1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী ঢাকিরা জনপ্রিয় হচ্ছেন

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৯ অক্টোবর ২০১৮

এতদিন যেটা দেখা যেতো না, গত কয়েক বছর ধরে সেটা চোখে পড়ছে৷ দুর্গাপুজোর মণ্ডপে নারী ঢাকি৷ ক্রমশই জনপ্রিয় হচ্ছে এই ঢাকিদের দল৷

ছবি: DW/S. Bandopadhyay

দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্তান পার্ক দুর্গা পুজোর মণ্ডপের বাইরে দেখা মিলল ওঁদের তিনজনের৷ তার একটু আগেই অষ্টমী পুজোর আরতি শেষ হয়েছে, ঢাক বাজিয়েছেন ওঁরা৷ তখন একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন৷ সঙ্গে একজন প্রবীণ এবং একজন যুবক থাকলেও, ঢাকের কাঠি যে ওই মেয়েদেরই হাতে, সেটা দেখেই বোঝা গেল৷ কথা বলতেও কোনো আপত্তি নেই৷ বরং বেশ সপ্রতিভ এবং হাসিখুশি৷ নদীয়া জেলার হরিনঘাটার বাসিন্দা সন্ধ্যা দাস৷ কলকাতার পুজোয় ঢাক বাজাচ্ছেন গত দু বছর ধরে৷ কথা বলে বোঝা গেল, সন্ধ্যার পরিবারই ঢাকি পরিবার৷বাবা ঢাক বাজান, বড়দা ঢাক বাজান৷ তাঁরাই ওর শিক্ষাগুরু৷ কিন্তু হঠাৎ ঢাক বাজানোর ইচ্ছে হলো কেন?‌ সন্ধ্যা কোনো রাখঢাক না করেই জানালেন, ‘‘‌নানান আর্থিক সমস্যা আছে, যে জন্যে এই লাইন বেছে নিয়েছি৷ দেখলাম পুজোর সময় মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক বাজানো যাচ্ছে, আবার আনন্দও পাওয়া যাচ্ছে৷ মায়ের দর্শনও পাচ্ছি৷’’

‘নানান আর্থিক সমস্যা আছে, যে জন্যে এই লাইন বেছে নিয়েছি’

This browser does not support the audio element.

ঢাক বাজাতে কলকাতায় যখন আসেন, তখন সংসার কে দেখে?‌ ছেলে-মেয়েরা কোথায় থাকে?‌ এই প্রশ্নের উত্তরে সন্ধ্যা জানালেন, তাঁর দুই ছেলে এ সময়টায় তাঁর বাপের বাড়ি, অর্থাৎ ওদের মামারবাড়িতে থাকে৷ অর্থাৎ এমন একটা ধারণা করে নিলে হয়ত সম্পূর্ণ অমূলক হবে না যে, বাড়ির বউ ঢাক বাজাতে যায়, এতে স্বামী, বা শ্বশুরবাড়ির হয়ত মত নেই৷ বউ উপার্জন করে নিয়ে আসছে, সেটা হয়ত একটা সহায়ক বিষয়, যে কারণে সরাসরি বাধা দেওয়া হয় না৷ কিন্তু সমর্থনও থাকে না৷ যে অসুবিধের মুখে পড়তে হয়েছিল রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ঢাকি গোকুলচন্দ্র দাসকে৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণার মছলন্দপুরের বাসিন্দা, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতিমান গোকুলচন্দ্রই আট বছর আগে প্রথম বাড়ির মেয়েদের পেশাদার ঢাকি হিসেবে তালিম দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন৷ এবং সেই কাহিনিও যথেষ্ট আগ্রহজনক৷ ঢাক বাজাতে অ্যামেরিকার লস এঞ্জেলেসে গিয়েছিলেন গোকুল৷ সেখানে এক বাদ্যযন্ত্রের দোকানে তিনি একটি মেয়েকে দেখেন, যে খদ্দেরদের শোনানোর জন্য একাধিক যন্ত্র বাজাতে পারে৷ সেই দেখেই গোকুলের মনে হয়েছিল, তা হলে দেশ-ঘরের মেয়েরাও কেন ঢাক বাজাতে পারবে না?‌ দেশে ফেরার পর নিজের ভাইঝি, পূত্রবধূ এবং পড়শি আরো তিন মেয়েকে ঢাক বাজানোর তালিম দিতে শুরু করেন গোকুলচন্দ্র৷ সেই শুরু৷

‘আমি হরিনাম করি, পুষ্পমালা করি, মনসাযাত্রা করি’

This browser does not support the audio element.

আর এখন কলকাতা শহরের একাধিক মঞ্চে চোখে পড়ছে এই নারী ঢাকিদের৷ এমন নয় যে পুরুষ ঢাকিদের পেশা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন ওঁরা৷ বরং পুরুষদের সঙ্গেই ওঁরা ঢাক বাজাচ্ছেন, যেটা সম্পূর্ণভাবে পুরুষশাসিত এক পেশার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য ঘটনা৷ তবে বিরোধিতাও যে আছে, সেটা বোঝা যায়৷ পুরুষ ঢাকিরা এখনো সহজ হতে পারেননি এই মেয়েদের উপস্থিতিতে৷ বরং ওঁদের একটু দূরত্বেই রাখেন পুরুষ ঢাকিরা৷ তবে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ঢাকিদের পেশাগত স্বীকৃতি হিসেবে ‘‌শিল্প কার্ড’ দেওয়া চালু হয়েছে, যেটা সরকারি সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাজানোর ডাক পেতে সাহায্য করছে৷ সেটাও অবশ্য এখনো সুসংহত পদ্ধতিতে হচ্ছে না বলে অনুমান৷ সন্ধ্যার সঙ্গেই ঢাক বাজাতে এসেছেন অঞ্জনা বিশ্বাস৷ তিনি যেমন জানালেন, অন্য জেলায় এই শিল্প কার্ডের বণ্টন নিয়মমাফিক হলেও তাঁদের নদীয়া জেলায় এখনো তাঁদের মতো অনেকেই সেই কার্ড পাননি৷ আবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় সমস্ত ঢাকিই কার্ড পেয়েছেন৷ যদিও অঞ্জনা কেবল ঢাকই বাজান না, তিনি গানও গান৷ নিজেই জানালেন, ‘‘‌আমি হরিনাম করি, পুষ্পমালা করি, মনসাযাত্রা করি৷ মনসাযাত্রায় বেহুলা লক্ষিন্দরের সিন করি৷’’ অঞ্জনা এবং সন্ধ্যার কথা থেকে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে গেল, গ্রাম-মফস্বলের মেয়েরা এখন বিরাট সংখ্যায় উঠে আসছেন, যুক্ত হচ্ছেন দুর্গাপুজোর যে বৃহৎ অর্থনৈতিক ক্ষেত্র, তার সঙ্গে৷ দেবী দুর্গার আরাধনার মধ্যে নারীশক্তির যে জাগৃতি-ভাবনা, বাস্তবে তা ক্রমশই সাকার হচ্ছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ