মঙ্গলবার প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ)-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি৷
বিজ্ঞাপন
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক সুযোগ ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন- মূলতঃ এ চারটি বিষয় নিয়ে ১৪৯টি দেশের ওপর গবেষণা করে বার্ষিক এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে জেনিভাভিত্তিক সংস্থাটি৷ সেখানেই দেখা গেছে নারী-পুরুষ বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবক'টি দেশ তো বটেই, পেছনে ফেলেছে এশিয়া, আফ্রিকা ও অ্যামেরিকা মহাদেশের অনেক দেশকে৷ এমনকি বিশ্বের সেরা ২০টি ধনী দেশেরও কারো কারো থেকে সূচকে এগিয়ে বাংলাদেশ৷
ডাব্লিউইএফ-এর হিসেবেনারীর সার্বিক ক্ষমতায়নে৪৮তম অবস্থানে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশের এ অবস্থানের কারণ, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন৷ এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচ৷ প্রথম চারটি দেশ হলো আইসল্যান্ড, নিকারাগুয়া, নরওয়ে ও রুয়ান্ডা৷
তবে অর্থনৈতিক সুযোগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধার আওতার সূচকে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ৷ নারীদের অর্থনৈতিক সুযোগের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩, শিক্ষায় ১১৬ ও স্বাস্থ্যে ১১৭৷ তবে সার্বিকভাবে ৪৮তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র (৫১তম) থেকেও৷ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান ১৪৮, ভুটান ১২২, ভারত ১০৮, নেপাল ১০৫ ও শ্রীলঙ্কা ১০০তম অবস্থানে রয়েছে৷
ব্যবধান ঘুচবে না দু'শ বছরেও
ডাব্লিউইএফ দেখতে পেয়েছে যে, বেশকিছু বিষয়ে বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্য আগামী ১০৮ বছরে দূর হবে না৷ আর কর্মক্ষেত্রে বেতন ও অন্যান্য সুবিধার বিষয়ে এই বৈষম্য কমতে আরো ২০২ বছর লাগবে৷ তারা বলছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও রাজনীতিতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বিগত বছরগুলোতে অগ্রগতি হয়েছে৷ তবে সম্প্রতি আবারো নারীরা খেই হারিয়েছেন তিনটি খাতেই৷
যেখানে নারীরা দেশ শাসন করেন
বিশ্বের স্বাধীন রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৫টি৷অধিকাংশ দেশই শাসন করছেন পুরুষরা৷ তবে, নারী সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের সংখ্যা হাতেগোনা হলেও যারা আছেন তারা বেশ ক্ষমতাধর৷ চলুন দেখে নিই তাঁদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Hoslet
আঙ্গেলা ম্যার্কেল
বর্তমানে ৬২ বছর বয়সি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম নিয়োগ পান ২০০৫ সালে৷ তিনিই জার্মানির প্রথম নারী সরকার প্রধান৷ চতুর্থবারের মতো এই পদে থেকে যেতে পারেন তিনি৷ সাবেক পূর্ব জার্মানিতে বেড়ে ওঠা এক যাজকের মেয়ে ম্যার্কেল রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছিলেন৷ টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে ২০১৫ সালে ‘‘পারসন অফ দ্য ইয়ার’’ ঘোষণা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Hoslet
টেরেসা মে
টেরেসা মে হচ্ছেন মার্গারেট থ্যাচারের পর যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী৷ ৬০ বছর বয়সি সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছরের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন৷ ঐতিহাসিক ব্রেক্সিট গণভোটের পক্ষে সে দেশের জনগণ রায় দেয়ার পর তিনি ক্ষমতায় আসেন৷ তিনি ঠিক কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে৷ চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে হারলে তাঁকে বিদায় নিতে হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Tyagi
সাই ইং-ভেন
সাই ইং-ভেন হচ্ছেন ‘রিপাবলিক অফ চায়না’ বা তাইওয়ানের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট৷ ২০১৬ সালের মে মাসে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্বীপটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বেইজিং, কেননা চীন মনে করে দ্বীপটি স্বাধীন নয়৷ তবে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সে দেশের কাছে নতি স্বীকার করবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন সাই৷
ছবি: Reuters/T. Siu
এলেন জনসন সার্লিফ
৭৮ বছর বয়সি এই নারী ২০০৬ সাল থেকে লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রপতি৷ তিনি আফ্রিকার প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান৷ ২০১১ সালে সার্লিফ এবং লাইবেরিয়া ও ইয়েমেনের আরো দুই নারী শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জয় করেন৷ অহিংস পথে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সংগ্রাম এবং শান্তিপ্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করায় এই সম্মাননা দেয়া হয় তাঁদের৷
ছবি: Reuters/N. Kharmis
দালিয়া গ্রেবাউসকাইতি
লিথুনিয়ার প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান দালিয়া গ্রেবাউসকাইতি৷ কারাতে ব্লাক বেল্ট থাকায় এবং কথাবার্তায় কঠোর মনোভাব প্রকাশ করায় তাঁকে অনেকেই ‘আয়রন লেডি’ বলেন৷ ৬১ বছর বয়সি গ্রেবাউসকাইতি ২০০৯ সালে প্রথমে দায়িত্ব নেন এবং ২০১৪ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন৷
ছবি: Reuters/E. Vidal
এর্না সোলব্যার্গ
নরওয়ের সরকারপ্রধানও একজন নারী৷ ২০১৩ সালে দ্বায়িত্ব পান তিনি৷ তবে সোলব্যার্গ দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী৷ রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ে কঠোর নীতির কারণে তাঁকে ‘আয়রন এর্না’ বলা হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Wivestad Groett
বেয়াটা শিডউয়ো
পোল্যান্ডের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী বেয়াটা শিডউয়ো৷ ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে দায়িত্বে আছেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি মেয়র এবং সংসদ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/W. Dabkowski
সারা কুগোনগেলওয়া-আমাথিলা
নামিবিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী সারা কুগোনগেলওয়া-আমাথিলা ২০১৫ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন৷ তরুণ বয়সে সিয়েরা লিয়নে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে ১৯৯৪ সালে দেশে ফেরেন ৪৯ বছর বয়সি এই নারী৷ তিনি সে দেশের প্রথম নারী সরকারপ্রধান৷
ছবি: Imago/X. Afrika
মিশেল বাচিলেট
২০১৪ সাল থেকে দায়িত্বে রয়েছেন চিলির প্রেসিডেন্ট মিশেল বাচিলেট৷ তবে এটাই তাঁর প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়া নয়৷ সে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৬ থেকে ২০১০ অবধিও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Reyes
শেখ হাসিনা ওয়াজেদ
ফোর্বস ম্যাগাজিনে ২০১৬ সালে প্রকাশিত বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাশালী নারীর মধ্যে স্থান পেয়েছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ২০০৯ সাল থেকে জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্রটি শাসন করছেন তিনি৷ তবে রাজনীতিতে তিনি আছেন কয়েক দশক ধরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildfunk
কোলিন্দা গ্রাবার-কিটারোভিচ
৪৯ বছর বয়সি এই নারী ২০১৫ সালে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ অবধি সরকারের বিভিন্ন পদে, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন৷ তিনি সেদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
সালম চুবারবিশভিলি
জর্জিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন৷ ২০১৮ সালের নভেম্বরে ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Mdzinarishvili
12 ছবি1 | 12
ডাব্লিউইএফ-এর হিসেবে বৈশ্বিক গড় হিসেব করলে অর্থনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্তিতে বৈষম্য প্রায় ৫১ ভাগ দূর হয়েছে এবং নারী নেতৃত্ব বেড়েছে ৩৪ ভাগ৷ তবে একইসঙ্গে নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ কমেছে৷ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, অটোমেশনের কারণে নারীর কাজের সুযোগে আঘাত পড়েছে বেশি৷ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গাণিতিক দক্ষতায় নারীরা পিছিয়ে আছে বলে মনে করে ডাব্লিউইএফ৷ তারা বলছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স খাতের চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ২২ ভাগ৷
গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী ৬১ বছরে পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো সার্বিক নারী বৈষম্য কমাতে পারবে৷ তবে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা ১৫৩ বছর সময় নেবে৷ নর্ডিক দেশগুলো বৈষম্য দূরীকরণে সবচেয়ে এগিয়ে আছে৷ আইসল্যান্সে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ প্রায় সমান৷ এরপর আছে নরওয়ে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড৷ তবে অন্যদিকে, সিরিয়া, ইরাক, পাকিস্তান ও ইয়েমেনে বৈষম্য সবচেয়ে বেশি৷
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ২০টি দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স ১২তম, জার্মানি ১৪তম, ব্রিটেন ১৫তম, ক্যানাডা ১৬তম এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯তম স্থানে রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি ঘটছে৷ গেল বছরের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে তারা এখন ৫১তম স্থানে৷