জার্মানির পূর্বাংশের শহর হালেতে সোমবারের মিছিলে নাৎসি প্রতীক ও শ্লোগান ব্যবহার করায় অন্তত ১০টি তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷ এছাড়া পুলিশের সঙ্গে বিতণ্ডার বিষয়েও তদন্ত করা হবে বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
কেমনিৎস ও ক্যোথেনে দুই জার্মান নিহত হবার ঘটনার পর জার্মানির পূর্বাংশের বিভিন্ন এলাকায় ডানপন্থিরা প্রতিবাদ মিছিল করেছে৷ প্রায় সাড়ে চারশ' মিছিলকারী সোমবার হালে শহরে মিছিল করেন৷
বেশিরভাগ মিছিলকারীই অভিবাসনবিরোধী শ্লোগান দিচ্ছিলেন৷ ২০১৫ সালের পর থেকে মূলত জার্মানিতে অভিবাসীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে৷ মূলত মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধপরিস্থিতির কারণে এবং সংঘাতপ্রবণ অন্যান্য এলাকা থেকেই এসব অভিবাসী আসছেন৷
কিন্তু সম্প্রতি অভিবাসনবিরোধী মনোভাব নব্য নাৎসি মনোভাবকে উসকে দিচ্ছে বলে শঙ্কা আছে দেশটিতে৷ সোমবার ডানপন্থি দলগুলোর সদস্যরা এ বিষয়ে তাদের কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে৷
জার্মানির কেমনিৎসে ডানপন্থিদের বিক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
এক জার্মান-কিউবান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জার্মানির কেমনিৎস শহরে বিদেশিদের উপর হামলা হয়েছে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরসহ অনেক নেতা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/O. Andersen
জার্মান-কিউবানের মৃত্যু
রবিবার ভোরে জার্মানির কেমনিৎস শহরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ডানিয়েল এইচ. নামে ৩৫ বছর বয়সি এক জার্মান-কিউবান নাগরিক ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান৷ পুলিশ বলছে, বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ জন মানুষ এই বিবাদে জড়িত ছিলেন৷ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২২ বছর বয়সি এক ইরাকি ও ২৩ বছর বয়সি এক সিরীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে৷ ‘যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই’ তারা ডানিয়েলকে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW/B. Knight
বিক্ষোভ ও বিদেশিদের উপর হামলা
ডানিয়েল এইচ. স্থানীয় কয়েকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ ফলে তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে রবিবার বিকালে প্রায় ৮০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ এদের মধ্যে চরম ডানপন্থিরাও ছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়েন এবং তাঁরা পুলিশের কাজে সহযোগিতা করেননি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে আনা হয়৷ এই সময় বিক্ষোভকারীরা পথেঘাটে বিদেশিদের উপর নির্বিচারে হামলাও চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
সোমবারও বিক্ষোভ এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সোমবারও কেমনিৎস শহর উত্তপ্ত ছিল৷ সন্ধ্যার সময় প্রায় ২,০০০ চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভে নামেন৷ আর তাঁদের বিক্ষোভের প্রতিবাদে মাঠে নামেন প্রায় ১,০০০ মানুষ (ছবিতে তাঁদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে), যাদের মধ্যে বামপন্থিরাও ছিলেন৷ চরম দক্ষিণপন্থি ও বামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন আহত হন৷ দুই পক্ষ একে অপরের উপর আতসবাজিসহ নানা বস্তু নিক্ষেপ করে৷ ৪ জন চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভকারীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
সরকারের প্রতিক্রিয়া
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে রবি ও সোমবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলার ভিত্তিতে যে শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার সঙ্গে এমন আচরণ খাপ খায় না৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনার ফায়দা তুলে বিদেশিবিদ্বেষ ও হিংসা ছড়ানো হয়েছে৷ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, জনতা ভিন্ন চেহারার মানুষকে বাছাই করে হামলা চালাবে, এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
তাণ্ডবের পেছনে ‘ভুয়া খবর’
‘ভুয়া খবর ছড়িয়ে কেমনিৎসে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্যাক্সোনি রাজ্য প্রশাসন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শুধু স্থানীয় চরম দক্ষিণপন্থিরা নয়, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে অনেক রাজ্য থেকে সমমনস্ক মানুষকে কেমনিৎসে আকর্ষণ করা হয়েছে৷ নিহত ডানিয়েল এইচ. নাকি এক নারীর সম্মানরক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
5 ছবি1 | 5
পুলিশ বলেছে যে, তাদের কাছে অভিযোগ আছে যে, এসব মিছিলে নাৎসি স্যালুট অথবা অন্যান্য শ্লোগান ব্যবহৃত হয়েছে৷ কর্তৃপক্ষ বলছে যে, যারা মিছিল করছিলেন, তাদের দেখে মাতাল মনে হচ্ছিল৷ সে সময় একটি পালটা মিছিলও হয় অভিবাসনবিরোধীদের বিরুদ্ধে৷ সেই মিছিলে ৮০ থেকে ১০০ লোক অংশ নেন৷ কিন্তু কোনো সংঘাত হয়নি৷
এদিকে, জার্মানির রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হান্স-গিওর্গ মাসেন জানিয়েছেন, কেমনিৎসে অভিবাসীদের ওপর হামলার যে ফুটেজটি সামাজিক গণমাধ্যমে বেরিয়েছে, তা সত্য৷ এর আগে তিনি ভিডিওটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছিলেন৷
এ পর্যন্ত নাৎসি স্যালুট দেবার কারণে ১৪ জনকে গ্রেপ্তারের খবর জানা গেছে৷