গোটা একটি প্রজন্মকে ধূমপানমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড৷ বলা হচ্ছে এটি বাস্তবায়ন হলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে দেশটিতে আর কোনো ধূমপায়ী থাকবে না৷
বিজ্ঞাপন
ধূমপানবিরোধী নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে নিউজিল্যান্ডের সরকার৷ আগামী বছরই সেটি আইন হিসেবে পাস হতে পারে, যা বাস্তবায়ন হলে এখনকার শিশুরা ভবিষ্যতে ধূমপানের সুযোগই পাবে না৷
দেশটির সহযোগী স্বাস্থ্যমন্ত্রী আয়েশা ভেরাল এই পরিকল্পনা নিয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘‘ধূমপানমুক্ত ২০২৫ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধকরণসহ আমরা সাহসী কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবো৷''
ধূমপান ছাড়তে চাইলে ই-সিগারেটের সাহায্য নিন
ধূমপানের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা কত কঠিন তা কেবল ধূমপায়ীরাই জানেন৷ তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেটের বাষ্প নাকি ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে৷ আরো থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images
ই-সিগারেটের কেন ?
ধূমাপান ক্ষতিকর তা জেনেও অনেকেই ধূমপান করে৷ তবে ধূমপানের মতো বদঅভ্যাস ছাড়ার জন্য নাকি অন্য কোনো অভ্যাসের সাহায্য নিলে তা অনেক সহজ হতে পারে৷ আর এক্ষেত্রে সাময়িকভাবে তা হতে পারে ই-সিগারেট৷ চিকিৎসকদের এই পরামর্শ মেনে বহু ধূমপায়ীই সফল হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ছাড়ার জন্য শুরু করা
ইলেকট্রনিক সিগারেটের বাষ্পের মাধ্যমে ইউরোপের শতকরা ৬৭ ভাগ মানুষের ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ আর তাদের মধ্যে আংশিক পুরোপুরি ধূমপান ছেড়েছেন আর বাকিরা পুরোপুরি না হলেও ধূমপান করা অনেকটাই কমাতে পেরেছেন৷ একথা জানান, বার্লিনের ফুসফুস রোগের বিশেষজ্ঞ ডা. টোমাস হেয়ারিং৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Schmidt
ই-সিগারেটের বাষ্প কম ক্ষতিকর
ইংল্যান্ডে সিগারেট ছাড়ার জন্য অনেক চিকিৎসক সরাসরি ই-সিগারেট খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন৷ কারণ, সিগারেটের ধোঁয়ার চেয়ে ই-সিগারেটের বাষ্প অনেক কম ক্ষতিকর৷ তাছাড়া ই-সিগারেটের সাহায্যে ধূমপান ছাড়া নাকি সহজ হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M.Blinch
মৃত্যুহার অনেক কমে যেতো
যদি সকল ধূমপায়ী সিগারেটের পরিবর্তে ই-সিগারেটের বাষ্প পান করতেন তাহলে হয়তো প্রতিবছর ১২.০০০০ মানুষের পরিবর্তে মাত্র ৬০০০ ধূমপায়ী মারা যেতেন৷ জানান ডা.হেয়ারিং৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ই-সিগারেটের সুবিধা
শুধু তাই নয়, ই-সিগারেটের ক্ষেত্রে নিকোটিনের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমানো যায়৷ আর এতে সিগারেটের ওপর শরীরের নির্ভরতাও আস্তে আস্তে কমতে থাকে৷ ধূমপান পুরোপুরি ছাড়ার জন্য এটাকে অন্তত প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন৷
ই-সিগারেটে ক্ষতি কম হওয়ার আরেকটি কারণ
ইলেকট্রনিক বা ই-সিগারেটে যেহেতু তামাক দেয়া হয় না, কাজেই তা থেকে কম টক্সিন তৈরি হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
কীভাবে বাস্তবায়ন হবে
বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে ১৮ বছরের নীচের সবার জন্য সিগারেট আইনত নিষিদ্ধ৷ কিন্তু ২০২৭ সাল থেকে বয়সের এই সীমা ক্রমাগত বাড়তে থাকবে৷ এভাবে এখন যাদের বয়স ১৪ বছর তারা কখনোই আর সিগারেট কেনার বৈধতা পাবে না৷ হিসাব করলে দেখা যাবে ৬৫ বছর পরে যারা সিগারেট কিনতে যাবেন, তাদের বয়স হতে হবে ৮০ বছর৷ তবে সরকার মনে করছে এতদিনও অপেক্ষা করতে হবে না, তার কয়েক যুগ আগেই নিউজিল্যান্ড ধূমপানমুক্ত দেশে পরিণত হবে৷
তামাকের খুচরা বিক্রয়ে বিশ্বে সবচেয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা দেশের মধ্যে ভূটানের পরেই রয়েছে নিউজিল্যান্ড৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিগারেটের উপর উচ্চ কর আরোপ করা হয়েছে দেশটিতে৷ অন্য দেশের তুলনায় সেখানে ধূমপায়ীর হার তাই এমনিতেই কম৷ বর্তমানে দেশটির ১৫ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে ধূমপায়ীর হার ১১ দশমিক ছয় শতাংশ৷ তবে প্রতিদিন ধূমপান করেন নয় শতাংশ মাত্র৷ ২০২৫ সালের মধ্যে এই হার পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার৷ এজন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী তামাকজাত পণ্য বিক্রির উপর আরো কড়াকড়ি আরোপ করা হবে৷ বেঁধে দেয়া হবে নিকোটিনের মাত্রাও৷
তামাকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার এই আইনটি আগামী বছরের জুনে সংসদে পেশ করার কথা রয়েছে৷ ২০২২ সালের শেষের দিকে এর বাস্তবায়ন শুরু করতে চায় সরকার৷