নবীকে নিয়ে ‘কটূক্তি' করেছেন এই অভিযোগ তুলে এক যুবকের ফাঁসি দাবি করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ছেলে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা৷
ছবি: bdnews24.com
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রতিবেদনে জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান (জ্যোতি) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক যুবককে ‘নাস্তিক' আখ্যা দিয়ে তাঁর ফাঁসি দাবি করেছেন৷ কথিত যুবকের ছবিসহ ফাঁসির দড়ি ও বিচারালয়ের হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে ছবি বানিয়ে পোস্ট করেছেন জ্যোতি৷ বিডিনিউজের প্রতিবেদনে সেই ছবির ‘স্ক্রিনশট' রয়েছে৷
বিডিনিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছবির উপরে জ্যোতি লিখেছেন, ‘‘নবীজীকে কটূক্তিকারী নাস্তিক….এর ফাঁসি চাই৷ ছবিটি শেয়ার করে প্রতিবাদের ঝড় তুলুন৷''
এদিকে বিডিনউজে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকেই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা৷ প্রতিবেদনটি অনেকেই শেয়ার করেছেন৷ ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্ট নিলয় সোবহান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘মদিনা সনদের দেশে হেফাজতি মুন্ত্রীর হেফাজতি পুৎ!''
সাংবাদিক পলাশ দত্ত লিখেছেন, ‘‘সাচ্চা ধার্মিক #হেফাজতের মতো নাস্তিকের ফাঁসি চেয়ে ফেইসবুকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে....দেশ এগিয়ে চলেছে৷ কিছু দিন পর হয়ত নাস্তিক বাদ দিয়ে বিধর্মী লিখলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থকবে না৷''
সাংবাদিক তৃষা সামিরাও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের এমন আচরণে হতাশ৷ খুব সংক্ষেপে হতাশা প্রকাশ করতে গিয়ে ফেসবুকে তিনি শুধু লিখেছেন, ‘‘এই নাকি আমার দেশ!''
সাতটি ‘নাস্তিক’ দেশের কথা
বিশ্বে ধার্মিক বেশি, নাকি ‘নাস্তিক’? সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না এমন মানুষ কোন কোন দেশে সবচেয়ে বেশি? সবচেয়ে বেশি ‘নাস্তিক’ বাস করেন কোন সাতটি দেশে?
ছবি: picture-alliance/ David Wimsett/UPPA/Photoshot
চীনে শতকরা ৯০ ভাগই ‘নাস্তিক’
৬৫টি দেশে জরিপ চালিয়েছিল ‘গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল’৷ জরিপ থেকে বেরিয়ে আসা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নাস্তিকেরও দেশ৷ সে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই প্রত্যক্ষ ভা পরোক্ষভাবে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন৷ চীনের শতকরা ৬১ ভাগ মানুষ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সরাসরি অস্বীকার করেন, বাকি ২৯ ভাগ নিজেদের ধর্মে বিশ্বাসী নন বলে দাবি করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইডেনে ৭৬ শতাংশ
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনে সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাত্র শতকরা ৮ ভাগ মানুষ উপাসনালয়ে গিয়ে ধর্ম চর্চা করেন৷ তবে গ্যালাপ-এর জরিপ অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৬ ভাগ সৃষ্টিকর্তা আছেন বলে মনে করেন না৷
ছবি: Leif R Jansson/AFP/Getty Images
চেক প্রজাতন্ত্রে সামান্য কম
‘নাস্তিক’ চেক প্রজাতন্ত্রেও খুব বেশি কম নয়৷ মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ ভাগ মানুষ নিজেদের সরাসরিই ‘নাস্তিক’ বলেন৷ তবে বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের ধর্মবিশ্বাস আছে কিনা, তা জানাতেই রাজি নন৷ মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করেন৷ গ্যালাপ-এর জরিপ জানাচ্ছে, সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশটিতে এক হিসেবে শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষই নাস্তিক, কেননা তাঁরা ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তার গুরুত্ব স্বীকার করেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Xamax
ব্রিটেনে ৬৬ শতাংশ
জরিপে অংশ নেয়া ব্রিটেনের শতকরা ৫৩ জন মানুষ বলেছেন যে, তাঁদের কোনো ধর্মবিশ্বাস নেই৷ আর ১৩ ভাগ সরাসরিই বলেছেন, ‘আমি নাস্তিক’৷
ছবি: Reuters
হংকং ও জাপানে শতকরা ৬২ ভাগ
বিশ্বের ৬৫টি দেশের ৬৪ হাজার মানুষের মাঝে এই জরিপ চালিয়েছে গ্যালাপ৷ হংকংয়ের মানুষদের সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া গেছে এই জরিপ থেকে৷ দেখা গেছে, হংকংয়ের শতকরা ৪৩ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে নাস্তিক৷ বাকি ৫৭ ভাগের মধ্যে ১৯ ভাগকেও আস্তিক অন্তত মনে হয়নি৷ জাপানে প্রত্যক্ষ নাস্তিক শতকরা ৩১ ভাগ হলেও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের গুরুত্ব নিয়ে ভাবেন না এমন মানুষও আছে অনেক৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
জার্মানিতে ৫৯ ভাগ
জার্মানির ৫৯ ভাগ মানুষকেই নাস্তিক হিসেবে দেখিয়েছে গ্যালাপ৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশ, যেমন স্পেন, অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্সের নাগরিকদেরও বড় একটা অংশই নাস্তিক৷ বিশ্বের যেসব দেশে অনেক ‘আস্তিক’, সেসব দেশ থেকে অনেক মানুষই এসব ‘নাস্তিক’ দেশে এসে উন্নত জীবনের সন্ধান পেয়েছেন, পাচ্ছেন৷ ইউরোপের বেশ কিছু দেশেই এখনো নাস্তিকরাই সংখ্যাগুরু৷ তবে সংখ্যালঘু আস্তিকদের ধর্ম চর্চায় তাতে কোনো সমস্যা হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-J. Hildenbrand
6 ছবি1 | 6
এদিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল জানান, যে যুবকের ফাঁসি দাবি তোলা হয়েছে, তিনি সম্ভবত দেশের বাইরে আছেন৷ তবে তাঁর ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান (জ্যোতি)-ই যে সেই যুবকের ফাঁসি দাবি করেছেন – এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘তাই নাকি, সে ওইটা শেয়ার করবে কেন? আমি বিষয়টি দেখছি৷''
তবে বিডিনিউজ জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোনে কথা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্যোতির ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়৷ অবশ্য সরানোর আগে তা অনেকে শেয়ার করেছেন৷ লাইকও দিয়েছেন অনেকে৷ পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাও নাকি ‘লাইক' দিয়েছেন সেই পোস্টে৷
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের কথিত পোস্টের মন্তব্যের ঘরে অনেকেই ওই যুবকের ফাঁসি চেয়েছেন৷ তবে শাহ মোহাম্মাদ মোস্তফা কামাল নামের একজন লিখেছেন, ‘‘আমরা প্রকারান্তে ‘....'-কে জনপ্রিয় করছি, ও কিছুদিনের মাঝে আমাদের এই কমেন্টগুলোকে আশ্রয় করেই ইউরোপে ভাগবে৷ ও কিন্তু এইটাই চায়৷ অপেক্ষা করেন, আমার তো মনে হয় ও ভিসার জন্যই ইন্ডিয়াতে৷''
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুই সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে জ্যোতি পারিবারিক ব্যবসা দেখছেন৷ তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন৷
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
‘‘আল্লাহ’র নামে আর কোনো হত্যাকাণ্ড নয়’’
বাংলাদেশে মুক্তমনাদের উপর হামলা নিয়ে বার্লিনে মানববন্ধনে প্রদর্শন করা প্ল্যাকার্ডের ছিল বিশেষ কিছু বার্তা৷ চলুন সেগুলো দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতাকে ‘না’ বলুন’’
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতার কারণে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ৷ তাই এই বার্তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ৷ আরেকটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘ধর্মীয় সন্ত্রাসকে আপনার মুখ বন্ধ করতে দেবেন না৷’’
ছবি: DW/A. Islam
‘‘আল্লাহ’র নামে কোনো হত্যাকাণ্ড নয়’’
এই বার্তাটাও পরিষ্কার৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হামলার শিকার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল) বলেছিলেন, ‘‘আল্লাহু আকবর’’ বলে তাঁকে কোপানো হয়েছিল৷ বার্লিনে মানববন্ধনে আরেকটি প্ল্যাকার্ডে আল্লাহ’র জায়গায় সৃষ্টিকর্তার কথা উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘ধর্মভিত্তিক সহিংসতা বন্ধ কর’’
ধর্মভিত্তিক সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান মানববন্ধনে অংশ নেয়া এক প্রবাসী বাঙালি৷ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরও বিপক্ষে অবস্থান তাঁর৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘ধর্মীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হোন’’
ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্দে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এই প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Islam
বাংলা প্ল্যাকার্ড
বাংলা ভাষায় লেখা প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করা হয়েছে মানববন্ধনে৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘নাস্তিকতার জন্য মৃত্যু নয়’’
নাস্তিকতা কারো মৃত্যু বা কারাভোগের কারণ হতে পারে না, এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছেন একাধিক ব্যক্তি৷ মানবন্ধনে অংশ নেয়াদের সবাই নাস্তিক নন, তবে তাঁরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘শব্দ হত্যা করে না, মানুষ করে’’
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার, লেখক অভিজিৎ রায়ের ছবির সঙ্গে এই বাক্যটি লেখা প্ল্যাকার্ডও ছিল বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে৷ চলতি বছর বাংলাদেশে খুন হয়েছেন চারজন ব্লগার এবং একজন প্রকাশক৷
ছবি: DW/A. Islam
7 ছবি1 | 7
বন্ধু, এ সম্পর্কে আপনার কিছু বলার আছে? জানান নীচের ঘরে৷