1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির অরণ্য ঘিরে গোপন ইতিহাস

২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জার্মানির কিছু বনের সঙ্গে পুরাণ এবং লোককাহিনিরও যোগসূত্র আছে৷ রোমান্টিক, নাৎসি থেকে শুরু করে আধুনিককালের পরিবেশবিদদের কাছে জঙ্গলগুলি কীভাবে প্রতীকী হয়ে উঠল সে প্রশ্ন সত্যিই বিস্ময় জাগায়৷

Blick über den Pfälzer Wald im Herbst, Rheinland-Pfalz
ছবি: picture-alliance

কল্পকাহিনির দিক দিয়ে জার্মানিতে রাইনহার্ডসভাল্ড সবচেয়ে বেশি আলোচিত৷ ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পথের কেন্দ্রস্থলের এই অরণ্য এক সময় রূপকথার বুড়ি, রাজকন্যা ও অপদেবতার ‘উপস্থিতির' জন্য বিখ্যাত ছিল৷

রূপকথা অনুযায়ী এই দুর্গে ১০০ বছর ঘুমিয়ে ছিলেন রাজকন্যা, প্রেমিকের চুম্বনে ভাঙে তার ঘুমছবি: picture alliance/dpa/F. Gierth

কথিত আছে রাইনহার্ডসভাল্ডের কাছে এক সাহসী রাজকন্যার দীর্ঘ ঘুম ভাঙে ভালোবাসাপূর্ণ প্রথম চুমুতে৷ এরপর রাপুনজেল একটি টাওয়ার থেকে তাঁর দীর্ঘ সোনালি কেশ ঝুলিয়ে দেন যেন প্রেমিক তা ধরে উঠে তাঁর কাছে আসতে পারে৷

প্রকৃতপক্ষে এটাই এক সময়ের সেই গভীর জঙ্গল, যা গ্রিম ভাইদের সংগ্রহ করা অনেক রূপকথায় উঠে এসেছে৷ তাঁদের এই কাজের মধ্য দিয়ে জার্মানরা তাঁদের কল্পজগতে ওই বনের নানা চিত্র এঁকেছেন৷

কোনো এক সময় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মুখে মুখে চলে আসা লোককাহিনিগুলো লিখেছিলেন গ্রিম ভাইয়েরা৷ কোনো রাজকন্যার ১০০ বছর ঘুমিয়ে থাকা প্রকৃতপক্ষে অবাস্তব৷ এই গল্পে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি হলো– একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ও অশুভ বাগান সব ধরনের বিপদের কারখানা৷

হেনৎসেল ও গ্রেটেলের গল্পে অভাগা সহোদর বাবা-মা থেকে আলাদা হয়ে যায়৷ সেখানে তাঁদের একটি মানুষখেকো ডাকিনীর মুখোমুখি হতে হয়৷

রাইনহার্ডসভাল্ড পার্কের ব্যবস্থাপক এরিক আশেনব্রান্ড বলেন, এই ডাকিনী মূলত জঙ্গলে বিপদের প্রতিরূপ৷ তবে ওই শিশুরা বিপদমুক্ত হয়ে খুশি মনেই বন থেকে বেরোয়৷

মধ্যযুগে এই গাছগুলোই শহরেও দেখা যায়ছবি: picture-alliance/blickwinkel/A. Hartl

গল্পে জনমানবহীন এই বন বিস্ময়কর নানা চ্যালেঞ্জের রাজ্য৷বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জঙ্গল ছিল বন্য প্রাণীতে ভরা এবং সেখানে কিছু ওঁত পেতে থাকতে পারে বলে দীর্ঘদিনের শঙ্কা ছিল মানুষের মধ্যে৷

বন ধ্বংসের শুরু

মধ্যযুগে বনকে অশুভ কিছুর আধার হিসেবে বিবেচনা করা হলেও একে অফুরন্ত কাঠ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উৎস হিসেবে দেখা হতো৷

সতেরো শতকের শুরু ও আঠারো শতকের বারোক শিল্প যুগের আগ পর্যন্ত বন নিয়ে মানুষের ধারণা এমনই ছিল৷

এই পর্বে দ্রুত নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে৷ প্রাসাদ ও দুর্গগুলো আরো বড় পরিসরে ও জাঁকালো করে গড়ে তোলা হয়৷ ব্যবসায়ী ও কাঠ খোদাই শিল্পীরা তাঁদের সম্পদ বাড়াতে থাকেন আর তাঁদের প্রয়োজনীয় উপকরণ আসতে থাকে বন থেকে৷

বারোক পিরিয়ডে বহু জঙ্গল ধ্বংস করা হয়, যা সংকট তৈরি করেছবি: DW/T. Walker

আঠারো শতকে ঘরের কড়িকাঠ, জাহাজের মাস্তুল নির্মাণ এবং জ্বালানি হিসেবে বছরে এক কোটি ঘনফুটের মতো কাঠ ব্যবহার হতো৷ জ্বালানি হিসেবে কাঠের উপর ভর করেই প্রথম শিল্প উদ্যোগের শুরু৷

এর ফলশ্রুতিতে বনজঙ্গল কমতে থাকে, বিশেষত শহর ও বাণিজ্যিক এলাকার আশপাশে৷

তবে মানচিত্র থেকে বনভূমি কমার সঙ্গে সঙ্গে জার্মানদের কল্পনায় সংস্কৃতি, সংগীত, চিত্রকলা ও সাহিত্যে তার উপস্থিতি বাড়তে থাকে৷

ঊনিশ শতকের শুরুর দিকে গ্রিম ভাইদের মতো রোমান্টিকতায় অনুপ্রাণিত লেখকদের লেখায় প্রকৃতি প্রেম উঠে আসে৷ বন এবং সেখানে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষের প্রশংসা করেন তাঁরা৷

গাছ ও বনের ছবির জন্য বিখ্যাত কাসপার ডাভিড ফ্রিডরিশের মতো ল্যান্ডস্কেপ আর্টিস্টরা বিপুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন৷

উজাড় হওয়া বন ফিরে পেতে বনায়ন প্রকল্প শুরু করে জার্মানি৷ সে সময় ফরেস্ট্রি একটি স্বপ্নের পেশায় পরিণত হয় বলে জানান সাউদার্ন জার্মানির ফ্রাইবুর্গ ইউনিভার্সিটির ফরেস্ট হিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক উভে স্মিট৷

তাঁর ভাষ্য মতে, সে সময়  অনেক নারীর কাছে স্বামী হিসেবে ফরেস্টার কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠেন৷ তখন লৈঙ্গিক কারণে এ পেশায় যেতে পারতেন না নারীরা৷

ঊনিশ শতকের শেষ দিকে ফরেস্ট্রি অনেকের স্বপ্নের পেশায় পরিণত হয়ছবি: picture-alliance/dpa

এই শতকেই গোলযোগপূর্ণ শিল্প নগরী থেকে নির্জন প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে বনে যাওয়া শুরু করেন অনেকে৷

‘‘এখনো সেটা চলছে,'' বলেন রাইনহার্ডসভাল্ডের ব্যবস্থাপক আশেনব্রান্ড৷

তিনি বলেন, ‘‘প্রকৃতি নিয়ে নগরের বাসিন্দাদের ধারণা এখানকার অধিবাসীদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ তাঁরা বনকে দেখেন তাঁদের শহরের বিপরীত হিসেবে৷''

বনের কালো অধ্যায়ে ফেরা

বিশ শতকে জার্মানি ফ্যাসিবাদের দিকে ঝোঁকায় বনের সঙ্গে যোগাযোগকে আবার খারাপ হিসেবে দেখা শুরু হয়৷

নাৎসিরা ক্ষমতায় আসার পর জার্মান বনজঙ্গল ঘিরে লৌকিক কাহিনিগুলোকে কাজে লাগাতে থাকে৷ ‘‘ন্যাশনাল সোশ্যালিজমের (নাৎসিবাদ) সময় বনকে নেওয়া হলো মতবাদে,'' বলেন অধ্যাপক স্মিট৷ তাদের মতবাদ অনুযায়ী, বনের সঙ্গে জার্মানদের নিবিড় সম্পর্কের কারণেই এ বিষয়ে এভাবে রূপকথা তৈরি হয়েছে৷

নাৎসিরা বলে, হ্যারমানের নেতৃত্বে জার্মান গোষ্ঠীগুলো বনের মধ্যেই রোমান সৈন্যবাহিনীকে কচুকাটা করে৷ আর তার কারণেই রাইন নদীর পূবের ভূমি দখলের পরিকল্পনা ত্যাগ করে রোম৷

১৯৮০ এর দশকে বন উজাড় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন জার্মানরাছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman

জার্মান বন ও জনগণ এক ও অভিন্ন বলে নতুন পৌরাণিক তত্ত্ব দাঁড় করায় তারা৷ এই ভাবনাই তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে অনিচ্ছুক গোষ্ঠীগুলোকে জার্মানির জাতীয় ঐক্য থেকে বাদ দিতে সহায়তা করে৷

অধ্যাপক স্মিট বলেন, এই মতবাদের মাধ্যমেই ছড়ানো হয় যে, ইহুদিরা তৃণভূমিকেন্দ্রিক এবং তাঁরা জার্মানির বনের সংস্কৃতি বুঝতে অক্ষম৷

এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বন আবার জার্মানদের কাছে শান্তির জায়গা হয়ে ওঠে৷

‘বোমায় ক্ষতবিক্ষত শহরগুলোর তুলনায় বন দ্রুত বাড়ে৷ আর গাছের নীচে বসেই মানুষ অন্তত কিছু সময়ের জন্য সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ ভুলে থাকতে পারত৷

সমাজের আয়না'

তখন থেকে বন হয়ে উঠেছে সম্পদের ভাণ্ডার৷ আশির দশকে অ্যাসিড বৃষ্টিতে অবশিষ্ট বন ধ্বংসের পথে থাকার বিষয়টি যখন জার্মানদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে, সে সময় পরিবেশ আন্দোলনকারীদের কাছে তা একটি ‘পোস্টার চাইল্ড' হয়ে ওঠে৷

ওই উদ্বেগই জার্মানদের আরো বেশি পরিবেশসচেতন এবং প্রাচুর্যময় জীবনযাপনের পরিণতি সম্পর্কে উপলব্ধি এনে দেয় বলে মন্তব্য করেন স্মিট৷

তিনি বলেন, গত দুই-তিন দশকেও জার্মানিতে বনকে কীভাবে দেখা হয়েছে, সে দিকে দৃষ্টি দিলে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র উঠে আসবে৷

জার্মানিতে বন সব সময় ‘সমাজের জন্য দর্পণ' এবং উদ্বেগের একটি বিষয় হয়ে ছিল বলেই মনে করেন ঐতিহাসিকরা৷

ক্লাউস এসলারলুস/এএইচ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ