বছর কয়েক আগে দু'জন হিন্দু বিধবাকে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের একটা মন্দিরে পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল৷ আর এবার শুধু মন্দিরে নয়, পারিবারিক ক্রিয়াকর্মের জন্যও ভারতে ডাক পড়ছে নারী পুরোহিতের৷ বিশ্বাস হচ্ছে না?
বিজ্ঞাপন
আসলে বিশ্বাস না হওয়ারই কথা৷ নারী নির্যাতন, ভ্রূণ হত্যা, শিশু বিবাহ, ধর্ষণ – এগুলো লেগেই আছে মূলত পিতৃতান্ত্রিক ভারতবর্ষে৷ আজও সেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে গণধর্ষণ হচ্ছে, ডাইনি অপবাদে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে নারীকে৷ এ কারণে বিদেশে ভারতীয় নারীর ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে, খাচ্ছে প্রতি পদে পদে৷
তাই ভারতে মহিলা পুরোহিতের অস্তিত্ব যে আদৌ থাকতে পারে, সে কথা না দেখলে বিশ্বাস না হওয়াটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু আমাদের কাছে প্রমাণ আছে৷ হ্যাঁ, এই ভিডিও-টাই সেই প্রমাণ৷
সম্প্রতি পুণে শহরে একটি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ডাক পড়েছিল পুরোহিত বর্ষা গাডগিলের৷ পরনে সাধারণ শাড়ি-ব্লাউজ হলে কী হবে, কণ্ঠ দৃঢ়, সংস্কৃতের উচ্চারণও চমৎকার৷ বর্ষার কথায়, ‘‘হাজার বছরের ঐতিহ্য, পরম্পরাকে ভেঙে এ পেশায় আসাটা সহজ ছিল না৷ অনেকে তো মনে করেন মেয়েরা নাকি এত কঠিন কঠিন সংস্কৃত শ্লোক, মন্ত্র ইত্যাদি মুখস্থ করে ঠিকমতো উচ্চারণই করতে পারবে না৷''
মনে পড়ে ভারতের প্রথম দু'জন নারী পুরোহিতের কথা৷ নাম ছিল – লক্ষ্মী আর ইন্দিরা৷ পুরোহিত হওয়ার জন্য তাঁদের প্রায় চার মাস প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল৷ ভারতীয় সমাজের প্রেক্ষাপটে এই দুই নারীকে পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ – ঘটনাটিকে ছোটখাট একটা বিপ্লবের তুলনায় কোনো অংশে কম মনে হয়নি তখন৷ যেদেশে বিধবাদের পুজোর সবরকম আয়োজন থেকে দূরে রাখা হয়, যেখানে বিধবারা এখনও নানাভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত, সেখানে তাঁদের মন্দিরের মতো জায়গার দায়িত্ব দেওয়া তো আর যে সে কথা নয়! সে সময় কট্টরপন্থিরা এর বিরোধিতা করলেও, শেষ পর্যন্ত সে সব ধোপে টেকেনি৷
তবে এবার পুণেতে যেটা ঘটলো, সেটা আরো অকল্পনীয়৷ অবশ্য শুধু বর্ষা গাডগিল নয়, পুণেতে এমন আরো কয়েকজন মহিলা পুরোহিত হিসেবে কাজ করছেন৷ অর্থাৎ খালি গা, গলায় গামছা আর ধুতি পরা পুরুত ঠাকুরের জায়গায় একেবারে শাড়ি পরা পুরোহিত – নারী স্বাধীনতার এ এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত নয় কি?
বন্ধুরা, বাংলাদেশে কি আমরা নারী মৌলাভী কল্পনা করতে পারি? জানান মন্তব্যের ঘরে৷
জীবন, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠানে শুভ-অশুভ শক্তি
‘গুড অ্যান্ড ইভিল পাওয়ার’, শুভ এবং অশুভ শক্তি – তা সে আপনি মানুন আর না মানুন – একে অগ্রাহ্য করার কিন্তু উপায় নেই৷ বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্টান, এমনকি ইসলাম ধর্মেও আমরা অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির জয়ের কথা পাই৷
ছবি: Reuters/S. Pring
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝে
শুভ শক্তি থাকুক আর না থাকুক, শুভ বোধ, আদর্শ মানবজীবনকে অবশ্যই সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়৷ আর তাই, এর বিপরীতের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সৃষ্টির সেই আদি কাল থেকে৷ ভূত-প্রেত, আত্মা বা জিন নিয়ে তাই রয়েছে অসংখ্য গল্প, কল্প-কাহিনি আর তার সঙ্গে সঙ্গে অজস্র আচার-অনুষ্ঠান, অন্ধ বিশ্বাস৷
ছবি: Reuters/S. Pring
আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা
অসুরের অত্যাচার, পাপীদের অনাচার আর অশুভ শক্তির উত্থানে মানবতা যখন ভূলুণ্ঠিত, নিষ্পেষিত, তখন সমস্ত দেবতারা, অর্থাৎ সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা, সব নিপীড়িত-নির্যাতিতরা সংঘবদ্ধ হন৷ তাঁদের আকুল আবেদনেই আবির্ভূতা হন আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা৷ হিন্দুধর্ম অনুসারে, মহিষাসুর বধের মাধ্যমে শুভ শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি...
বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী, চিন্তা জগতে অশুভ ভাবনার নাম হলো ‘মার’৷ অবশ্য শব্দটি রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা এবং মাইকেল মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্যেও চোখে পড়ে৷ মহাযান বৌদ্ধধর্ম বলে, অশুভ শক্তি ধ্বংস হলে পৃথিবী স্বর্গীয় হয়৷ বুদ্ধদেবের কথায়, ‘‘কাম, ক্ষুধা, পিপাসা থেকে বিরত থাকে ‘মার’-কে দূরে রাখতে পারলে প্রত্যেক জীব ‘বুদ্ধ’ হয়ে উঠতে হতে পারে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
রূপকথা আর ইতিহাসের পাতায়
এশিয়া বা আফ্রিকার মতো ইউরোপেও অশুভ ও শুভ শক্তি নিয়ে নানা লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে৷ একটা সময় ইউরোপে ‘ডাইনি’-দের পুড়িয়ে মারার চল ছিল৷ আবার রূপকথাগুলিতেও ছিল আশ্চর্য সব জাদুর গন্ধ৷ গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয়ের ‘স্নো হোয়াইট’ বা ‘স্লিপিং বিউটি’-তেও আমরা ডাইনি, এঞ্জেল এবং শুভ-অশুভ শক্তির সংঘাতের নজির পাই৷
ছবি: picture-alliance / akg-images
জিন-পরীর অস্তিত্ব
বৌদ্ধ, হিন্দু আর খ্রিষ্টধর্মের পাশাপাশি ইসলামেও রয়েছে জিন-পরীর উল্লেখ, আছে ‘ইবলিশ’ বা শয়তানের কথা৷ এই ‘ইবলিশ’, ‘সিলা’ বা ‘ইফরিত’-রা নাকি সব দুষ্টপ্রকৃতির জিন বা আত্মা, যারা কবরস্থানে থাকে আর যে কোনো আকার ধারণ করতে পারে৷ অবশ্য শুধু অশুভ জিন নয়, আলাদিনের মতো শুভ জিন বা ফেরেশতার কথাও রয়েছে ‘সহস্র এক আরব্য রজনি’ -তে৷
ছবি: Fotolia/ThorstenSchmitt
‘প্রিং কা-এক’ উৎসব
আধুনিক সমাজেও কিন্তু এমন হাজারো আচার-অনুষ্ঠান চোখে পড়ে৷ কম্বোডিয়ার মানুষদের যেমন আজও বিশ্বাস, অশুভ শক্তি অসুখ-বিসুখ নিয়ে আসে, মানুষের ক্ষতি করে৷ তাই ‘প্রিং কা-এক’ উৎসবে সারা গায়ে কালি মেখে, অশুভ আত্মাকে দূর করার কাজে নেমে পড়ে সহজ-সরল গ্রামবাসী৷ উৎসবের শেষ হয় ভূরিভোজ দিয়ে৷