নিউজিল্যান্ডের পর্যটক প্রিয় হোয়াইট আইল্যান্ডের আগ্নেয়গিরিতে আচমকাই শুরু হওয়া অগ্নুৎপাতে বহু মানুষ দগ্ধ হয়েছেন৷ যাদের চিকিৎসায় নিউজিল্যান্ডকে চামড়া আমদানি করতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসকরা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ১২০ বর্গমিটার চামড়া চেয়ে পাঠিয়েছেন৷ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর থেকে দুই বর্গমিটার চামড়া নেওয়া যায়৷
চোখ, হৃদযন্ত্র, কিডনিসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মত মানুষ তার চামড়াও দান করতে পরেন৷ মৃতদেহ থেকে চামড়া সংগ্রহের পর যথাযথভাবে তা কয়েক বছর সংরক্ষণ করা যায়৷
চামড়া প্রতিস্থাপনের জন্য দগ্ধদের শরীর বিশেষ করে উরু ও কানের পেছন থেকে চামড়া নেওয়া হয়৷ কিন্তু শরীর অনেক বেশি পুড়ে গেলে চামড়া ব্যাংকই ভরসা৷
গত সোমবার নিউজিল্যান্ডের উত্তর পূর্বে সমুদ্রের মাঝে অবস্থিত হোয়াইট আইল্যান্ডে অগ্নুৎপাতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে৷ নিখোঁজ আছেন আরো আটজন, যারা মারা গেছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷
পর্যটক প্রিয় হোয়াইট আইল্যান্ডে ঘটনার দিন অনেক দর্শণার্থী ছিলেন৷ সেদিন ঘটনাস্থল থেকে ৩১ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল৷
তাদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার একজন পর্যটককে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
মানুষের স্বচ্ছ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি করলেন গবেষকরা
নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের ‘স্বচ্ছ অঙ্গ’ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা৷ এর মাধ্যমে কিডনিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ত্রি-মাত্রিক প্রিন্ট করার পথ তৈরি করেছেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
ল্যাবে তৈরি মগজ
ল্যাবরেটরিতে তৈরি মানুষের মগজ দেখছেন লুডভিগ মাক্সিমিলিয়ানস ইউনিভার্সিটির ‘ইনস্টিটিউট অফ স্ট্রোক অ্যান্ড ডিমেনশিয়া রিসার্চ’এর ড. আলি এরতুর্ক৷ তাঁর দলের এমন আবিষ্কার মানবদেহে অঙ্গ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নতুন আশা দেখাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
ল্যাবরেটরির ইঁদুর
ল্যাবটেরিতে একটি স্বচ্ছ ইঁদুর দেখছেন গবেষক ড. আলি এরতুর্ক৷ তাঁর নেতৃত্বে লুডভিগ মাক্সিমিলিয়ানস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এমন একটি দ্রাবক ব্যবহার করেছেন, যেটি এমন স্বচ্ছ মগজ ও কিডনি বানাতে সহায়তা করেছে৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
স্বচ্ছ মগজ
ছবিতে স্বচ্ছ ও সুন্দর একটি মগজ দেখা যাচ্ছে৷ পরবর্তীতে মাইক্রোস্কোপের ভেতরের লেজার দিয়ে রক্তনালী ও সেলসহ অঙ্গটির পরিপূর্ণ কাঠামো দেখতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
কিডনির ছাঁচ
কিডনির জন্য ত্রি-মাত্রিক প্রিন্টের ছাঁচ দেখছেন ল্যাবের একজন কর্মী৷ এই ব্লুপ্রিন্টের মাধ্যমে গবেষকরা অঙ্গের ছাঁচ তৈরি করছেন৷ থ্রি-ডি প্রিন্টারে স্টেম সেল দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁরা, যেটি কালির মতো কাজ করছে৷ এরপর যথাযথ জায়গায় সেটাকে পুশ করার মাধ্যমে অঙ্গটিকে সচল করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
অগ্নাশয় তৈরির আশা
আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে বায়ো-প্রিন্টেড অগ্নাশয় তৈরির আশা করছেন ড. আলি এরতুর্কের দল৷ একইসঙ্গে কিডনির পরিপূর্ণতা তাঁরা দিতে চাচ্ছেন ৫-৬ বছরের মধ্যে৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
মানবদেহে ব্যবহার হবে কবে?
বায়ো-প্রিন্টেড বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানুষের দেহে সংযুক্ত করা যাবে কিনা, এটি নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা৷ প্রথমে তাঁরা প্রাণীর দেহে এটার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন৷ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যেতে লাগতে পারে ৫ থেকে ১০ বছর৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
6 ছবি1 | 6
এছাড়া, ২৯জন নিউজিল্যান্ডের চারটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানান চিকিৎসকরা৷ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যাওয়ায় তাদের ২২ জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক৷
দগ্ধদের শরীরে সংক্রমণ রোধে এবং নতুন ত্বক গঠনে চামড়া প্রতিস্থাপন ‘প্রাকৃতিক প্লাস্টারের' কাজ করে৷ ব্যাথা কমাতে এবং ক্ষত দ্রুত শুকাতেও এটি দারুণ কার্যকর৷
নিউজিল্যান্ডে প্রতি বছর মাত্র ৫ থেকে ১০ জন মরণোত্তর চামড়া দান করেন৷ হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিটে চামড়া ব্যাংক থাকে৷ সাধারণ সময় সেখান থেকেই চাহিদা মিটেনো হয়৷
কিন্তু এবার একবারে অনেকে মানুষ দগ্ধ হওয়ায় চামড়া আমদানির বিকল্প নেই৷
নিউজিল্যান্ডের ন্যাশনাল বার্ন ইউনিটের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. পেটা ওয়াটসন বলেন, ‘‘আমাদের কাছে চামড়া মজুদ আছে৷ কিন্তু ড্রেসিং ও সাময়িক চামড়া প্রতিস্থাপনের জন্য যতটা প্রয়োজন তার জন্য দ্রুত বাড়তি সরবরাহ প্রয়োজন৷
‘‘ধারণা করছি আমাদের আরও ১২০ বর্গমিটার চামড়া লাগবে৷''
হোয়াইট আইল্যান্ডে দগ্ধদের চিকিৎসা সাধারণ পোড়ার তুলনায় জটিল হবে বলেও জানান তিনি৷ কারণ সেখানে নানা গ্যাস ও রাসায়নিক ছিল৷
‘‘সবে দীর্ঘ এক চিকিৎসা পদ্ধতির শুরু৷ কারো কারো ক্ষেত্র বেশ কয়েকমাস লেগে যেতে পারে৷''
দগ্ধ রোগীরা নানা আতঙ্কে ভোগেন৷ তাদের অন্যান্য আঘাতও থাকতে পারে৷ ফলে এ সব রোগীদের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হয়৷ গুরুতর দগ্ধদের ক্ষেত্রে অনেক সময় জীবনভরই চিকিৎসা নিয়ে যেতে হয়৷
এসএনএল
কোন অঙ্গ কখন দান করবেন
জীবিত এবং মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে অঙ্গ নিয়ে তা অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায়৷ কত বছর বয়স পর্যন্ত অঙ্গ দান করা যায় জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কিডনি, লিভার
১৮ বছর বয়সের সুস্থ যে কোনো ব্যক্তি অঙ্গ দান করতে পারেন৷ ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত কিডনি ও লিভার দান করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
হার্ট, ফুসফুস
১৮ বছরের কম বয়সি কারো কাছ থেকে অঙ্গ নিতে হলে তার পিতামাতার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়৷ এনিয়ে একেক দেশে একেক নিয়ম থাকলেও ৫০ বছর পর্যন্ত হার্ট ও ফুসফুস দান করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
হার্টের ভালভ, হাড়
৫০ বছর বয়স পর্যন্ত ভালভ দান করা যায়৷ আর হাড় দান করা যায় ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত৷
ছবি: Imago Images/Science Photo Library
ত্বক
বয়স যতই হোক না কেন চাইলেই ত্বক দান করতে পারেন আপনি৷ ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত ত্বক দান করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sen
চোখ, টিস্যু
যে কোনো বয়সে চোখ ও টিস্যু দান করা যায়৷ তবে মারা যাওয়ার পর কেউ চোখ দান করতে চাইলে তাকে আগে থেকেই ডোনার কার্ড সংগ্রহ করতে হবে৷ কারণ চোখ দানকারী মারা যাওয়ার ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হয়৷
ছবি: imago images
অগ্ন্যাশয়, অন্ত্র
চিকিৎসকরা বলছেন, সর্বোচ্চ ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত কারো কাছ থেকে অগ্ন্যাশয় ও অন্ত্র নিয়ে তা অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করলে ভালো কাজ করে৷
ছবি: Colourbox
মরণোত্তর অঙ্গ দান
মরণোত্তর কোনো অঙ্গ দান করলে মৃতব্যক্তির শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গটি রেখে মৃতদেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দেহদান
দেহদান করে দিলে সেটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় কাজে লাগানো হয়৷ এজন্য দেহের কোনো অংশই ফেরত দেওয়া হয় না৷