সারা জীবন আপনি কি একটা বাংকারের ভিতর কাটাতে পারবেন? পারবেন কি পরিবার-পরিজনকে ছেড়ে বহু দূরে বহু বছর কাটিয়ে দিতে? কিংবা ফেরা যাবে না এমন পথে যাত্রা করতে? মঙ্গলগ্রহে বসবাসে আগ্রহীরা কিন্তু এসব মেনে নিয়েই আবেদন করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলগ্রহে বসবাসের স্বপ্ন দেখে মানুষ৷ সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ডাচ কোম্পানি ‘মার্স ওয়ান' মঙ্গলে বসতি স্থাপন করবে৷ তবে মঙ্গল যাত্রা হবে একমুখী৷ ফিরে আসার কোনো উপায় থাকবে না৷ জার্মান ফ্লাইট প্রশিক্ষক স্টেফেন গ্যুন্টার এমন যাত্রার জন্য আবেদন করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মহাকাশ সবসময় আমাকে আকর্ষণ করেছে৷ আমি সমসময় মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ খুঁজেছি৷ এটা এখন বলে বোঝানো কিংবা হিসেব কষে দেখানো সম্ভব নয়৷ আগ্রহটা আমার ভেতরেই রয়েছে যা আমাকে মহাকাশের দিকে টানছে৷''
যেখানে মঙ্গলগ্রহের চেয়েও বেশি শীত
যুক্তরাষ্ট্র আর ক্যানাডার একটা অংশে পড়েছিল মঙ্গলগ্রহের চেয়েও বেশি শীত৷ শৈত্যপ্রবাহ এবং তুষার ঝড়ে জনজীবন বিপন্ন৷ ডয়চে ভেলের ইংরেজি বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়ার অনুসারীদের পাঠানো ছবিতে দেখুন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু এলাকার জনজীবন৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Fortner
বরফ ঢাকা শহরের পথে ভেঙে পড়া গাছ
যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা রাজ্যে জর্ডান শহরের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে নেমে গিয়েছিল৷ এমন শীতে মানুষের কষ্ট কী পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে তা কল্পনা করা কঠিন নয়৷ এ ছবিটি মাইকেল অ্যালডেন পাঠান মাইন রাজ্যের লুসার্ন থেকে৷ বিদ্যুৎ ছিল না, প্রচণ্ড ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়ছিল৷ অ্যালডেনের ছবিতে অবশ্য বিরূপ প্রকৃতির সৌন্দর্যই ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Michael Alden
প্রকৃতি কখন সদয় হবে!
ইন্ডিয়ানার সাউথ বেন্ড থেকে এ ছবি পাঠিয়ে কারস্টেন হাইভোনেন লিখেছেন, ‘‘আমাদের এখানে ১৩ ইঞ্চি পুরু বরফ জমেছে৷ তাপমাত্রা নেমে গেছে মাইনাস ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ এমন শীতে শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়৷ আবহাওয়া কখন উষ্ণ হবে, কখন রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা হবে – আমরা এখন তারই অপেক্ষায় আছি৷ বাচ্চারা দু’দিন ধরে স্কুলে যেতে পারছে না, আগামী কালও বোধহয় যেতে পারবে না৷’’
ছবি: Kristen Hyvonen Amsler
জুরি আছে আনন্দে
কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ৷ শীতে মানুষ কষ্টে মরছে আর পাহাড়ি কুকুর জুরির এ সময়েই মহা আনন্দ৷ তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নামলে ও বরফের বুকে খেলতে চায়, চায় কেউ ওর সঙ্গে থাকুক, ওর সঙ্গে আনন্দ করুক৷ ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শ্যাম্পেইন থেকে জুরির এই ছবি পাঠিয়ে এরিন কিরবি জানতে চেয়েছেন, ‘‘এমন শীতের মধ্যে কে ওর সঙ্গে খেলবে!’’
ছবি: Erin Kirby
বরফের সঙ্গে যুদ্ধ
মিশিগানের মেরিল থেকে এ ছবি পাঠিয়েছেন জুলিয়েট জাভার্স৷ শহরের পথ-ঘাট ঢেকে গেছে বরফে৷ চলছে বরফ সরিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করার চেষ্টা৷
ছবি: Juliette Zavarce
বরফের বাগান
যুক্তরাষ্ট্রের মইনেস থেকে ছবিটি পাঠিয়েছেন মারিয়ানা লিঙ্ক-আলেকজান্ডার৷ আইওয়া অঙ্গরাজ্যে এ শহরটির বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘ওয়েস্ট ডেস মইনেসে আমার বাড়ির সামনের বাগান৷ গতরাতে এখানে তাপমাত্রা মাইনাস ২৫ ডিগ্রিতে নেমে যায়, শৈত্যপ্রবাহের ঠান্ডা তো মাইনাস ৪০-এরও নীচে৷’’ এমন শীতে মারিয়ানার বাগানটা কিন্তু অন্য রূপে সেজেছিল৷
ছবি: Marianne Link-Alexander
অপরূপ প্রকৃতি
দুঃসময়েও কখনো কখনো মানুষ আনন্দ খুঁজে নেয়৷ মিশিগানের মেরিলে আলিরিও জাভার্স শীতের অত্যাচারে কাবু হতে চান না৷ তাই তিনি ব্যালকনি থেকেই ক্যামেরাবন্দি করেছেন বরফে ঢাকা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে৷
ছবি: Juliette Zavarce
জলপ্রপাত এখন বরফসমুদ্র
শন ও’কনর থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়োতে, চ্যাগরিন জলপ্রপাতের কাছে৷ এই শীতে সব জল জমে বরফ৷ মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পানি বরফ না হয়ে থাকে কী করে!
ছবি: Shawn O'Conner
বরফ ঝরায় ঘাম
মাইনাস ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ইন্ডিয়ানার হান্টিংটন শহরও বরফে বরফে সয়লাব৷ এ ছবির প্রেরক বরফ সরানোর যন্ত্র নিয়েই নেমেছিলেন কাজে৷ গাড়ি চালিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য পথ করতে পাক্কা দু’ঘণ্টা খাটতে হয়েছে তাঁকে৷ যুক্তরাজ্য সরকার এমনি এমনিই তো আর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া বাকি সবার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি!
ছবি: Dan Herber
বরফাচ্ছাদিত
মাইনের পোর্টল্যান্ড থেকে জেমস কোলবাথের পাঠানো ছবি৷ দেখুন, বাড়ি এবং বাড়ির আশপাশ কত উঁচু বরফে ঢাকা৷
ছবি: James Colbath
খেটে মরা
মিশিগান থেকে এ ছবি পাঠিয়েছেন রন সোন৷ বাড়িতে তখন শুধু তাঁর ছোট ছেলেটিই ছিল৷ কাজ সেরে একে একে সবাই বাড়ি ফিরছে৷ বরফ সরিয়ে সেই ছেলেকে প্রথমে তাঁর দাদির জন্য, তারপর বাবা-মায়ের বাড়ি ফেরার পথ করে দিতে হয়েছে৷ পরে আরো একবার বরফ সরিয়ে গাড়ি আসার পথ করতে হয়েছিল তাঁকে৷ মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সাত ইঞ্চি পুরু বরফ তিনবার সরানোর পর শরীর আর চলছিল না৷
ছবি: Ron Sohn
10 ছবি1 | 10
দশ বছর পর মঙ্গল যাত্রা শুরু হবে – সারা জীবন ধরে যে যাত্রার স্বপ্ন দেখেছেন গ্যুন্টার৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার সর্বনিম্ন লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর কক্ষপথ অবধি যাওয়া, আর লক্ষ্য ছিল চাঁদ৷ ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাপারটা এমনই ছিল৷ কিন্তু এখন আমার লক্ষ্য মঙ্গলে যাত্রা৷ আমি এই যাত্রার জন্য প্রস্তুত৷ আমি মনে করি এতে আমার জীবন পূর্ণতা পাবে৷''
কারিগরি শিক্ষা, বিমান চালনার মার্কিন লাইসেন্স, মহাকাশ বিষয়ক অ্যাপ তৈরিসহ মহাকাশে যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়গুলি রপ্ত করেছেন গ্যুন্টার৷ অন্তত তিনি নিজে এমনটা মনে করেন৷ স্বপ্ন বাস্তবায়নে শারীরিকভাবেও নিজেকে ফিট রাখছেন তিনি৷ ইতোমধ্যে ১৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন৷ তবে প্রতিযোগিতা সহজ হবে না৷ কারণ, দু'লাখের বেশি মানুষ যে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রায় অংশ নিতে আবেদন করেছেন৷
গ্যুন্টারের এই একমুখী মঙ্গল যাত্রায় শরিক হওয়ার আবেদনের কথা শুনে তাঁর স্ত্রী বিয়াটে ভিডেন প্রথমে কষ্ট পেয়েছিলেন৷ তিনি বলনে, ‘‘সে যখন প্রথম আমাকে জানিয়েছিল বা আমি বুঝেছিলাম যে, এটা একমুখী যাত্রা, অর্থাৎ মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার পর বা সেখানে পৌঁছানোর পর পৃথিবীতে আর ফিরে আসা যাবে না – তখন স্বাভাবিকভাবেই আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছি৷ কারণ আমরা পৃথিবীতে ভালো আছি, এখানে সবকিছু ঠিকভাবে চলছে৷ তা সত্ত্বেও সে কেনো একমুখী যাত্রার এই প্রকল্পে অংশ নেবে৷''
বিয়াটের স্বামী অবশ্য এখনো মঙ্গল যাত্রার জন্য নির্বাচিত হননি৷ তবে তিনি মনে করেন, মঙ্গল থেকে ফিরে আসারও একটি উপায় বের করা উচিত৷ ‘মার্স ওয়ান' প্রকল্পে ফিরে আসার সুযোগ না থাকার সমালোচনা করেছেন রুপার্ট গ্যার্সারও৷ কোলনে অবস্থিতি ‘ইন্সটিটিউট অফ এরোস্পেস মেডিসিন'-এর পরিচালক তিনি৷
রুপার্ট বলেন, ‘‘প্রথমত আমি মনে করি, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি একটি অবাস্তব প্রকল্প৷ দ্বিতীয়ত, আমার মতে, এটি একটি আত্মঘাতী মিশন৷ সবসময় একটি ছোট্ট বাংকারে আবদ্ধ পরিবেশে বসবাস সম্ভব নয়৷ অন্তত আমি মনে করি, এভাবে কয়েক বছর হয়ত থাকা যেতে পারে৷ কিন্তু সারা জীবন বাংকারে বসবাস অবাস্তব ব্যাপার৷ নীতিগতভাবে মঙ্গলে বৈজ্ঞানিক অভিযান খুবই রোমাঞ্চকর৷ কিন্তু জেনেশুনে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া অনৈতিক৷''
‘মার্স ওয়ান'-এর একমুখী মঙ্গল যাত্রা নিয়ে মূল সমালোচনা হচ্ছে, এটি নৈতিক বিবেচনায় সমর্থনযোগ্য নয়৷ তবে গ্যুন্টার এই সমালোচনা আমলে নিতে আগ্রহী নয়৷ সে এই বিষয়টি বুঝতে পারছে না বা বুঝতে চাচ্ছে না৷
মঙ্গল যাত্রার জন্য চল্লিশ জনের প্রাথমিক তালিকায় স্টেফেন গ্যুন্টার থাকবেন কিনা তা জানা যাবে শীঘ্রই৷ সব ঠিক থাকলে ২০২৩ সাল নাগাদ পৃথিবীকে চির বিদায় জানাবেন তিনি, চলে যাবেন না ফেরার দেশ, মঙ্গলে৷