রাজধানীতে মাইক্রোবাসে তুলে এক গারো তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারে আজ তারা প্রতিবাদে উত্তাল৷
বিজ্ঞাপন
শেখ রোকন ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘একজন নারী উত্যক্তকারী যখন পার পেয়ে যায়, তখন তা আরও নারী নিগ্রহের জন্ম দেয়৷ এক নারী নিগ্রহকারী যখন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, তখন সমাজে অনেক ধর্ষণের ঝুঁকি তৈরি করে৷ বাংলাদেশেও একই ধরনের অপরাধ কী ক্রমোবর্ধমান হারে ঘটে চলছে, দেখুন –
২১ মে, ২০১৫: জনাকীর্ণ রাজপথ থেকে গারো তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ধর্ষণ৷
১১ মে, ২০১৫: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে চলন্ত বাসে ধর্ষিত হন এক নারী৷
০৮ ফে. ২০১৫: সাভারে চলন্ত বাসে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে দুই নারী লাফিয়ে পড়ে আহত৷
২২ ফে. ২০১৩: সাভারে চলন্ত বাসে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে এক নারী নিহত৷
২৪ জা. ২০১৩: মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে এক নারী ধর্ষিত৷
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
11 ছবি1 | 11
এ তো শুধু চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণের তালিকা৷ গাড়ির বাইরেও ধর্ষিত হয়েছে অনেক নারী৷ পার পেয়ে যাওয়া ধর্ষকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে৷ আমাদের সমাজের জন্য নিঃসন্দেহে খারাপ সময় চলছে; কিন্তু আসছে আরও খারাপ সময়৷ সামাজিক ইস্যুতে নির্লিপ্ত থেকে কেবল রাজনৈতিক ইস্যুতে চিংড়ি মাছের মতো উৎসাহী সমাজের কপালে ভালো কিছু থাকা উচিত হবে না৷''
নাবিলা আশরাফ আলী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে৷ যদি জন্মেছিই এই দেশে, যেখানে নারীর প্রতি রাষ্ট্রেরও ন্যূনতম মর্যাদাবোধ, সম্মানবোধ নাই, সেখানে আর কী-ই বা করার আছে আমার? আমাদের? আর হ্যাঁ, চোখ দিয়ে ধর্ষণ করবে যারা, সেই সব পুরুষকে বলছি, সাবধান হোন, খুঁচিয়ে চোখ তুলে উপড়ে নেবো এইবার!''
সালেক আহমেদ লিখেছেন, ‘‘মাইক্রোবাসে ধর্ষণ, বাসে ধর্ষণ, মেলায় নারী নির্যাতন ইত্যাদি খুব সাধারণ ব্যাপার ক্ষমতাবানদের কাছে, হচ্ছে না কোনো বিচার৷ আল্লাহ না করুক, ঐ ক্ষমতাবানদের পরিবারেরর কেউ যদি এ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায় নাটকের শেষ দৃশ্যের মতো৷ সত্যি হচ্ছে এরূপ ঘটনা চলতে থাকবে, বন্ধ হবে না বরং বাড়বে৷কারণ আমরাই চাই না, এটা বন্ধ হোক, চাইলে প্রথম ঘটনার সময়ই উপযুক্ত তাৎক্ষণিক বিচার করা হতো দল, মত, সমাজ নিরপেক্ষ থেকে৷''
মিঠুন চাকমা সামহয়্যার ইন ব্লগে লিখেছেন, ‘‘এক বিধ্বস্ত মহিলা, তরুণী এক কিশোরী, একা, কিছুক্ষণ আগে যার শরীরে পাশবিকতার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, সেই তরুণী একা, বিচার চাইতে ঘোরেন থানা থেকে থানায়৷ কী দুর্দান্ত সাহস ও মানসিক ধৈর্য স্ট্যামিনা থাকলে তা সম্ভব হতে পারে! জয়তু হে সাহসিনী তরুণী!''
শাহেদ শাহরিয়ার জয় একই ব্লগে লিখেছন, ‘‘ইদানীং আমাদের দেশে ধর্ষণের মহামারি লেগেছে৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে,কিছু মানুষ এই অবস্থার ওপর ভর করে সস্তায় নাম কামাতে ব্যতিব্যস্ত৷ কোনো নারী যখন ধর্ষণের শিকার হয়, সেটার প্রেক্ষাপট নিয়ে শুরুহয় সমালোচনা আর সমালোচনার জল গড়াতে গড়াতে গিয়ে উপচে পরে হয়ত কোনো একটা নির্দিষ্ট গোষ্টী কিংবা নির্দিষ্ট একটা ধর্ম নয়ত বা পুরুষশাসিত সমাজের ওপর৷ এই যে এত্ত ধর্ষণের মাত্রা বৃদ্ধি, এত মাতামাতি, একজনকে নিয়ে অন্যজনের তির্যক মন্তব্য এত কিছুর ফল কিছুই শেষ পর্যন্ত হয় না৷ ধর্ষকের চেতনায় জোর আরো বাড়ে, বাড়ে ধর্ষিতার সংখ্যাও৷ এই অবোধ রাষ্ট্র ব্যবস্থার যাতে বোধেদয় হয় এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
মো. গালিব মেহেদী খাঁন একই ব্লগে লিখেছেন, ‘‘যৌন সন্ত্রাস বৃদ্ধির পেছনে প্রধান যে কারণগুলি দৃশ্যমান তার প্রথমটি হলো বিচার হীনতার সংস্কৃতি৷ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না৷ আর যদিও বা দু-একটি ক্ষেত্রে বিচার হচ্ছে তার তেমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে না৷ কাজেই যারা এই যৌন সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তারা এক ধরনের সবুজ সংকেত পেয়েই যায় যে সামাজিক বেড়াজালের মাঝে পরে প্রথমত মেয়েটি প্রকাশ করবে না আর যদি প্রকাশ করেও ফেলে বিচার হবে না৷ এই অবস্থায় এ দেশে যৌন সন্ত্রাস ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক৷
আমরা সমাজে নারীর সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানাই৷ আর সেটা নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের৷ সেটা যা রাষ্ট্র করতে পারছে না এর দায় নিতে হবে যাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনার দ্বায়িত্বে আছেন তাদেরই৷ নারী বাঁচুক তার অধিকার নিয়ে, সম্মানের সাথে৷
এই ঘটনাটি নিয়েও টুইটারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ জাহেদ মাদ্রিদিষ্টা লিখেছেন, হঠাৎ করেই বাংলাদেশে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে৷ ব্যাপারটা কি অদ্ভুত৷ আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী এবং এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না৷
লেখিকা তসলিমা নাসরিন এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘বাসে গণধর্ষণ৷ ধর্ষণের পর মেয়েটিকে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা৷ এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ এ যেন ঠিক দিল্লির ধর্ষণের ঘটনা৷