1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান-ফরাসি সম্প্রীতি

কায়-আলেক্সান্ডার শল্জ/এসি৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩

জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক আর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ একত্রে গেছিলেন অভিশপ্ত ওরাদুর সুর গ্লান গ্রামে, এসএস বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের ৬৯ বছর পরে৷ দুঃস্বপ্নের কাহিনিতে সংযোজিত হলো সম্প্রীতির এক নতুন অধ্যায়৷

ছবি: REUTERS

ওরাদুর গ্রামটিই একটা স্মৃতিসৌধ, ধ্বংসই যার স্মৃতি৷ বিধ্বস্ত গ্রামটিতে কিছুই বদলানো হয়নি৷ বহু বাগানের গেট আজও আছে, যদিও বহুদিন হল কোনো মানুষ সেই গেট পার হয়ে বাগানে ঢোকেনি, বাড়ি থেকে বেরোয়নি৷

১৯৪৪ সালের ১০ই জুন, দুপুর দু'টোর কিছু পরে৷ ছোটরা এবার স্কুল থেকে ফিরবে, মায়েরা রান্না শেষ করছেন৷ ঠিক সেই সময়ে নাৎসিদের কুখ্যাত এসএস বাহিনীর ‘‘ডাস রাইখ'' ডিভিশনের সৈন্যরা ওরাদুরে পৌঁছয় অচেনা একটি গ্রামে নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করতে৷

ফ্রান্সের ওরাদুর গ্রামের বেঁচে যাওয়া একজনকে সান্ত্বনা দিচ্ছে জার্মান প্রেসিডেন্ট গাউকছবি: picture-alliance/dpa

প্রথম উচ্চপর্যায়ের জার্মান রাজনীতিক হিসেবে প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক ওরাদুরে এসেছিলেন, ফ্রান্সে তাঁর তিনদিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় সফরের অবকশে৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওলঁদ এবং ১৯৪৪ সালের ১০ই জুনের সেই হত্যাকাণ্ড থেকে যাঁরা প্রাণে বেঁচেছিলেন, তাঁদেরই কয়েকজনের সঙ্গে পরিত্যক্ত গ্রামটি ঘুরে দেখেন তিনি৷ প্রশ্ন করেন: ‘‘এখানে কেন?'' ঠিক এখানেই হত্যাকাণ্ড কেন? নাৎসিদের কোনো কারণের প্রয়োজন ছিল না৷ হত্যাকাণ্ড ছিল শুধুমাত্র বলপ্রদর্শন ও সন্ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে৷

৬৪২ মানুষের গ্রাম নিশ্চিহ্ন

এসএস সৈন্যরা গ্রামবাসীদের কাছ থেকে পণবন্দি দাবি করে৷ গ্রামের মেয়র স্বয়ং যেতে চেয়েছিলেন – কিন্তু তারা সেটা মানেনি৷ গ্রামের মহিলা আর শিশুদের গির্জায় পুরে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ তারপর নাৎসিরা তাদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে৷ গ্রামের পুরুষদের একটি খামারবাড়ির গোয়ালে নিয়ে গিয়ে গুলি করে মারা হয়৷ এরপর এসএস সৈন্যরা সারা গ্রাম খুঁজে দেখে, প্রত্যক্ষদর্শী কেউ জীবিত আছে কিনা৷ অধিকাংশকেই খুঁজে পেয়ে গুলি করে মারে৷ গ্রামের ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ ৬৪২ জন বাসিন্দার গ্রামটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয় তারা৷

ওরাদুর গ্রামটিই একটা স্মৃতিসৌধছবি: picture-alliance/dpa

‘‘ওরাদুর ছিল একটা আর্ত চিৎকার, যা আমি আজ অবধি শুনতে পাই,'' বলেছেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রপ্রধান ওলঁদ৷ তিনি এবং গাউক গ্রামটি ঘুরে দেখেন – ফরাসি টেলিভিশনে গাউকের এই ওরাদুর সফরের ছবি মোট তিন ঘণ্টা ধরে দেখানো হয়েছে৷ জার্মান মিডিয়াতেও এ সম্পর্কে আগ্রহ ছিল গভীর৷ গাউক বলেন, তিনি গভীর বিনয় ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে ওরাদুরে এসেছেন, কেননা তাঁকে এখানে আসতে দেওয়াটাই একটা আশ্চর্য৷

অন্য এক দেশ

গাউকের জন্ম ১৯৪০ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝখানে৷ ১৯৪৫ সালে যুদ্ধসমাপ্তির পর তাঁর মনে হয়েছে, জার্মান হিসেবে তাঁর নিজেকে ঘৃণা করা উচিত৷ আজ তাঁর বয়স হয়েছে, আজ তাঁর পক্ষে জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব কেননা জার্মানি এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে, যার প্রতি সম্মতি জানাতে কোনো দ্বিধা হয় না৷

ওলঁদ গাউকের সফরকে এক ‘‘অসাধারণ ঘটনা'' বলে অভিহিত করেন, এবং গাউক ও জার্মানি আজ যেভাবে নাৎসি বর্বরতার অতীত ইতিহাসের মুখোমুখি হন, তার প্রশংসা করেন ওলঁদ৷ ওরাদুরের সমাধিক্ষেত্রে রাখা ‘গোল্ডেন বুক'-এ গাউক লেখেন: ‘‘জার্মানি (যে) আজ একটি অন্য দেশ, শান্তি ও সংহতিপূর্ণ দেশ,'' গাউক তারই সাক্ষী৷ ওরাদুরের হত্যাকাণ্ডের স্বল্প কয়েকজন জীবিত প্রত্যক্ষদর্শীর মুখেচোখে আজও সেই নাৎসি বিভীষিকার স্মৃতি দেখেছেন গাউক৷

নাৎসিদের কুখ্যাত এসএস বাহিনীর হামলার শিকার ওরাদুর গ্রামছবি: picture-alliance/dpa

সম্প্রীতির প্রতীক

ওরাদুরে দুই প্রেসিডেন্টের পরস্পরের হাত ধরা, এবং হত্যাকাণ্ডের এক জীবিত সাক্ষীকে আলিঙ্গন, এ সব ছবি এই স্মরণীয় দিনটির প্রতীক হয়ে থাকবে৷ গাউক এবং ওলঁদ স্বয়ং বেশ কিছু সময় ধরে পরস্পরের আলিঙ্গনবদ্ধ ছিলেন, অভিশপ্ত ওরাদুরে সম্প্রীতির এই প্রতীক রাখতে পেরে দু'জনেই ছিলেন অভিভূত৷

তবে ওরাদুর হত্যাকাণ্ডের নাৎসি অপনায়কদের অধিকাংশের যে কখনো বিচার হয়নি, সে বিষয়ে ফরাসিদের ক্ষোভের ভাগীদার হন গাউক; বলেন, ‘‘এটা আমার নিজের ক্ষোভ৷ আমি এই ক্ষোভ সঙ্গে করে জার্মানিতে নিয়ে যাব, সেখানে এই ক্ষোভের কথা বলবো৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ