1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বমত গঠনের বড় সুযোগ বাংলাদেশের

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এই প্লাটফর্ম রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বমত গঠনের বড় সুযোগ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷

ছবি: picture-alliance/AP/S. Kallol

নিউ ইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সামনে৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্বনেতাদের কাছে রোহিঙ্গা সংকট তুলে ধরে বাংলাদেশ থেকে এদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে বড় ভূমিকা রাখবে জাতিসংঘের এই অধিবেশন৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে৷

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ১২ই সেপ্টেম্বর ৭২তম সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়৷ আগামী ১৯ থেকে ২১শে সেপ্টেম্বর চলবে সাধারণ বিতর্ক, যেখানে এই বিশ্ব সংস্থার ১৯৩টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পক্ষে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরবেন৷ এবার এমন এক সময়ে বিশ্ব নেতারা জাতিসংঘ অধিবেশনে মিলিত হচ্ছেন, যখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে৷ কয়েক যুগ ধরে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসছে বাংলাদেশ৷ কক্সবাজারে এ দফায় প্রবেশ করেছে আরও চার লাখ শরণার্থী৷ রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই সংখ্যা ১০ লাখে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের৷

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের প্রধান নির্বাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এই সুযোগটা আমাদের ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে৷ আমরা এতদিন দ্বিপাক্ষিকভাবে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু মিয়ানমার আমাদের এই চেষ্টাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে৷ এমনকি প্রতিনিয়ত তারা আকাশসীমা লংঘন করছে৷ এটা তো আসলে বাংলাদেশের একার সমস্যা না, বৈশ্বিক সমস্যা৷''

তিনি আরও বলেন, ‘‘যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, পার্লামেন্টের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তাদের এখন এটা নিয়ে কথা বলা সময় এসেছে৷ এখানে সেফ জোনের যে প্রস্তাব বাংলাদেশ দিয়েছে সেটা নিয়ে কথা হতে পারে, তাদের উপর অস্ত্র বিক্রয় বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি করতে পারে বাংলাদেশ৷ তাদের জনগণকে অবশ্যই তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে৷ তা না হলে এর দায়ভার পুরো বিশ্বকে নিতে হবে৷ শুধু ত্রাণ দিলেই হবে না, তাদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিতে হবে৷''

জাতিসংঘের যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই এখনো প্রশ্ন তোলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘‘এখন যদি এই ইস্যুতে তারা বড় কোন ভূমিকা না রাখতে পারেন তাহলে জাতিসংঘের গুরুত্ব কিন্তু অনেকাংশেই হারাবে৷''

‘মিয়ানমারের উপর অস্ত্র বিক্রয় বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি করতে পারে বাংলাদেশ’

This browser does not support the audio element.

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম সাধারণ অধিবেশনে মিলিত হচ্ছেন এই বিশ্ব সংস্থার রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা৷ মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সঙ্কট যে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, জাতিসংঘ মহাসচিবও সে কথা বলেছেন৷ ২১শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর ওইদিনই জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তার আগে ১৮ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত ‘জাতিসংঘ সংস্কার' বিষয়ক এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘প্রিভেনশন অব সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন অ্যান্ড অ্যাবিউজ' শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী৷

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ফাঁকে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ও কমনওয়েলথের বর্তমান চেয়ার-ইন অফিস মাল্টার প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাসকেট আয়োজিত কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা৷ প্যালেস হোটেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনায়ও অংশ নেবেন তিনি৷

‘প্রধানমন্ত্রী ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন’

This browser does not support the audio element.

এসব দ্বিপাক্ষিক বা যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে বিশ্ব নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করবেন- এমনটাই বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী৷ গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘লাখ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি৷ জাতিসংঘের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যার কারণগুলো তুলে ধরে এর সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলো জাতিসংঘে জোরালোভাবে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী৷ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ তুলে ধরে তা সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবসমূহ সুস্পষ্টভাবে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন এ এইচ মাহমুদ আলী৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে রাখাইন রাজ্যের জন্য কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাবেন৷ রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নির্মূল' অভিযানকে মানবতা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন উল্লেখ করে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাবেন তিনি৷

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা বিশ্ব কূটনীতির সবচেয়ে বড় জায়গা৷ এখানে প্রধানমন্ত্রী ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন৷ আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়ায় রোহিঙ্গারা আমাদের এখানে আসছে৷ কিন্তু এটার দায় তো সবার৷ প্রধানমন্ত্রী ওখানে দ্বিপাক্ষিক যেসব বৈঠক করবেন সেখানে সরাসরি কোন দেশের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে, আবার অন্য আলোচনার সঙ্গেও এটা উঠতে পারে৷ আর মূল কথা হল, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে যে ভাষণ দেবেন সেখানে এই বিষয়টাকে সুন্দর করে তথ্যবহুল হৃদয়গ্রাহীভাবে উপস্থাপন করতে পারেন৷ আর জাতিসংঘের মহাসচিব তো নিজেও এটা নিয়ে চিন্তিত৷ ফলে পুরো সুযোগটাকেই আমরা ওখানে কাজে লাগাতে পারি৷''

প্রধানমন্ত্রী কি পারবেন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুকে হৃদয়গ্রাহীভাবে উপস্থাপন করতে? লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ