ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ক্ষতির কারণে শনিবার জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে রেল যোগাযোগে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে৷ জার্মান রেল কর্তৃপক্ষ একে নাশকতা হিসেবে উল্লেখ করেছে৷ ঘটনার তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার জার্মানির উত্তরাঞ্চলে তিন ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল৷ এটিকে দেশটির রেল যোগাযোগে বড় ধরণের বিপর্যয় হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ জার্মানির রেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডয়চে বান জানিয়েছে, নেটওয়ার্কের তারে ‘নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে’ সকাল থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে তারা৷ এই বিষয়ে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ তদন্ত চালাচ্ছে বলে জানায় সংস্থাটি৷
এই ঘটনার পেছনে কারা দায়ী থাকতে পারে প্রাথমিক সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি৷ তবে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন বার্লিনে একটি জায়গায় এবং পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়ার আারেকটি জায়গায় যোগাযোগের তার কেটে ফেলা হয়েছিল৷
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নান্সি ফেজার জানিয়েছেন, এটি ‘ইচ্ছাকৃত কাজ’ বলেই কর্তৃপক্ষের ধারণা৷ আর যোগাযোগমন্ত্রী ফলকার ভিসিং বলেন, ‘‘এটি যে একটি পরিকল্পিত ও বিদ্বেষপূর্ণ কর্মকাণ্ড সেটি পরিষ্কার৷’’
এর আগে শনিবার সকালে ডয়চে বান জানিয়েছিল, লাইনে কারিগরি ত্রুটির কারণে উত্তরাঞ্চলের একটি বড় অংশে রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে৷ এর ফলে জার্মানির ভেতরে চলাচলকারী ট্রেনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রুটের ট্রেনেও প্রভাব পড়ে৷
হামবুর্গ, শ্লেসভিশ-হলশ্টাইন এবং লোয়ার স্যাক্সনি থেকে কাসেল-ভিলহেল্মসহোয়ে, বার্লিন ও নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়ার মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল৷ বার্লিন, হ্যানোফার ও নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়ার মধ্যে চলাচলকারী দ্রুত গতির আইসিই ট্রেনের চলাচলেও বাধা পড়ে৷ বার্লিন থেকে অ্যামস্টারডামে ট্রেন যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়৷
পরিবেশবান্ধব রাতের ট্রেনে জার্মানি থেকে ক্রোয়েশিয়া
রাতের রেলে চড়ে জার্মানির মিউনিখ থেকে যাত্রা করে ক্রোয়েশিয়ার জাগরেব শহরে গেলেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক লিসা স্ট্যুফে৷ অপুর্ব এ যাত্রার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা শুনুন তার মুখে৷
ছবি: Lisa Stüve/DW
শত কিলোমিটারের নীরব যাত্রা
জার্মানির মিউনিখ শহরের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেন লিসা৷ প্রায় সাড়ে পাঁচশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এ ট্রেনটি তাকে নিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার জাগ্রেব শহরে৷
ছবি: Lisa Stüve/DW
ছোট ছোট কামরা
ছোট ছোট কামরায় রয়েছে এমন ছয়টি বিছানা অর্থাৎ ছয়জন যাত্রীর জন্য বরাদ্দ প্রতিটি কামরা৷ ভ্রমণে তেমন অসুবিধা হয়নি লিসার৷ কারণ তেমন যাত্রী ছিল না ট্রেনে৷ পরেরবার কী আর এমন ফাঁকা থাকবে, এই ভাবনা তার৷
ছবি: Lisa Stüve/DW
ধীরে ধীরে পাহাড়ি পথে
পাঁচশ কিলোমিটারের এই পথটি যেতে সময় লাগে আট থেকে ১০ ঘণ্টা৷ রাতের অন্ধকারে পাহাড়ি পথ আর নিস্তদ্ধ বনের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে সীমান্ত পাড়ি দিযে গন্তব্যে পৌঁছায় মিউনিখ থেকে ছেড়ে যাওয়া এ রাতের ট্রেনটি৷
ছবি: Lisa Stüve/DW
আছে সামান্য নাস্তাও
ট্রেনের ভেতর বিছানায় শুয়ে রাতের আকাশ দেখে ক্লান্ত আপনি হয়তো ঘুমিয়ে গেলেন৷ আর ঘুম ভাঙার পর কিছু একটা থেকে ইচ্ছে করবে৷ ভাবনা নেই৷ চাইলেই আপনি কিনে নিতে পারেন এক কাপ গরম কফি আর সাথে ছোট্ট একটি কেক কিংবা রুটি৷
ছবি: Lisa Stüve/DW
পরিবেশবান্ধব
রাতের এমন যাত্রায় একটু সময় লাগে৷ যেমন মিউনিখ থেকে জেবরাখের পাঁচশ ৫০ কিলোমিটার পথ যেতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে৷ তবে ভালো দিক হলো, ট্রেনের এই যাত্রা পরিবেশবান্ধব৷ যেমন এই ট্রেনটি প্রতি যাত্রী বহন করতে গিয়ে ২০ কিলোগ্রাম কার্বন্ডাই অক্সাইড খরচ করছে৷ এই পথ বিমানে যাত্রা করলে খরচ হতো একশ ৩০ কিলোগ্রাম৷
ছবি: Lisa Stüve/DW
বাড়বে এমন ট্রেন
একটু আরাম করে যাওয়া যায় বলে অনেকেই চড়তে চান এই ট্রেনে৷ আর তাই পুরো ইউরোপ জুড়েই এমন ট্রেন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে৷ আশা করা হচ্ছে, আসছে বছরগুলোতে ইউরোপের অন্তত ১৩টি বড় বড় শহরে যাত্রা করা যাবে রাতের এই ট্রেনে৷ এদিকে জার্মান সরকার ২০২৩ সালের মধ্যে রাজধানী বার্লিন থেকে অন্তত দুটি বড় শহরে—প্যারিস ও ব্রাসেলস— যেতে এমন সেবা চালু করতে চায়৷