1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী মুক্তিযোদ্ধা

১ আগস্ট ২০১২

বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে অস্ত্র সংরক্ষণ, অস্ত্র পরিবহণ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দানের কাজ করেছেন মেহেরুন্নেসা মেরী৷ আজও নিজের ব্যাংকিং পেশার পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন সাংগঠনিক এবং লেখালেখির কাজ৷

ছবি: National Monument of Savar

১৯৫৫ সালের ১২ই নভেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানায় জন্ম গ্রহণ করেন মেহেরুন্নেসা মেরী৷ পিতা মোকছেদ আলী উজির এবং মা রহিমা বেগম৷ ১৯৭০ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলেজে ভর্তি হন মেহেরুন্নেসা৷ এর কিছুদিন পরেই অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ দেশে যুদ্ধ শুরু হয়৷

দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যুদ্ধের কাজে নিজের অংশগ্রহণের পটভূমি ও নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমার আব্বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন৷ আমাদের বাড়িতেই মুক্তিযোদ্ধাদের শিবির ছিল৷ তখন আমাদের গ্রামের আরো ছেলে-মেয়েরাও মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করত৷ আমিও তাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের কাজে অংশ নেই৷ রাতইল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন নূরুদ্দোহার কাছে আমরা নকল অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম৷ ঐ অঞ্চলে মূলত ভাটিয়াপাড়া রণাঙ্গনে যুদ্ধ হতো৷ সেই যুদ্ধের সময় আমরা কাজ করেছি৷ আমরা মেয়েরা সাধারণত যুদ্ধের মাঠে থাকতাম না৷ বরং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা চিকিৎসা সেবা দিতাম এবং সেবা শুশ্রূষা করতাম৷ ডা. সাইদুল ইসলামের অধীনে একটি দল ছিল৷ সেই দলের সদস্য হিসেবে আমরা চিকিৎসা সেবা প্রদান করতাম৷ এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা যেসব অস্ত্র-শস্ত্র নিত কিংবা আবার ফেরত দিত, তখন সেগুলো আমি খাতায় লিখে হিসাব রাখতাম এবং সংরক্ষণ করতাম৷ কতগুলো অস্ত্র হারালো কিংবা কতগুলো যোগ হলো অর্থাৎ অনেক সময় পাক সেনাদের পরাজিত করে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আসতেন সেগুলোর হিসাব রাখতাম৷''

Week 31/12 Women 1: Meherunnesa Mery Part 1 - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কৌশলে কীভাবে গোলা ও অস্ত্র পৌঁছে দিতেন মেহেরুন্নেসা এবং তাঁর সঙ্গীরা, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘লঞ্চে হামলা চালানো হতো যেই গোলা দিয়ে, সেগুলো আমাদেরকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যেতে হতো৷ বালতির ভেতরে সেই গোলাগুলি সাজিয়ে দেওয়া হতো৷ তার উপরে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো৷ তখন তো মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক অজ্ঞাত শত্রু ছিল৷ সেসময় তাদেরকে ‘ক্ষুধারু' বলা হতো৷ তো তারা যেন বুঝতে না পারে সেজন্য বালতিতে কাপড় দিয়ে তার উপর সাবান রেখে দিতাম৷ যাতে করে মনে হয় যে, আমরা নদীর ঘাটে কাপড় কাঁচতে যাচ্ছি৷ আর সাংকেতিক কথায় বলে দেওয়া হতো, অমুক ঘাটে অমুক রঙের জামা গায়ে মাঝি থাকবে তার কাছে গোলাগুলো পৌঁছে দিতে হবে৷ আসলে মাঝি বলতে মুক্তিযোদ্ধা বোঝানো হতো৷ আমরা তাদের কাছে অস্ত্র তুলে দিয়ে ফিরে আসতাম৷''

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বাংলাদেশেই অবস্থান করে এসব কাজ করেছেন বীর সাহসী নারী মেহেরুন্নেসা মেরী৷ এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তাঁর বাবা গ্রামের বড় বড় মেয়েদেরকে নিরাপত্তার জন্য তাদের বাড়িতেই এনে রাখতেন৷ তবে পাকিস্তানের সেনারা যখন গ্রামের দিকে কিংবা ভেতরে এগিয়ে আসতো তখন মেয়েদেরকে নৌকায় করে পার করে নদীর ওপারে রেখে আসা হতো৷ আবার পরিস্থিতি বুঝে তাঁরা বাড়িতে ফিরে যুদ্ধের কাজ করতেন বলে জানান মেহেরুন্নেসা৷

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও লেখাপড়া শুরু করেন তিনি৷ উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি৷ পরে আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে এমএ করেন মেহেরুন্নেসা৷ শিক্ষাজীবন শেষে ব্যাংকিং পেশায় যোগ দেন৷ বর্তমানে সোনালী ব্যাংক-এ ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি৷

এছাড়া মূল পেশার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংগঠনিক কাজেও সক্রিয় তিনি৷ একইসাথে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখা-লেখির কাজ৷ এখন পর্যন্ত তাঁর ১২টি বই প্রকাশিত হয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নারী মুক্তিযোদ্ধা' নামের ঐতিহাসিক বই৷ নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ঘটনাবলী সমৃদ্ধ এই বইটি দুই খণ্ডে প্রকাশিত৷ এই বইটি লেখার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর যখন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠিত হলো, তখন আমি এই সংসদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হই৷ এরপর কয়েক দফায় আমি নির্বাচিত, আবার কখনও মনোনীত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি৷ ফলে আগাগোড়া সবসময় আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত৷ তাছাড়া বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সম্মেলনে নারী মুক্তিযোদ্ধারা আসতেন৷ এছাড়া আমিও বিভিন্ন জেলায় গিয়ে গিয়ে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী সংগ্রহ করে এই বইটি লিখেছি৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ