নারী-পুরুষের সহবাস বা লিভ-ইন সম্পর্ক বিবাহের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না৷ সেক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গী সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে গেলে, মহিলা পার্টনার আইনত তাঁর কাছ থেকে খোরপোষ দাবি করতে পারেন না৷ তাই এ জন্য প্রয়োজন পৃথক আইন৷
বিজ্ঞাপন
সহবাস বা লিভ-ইন করার আগে মহিলা পার্টনারকে জানতে হবে যে, তাঁর পুরুষ সঙ্গি বিবাহিত কিনা৷ বিবাহিত হলে তাঁর কাছ থেকে যে খোরপোষের দাবি করা যাবে না, সেটা মনে রাখতে হবে৷ তাই লিভ-ইন করার আগে পুরুষ বা মহিলার বৈবাহিক সম্পর্ক দেখে নেবার সতর্ক-বার্তা দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট৷
২০০৫ সালের পারিবারিক হিংসা আইনের ব্যাখ্যাকালে শীর্ষ আদালতের রায়: কোনো বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে যদি কোনো মহিলা জেনে বা না জেনে সহবাস করে থাকেন, তাহলে তা এই আইনের আওতায় পড়ে না৷ কারণ এটাকে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে ধরা যায় না৷ তাই পারিবারিক হিংসা আইন এখানে প্রযোজ্য হতে পারে না৷ বরং পুরুষের বিবাহিত স্ত্রী এই যুক্তিতে তাঁর স্বামীর লিভ-ইন মহিলার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারেন যে, ঐ মহিলা তাঁকে এবং তাঁর সন্তানদের স্বামীর বা সন্তানের পিতার স্নেহ, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছেন৷
সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এটা ভালোমতোই জানেন যে, একজন বিবাহিত পুরুষ লিভ-ইন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে গেলে তাঁর সামাজিক বাস্তবতা একজন মহিলা এবং লিভ-ইন জাত সন্তানের পক্ষে কতটা বেদনাদায়ক ও কষ্টকর হতে পারে৷ বিশেষ করে, গরিব ও অশিক্ষিত মহিলাদের৷ এর প্রতিবিধানে শীর্ষ আদালত মনে করেন, সংসদের উচিত উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা৷ লিভ-ইন বা বিবাহ জাতীয় সম্পর্ক থাকা কোনো অপরাধ নয়, পাপও নয়, তবে ভারতের মতো দেশে সামাজিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্যও নয়৷
ভারতে রঙের উৎসব হোলি
ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দোল বা বসন্ত উৎসব৷ কথাটা এসেছে দোলনা থেকে৷ এই উৎসব ভারতের পূর্ব, পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চলে উদযাপন করা হয়ে থাকে৷ ‘হোলি হ্যায়!’ বলে বেরিয়ে পড়ে মানুষ৷
ছবি: Getty Images
আনন্দের উৎসব
এই দিনের মজাই হলো পরস্পরের সঙ্গে রং ছোঁড়াছুঁড়ি৷ এই উৎসব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই পুরাণে৷ দোল উৎসব উদযাপন করা হয় ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসের শেষ পূর্ণিমাতে৷ মানুষের আনন্দ করার ধরনই যেন বলে দেয়, শীত বিদায় নিয়েছে আর বসন্তের আগমন ঘটেছে৷
ছবি: AP
শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য
এই উৎসবটির মধ্য দিয়ে ভালো কাজের জয় আর মন্দের ক্ষয়কেও বোঝানো হয়ে থাকে৷ তাই উৎসবের আগের রাতে বিশাল আকারে আগুন জ্বালানো হয়, যাকে শক্তির প্রতীক হিসেবে মনে করা হয় এবং এর মধ্য দিয়ে অমঙ্গল বা কুপ্রভাবকে ধ্বংস করা হয়৷ যদিও পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা বহুদিন থেকেই এই প্রথার সমালোচনা করে আসছেন৷
ছবি: Manan Vatsyayana/AFP/Getty Images
এলাকা বিশেষে পার্থক্য
ভারতের উত্তর প্রদেশের বরসানা এলাকায় দোল উৎসবের সময় লাঠি রাখা হয়৷ পুরুষরা ঠাট্টার গান গায় আর আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকা মহিলারা সেই লাঠি দিয়ে প্রতীকিভাবে পুরুষদের মারার চেষ্টা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৃষ্ণের দোল উৎসব
উত্তর ভারতের মথুরা এলাকায় যেখানে কৃষ্ণর জন্ম, সেখানে ১৬ দিন ধরে এই উৎসব চলে৷ কৃষ্ণপূজা দিয়ে শুরু হয়৷ তারপর সবাই মিলে রং ছোঁড়াছুঁড়ি এবং গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে সম্মান জানানো হয় কৃষ্ণ এবং তাঁর প্রেমিকা রাধাকে৷
ছবি: Getty Images
সবাই মেতে ওঠেন রং খেলায়
ছেলে-বুড়ো, পুরুষ-মহিলা, শিশু, সবাই অংশ নেয় এই উৎসবে৷ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-অনাত্মীয় সবাই একে অপরকে রং মাখিয়ে সং সাজাতেই যেন বেশি আনন্দ৷ যেমনটা দেখা যাচ্ছে এই ছবিতে৷ তারপর সবাই একসাথে বসে চায়ের সাথে মিষ্টি, নোনতা, নানা কিছু খাওয়া-দাওয়া করেন৷
ছবি: dapd
গানের সঙ্গে গালিগালাজ
উত্তর ভারতের কুমায়ুন জেলায় ঢোলের তালে তালে গান গাওয়া হয়৷ পুরুষ এবং মহিলারা ঐতিহ্যবাহী চকমকে পোশাক পরেন৷ রাজস্থান রাজ্যে আরো একটি অতি পুরনো প্রথা চালু রয়েছে৷ সেখানে দোল উৎসবের সময় এমনকি গালিগালাজ করারও অনুমতি রয়েছে৷
ছবি: AP
রং তৈরির রহস্য
দোল উৎসবের রঙ্গীন পোশাকের মতো পাউডারও রঙ্গীন৷ যে পাউডার আগে লতাপাতা, ফুল বা রান্নার উপকরণ যেমন হলুদ বা জাফরান দিয়ে তৈরি করা হতো৷ অনেক সময় ছোট বেলুনের ভেতর পানি ভরে রং মিশিয়ে বানানো হয় পানিবোমা৷ যা দিয়ে ছোট ছেলে-মেয়েরা খেলতে খুবই ভালোবাসে৷ ইতিমধ্যে রঙ্গীন পাউডারের সাথে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার শুরু হয়েছে৷ যার ফলে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয় বলে শোনা যায়৷
ছবি: UNI
প্লাসটিকের ব্যাপক ব্যবহার
আগে রং রাখা হতো পুরনো সোনা, রূপো বা পিতলের কৌটোতে৷ আজকাল এসবের পরিবর্তে বাজারে পাওয়া যায় প্লাসটিকের রং-এর বাক্স৷ এই বাক্সগুলো দামেও সস্তা, ব্যবহার করাও সহজ৷
ছবি: dapd
ভারতের বাইরে
দোল উৎসব উদযাপন কিন্তু শুধু ভারতেই হয় না৷ এর বাইরে অ্যামেরিকা, ইংল্যান্ড, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়রাও এই উৎসব উদযাপন করেন৷ জার্মানির বড় বড় শহরগুলোতেও ইতিমধ্যে দোল উৎসবের আয়োজন শুরু হয়েছে এবং তরুণ প্রজন্মের অনেক ছেলে-মেয়ের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷
ছবি: Holi Festival Of Colours
9 ছবি1 | 9
লিভ-ইন জাতীয় সহবাসকে আইনি বৈধতা দিলে ভারতের মতো দেশে তার সামাজিক অভিঘাত কী হতে পারে? এর উত্তরে কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল স্টাডিস-এর অধ্যাপক দেবদাস ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, সামাজিক প্রতিবাদ বা সমালোচনা ওঠা স্বাভাবিক৷ কিন্তু সমাজসচেতন ব্যক্তিরা সহবাসের আইনি বৈধতা দেবার মধ্যে কোনো দোষ দেখেন না৷ তবে তার আগে নির্ধারিত করতে হবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষিত পুরুষ ও মহিলার মধ্যে লিভ-ইন বা সহবাসের সংজ্ঞাটা কী হবে৷ শুধুই যৌন সম্পর্ক নয়, থাকবে মানবিক দায়দায়িত্ব, জড়িত থাকবে সম্পত্তির অধিকারও৷ বহু পশ্চিমা দেশে লিভ-ইন নিয়ে আজ আর কেউ মাথা ঘামায় না৷ কিন্তু ভারতীয় সমাজে সেটা মেনে নেয়া সহজ হবে না, বলেন সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক দেবদাস ভট্টাচার্য৷
জৈনকা নারী বহু বছর লিভ-ইন করেছিলেন বিবাহিত ও দুই সন্তানের পিতা ভি. কে শর্মার সঙ্গে৷ পরে ভি. কে শর্মা ফিরে যান তাঁর আগের স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে৷ লিভ-ইন করা ঐ মহিলা ক্ষতিপূরণের মামলা করলে নিম্ন আদালত খোরপোষ হিসেবে উক্ত ব্যক্তিকে মাসে ২৫ হাজার টাকা করে খোরপোষ দেবার আদেশ দেন৷ কিন্তু উচ্চ আদালতে তা খারিজ হয়ে যায়৷ কারণ শীর্ষ আদালতে মতে, ঐ মহিলা জেনেশুনে বিবাহিত ঐ পুরুষকে লিভ-ইন পার্টনার করেছিলেন৷ কাজেই, চলতি আইনে ঐ লিভ-ইন সম্পর্ক বিবাহ জাতীয় নয়৷ বড় জোর উপ-পত্নী৷ লিভ-ইন সম্পর্ককে বিবাহ জাতীয় বলে গণ্য করতে হলে কয়েকটি মাপকাঠি থাকা জরুরি৷ যেমন কতদিনের সহবাস, গৃহস্থালি ভাগ, আর্থিক ব্যবস্থা, দৈহিক ও মানসিক সম্পর্ক, সন্তান প্রতিপালন, সামাজিকতা ইত্যাদি৷