মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প রোববার ডেমোক্রেট দলের প্রগতিশীল নারী সাংসদদের আক্রমণ করে টুইট করেছেন৷ সাংসদরা যে দেশ থেকে এসেছেন সেখানে তাঁদের যেতে বলেছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প তাঁর টুইটে কারও নাম উল্লেখ করেননি৷ তবে টুইটের ভাষা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, মিনেসোটার কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর এবং মিশিগানের রাশিদা তালিবকে লক্ষ্য করে টুইট করেছেন ট্রাম্প৷ কারণ টুইটে ট্রাম্প ‘‘তাঁরা ইসরায়েলতে মনেপ্রাণে ঘৃণা করেন' বলে উল্লেখ করেছেন৷ সম্প্রতি ওমর ও তালিব ইসরায়েল নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন৷
ওমর শিশু বয়সে যুদ্ধবিদ্ধস্ত সোমালিয়া থেকে পালিয়ে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন৷ আর ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত নারী তালিবের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রে৷
এই দুজন কংগ্রেসওম্যান ছাড়াও নিউইয়র্কের আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ এবং ম্যাসাচুসেটসের আয়ানা প্রেসলিও আক্রমণের শিকার বলে ধারনা করা হচ্ছে৷
ট্রাম্প বলেন, এই চার সাংসদ এমন কয়েকটি দেশ থেকে এসেছেন যেখানকার সরকার সম্পূর্ণ দুর্নীতিবাজ ও অদক্ষ৷ ‘‘এসব দেশ থেকে আসা ব্যক্তিরাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও মহান দেশের নাগরিক ও সরকারকে দেশ পরিচালনার উপায় বলে দিচ্ছে, যা দেখে মজাই লাগছ,'' বলে তিনি৷ এই সাংসদদের তিনি ঐসব দেশে ফিরে গিয়ে তাদের সমস্যা সমাধান করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং ফিরে এসে কীভাবে তা করলেন, তা জানাতে বলেছেন৷
ন্যান্সি পেলোসি, ব্যার্নি স্যান্ডার্সসহ ডেমোক্রেট দলের কয়েকজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও অভিজ্ঞ আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পের বক্তব্যকে বর্ণবাদী ও জেনোফোবিক বলে উল্লেখ করেছেন৷
ট্রাম্পের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন নিউইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান ওকাসিও-কর্টেজ৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনি (ট্রাম্প) ক্ষুব্ধ কারণ আপনি এমন আমাদেরসহ অ্যামেরিকার কথা কল্পনাও করতে পারেননা৷''
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ট্রাম্পের বক্তব্য ‘একেবারে অগ্রহণযোগ্য' বলে মন্তব্য করেছেন৷
সোমবার আবারও ঐ ডেমোক্রেট সাংসদের আক্রমণ করে টুইট করেন ট্রাম্প৷ এবার তিনি বলেন, ‘‘মৌলবাদী বামপন্থি কংগ্রেসওম্যানরা কবে ইসরায়েল, প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও আমাদের দেশ সম্পর্কে ফাউল ভাষা ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইবেন৷ অনেক মানুষ তাঁদের কাজের জন্য ক্ষুব্ধ৷''
জেডএইচ/কেএম (এএফপি)
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত টুইট বার্তা
হোয়াইট হাউস ও নিজের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে শলাপরামর্শ না করেই ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ টুইট বার্তা প্রকাশ করে বার বার বিতর্কের মুখে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
বার্সেলোনা হামলা, সন্ত্রাসবাদের দাওয়াই
স্পেনে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প চরম ইসলামপন্থিদের শায়েস্তা করতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এক মার্কিন জেনারেলের নৃশংস পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নেবার পরামর্শ দেন৷ শুকরের মাংসে ডোবানো বুলেট দিয়ে জেনারেল পার্শিং ফিলিপাইন্সে ইসলামি বিদ্রোহীদের কীভাবে শায়েস্তা করেছিলেন, ট্রাম্প পরোক্ষভাবে সেই কাহিনির উল্লেখ করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Barrena
শার্লটসভিলে তাণ্ডব
নব্য নাৎসি ও চরম দক্ষিণপন্থি গোষ্ঠীগুলির হিংসাত্মক তাণ্ডবের পর অ্যামেরিকাসহ গোটা বিশ্বে যখন সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ ট্রাম্প তখন তাণ্ডবকারী ও প্রতিবাদকারীদের ঢালাওভাবে হিংসার জন্য দায়ী করেন৷ চরম বিতর্কিত কনফেডারেট নেতাদের মূর্তি সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তেরও প্রবল সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
নিজের শিবিরই যখন লক্ষ্যবস্তু
শুধু ‘ফেক নিউজ’ নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের রিপাবলিকান দলের একাধিক নেতা ও সংসদ সদস্যদের সমালোচনা বরদাস্ত করতে প্রস্তুত নন৷ শ্লেষাত্মক ও অপমানজনক টুইট বার্তার মাধ্যমে তিনি তাঁদের সরাসরি আক্রমণ করে আসছেন৷ ঘরের মধ্যেই অভাবে শত্রু বাড়িয়ে চললে চরম দুর্দিনে তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বেন বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
শিল্প-বাণিজ্য মহলের সঙ্গে সংঘাত
শার্লটসভিল কাণ্ডের পর দু’টি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নব্য নাৎসিদের প্রতি নরম মনোভাবের প্রতিবাদে প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে ওঠেন৷ তাঁরা পরিষদ ভেঙে দেবার উপক্রম করলে ট্রাম্প নিজেই টুইট বার্তায় সেই ঘোষণা করে লেখেন, তিনি ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ফেলতে চান না৷
ছবি: Imago/ZumaPress/O. Douliery
বেপরোয়া পররাষ্ট্র নীতি
নিজের প্রশাসনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সামরিক কর্মকর্তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই অন্য দেশের বিরুদ্ধে তর্জন-গর্জন করতে ওস্তাদ ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি ও ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের হুঙ্কার করে তিনি চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সষ্টি করেছেন৷