1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী অধিকার

উটৎস ড্র্যাগার /আরবি৩ জুন ২০১৩

যৌনাঙ্গচ্ছেদ, অপহরণ, ধর্ষণ, শিক্ষায় বাধা৷ এই রকমই ছিল ৫০-এর দশকে ইথিওপিয়ার সামাজিক চিত্র৷ এ ধরনের বিদ্বেষমূলক পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন বোগালেথ গেবরে৷ তৈরি করেছেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার৷

helping hand © Andreas Wolf #27024160 Symbolbild Entwicklungshelfer, Entwicklungshilfe,
ছবি: Andreas Wolf/Fotolia

‘কেএমজি ইথিওপিয়া' নারী উন্নয়নমূলক এক প্রতিষ্ঠান৷ ‘কেএমজি' অর্থ হলো ‘মেয়েরা কামবাটির জন্য এক সঙ্গে কাজ করে'৷ এটি ইতিমধ্যে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছে৷ সম্প্রতি বোগালেথকে নারী উন্নয়নে অবদানের জন্য ব্রাসেলসে ‘কিং বোদুয়াঁ আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট পুরস্কার' দিয়ে সম্মানিত করা হলো৷

একসময় আমি নিজেই নিজেকে বলেছি, ‘‘আমি তো গরু নই৷ আমার সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করতে দেব না৷'' এইভাবেই বোগালেথ তাঁর স্বদেশ ইথিওপিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন৷ তাঁর ভাষায় ‘‘মেয়েদের সেখানে এমনভাবে বড় করা হয়, যেখানে তাদের সবসময় ‘না' ‘না' শুনতে হয়৷ এভাবে হেঁটো না, ওভাবে হেসো না, এভাবে বসো না, ওভাবে কাপড় পরো না৷ এসব শুনতে শুনতেই আমরা বড় হয়েছি৷ কিন্তু স্বাধীনতাই সবকিছু৷ স্বাধীনতা ছাড়া তুমি কিছুই চিন্তা করতে পারো না৷''

স্বাধীনতার জন্য লড়াই

এই স্বাধীনতার জন্য বোগালেথকে, যাকে বোগে বলে ডাকা হয়, অনেক লড়াই করতে হয়েছে৷ সমাজের অনুশাসনের বিরুদ্ধে গোপনে স্কুলে ভর্তি হন তিনি৷ প্রতিভা ও অধ্যাবসায়ের গুণে এগিয়ে যান৷ বোগেই তাঁর অঞ্চলের প্রথম মেয়ে, যিনি রাজধানী আদ্দিস আবাবায় হাইস্কুলের বেড়া ডিঙাতে সক্ষম হন৷ এরপর বৃত্তি নিয়ে যাত্রা ইসরাইলে৷ তারপর অ্যামেরিকায়৷ সেখানে ডক্টরেটের থিসিস লেখেন এপিডেমিওলজি বা মহামারি সংক্রান্ত বিদ্যায়৷ কিন্তু স্বদেশকে তিনি ভুলে যাননি৷ ১৯৯৭ সালে তিনি ফিরে আসেন তিনি ইথিওপিয়ায়৷

বিয়ের আগে প্রস্তুত করা

বোগালেথ জানান, ‘‘আমি দেখেছি, মেয়েদের অবস্থাটা সেখানে কীরকম? সেখানে বিয়ের আগে মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের উত্সব পালন করা হয়৷ যা ঘটে তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়৷ বিভীষিকাময়৷ কিন্তু মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হওয়ায় বেশ গর্ববোধ করে মায়েরা৷''

বোগালেথ গেবরে জানেন, কোন বিষয়ে তিনি কথা বলছেন৷ ১২ বছর বয়সে নিজের যৌনাঙ্গচ্ছেদের সময় রক্তপাত হয়ে প্রায় মরেই যাচ্ছিলেন স্বাধীনচেতা এই নারী৷ এই ধরনের নিদারুণ অদৃষ্টের হাত থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেয়েদের রক্ষা করতে চান বোগো৷

‘‘আমি তো গরু নই৷ আমার সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করতে দেব না৷'' (ফাইল ফটো)ছবি: picture-alliance / dpa/dpaweb

আর তাই তো বোনের সঙ্গে মিলে কেএমজি সংস্থাটি গড়ে তোলেন তিনি৷ উদ্যোগ নেন মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে৷ দুই বোন নিজের এলাকা কাম্বাটিতে ৫০০০ ডলার পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন৷ কুয়া ও সেতু তৈরির প্রকল্প গড়ে তোলেন৷ এর ফলে গ্রামবাসীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন দুই বোন৷ আয়োজন করেন বিভিন্ন সভা সমিতি ও আলোচনা অনুষ্ঠানের৷

নির্দেশ নয় বোঝানো

এই প্রসঙ্গে বোগালেথে জানান, ‘‘তোমরা এটা ভুল করছো' কিংবা ‘ওটা খারাপ' এই ধরনের নির্দেশ দিতে আমরা চাইনি৷ তার চেয়ে মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের মারাত্মক ফলাফল সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে চেয়েছি আমরা৷ আমাদের কথা শুনে অনেকেই মাথা নেড়ে সায় দিয়েছেন৷ কেউ কেউ কেঁদেছেন৷ অবশেষে ২০০২ সালে যৌনাঙ্গচ্ছেদ না করা প্রথম মেয়েটির বিয়ে হয় প্রকাশ্যে৷''

সেই সময়ে হাজার হাজার মানুষ ঐ দম্পতিকে দেখতে এসেছিলেন৷ এরপর অল্পবয়সী মেয়েরা এক ধরনের পরিচয়-পত্র বহন করতে শুরু করে, যাতে লেখা থাকে ‘‘আমি যৌনাঙ্গচ্ছেদ করতে দেব না৷ আমাকে দেখে তোমরাও শেখ৷'' এই ঘটনার পর জাতিসংঘের শিশুবিযয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে কেজিএম-এলাকার প্রায় সব মানুষই মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন৷

নারী পুরুষের সমানাধিকারের দাবি

ইতোমধ্যে বোগে এইচআইভি/এইডস, নারী পুরুষের সমানাধিকার ইত্যাদি বিষয়গুলির দিকেও মনোযোগ দিয়েছেন৷ দুই বোনের ছোট্ট এক প্রকল্প থেকে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এখন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছে৷

ছবি: Getty Images

কীভাবে এত সব অর্জন করতে পারলেন বোগালেথ? এই প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, কার কাছে কৃতজ্ঞ তিনি৷ তাঁর কথায় স্পষ্ট হলো সেটাই, ‘‘আমার মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ আমি৷ তিনি আমাকে গোপনে স্কুলে যেতে অনুমতি দিয়েছিলেন৷ তিনি চেয়েছিলেন, মেয়েরা তাঁর চেয়ে ভালোভাবে জীবন কাটাক৷ আমার স্বাধীনতার জন্য আমি তাঁর কাছে অসীম ঋণী৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ