ্রি থাকলেই হয় না৷  এর জন্য দীর্ঘকালের চর্চা এবং ঐতিহ্য থাকতে হয়৷ নারীর প্রতি সম্মানের বিষয়টি দীর্ঘকালের চর্চার মাধ্যমে অর্জন করতে হবে৷ শাহজাহান খান এমপি, রাশেদ খান মেননও এমপি৷ দুইজন এমপি হলেও তাদের আচরণ এক হবে না৷ এই বিষয়টি  বুঝতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ