শুক্রাণুগুলিকে যেন ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিতে হয়৷ এত ভিড় পেছনে ফেলে বেরিয়ে যেতে চায় সেগুলি৷ অবশেষে সেটা সম্ভব হয়৷ শুক্রাণুর জন্য যা ২০ সেন্টিমিটার, মানুষের কাছে তা প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের সমান!
সেখানে আসলে কী ঘটে? যোনির মধ্যেই অনেক শুক্রাণুর মৃত্যু ঘটে৷ সেখানকার অম্লভরা পরিবেশ এমনিতেই প্রতিকূল৷ তার উপর নারীর প্রতিরোধী কোষ ব্যাকটিরিয়া ও ছত্রাকের সঙ্গে সঙ্গে সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবে না হলেও শুক্রাণু মেরে ফেলে৷ তবে সৌভাগ্যবশত তরল হিসেবে বীর্য মজবুত ও আঠালো৷
শুক্রাণু যখন বেঁচে থাকার সংগ্রামে ব্যস্ত থাকে, তখন ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে ধীরে ধীরে ডিম্বাণু এগিয়ে আসে৷ মিলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে যোনি, জরায়ু ও গলদেশের মধ্যে এক নির্দিষ্ট ছন্দ সৃষ্টি হয়৷ এভাবে জরায়ু শুক্রাণু শুষে নিতে পারে৷ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সেটা ঘটে৷
সৌভাগ্যবশত আউটবোর্ড মোটর কাজ করছে৷ নির্গত পদার্থ আরও পাতলা হয়ে যাবার ফলে শুক্রাণু আরও চটপটে হয়ে ওঠে৷ টার্বো থ্রিডি প্রপেলার ও মাথা নাড়ার বিশেষ কায়দার উপর নির্ভর করা যেতে পারে৷ জরায়ুর প্রাচীরকে ভিত্তি করে শুক্রাণু নিজস্ব গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে৷ যৌথ উদ্যোগে সেই কাজে আরও গতি আসে৷
এবার ডান দিকে না বামে যেতে হবে? সঠিক ফ্যালোপিয়ান টিউব চেনার কৌশল যে কী, তা আজও জানা যায়নি৷ ডানে-বামে-ডানে খোঁজ চালাতে হয়৷ ফ্যালোপিয়ান টিউবের প্রাচীরে সূক্ষ্ম রোম রয়েছে, যা ডিম বহন করে৷ সেটির তরল স্রোত শুক্রাণুর দিকে ধেয়ে যায়৷ গতিপথ সব সময়ে স্রোতের দিকে মুখ করে থাকে৷ অনেক শুক্রাণু ফ্যালোপিয়ান টিউবের খাঁজে হারিয়ে যায়৷ তবে গন্তব্যে পৌঁছানোর ঠিক আগে ডিম দিশা পেতে সাহায্য করে৷ সেটি প্রস্টাগ্ল্যানডিন নিঃসরণ করে৷ শুক্রাণু সেই রাসায়নিক ট্র্যাক বা গতিপথ অনুসরণ করে৷ এবার সেটা দেখা যাচ্ছে৷ তাই এনজাইম প্রস্তুত রাখতে হবে৷
ডিমের খোসার উপর শর্করার অণুর এক স্তর রয়েছে৷ সেখানেই শুক্রাণু সংযুক্ত হয়৷ সেই জাদুময় মুহূর্ত, যখন প্রথম শুক্রাণু প্রবেশ করে, তখন তার লেজ খসে যায়৷ হুবহু সেই মুহূর্তে ডিম্বাণু তার ‘ডকিং' আবরণ বন্ধ করে দেয়৷ তখন বাকি শুক্রাণু পিছলে বেরিয়ে যায়৷
আঙ্গেলা সমার/এসবি
গর্ভকালীন অবস্থায় কিছু ভুল ধারণা
বাংলাদেশ ও ভারতে গর্ভাবস্থায় নারীদের ডাক্তারের চেয়েও বেশি শুনতে হয় দাদি-নানি, মা-শ্বাশুড়ি ও আত্মীয় স্বজনের কথা৷ নানা ধরনের কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাঁদের৷ এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Fotolia/drubig-photo
দু’জনের জন্য খেতে হবে
সবচেয়ে বেশি যে ধারণাটা প্রচলিত তা হলো – তুমি এখন আর একা নও৷ তাই দু’জনের সমান খেতে হবে৷ অথচ বাস্তবতা হলো, শিশু তো একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ না৷ মা যা খায় সেই নির্যাস সে গ্রহণ করে৷ হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় ক্ষুধা বেড়ে যায়, সেটা হরমোনের কারণে৷ একজন গর্ভবতী নারীর দিনে ৩০০ ক্যালোরি খাবার খাওয়া যথেষ্ট৷
ছবি: Fotolia/vgstudio
দুধ, দই খেলে বাচ্চা হবে ফর্সা
বাংলাদেশ ও ভারতে মানুষ ভীষণ বর্ণবাদী৷ বাচ্চা কালো না ফর্সা হবে এটা তাদের ভীষণ চিন্তার বিষয়৷ তাই, দুধ, দইয়ের মতো সাদা খাবার বাচ্চার রং ফর্সা করবে – এমনটাই ধারণা করা হয়৷ অথচ বাচ্চা রঙ কেমন হবে তা নির্ভর করে বাবা-মায়ের জিনের উপর৷
ছবি: Colourbox/E. Atamanenko
ঘি খেলে প্রসব সহজ হয়
বিশেষজ্ঞদের মত, আপনি যা খাবেন তা পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাবে, প্রজনন তন্ত্রে প্রবেশ করবে না৷ তাই ঘি যতই খান তা ‘লুব্রিকেন্ট’ বা পিচ্ছিল পদার্থের কাজ করবে না৷
ছবি: Imago/Imagebroker
যৌন সম্পর্ক করা উচিত নয়
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, গর্ভাবস্থায় একজন নারী যৌন মিলনের ততটাই আনন্দ নিতে পারেন, যতটা গর্ভধারণের আগে নিতে পারতেন৷ যৌন মিলনের ফলে শিশুর শরীরে কোনো খারাপ প্রভাব পড়ে না৷ বরং প্রসব সহজ করার ক্ষেত্রে যোনির একধরনের ব্যয়াম হয় এর মাধ্যমে৷
ছবি: Colourbox/Syda Productions
সুন্দর শিশুর ছবি দেখা
শিশুর বাবা-মায়ের জিনই ঠিক করবে সে কার মতো দেখতে হবে৷ তাই যতই সুন্দর সুন্দর বাচ্চার ছবি টাঙিয়ে রাখুন কোনো লাভ নেই৷
ছবি: Colourbox
সিঁড়ি ভেঙো না
গর্ভধারণ কোনো অসুখ নয় যে সারাদিন আপনাকে শুয়ে বসে কাটাতে হবে৷ তাই আগে যেমন জীবন কাটাতেন তার ছন্দপতন যেন না হয়৷ আপনি যদি নিয়মিত ব্যয়াম করে থাকেন, এক্ষেত্রে সেটা শরীরের জন্য আরও ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
পেটের আকৃতি দেখে বলা ছেলে না মেয়ে
এটারও কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই৷ হ্যাঁ আপনার যদি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার এবং সময় কাটানোর ইচ্ছে থাকে, তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা!
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
মায়ের চেহারা দেখে বলা
বাংলায় একটা কথা আছে, ছেলের মা সুন্দরী, মেয়ের মা বান্দরী৷ অর্থাৎ পেটে ছেলে থাকলে মায়ের চেহারা খুব সুন্দর হয়ে যায়৷ আর যদি মেয়ে থাকে তাহলে নাকি খুব খারাপ হয় চেহারা৷ এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই৷ কেননা এটা হরমোনের ওপর নির্ভর করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
স্বাস্থ্যবান শিশুর জন্য প্রচুর খাওয়া
শিশু যাতে স্বাস্থ্যবান হয়, একথা ভেবে প্রচুর ঘি আর চিনি খাচ্ছেন? বাচ্চা হয়ত মোটা সোটা হবে, কিন্তু সেই সাথে ডায়বেটিসের সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে৷