বাংলাদেশে নারী সমতার বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে সুখকর৷ জরিপ বা তথ্য-উপাত্তে রয়েছে তারই ইঙ্গিত৷ নারী শুধু পেশাগত কাজেই নয়, আসীন রাজনীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদেও৷ কিন্তু শতকরা হিসেবে সেটা পুরুষের তুলনায় কতভাগ?
বিজ্ঞাপন
একই কাজ করে নারী পুরুষের সমান মজুরি পায় কিনা – সেই প্রশ্ন এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে৷ প্রশ্ন উঠছে, নারীর মানবাধিকার, লিঙ্গ বৈষম্য, আইনি ব্যবস্থা, ভূমি মালিকানা এবং তাদের কর্ম পরিবেশ নিয়ে৷
গত নভেম্বরে জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ‘বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন – ২০১৫' প্রকাশ করে৷ তাতে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে করা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪তম৷ এর আগে, ২০১৪ সালে, ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৬৮ নম্বরে৷ সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দুই ধাপ কমেছে৷ এছাড়া জরিপ অনুযায়ী, লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনা বা নারী-পুরুষের অসমতা দূর করার কাজে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবার থেকে এগিয়ে৷ অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়ন – এই চার মাপকাঠির ভিত্তিতে এই সূচক প্রকাশ করা হয়৷
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৭ সাল থেকে টানা ন'বছর লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে বাংলাদেশ৷ এই যেমন ২০০৭ সালে বিশ্বের ১২৮টি দেশের মধ্যে ১০০তম, ২০০৮ সালে ১৩০টি দেশের মধ্যে ৯০তম, ২০০৯ সালে ১৩৪টি দেশের মধ্যে ৯৩তম, ২০১০ সালে ১৩৪টি দেশের মধ্যে ৮২তম, ২০১১ সালে ১৩৫ দেশের মধ্যে ৬৯তম, ২০১২ সালে ১৩৫ দেশের মধ্যে ৮৬তম, ২০১৩ সালে ১৩৬টি দেশের মধ্যে ৭৫তম, ২০১৪ সালে ১৪২ দেশের মধ্যে ৬৮তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ৷
এলিনা খান
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে৷ ২০১৪ সালের তুলনায় নারী দুই ধাপ এগিয়েছে শিক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে৷ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ঈর্ষনীয়৷ তবে উচ্চ শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আগের থেকে পিছিয়েছে৷ এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নারীর অংশগ্রহণ দুই ধাপ পিছিয়ে ২০১৪ সালের তুলনায়৷
অবশ্য এই অগ্রগতির হিসাবের মধ্যে একটি পরস্পর বিরোধিতা আছে৷ আর তা হলো – পিছিয়ে থাকা থেকে কতটুকু এগোলে অগ্রগতির হিসাব হয়, সেটা নিয়ে৷ কিন্তু একমাত্র পিছিয়ে থাকার চিত্রটি বুঝতে পারলেই প্রকৃত অগ্রগতি অনুধাবন করা যায়৷ তাই জরিপে বলা হয়, অগ্রগতির এই হার অব্যাহত থাকলে নারী-পুরুষের সমতা আসতে ১১৮ বছর লাগবে৷
নারীর সমতা কতদূর?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী৷ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯৭ জন৷ বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী৷ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ৮০ ভাগ কর্মীই নারী৷ আর দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবহারকারীও নারী৷
১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে মাত্র পাঁচজন নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ বর্তমানে সংসদে ৬৯ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন৷ এছাড়া মন্ত্রীভায় নারী আছেন – প্রধানমন্ত্রী নারী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নারী, এমনকি জাতীয় সংসদের স্পিকারও নারী৷ তবে নারীর সমতা ও ক্ষমতায়নের বিষয়টি যে চারটি মাপকাঠিতে বিবচেনা করা হয়, তাতে বাংলাদেশ কেমন অবস্থান, সেটাই দেখার বিষয়৷
দক্ষিণ এশিয়ায় সবার ওপরে বাংলাদেশ
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘বিশ্ব লিঙ্গবৈষম্য সূচক’ বলছে, নারী-পুরুষের ব্যবধান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ৷
ছবি: AP
লিঙ্গ সমতা মাপা
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, ডাব্লিউইএফ ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর ‘বিশ্ব লিঙ্গবৈষম্য সূচক’ প্রকাশ করে আসছে৷ মূলত চারটি বিষয় – অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষায় অর্জন, স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন – বিবেচনা করে এ সূচক প্রকাশ করা হয়৷ ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে সবশেষ সূচকটি প্রকাশ করা হয়েছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/D. Reinhardt
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম
সবশেষ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫টি দেশের মধ্যে ৬৮ নম্বরে৷ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের অবস্থান এরও পরে৷ ভারত ১০৮-এ আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৪ নম্বরে৷ আরও জানতে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
শীর্ষে স্বাস্থ্য খাত
যে চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সূচক প্রকাশ করা হয় তার মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে৷ ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে এই খাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২২তম৷ ২০১৫ সালে সেটা ২৭ ধাপ এগিয়ে ৯৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে৷
ছবি: D.net/Amirul Rajiv
শিক্ষা
২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে শিক্ষা খাতের ব়্যাংকিংয়ে দুই ধাপ এগিয়ে ১০৯ নম্বরে আছে বাংলাদেশ৷ সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখা গেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশের ব়্যাংকিং এক৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১৯ নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে দুই ধাপ এগিয়েছে৷ ফলে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান আট৷ সংসদে নারী সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৭৬৷ আর মন্ত্রিসভায় নারী সদস্য সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ আছে ১২৬ নম্বরে৷
ছবি: DW/S. Kumar Day
যেখানে পিছিয়েছে
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গতবারের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে ১৩০তম অবস্থানে এসেছে৷ শ্রমখাতে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ বিবেচনায় বাংলাদেশে অবস্থান ৯৭, আর একই কাজে নারী-পুরুষের বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে অবস্থান ১২৬ নম্বরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
সমতা আসতে লাগবে ১১৮ বছর!
ডাব্লিউইএফ বলছে, বেতনের পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা পুরোপুরি আসবে ২১৩৩ সালে, অর্থাৎ ১১৮ বছর পর৷ অবশ্য ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে সংস্থাটি আরও আগেই এই সমতা আসতে পারে বলে জানিয়েছিল৷ কিন্তু গত এক বছরে পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় সমতা আসার সময়সীমাও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
7 ছবি1 | 7
নারীর সমতার বিষয়টি এবার দেখা হচ্ছে প্ল্যানেট ৫০-৫০ হিসেবে৷ এরসঙ্গে নারীর মানবাধিকার, ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে৷ নারী উন্নয়ন মডেল অনুযায়ী, সমতা এবং ক্ষমতায়নের জন্য চারটি বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷ প্রথমত: ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নারীর মালিকানা স্থাপন, দ্বিতীয়ত: মানসম্মত কাজের পরিবেশ ও মজুরি৷ তৃতীয়ত: শান্তি ও ন্যায়বিচার বা নায্যতা৷ এবং চতুর্থত: সব স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা৷
ভূমি এবং প্রাকৃতি সম্পদের ওপর নারীর অধিকারের চিত্রটি জানা যায় এক গবেষণায়৷ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ‘নারীর ভূমি অধিকার ও বঞ্চনা' শীর্ষক গবেষণায় বলেছেন, ‘‘মাত্র শতকরা চার ভাগ নারীর ভূমির ওপর প্রকৃত মালিকানা রয়েছে৷ মুসলিম নারীরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিকানা লাভ করলেও শতকরা মাত্র দুই থেকে পাঁচ ভাগ মুসলিম নারীর ভূমিতে প্রকৃত মালিকানা রয়েছে৷''
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান কেমন? বাংলাদেশে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান কোনোভাবেই আশাব্যঞ্জক নয়৷ নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারটি প্রশাসনের হাতেই আছে৷ অথচ বাংলাদেশে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ একেবারেই নগণ্য৷
বাংলাদেশে সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩৪টি৷ এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮৩ হাজার ১৩৩, অর্থাৎ শতকরা ৭.৬ ভাগ৷ উপসচিব পদ থেকে সচিব পদ পর্যন্ত নারীদের সংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ বা তারও কম৷ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিচার বিভাগে বিচারক পদের ১০ শতাংশ হলো নারী৷ তবে হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি পদে এখনো নারীকে দেখা যায়নি৷
বিশ্বের যত নারী প্রেসিডেন্ট এবং নারীর ক্ষমতায়ন
নারীর ক্ষমতায়নের পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল নেপাল৷ এই প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ বিদ্যা ভান্ডারি’র রাষ্ট্রপতি হওয়াকে উপলক্ষ্য করে সারা বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নের খণ্ডচিত্রটাও একটু দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট আর্জেন্টিনার ইসাবেল পেরন৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরনের তৃতীয় স্ত্রী ইসাবেল প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান৷ পরে ১৯৭৪ সালের ১লা জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টও ছিলেন৷ বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে৷ তিন দফা (১৯৬০-৬৫, ১৯৭০-৭৭, ১৯৯৪-২০০০) দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ ওপরে তাঁরই ছবি৷
ছবি: picture alliance/Sven Simon
হিমালয় কন্যা বিদ্যা ভান্ডারি
অবশেষে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেলো নেপাল৷ সাংসদ এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সিপিএন-ইউএমএল) -এর ভাইস চেয়ারপারসন বিদ্যা ভাণ্ডারিকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেছে সে দেশের সংসদ৷ নেপালের রাষ্ট্রপতি এখন রাম বরণ যাদব৷ ২৪০ বছর রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি৷ তাঁর কাছ থেকেই দেশের প্রথম নারী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ৫৪ বছর বয়সি বিদ্যা ভান্ডারি৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে নারীকে প্রেসিডেন্ট করেছে ভারত৷ ২০০৭ সালে সে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হন প্রতিভা পাতিল৷ ভারতের দ্বাদশ প্রেসিডেন্ট প্রতিভা ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন৷ তাঁর কাছ থেকেই দায়িত্ব নিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি৷ ছবিতে প্রতিভা পাতিলের কাছ থেকে প্রণব মুখার্জির দায়িত্ব নেয়ার মুহূর্ত৷
ছবি: Reuters
১৪টি দেশে নারী প্রেসিডেন্ট
এ মুহূর্তে ১৪ দেশের প্রেসিডেন্ট নারী৷ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, কসোভো, লাইবেরিয়া, লিথুয়ানিয়া, মাল্টা, মরিশাস, স্যান মারিনো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বুধবার যোগ হলো নেপাল৷ ওপরের ছবিতে মরিশাসের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমিনা ফিরদাউস গারিব ফাকিম৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশ এখনো অপেক্ষায়
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিচারপতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ পদেই নারী পেয়েছে বাংলাদেশ৷ তবে এ পর্যন্ত ২০ জন রাষ্ট্রপতি পেলেও এ দায়িত্বে এখনো কোনো নারীকে দেখা যায়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অনন্য সুইডেন ও ফিনল্যান্ড
নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য এক নজির রেখেছে সুইডেন৷ ১৯৯৯ সালে সে দেশের মন্ত্রীপরিষদে পুরুষের চেয়ে নারী সদস্যই ছিল বেশি৷ ১১ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ ছিলেন ৯ জন৷ এমনটি আগে কোনো দেশেই দেখা যায়নি৷ পরে ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীপরিষদেও নারীর আধিক্য দেখা গেছে৷ ২০০৭ সালে ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীপরষদের শতকরা ৬০ ভাগ সদস্যই ছিলেন নারী৷ ছবিতে সুইডেন ও ডেনমার্কের দুই নারী নেত্রী৷
ছবি: AP
যারা অনেক পিছিয়ে
বিশ্বের সব দেশ নারীর ক্ষমতায়নে কম-বেশি উদ্যোগী হলেও ব্রুনাই এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি পিছিয়ে৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে নারীকে এখনো উপমন্ত্রীর চেয়ে বড় দায়িত্ব দেয়া হয়নি৷ তবে এ মুহূর্তে অ্যাঙ্গোলা, ভুটান, কোমোরো আইল্যান্ড, কুক আইল্যান্ড, লেবানন, মঁসেরাত এবং সলোমন আইল্যান্ডই সবচেয়ে বেশি নারীবিমুখ৷ এই দেশগুলোর মন্ত্রীপরিষদ, এমনকি সংসদেও এই মুহূর্তে কোনো নারী নেই৷ছবিতে ব্রুনাইয়ের কয়েকজন নারী৷
ছবি: AP
মালালা ও তাঁর প্রজন্ম
সাম্প্রতিক সময়ে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ অনেক দেশেই মাথা চাড়া দিয়েছে৷ তবে শান্তির পথে, মানবতার পথে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নারীর দৃপ্ত পদচারণাও দেখা যাচ্ছে৷ গত বছর (২০১৪) সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল জয় করেছেন মালালা ইউসুফজাই৷ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন রাজ্য তাঁর জন্মস্থান৷ সেখানে হত্যার উদ্দেশ্যে তালেবান তাঁর ওপর হামলাও চালিয়েছিল৷ মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে মালালা এখন প্রজন্মের মুক্তচিন্তার মুক্তির প্রতীক৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
8 ছবি1 | 8
জাতীয় শ্রম শক্তি জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে ৮ লাখ৷ তারা সবাই মজুরি বৈষম্যের শিকার৷ পুরুষের সমান কাজ করলেও মজুরি পান কম৷ উদাহরণস্বরূপ, গ্রামাঞ্চলে একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা গড়ে ১৮৪ টাকা পেলেও নারী শ্রমিকরা পান মাত্র ১৭০ টাকা৷
মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য এই একটি তথ্যই যথেষ্ঠ৷ সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের শতকরা ৬০ ভাগের বেশি নারী তাদের পারিবারিক জীবনে কখনো না কখনো পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷
গত বছরের মে মাসে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ তাদের অধীনে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের' আওতায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল শের-ই-বাংলা, খুলনা, সিলেট এম এ জি ওসমানী, রংপুর ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯ বছরে ২২ হাজার ৩৮৬ জন নারী ধর্ষণসহ নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসা নেন৷ এই ঘটনাগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে এ সব ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার তিনটি৷ রায় ঘোষণা হয়েছে ৮২০টি, শাস্তি হয়েছে ১০১ জনের৷ শতকরা হিসাবে রায় ঘোষণার হার ৩ দশমিক ৬৬ এবং সাজা পাওয়ার হার শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ৷ আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোতে গড়ে মাত্র শতকরা চারভাগ অপরাধী শাস্তি পায়৷
সবার জন্য ভালো জার্মানি, নারীর জন্য সেরা ডেনমার্ক
বিশ্বের সেরা দেশের মর্যাদা এখন জার্মানির৷ তবে নারীর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশ কিন্তু জার্মানি, ক্যানাডা বা যুক্তরাষ্ট্র নয়৷ নারীদের জন্য প্রায় স্বর্গের দেশ এখন ডেনমার্ক৷
ছবি: Fotolia/Creativa
বিশ্বের সেরা দেশ জার্মানি
ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বৈঠকে প্রকাশ করা বিশ্বের সেরা দেশের তালিকার সবার ওপরে এসেছে জার্মানির নাম৷ ৬০টি দেশ স্থান পেয়েছে এই তালিকায়৷ শরণার্থী সংকট নিরসনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে অর্থনৈতিক চাপ সহ্যের পরও, বিশ্বের ৩৬টি দেশের ১৬ হাজার ২৪৮ জনের মাঝে জরিপ চালিয়ে তৈরি করা এই তালিকার শীর্ষে স্থান পেল জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reichel
দ্বিতীয় ক্যানাডা, তৃতীয় যুক্তরাজ্য
বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা দেশ এখন ক্যানাডা৷ তারপরই একে একে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়া৷
ছবি: picture alliance/All Canada Photos
সেরা দশে এশিয়ার দেশ জাপান
সেরা দশে এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি জাপান৷ তারা আছে ৬ নম্বরে৷ বিশ্বের ষষ্ঠ সেরা দেশ হওয়াও কিন্তু কম কথা নয়৷ ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্কসহ অনেক উন্নত দেশের অবস্থানও কিন্তু জাপানের পেছনে৷
ছবি: picture alliance/dpa
নারীদের জন্য সেরা ডেনমার্ক
জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ফ্রান্স এবং নেদাল্যান্ডসকে ডিঙিয়ে নারীদের জন্য সবচেয়ে ভালো দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে ডেনমার্ক৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এই দেশটি বিশ্বের সেরা দেশের তালিকাতেও আছে দশ নম্বরে৷
নারীদের জন্য সেরা দেশের তালিকায় ডেনমার্কের পর রয়েছে যথাক্রমে সুইডেন, ক্যানাডা, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, লুক্সেমবুর্গ ও অস্ট্রিয়া৷ সেরা দশে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক সমৃদ্ধ দেশই নেই৷ এশিয়ার মান রেখেছে জাপান৷ এই তালিকায় তারা আছে ১৪ নাম্বারে৷ ঠিক এক ধাপ আগে, অর্থাৎ ১৩ নম্বরে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Fotolia/Creativa
5 ছবি1 | 5
বাংলাদেশের নারী নেত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশের প্রচলিত আইন এবং দৃষ্টিভঙ্গি নারীর সমতার পথে প্রধান বাধা৷ প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী হলেই নারীর সমতা বা ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয় না৷ আগে নিশ্চিত করতে হবে তারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন৷''
তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থার যারা নিয়ন্ত্রক, তাঁরা পুরষতন্ত্রেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন৷ তাঁরা একটি সিস্টেমের প্রতিনিধিত্ব করেন আর সেই সিস্টেমটাই পুরুষতান্ত্রিক৷ তাই কোনো নারীর একক ক্ষমতায়ন নারীর ক্ষমতায়ন বা সমতা নিশ্চিত করে না৷''
এলিনা খান বলেন, ‘‘বিচার, পেশা, মজুরি এবং নিজের ঘরে নারী অসাম্যের শিকার৷ এটা দূর করার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হয় সবার আগে৷ নারীরা আগের চেয়ে এগিয়েছে, সমতার বিচারের অসাম্য দূর হচ্ছে, কিন্তু তাতে অসাম্য দূর হয়নি৷ সমতা প্রতিষ্ঠা এখনো অনেক দূর৷''
‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও দৃষ্টিভঙ্গি নারীর সমতার পথে প্রধান বাধা৷’ – আপনি কি এ কথা বিশ্বাস করেন? জানান নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷