নিউজিল্যান্ডের জয়রথ থামাতে ভারতের প্রয়োজন ২৭৪ রান
২২ অক্টোবর ২০২৩প্রথম চার ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ছিল দুর্দম্য৷ ভারতও দুর্ধর্ষ৷ শিরোপা প্রত্যাশী দুই দল শুধু টানা চার ম্যাচ জিতেইনি, প্রতিপক্ষকে রীতিমত দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে৷ আজ তাদের লড়াই নিয়ে তাই উত্তেজনার পারদ চড়ে বেশ৷
ব্লকবাস্টার সেই ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড সবকটি উইকেট হারিয়ে করেছে ২৭৩ রান৷ শুরুতে দুই উইকেট হারানোর চাপ কাটিয়ে রাচিন রবীন্দ্র ও ডেরিল মিচেলের তৃতীয় উইকেটে ১৫৯ রানের রেকর্ড জুটি বদলে দেয় ইনিংসের গতিপথ৷ রাচিন ৮৭ বলে ৭৫ ও মিচেল করেন ১৩০ রান৷
ধর্মশালার আকাশে সকাল থেকেই ছিল মেঘের আনাগোনা৷ সঙ্গে ছিল কনকনে ঠান্ডা৷ এমন কন্ডিশনের সুবিধাটা শুরুতে ভালোভাবে নেন ভারতীয় পেসাররা৷ জাসপ্রিত বুমরাহর প্রথম ওভারটাই মেডেন৷
মোহাম্মদ সিরাজের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভার থেকেও রান পায়নি নিউজিল্যান্ড৷ শুরুর চার ওভারের দুটিই মেডেন৷ সঙ্গে ভয়ংকর ওপেনার ডেভন কনওয়ের উইকেট৷ পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রথম ১০ ওভারে কিউইরা করেছিল ২ উইকেটে ৩৪ রান৷ টস জিতে টম ল্যাথামের দলকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানানোর সময় এমন স্বপ্নের শুরুর কথা ভাবেননি হয়ত রোহিত শর্মাও৷
চোটের জন্য কেন উইলিয়ামসন খেলতে পারেননি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি৷ একই কারণে ছিলেন না ভারতীয় অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডে৷ তার জায়গায় বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছে সূর্যকুমার যাদবের৷ আর শার্দুল ঠাকুরের বদলে ভারতীয় একাদশে ফিরেছেন মোহাম্মদ সামি৷ ৫ উইকেট নিয়ে ফেরাটা স্মরণীয় করেছেন তিনি৷ সুনীল গাভাস্কার, রবি শাস্ত্রীর মত তারকারা এজন্যই শুরু থেকে ফেরানোর আহবান জানাচ্ছিলেন সামিকে৷
ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে কব্জিতে ব্যথা পাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল সূর্যের খেলা৷ সেই শঙ্কাটা কেটে যায় আজ৷ গতকাল অনুশীলনে ঈশান কিষাণের ঘাড়ের পেছনে হুল ফুটিয়েছিল মৌমাছি৷ আজ আবার ফিল্ডিংয়ের সময় ব্যথা পেয়ে দশম ওভার শেষে রোহিত শর্মা ছেড়ে গিয়েছিলেন মাঠ৷ বিশ্বকাপের মাঝে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ইনজুরি এড়াতে চাইবে যেকোনো দল৷ ভারতীয় দর্শকদের স্বস্তি দিয়ে রোহিত মাঠে ফেরেন কয়েক ওভার পরই৷
ধর্মশালার সৌন্দর্য্য যেমন হৃদয় কাড়া তেমনি আতঙ্ক মাঠের আউটফিল্ড৷ আজও তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি লাইনে মোহাম্মদ সিরাজ ডাইভ দিলে ধারাভাষ্যে রবি শাস্ত্রী আঁতকে উঠে বলছিলেন, ‘‘এই আউটফিল্ডে ফিল্ডারদের সতর্ক থাকতে হবে৷''
ভারতকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সিরাজই৷ তার চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলটা ফ্লিক করতে যেয়ে কোনো রান না করা কনওয়ে ক্যাচ তুলে দেন শ্রেয়াস আয়ারের হাতে৷ ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দুই হাতে দারুণ ক্যাচ নেন আয়ার৷
প্রথম চার ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়নি মোহাম্মদ সামির৷ আজ শার্দুল ঠাকুরের বদলে সুযোগ পেয়ে প্রথম বলেই উইকেট নেন এই পেসার৷ সামির নবম ওভারের প্রথম বলটা কাট করতে যেয়ে স্ট্যাম্পে টেনে এনে বোল্ড উইল ইয়ং৷ ২৭ বলে ১৭ করেন এই ওপেনার৷ তাকে ফিরিয়ে বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে ৩১ উইকেট নেওয়া অনিল কুম্বলের রেকর্ড পেছনে ফেলেন সামি৷ তখন তার উইকেট ছিল ৩২টি৷ যৌথ সর্বোচ্চ ৪৪টি করে উইকেট জহির খান ও জাভাগাল শ্রীনাথের৷
নিজের তৃতীয় ওভারে রাচিন রবীন্দ্রর উইকেটটিও পেতে পারতেন সামি৷ কিন্তু বেকওয়ার্ড পয়েন্টে তার সহজ ক্যাচ ফেলেন রবীন্দ্র জাদেজা৷ হাঁটুর উচ্চতায় আসা ক্যাচটা হাত ফসকানোর পর ধারাভাষ্যকার বলছিলেন ‘অবিশ্বাস্য৷' তখন রাচিনের রান ছিল ১২৷ জীবন পাওয়া রাচিন আর তার সঙ্গী ডেরিল মিচেলকে সাহস জোগাতে ড্রিঙ্কস বিরতির সময় পানির বোতল হাতে মাঠে হাজির হন কেন উইলিয়ামসন৷
তারপর বদলে যায় তাদের ব্যাটিংয়ের ধরন৷ কুলদিপ যাদবের করা ১৯তম ওভারে কিউইরা নেন ১৬ রান৷ তাদের স্কোর তিন অংকে পৌছে ২১তম ওভারে৷
রাচিন ও মিচেল ভাঙেন বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে দেশের হয়ে যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড৷ ১৯৭৯ বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে জন রাইট ও ব্রুশ এডগারের ১০০ রানের জুটি ছিল এতদিনের সেরা৷ আজ তৃতীয় উইকেটে সেটা পেছনে ফেলে রাচিন ও মিচেল গড়েন ১৫৯ রানের জুটি৷ রেকর্ড গড়ার পথে দুবার রিভিউ নিয়ে সফল হয়েছিলেন রাচিন৷ আর ৬০ রানে থাকার সময় জাদেজার বলে উইকেটের পেছনে লোকেশ রাহুল ক্যাচ ছাড়ায় জীবন পেয়েছিলেন মিচেল৷ ৬৯ রানে তিনি আবারও জীবন পান লংঅফে জাসপ্রিত বুমরাহর ক্যাচ মিসে৷
জুটিটা শেষ পর্যন্ত ভাঙেন সামি৷ তার স্লো অফকাটার ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মারতে যেয়ে রাচিন লং অনে ক্যাচ দেন শুভমান গিলকে৷ ৮৭ বলে ৬ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ৭৫ করেন রাচিন৷ বিশ্বকাপে এটা সামির ৩৩তম উইকেট৷ মিচেল স্যান্টনার (১ রান) ও ম্যাট হেনরিকে বোল্ড করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন তিনি৷ সেটা না হলেও বিশ্বকাপ উইকেট ৩৬-এ নিয়ে গেছেন তিনি৷
ডেরিল মিচেল করেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি৷ ৩০তম ইনিংসে পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা নিউজিল্যান্ড ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম৷ ২২ ইনিংসে পঞ্চম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা কনওয়ের৷ সেঞ্চুরিতে থেমে না থেকে মিচেল খেলেন ১২৭ বলে ৯ বাউন্ডারি ৫ ছক্কায় ১৩০ রানের ইনিংস, যা ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ার সেরা৷ শেষ ওভারে ছক্কা মারতে যেয়ে বাউন্ডারি লাইনে বিরাট কোহলির তালুবন্দি হন মিচেল৷
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ১০ ওভারে সবচেয়ে বেশি ৭৩ রান খরচ কুলদিপ যাদবের৷ তবে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম (৫ রান) ও গ্লেন ফিলিপসের (২৩ রান) উইকেট দুটি নিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার৷ ৪০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ২১৯৷ সেখান থেকে স্কোরটা ৩০০ ছাড়িয়ে না যাওয়ার কৃতিত্বটা ভারতীয় বোলারদের৷
২০০৩ বিশ্বকাপের পর আইসিসির সীমিত ওভারের ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারেনি ভারত৷ এ সময় রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হেরেছেন তিনবার৷ গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর সেমিফাইনালে জিতেছিল নিউজিল্যান্ড৷ ২০ বছর পর বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে রোহিত শর্মার দলকে করতে হবে ২৭৪ রান৷
স্কোর:
নিউজিল্যান্ড : ৫০ ওভারে ২৭৩/১০ (মিচেল ১৩০, রাচিন ৭৫, ফিলিপস ২৩; সামি ৫/৫৪, কুলদিপ ২/৭৩)