1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়লে মামলার জট কমবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ছে আরো ৪১টি৷ এতে কি মামলার জট কমবে? ট্রাইব্যুনালে বছরে নিষ্পত্তি হচ্ছে মাত্র ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ মামলা৷ আর সাজা পাচ্ছে হাজারে মাত্র সাড়ে চারজন আসামি৷

বাংলাদেশের নারী ও শিশু
প্রতীকী ছবিছবি: picture alliance/ZUMA Press

বাংলাদেশে ৪৬ জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা এখন ৫৪টি৷ প্রতিটি জেলায় একটি করে ট্রাইব্যুনাল থাকার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি৷ আর এই ৫৪টি ট্রাইব্যুনাল এখন মামলা জটের কবলে৷ এইসব ট্রাইব্যুনালে এক লাখ ৪১ হাজার ১৮৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে৷ আর যে ১৮ জেলায় এখনো ট্রাইব্যুনাল নেই সেসব জেলায় এই আইনে দায়ের করা বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৯৫টি৷ এই জেলাগুলোতে জেলা জজ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার বিচার করেন৷ ফলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সারাদেশে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মামলা ঝুলে আছে৷ গড়ে একটি আদালতে এখন ১০ হাজারেরও বেশি মামলা রয়েছে৷

দেশের রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নেই৷ জেলা জজই এসব জেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন৷

নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধ দমনের লক্ষ্যে ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি প্রণয়ন করা হয়৷ ২০০৩ সালে এই আইন আরো সংশোধন করে যুগপোযোগী করা হয়৷ এই আইনের অধীনে দায়ের করা মামলাগুলোর বিচারের জন্য প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে আইনের ২৬(১) ধারায়৷ প্রয়োজনে একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলা হয়েছে৷

আইনের বিধান অনুযায়ী এসব মামলার বিচার ১৮০ দিনের (ছয় মাস) শেষ করার কথা৷ আর তদন্ত শেষ করতে হবে ৯০ দিনের মধ্যে৷ ওই সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হলে ট্রাইব্যুনালকে কারণ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ৩০ দিনের প্রতিবেদন দাখিল করে একটি অনুলিপি সরকাকে পাঠানোর কথা৷ তদন্তের ক্ষেত্রেও একই ধরনের বিধান আছে৷

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বছরে নিষ্পত্তি হচ্ছে মাত্র ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ মামলা৷ আর সাজা পাচ্ছে হাজারে সাড়ে মাত্র ৪ জন আসামি৷ উপযুক্ত সাক্ষী, চার্জশিট জটিলতা এবং প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷

‘তদন্ত ঠিকমত না হলে আদালতে অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন’

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে এসব ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা গতবছর দেয়া এক প্রতিবেদনে মিথ্যা মামলার সংকটের কথা বলেন৷ তাদের দাবি, অন্যকোনো বিরোধকে কেন্দ্র করে যৌতুক, ধর্ষণ ও যৌন পীড়নের অভিযোগে মামলা হচ্ছে, যার সংখ্যা কম নয়৷

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আলি আসগর স্বপন ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘শুধু ট্রাইব্যুনালের স্বল্পতা নয় আরো অনেক কারণে মামলা জমে যাচ্ছে৷ পুলিশকে ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা হয় না৷ কারণ দেখিয়ে আরো ৩০ দিন মানে মোট ১২০ দিন সময় নেয়ার সুযোগ আছে৷ তাই মামলার বিচার কাজ শুরু করতেই দেরি হয়৷ বিচার শুরু হওয়ার পর ছয় মাসে বিচার কাজ শেষ হওয়ার কথা, কিন্তু তাও হয় না৷''

কেন হয় না? জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘মামলাটা প্রথম বাদী যত উৎসাহের সঙ্গে শুরু করেন অনেক সময়ই সেই উৎসাহ আর শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেন না৷ সাক্ষী হাজির হন না৷ পলাতক থাকেন অনেক আসামি৷ তাদের গ্রেপ্তারের বিষয় থাকে৷ মালামাল ক্রোকের বিষয় থাকে৷ আবার আদালতের বাইরে কেউ কেউ মামলা আপোস করে থাকেন৷ এর ফলে মামলায় সাজার হারও কম হয়৷ আর মামলার তদন্ত একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ তদন্তে অনেক ত্রুটি থাকে৷ তদন্ত ঠিকমত না হলে আদালতে অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন৷''

‘শুধু ট্রাইব্যুনাল থাকলেই হবে না, বিচারকও থাকতে হবে’

This browser does not support the audio element.

এই আইনে যেসব অপরাধের বিচার হয় তারমধ্যে রয়েছে যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, নারী বা শিশু পাচার, নারী ও শিশু অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত মৃত্যু, নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা, যৌন নিপীড়ন, ভিক্ষাবৃত্তি ইত্যাদির উদ্দেশ্যে শিশুর অঙ্গহানী প্রভৃতি৷

জাতীয় মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রতি জেলায় অন্ততঃ ৬-৭টি ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন৷ আর শুধু ট্রাইব্যুনাল থাকলেই হবে না, বিচারকও থাকতে হবে৷ অনেক জায়গায় ট্রাইব্যুনাল থাকলেও বিচারক থাকে না৷ আর মামলার তদন্ত ও সময়সীমা মানতে হবে৷ এটা কার্যত মানা হচ্ছে না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনাল কোন ধরণের মামলা যাবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে৷ ফলে অনেক সময়ই না বুঝে অনেকে দীর্ঘ সময় পর এই আদালতে আসেন৷ আবার কেউ ভুল মামলা নিয়েও এই আদালতে আসেন৷ আবার কেউ কেউ প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে কেউ কেউ অন্য অপরাধের ঘটনায় এই ধারায় মামলা করেন৷ ফলে মামলা জট লেগে যায়৷''

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত সপ্তাহে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনবিষয়ক আরো ৪১টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ ট্রাইব্যুনালের জন্য বিচারকসহ ২৪৬টি পদ এবং গাড়িসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদিরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷

আইনমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ শেষ হলে এ সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি করবে আইন মন্ত্রণালয়৷ ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী গত বছরের ২৪ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করে৷

এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ