যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ট্রাম্প-রুহানির মধ্যে বৈঠক হতে পারে৷ রুহানির সাথে আলোচনার পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর বক্তব্যে এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে বিশ্ব নেতারা এখন নিউইয়র্কে৷ বলতে গেলে একই ছাদের নীচে অবস্থান করছেন দুই বৈরি দেশের রাষ্ট্রনেতা যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ইরানের হাসান রুহানি৷ সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলাকে ঘিরে সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটেছে৷
এই হামলার জন্য শুরু থেকেই তেহরানকে দায়ী করে আসছে ওয়াশিংটন৷ গতকাল যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনও৷ তবে এই সংকট কূটনৈতিকভাবেই সমাধানের পক্ষে তারা৷ এজন্য ট্রাম্প-রুহানির মধ্যে নিউইয়র্কে একটি বৈঠক আয়োজনের জন্যেও তারা জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
‘সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না’
মঙ্গলবার ট্রাম্পের সাথে আলোচনার পরপরই রুহানির সাথে বৈঠক করেছেন মাক্রোঁ৷ এর আগে সোমবারও দুই নেতা ৯০ মিনিটব্যাপী আলোচনা করেছেন৷
ব্রিটিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার এক সাক্ষাতে রুহানি এবং জনসনকে উদ্দেশ্য করে মাক্রোঁ বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে বৈঠক ছাড়াই তিনি (রুহানি) এই দেশ ত্যাগ করেন, তাহলে সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে হবে৷ কারণ, এরপর আর কয়েক মাসের মধ্যে তিনি এখানে ফিরবেন না এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তেহরান যাবেন না৷ কাজেই তাদেরকে এখনই আলোচনায় বসতে হবে৷’’
সৌদি আরব, ইরান, ইসরায়েল কার শক্তি কেমন?
সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলার পর অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি৷ হুতি বিদ্রোহীরা এর দায় নিলেও ইরানকে দায়ী মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব৷ এ নিয়ে চলছে হুমকি-পাল্টা হুমকি৷ কিন্তু সামরিক শক্তিমত্তা কার বেশি?
ছবি: picture-alliance/EPA/TSGT
আকাশে সৌদি আরব
সামরিক খাতে সৌদি আরব ২০১৮ সালে ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার খরচ করেছে৷ ব্যয়ের দিক থেকে তাদের অবস্থান গোটা বিশ্বে তৃতীয় আর উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে৷ বিশ্বের সামরিক যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় ক্রেতাও তারা৷ বর্তমানে সৌদির মোট সামরিক সদস্য ২ লাখ ৩০ হাজার৷ আছে ৮৪৮ টি যুদ্ধবিমান, ২৫৪ টি হেলিকপ্টার, ১০৬২ টি ট্যাংক ও ৫৫ টি যুদ্ধ জাহাজ৷ তবে নেই কোনো সাবমেরিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সমুদ্র আর সৈন্যে ইরান
সামরিক খাতে গত বছর ইরানের ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় সাড়ে নয় ভাগ কম৷ অবরোধ আর অর্থনৈতিক মন্দায় গত এক দশকে দেশটির অস্ত্র আমদানির পরিমাণও কমেছে৷ ২০০৯-১৮ সালের মধ্যে তা্দের আমদানিকৃত অস্ত্রের পরিমাণ সৌদি আরবের মাত্র সাড়ে তিনভাগ৷ বর্তমানে দেশটির সামরিক সদস্য আট লাখ ৭৩ হাজার৷ ৫০৯ টি যুদ্ধ বিমান, ১৫৬ টি হেলিকপ্টার, ১৬৩৪ টি ট্যাংক, ৩৯৮ টি নৌযান, ৩৪ টি সাবমেরিনের মালিক তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Noroozi
ইসরায়েল নিজেই অস্ত্র তৈরি করে
২০১৮ সালে সামরিক খাতে এক হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার ব্যয় করেছে ইসরায়েল৷ দেশটি নিজেই সামরিক অস্ত্র তৈরি করে, তাই তেমন একটা আমদানি করতে হয় না৷ গত বছর সর্বসাকুল্যে ১০৩ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির কাছ থেকে৷ দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার৷ তাদের বহরে আছে ৫৯৫ টি যুদ্ধবিমান, ১৪৬ টি হেলিকপ্টার, ২৭৬০ টি ট্যাংক, ৬ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters
প্রতাপশালী তুরস্ক
২০১৮ সালে তুরস্কের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলার৷ এর মধ্যে ১১১ কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ইতালিসহ ৬টি দেশের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সদস্য ৭ লাখ ৩৫ হাজার৷ যুদ্ধবিমান আছে ১০৬৭ টি৷ আছে ৪৯২ টি হেলিকপ্টার, ৩২০০ ট্যাংক, ১৯৪ টি যুদ্ধজাহাজ, ১২ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
উপসাগরের ছোট শক্তি কাতার
কাতারের সবশেষ সামরিক ব্যয়ের হিসাবটি ২০১০ সালের৷ সে বছর তাদের বাজেট ছিল ২১৭ কোটি ডলারের৷ দেশটির সামরিক সদস্য সংখ্যা ১২ হাজার৷ আছে ১০০ টি এয়ারক্রাফট, ৪২ টি হেলিকপ্টার, ৯৫ টি ট্যাংক, ৮০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
পড়ন্ত শক্তির ইরাক
গেল বছর সামরিক বাহিনীর পেছনে প্রায় ৬৩২ কোটি ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ এর মধ্যে ১৫৬ কোটি ডলার ব্যয় করেছে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তাদের আছে ১ লাখ ৬৫ হাজার সৈন্য, ৩২৭ টি যুদ্ধবিমান, ১৭৯ টি হেলিকপ্টার, ৩০৯ টি ট্যাংক, ৬০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Abdul Hassan
এবং যুক্তরাষ্ট্র
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ছিল ৬৪ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের৷ প্রায় সাড়ে ২১ লাখ সামরিক সদস্যের বিশাল বাহিনী তাদের৷ ১৩,৩৯৮ টি যুদ্ধবিমান, ৫৭৬০টি হেলিকপ্টার, ৬২৮৭টি ট্যাংক, ৪১৫টি যুদ্ধজাহাজ, ৬৮টি সাবমেরিন আছে এই পরাশক্তির বহরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Pizzoli
7 ছবি1 | 7
তাঁর এই কথায় সায় দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ তিনি এজন্য মাক্রোঁকে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন৷
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও দুই দেশের আলোচনার উপর জোর দিয়েছেন৷ তবে ট্রাম্প-রুহানি প্রথম দেখাতেই যাতে কোনো শর্ত দিয়ে না বসেন সেই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ রুহানির সাথে দিনের শেষ ভাগে ম্যার্কেলের একটি আলাদা বৈঠকেরও কথা রয়েছে৷
কী বলছেন ট্রাম্প রুহানি
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের মূল সমস্যাটি এখন আটকে আছে ২০১৫ সালে করা পরমাণু চুক্তিকে ঘিরে৷ গত বছর ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন৷ ইরানকে নতুন একটি চুক্তির জন্য চাপ দেয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবরোধও আরোপ করেছেন তিনি৷ তবে ইরান ২০১৫ সালের চুক্তি পরিবর্তনের সম্ভাবনা বরারবরই নাকচ করে দিয়ে আসছে৷
তবে এখন তার বক্তব্যে এই অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত মিলছে৷ মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে রুহানি বলেন, ছোটখাট পরিবর্তন, সংযোজন অথবা নতুন সংশোধনে তিনি রাজি আছেন৷
আলোচনায় বসার সম্ভাবনা আরো জোরদার হচ্ছে ট্রাম্পের বক্তব্য থেকেও৷ তিনি সৌদি আরবে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থেকে ইরানের উপর চাপ প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন দেশের প্রতি আহবান যেমন জানিয়েছেন, তেমনি আবার শান্তির পক্ষেও কথা বলেছেন৷ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে জড়ো হওয়া নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘যে-কেউ যুদ্ধ বাধাতে পারে, কিন্তু সাহসীরাই শুধু শান্তিকে বেছে নিতে পারে৷’’