1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারীর সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে তোপের মুখে শিক্ষক

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৭ জানুয়ারি ২০১৯

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কনক সরকারের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে চলছে তুমুল শোরগোল৷ নারীর সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন, কর্মস্থলেও হয়েছেন ‘অপাঙক্তেয়’৷

অধ্যাপক কনক সরকারের কক্ষে তালাছবি: DW/P. Samanta

নারীর সতীত্ব নিয়ে মন্তব্য

ফেসবুকে মেয়েদের কুমারীত্বের সঙ্গে ‘সিল্ড’ অর্থাৎ ‘না খোলা’ বোতল কিংবা বিস্কুটের প্যাকেটের তুলনা করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কনক সরকার৷ কেন কুমারী মেয়েদের বিয়ে করা উচিত তা নিয়ে তিনি মূল্যবোধের পাঠ দিয়েছিলেন ফেসবুকের পাতায়৷ বিতর্ক শুরু হওয়ার পরপরই অধ্যাপক নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন৷ আপাতত বিতর্কের জেরে এই অধ্যাপক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় (ডিঅ্যাক্টিভেট) করে দিয়েছেন৷

কিন্তু বিভিন্ন সংগঠন ও পড়ুয়াদের ক্ষোভ তাতে কমেনি৷   

অধ্যাপক সরকার ক্লাসে পড়ানোর সময় নিয়মিত জাতিবিদ্বেষী মন্তব্য করেন: দ্বৈপায়ন চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

ক্যাম্পাসে অসন্তোষ

অধ্যাপকের এই মন্তব্য স্বাভাবিক ভাবেই আলোড়ন ফেলেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে৷ একজন শিক্ষকের এহেন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা৷ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তাঁরা৷ প্রতিবাদপত্র জমা দিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে৷ মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কনক সরকার বিভাগে উপস্থিত ছিলেন না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি৷ তাঁর ঘর ছিল তালাবন্ধ৷ মোবাইলও বন্ধ রেখেছেন৷ মঙ্গলবার থেকেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা দফায় দফায় বিভাগীয় প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন৷ এরপরে তাঁরা মিছিল করে অভিযোগ জমা দেন উপাচার্যের কাছেও৷ ডয়চে ভেলেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দ্বৈপায়ন চৌধুরী বলেন, ‘‘অধ্যাপক সরকার ক্লাসে পড়ানোর সময় নিয়মিত জাতিবিদ্বেষী মন্তব্য করেন৷ মহিলা ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলেন৷ বিষয়ের সঙ্গে এই কথার যোগ থাকে না৷ উনি প্রায় ২০ বছর এই বিভাগে পড়াচ্ছেন৷ এমন কোনো ব্যাচ নেই, যার পড়ুয়ারা এই অধ্যাপককে নিয়ে সমস্যায় পড়েনি৷ আমরা ওঁর বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছি৷’’

কনক সরকার সম্পর্কে মুখ খোলার জন্য ছাত্রীদের আহ্বান জানিয়েছি: সম্প্রীতি মুখোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

জোরদার প্রচার চলছে সোশাল মিডিয়াতেও৷ এমফিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সম্প্রীতি মুখোপাধ্যায় জানান, ‘‘উপাচার্যকে লিখিত অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি সোশাল মিডিয়ায় ‘হ্যাশট্যাগ নো মোর কনক সরকার’ ও ‘হ্যাশ ট্যাগ নো মোর মিসোজিনি’ নামে প্রচার শুরু করেছি৷ কনক সরকার সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও খারাপ ব্যবহারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য ছাত্রীদের কাছে আহ্বান জানিয়েছি৷’’

প্রথম বর্ষের ছাত্রীরা একসুরে বলেন, ‘‘স্যারের কথাবার্তা খুবই আপত্তিকর৷ মেয়েদের সম্পর্কে ওর দৃষ্টিভঙ্গি নিন্দনীয়৷ উনি আমাদের পাশ্চাত্যের রাজনীতি বিষয়ের ক্লাস নেন৷ কিন্তু এমন সব কথা বলেন, যার সঙ্গে বিষয়ের সম্পর্ক নেই৷ গ্রিসের রাজনীতি পড়াতে গিয়ে ‘স্বামী’র গুরুত্ব বোঝান৷ ফেসবুক পোস্টে এটাই সামনে এসেছে৷ আমরা ওঁকে সরিয়ে দিতে বলেছি৷’’

কনক সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভাগীয় প্রধান ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, ‘‘তিনি ক্লাসে এ ধরনের ব্যবহার করেছেন বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছিলাম৷ আমরা মৌখিকভাবে তাঁকে সতর্কও করেছিলাম৷ কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয়নি৷ এখন ফেসবুক পোস্টের পর ছাত্র-ছাত্রীরা লিখিতভাবে অভিযোগ জানাচ্ছে আমাদের কাছে৷ আমরা পদক্ষেপ নেবো৷’’

আমরা মৌখিকভাবে তাঁকে সতর্ক করেছিলাম: ওমপ্রকাশ মিশ্র

This browser does not support the audio element.

অশালীন মন্তব্যের জের

বুধবার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক-ছাত্র কমিটির বৈঠক হয়৷ সেখানে পড়ুয়ারাও জানায়, শুধু ফেসবুকে নয়, এই অধ্যাপক নিয়মিতভাবে ক্লাসেও ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর ও লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্য করতেন৷ সেখানে সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী বা কোনো বিশেষ রুচি-ভাবধারাকেও তিনি বিদ্ধ করতেন৷ কনক সরকার যাতে আর ক্লাস না নিতে পারেন, সে জন্য কমিটির তরফে সুপারিশ করা হয়৷

জাতীয় ও রাজ্য মহিলা কমিশনও এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে৷ তলব করেছে অধ্যাপককে৷ নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয়৷ উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বুধবার জানান, বিশ্ববিদ্যালয় আভ্যন্তরীণ কমিটি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করবে৷ রাজ্য মহিলা কমিশন ৭ দিনের মধ্যে তাকে হাজিরা দিতে বলেছে৷ এই তদন্ত শেষ হওয়া অবধি অধ্যাপক সরকারকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না৷ ততদিন অবধি তিনি ক্লাসে পড়ানো বা পরীক্ষার পদ্ধতি থেকে বিরত থাকবেন৷ জল এতদূর গড়িয়েছে যে শিক্ষামন্ত্রীও তার অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘একজন অধ্যাপকের এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়৷ এসব কথায় ছাত্রীদের অসম্মান করা হয়৷’’ 

শাস্তির বদলে দৃষ্টিভঙ্গি বা মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটানো উচিত: শাশ্বতী ঘোষ

This browser does not support the audio element.

শাস্তি নাকি সঠিক চেতনা

টেলিভিশন শো-তে মেয়েদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার জেরে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের দুই ক্রিকেটার হার্দিক পান্ডিয়া ও কে এল রাহুলকে ভারতীয় বোর্ড সাসপেন্ড করেছে৷ তাহলে অধ্যাপকের কুরুচিকর মন্তব্যের শাস্তি কী হতে পারে? ছাত্র সংসদের (আফসু) সহ সাধারণ সম্পাদক উষসী পাল বলেন, ‘‘পুরুষতান্ত্রিক ও ঘৃণ্য রুচির এমন মন্তব্যকে নিন্দা জানাতে আমরা ডেপুটেশন দিয়েছি৷ যদি কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে এগোবো৷ আমরা শাস্তি চাই৷’’

কিন্তু একজন ব্যক্তিকে শাস্তি দিলেই এই মানসিকতার মূলোচ্ছেদ করা যাবে না বলে মনে করেন নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী, অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ৷ তিনি বলেন, ‘‘কনক সরকার যা বলেছেন, শুধু তাঁর মত, এটা ভাবা ঠিক নয়৷ এটা অনেকেরই মানসিকতা, এই অধ্যাপক সেটা প্রকাশ্যে এনে ফেলেছেন৷'' তাঁর মতে, ‘‘একজন অধ্যাপককে শাস্তি দিয়ে কোনো লাভ হবে না৷ আমরা রোজ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে যে জোকস দেখতে পাই, তার ৯০ শতাংশ নারীবিরোধী৷ এ জন্য আমরা কাকে শাস্তি দিতে পারি? বরং শাস্তি দিলে এই মনোভাব আড়ালে আরো বেড়ে উঠবে৷ বরং শাস্তির বদলে দৃষ্টিভঙ্গি বা মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটানো উচিত৷’’

মেয়েদের বন্দ বোতলের তকমা দেওয়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রবণতা৷ কনকের বক্তব্য তারই প্রতিফলন৷ এর কড়া নিন্দা করে শাশ্বতী বলেন, ‘‘উনি কী ধরনের মূল্যবোধের শিক্ষা দিচ্ছেন? উনি কি এটাই শেখাচ্ছেন যে, ছিপি খুলে পানীয় খেয়ে বোতল ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে? অনেক ইসলামিক দেশে অক্ষতযোনি নারীর কদর রয়েছে৷ আমাদের দেশে তো তা নেই৷ এই দৃষ্টিভঙ্গির বদল না হলে সমাজকে আধুনিক বলা যায় না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ