হালস্টাট, অস্ট্রিয়ার ছোট্ট একটি গ্রাম৷ বিশ্বের সুন্দর গ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি৷ করোনাকালে সেই গ্রাম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সত্যি অন্যরকম নানা কারণে৷
বিজ্ঞাপন
প্রতি বছর অন্তত ১০ লাখ মানুষ ছোট্ট এই গ্রামটি ভ্রমণে যান৷ কারণ গ্রামটি সত্যিই ছবির মতো সুন্দর৷ আল্পসের কোলে ষোড়শ শতকের পুরোনো সব কাঠের বাড়ি আর লেক-সব মিলিয়ে অপূর্ব এই গ্রামের জনসংখ্যা ৯শ'রও কম৷
করোনায় সবাই যখন বাড়ির ভেতরে থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তখন কেন আমরা ঘুরতে গেলাম এবং তা-ও এমন একটা জায়গা বেছে নিলাম? আসলে মাতৃত্বকালীন ছুটির মধ্যে করোনা এসে গেল, শুরু হলো হোম অফিস৷ এক বছরের সন্তান, অফিস, পড়ালেখা-বাড়ি সব সামলাতে আমরা দু'জন এতটাই বিধ্বস্ত ছিলাম যে, মাথা কাজ করছিল না৷ কোথাও বেরিয়ে আসাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল৷ তাই বরের পিএইচডি থিসিস জমা দেয়ার পর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিলাম৷ এরপর ঘুরতে যাওয়ার বিষয়ে নানা আলোচনা৷ কোন যাত্রায় করোনার বেশি ঝুঁকি৷ সন্তানের জন্য সুবিধা বিমানযাত্রা, কারণ, কম সময় লাগে৷ কিন্তু এক সহকর্মী কিছুদিন আগে ভিয়েনা ভ্রমণ করে এসে জানালেন বিমানে মাঝের আসন ফাঁকা রাখার কথা বলা হলেও আসলে ফাঁকা রাখা হয় না৷ তাই নিরাপত্তার কথা ভাবলে গাড়ি অথবা ট্রেন৷ যেহেতু আমরা দুজনেই গাড়ি চালাতে পারি না, তাই ট্রেন ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিলাম৷
ভ্রমণের গন্তব্য বাছার এবং কোথায় থাকা হবে সে দায়িত্ব বরাবরই আমার৷ তো আমি সাম্প্রতিক বিভিন্ন ভ্রমণ ব্লগ থেকে যা জানলাম, তা হলো যেসব জায়গায় সাধারণত বেশি মানুষ ঘুরতে যায়, করোনায় সেসব জায়গাতেই লোক সমাগম তুলনামূলক কম৷ এসব ব্লগে ইউরোপের যে কয়টি জায়গার উল্লেখ আছে তার মধ্যে হালস্টাট একটি৷ ঠিক হলো হালস্টাট যাওয়া হবে ট্রেনে৷ ট্রিপ অ্যাডভাইজারে জানতে চাইলাম জার্মানি থেকে অস্ট্রিয়া যেতে হলে চিকিৎসকের কোনো চিঠি লাগবে কিনা বা করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন আছে কিনা৷ জানতে পারলাম তেমন কিছুর দরকার নেই৷
‘নিউ নর্মালে’ ফিরছে বিনোদন, খেলাধুলা
করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খেলাধুলা ও বিনোদন জগত একেবারে থমকে গিয়েছিল৷ এখন আবার সবকিছু শুরুর চেষ্টা চলছে, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে৷
ছবি: Privat
স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাটক, সিনেমার শুটিং
কোরবানির ঈদ থেকেই বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে টিভি নাটকের শুটিং৷ ঢাকার অদূরে শুটিং স্পট পূবাইলে ২০-এর অধিক শুটিং হাউজের সবকটিই ব্যস্ত সময় পার করছে৷ ব্যস্ত উত্তরার শুটিং হাউজগুলোও৷ আর সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই একটু একটু করে জমতে শুরু করে ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রধান কেন্দ্র এফডিসি৷ ছবিতে সরকারি অনুদান পাওয়া ‘আশীর্বাদ’ চলচ্চিত্রের শুটিং দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Privat
শর্তসাপেক্ষে সিনেমা হল খুলছে
বাংলাদেশে প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর ১৬ অক্টোবর থেকে সিনেমা হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ তবে শর্ত হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও আসন সংখ্যার অর্ধেক টিকিট বিক্রি করতে বলা হয়েছে৷ দর্শকদের মাস্ক পরতে হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে হল বন্ধ করে দেয়া হতে পারে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নাটকের মঞ্চায়ন
আগস্টে ঢাকার বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনের মঞ্চে আয়োজন করা হয় শূন্যনের নাটক ‘লাল জমিন’৷ সেপ্টেম্বর মাসে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দুদিন নিজস্ব মহড়াকক্ষে স্বল্পসংখ্যক দর্শকের জন্য নাট্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল ‘প্রাচ্যনাট’৷
ছবি: Dhaka Theater
‘ড্রাইভ ইন মুভি ফেস্ট’
করোনার কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের চল দেখা গেছে৷ এবার বাংলাদেশেও সেটা আয়োজনের চেষ্টা চলছে৷ চলতি মাসেই এমন একটি উৎসব অনুষ্ঠিত হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্টেজে গাইতে না পারার আক্ষেপ
করোনার কারণে স্টেজে গান গাইতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন৷ তবে সম্প্রতি তিনি সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন৷ কবরীর অনুদানের ছবি ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবিতে প্রথমবারের মতো সংগীত পরিচালনা করছেন তিনি৷ সম্প্রতি তেজগাঁওয়ের এক স্টুডিওতে নিজের সুর করা গানেই কণ্ঠ দেন সাবিনা ইয়াসমিন৷
ছবি: Privat
জয়ার শর্ত
কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অনুদানের ছবি ‘বিউটি সার্কাস’এর শেষ দৃশ্য ধারণে অংশ নিয়েছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান৷ এক্ষেত্রে জয়ার প্রথম শর্তই ছিল শুটিংয়ের সময় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে৷
ছবি: Privat
করোনার কারণে ছোট টিম
‘বিউটি সার্কাস’এর পরিচালক মাহমুদ দিদার জানান, অন্য সময় শুটিং টিমে প্রায় শতাধিক সদস্য থাকতো, এখন তা বড়জোর ২০-২৫ জনে নেমে এসেছে৷
ছবি: Privat
খুলছে শিল্পকলা একাডেমি
এ মাসেই শিল্পকলা একাডেমি খোলা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এমএ খালেদ৷ তিনি বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একাডেমিতে প্রবেশ ও মিলনায়তনগুলোতে বসার ব্যবস্থা করা হবে৷ এ নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে৷ যে নাট্যদলগুলো হল বরাদ্দ নেবে বা আবেদন করবে, তাদের এই নীতিমালা মেনে হল সরবরাহ করা হবে৷
ছবি: Privat
ভিড় বেশি, তাই আলো বন্ধ
১১ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৬তম ‘ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস’৷ এই সময় বার্লিনের বিভিন্ন ভবন আলোকিত করা হয়েছিল৷ তবে এ বছর আলো দেখতে আসা মানুষের ভিড় বেড়ে গেলে কিছু সময়ের জন্য আলো নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল, যেন ভিড় কমে যায়৷ করোনার কারণে এই নিয়ম৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/S. Yuqi
অনলাইন কনসার্ট
সম্প্রতি ইতিহাসের প্রথম কোরিয়ান পপ ব্যান্ড হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড’ সিঙ্গেলসের শীর্ষে উঠেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস-এর প্রথম ইংলিশ সিঙ্গেলস ‘ডায়নামাইট’৷ তবে করোনার কারণে কনসার্ট করতে পারছে না বিটিএস৷ তাই হতাশ সমর্থকদের আনন্দ দিতে অনলাইনে কনসার্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা৷ সৌলে অনুষ্ঠিত কনসার্টটি ১০ ও ১১ অক্টোবর অনলাইনে লাইভস্ট্রিম করা হবে৷
ছবি: picture-alliance/Yonhap
অনলাইনে মিউজিয়াম
করোনার কারণে মিউজিয়াম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হওয়ার পর অনেক মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ অনলাইনে তাদের সংগ্রহ দেখার ব্যবস্থা করেছিল৷ বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিউজিয়াম খুললেও অনলাইনের সুযোগ এখনো রেখে দিয়েছে অনেকে৷
ছবি: TU Darmstadt/Architectura Virtualis
দর্শকহীন মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
জুলাইয়ে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠে ফিরেছিল৷ করোনার কারণে খেলা হয়েছে দর্শকশূন্য মাঠে৷ এছাড়া বল চকচকে দেখাতে থুথু মেশানোর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল৷ এরপর পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়াও ইংল্যান্ড সফর করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
আইপিএল-ও ব্যতিক্রম নয়
নিজ দেশের পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইপিএল আয়োজন করছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড৷ খেলা হচ্ছে দর্শকশূন্য স্টেডিয়াম৷ তবে টিভিতে আইপিএল দেখে রোমাঞ্চিত হচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা৷ উপরের ছবিটি গতবছরের৷
ছবি: IANS
বাংলাদেশের ক্রিকেট
শ্রীলঙ্কায় কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের নিয়মের কারণে সে দেশে এখনই সফরে যেতে পারছেন না টাইগাররা৷ অথচ সেই সফর দিয়েই মাঠে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন তারা৷ অপেক্ষায় ছিলেন দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাও৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করতে না পারায় এখন ঘরোয়া ক্রিকেট চালু করতে চাইছে বিসিবি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
বিশ্ব ফুটবলেও দর্শকহীন ম্যাচ
করোনার কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া ইউরোপীয় ফুটবল ফিরেছিল মে মাসে৷ পথ দেখিয়েছিল জার্মানির বুন্ডেসলিগা৷ এরপর একে একে ইংল্যান্ড, ইটালি ও স্পেনের লিগও শুরু হয়৷ অবশ্যই দর্শকহীন স্টেডিয়ামে৷ স্থগিত থাকা গত মৌসুমের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগও শেষ হয়েছে৷ এখন চলছে ২০২০-২১ মৌসুমের খেলা৷ ছবিতে এক সমর্থককে টিভিতে ২১ জুন অনুষ্ঠিত লিভারপুল-এভারটনের ম্যাচটি দেখতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Childs
আছে ব্যতিক্রমও
২৪ সেপ্টেম্বর হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত উয়েফা সুপার কাপ ফাইনালের সময় স্টেডিয়ামে ১৫ হাজারের বেশি দর্শক উপস্থিত ছিলেন৷ ইউরোপা লিগের সেরা সেভিয়াকে ২-১ গোলে হারায় চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা বায়ার্ন মিউনিখ৷ করোনার পর এই প্রথম দর্শকদের সামনে ফুটবল খেলেছে বায়ার্ন ও সেভিয়া৷ এছাড়া বুন্ডেসলিগার কিছু ম্যাচে অল্প সংখ্যক দর্শককে স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকতে দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Bernadett Szabo/AP Images/picture-alliance
বাংলাদেশের ফুটবল
ফুটবলপাড়া এখন ব্যস্ত নির্বাচন নিয়ে৷ করোনায় গিলে খেয়েছে পেশাদার ফুটবল লিগের একটি মৌসুম৷ বাতিল হয়েছে আন্তর্জাতিক ম্যাচও৷ আগামী ডিসেম্বর থেকে ফেডারেশন কাপ দিয়ে ঘরোয়া ফুটবল চালু হবার কথা৷
ছবি: Mir Farid
টেনিস
সম্প্রতি হয়ে গেল ইউএস ওপেন৷ তবে তাতে অংশ নেননি পুরুষ ও মহিলা এককের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রাফায়েল নাদাল ও বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু৷ করোনা মহামারির স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে প্রথমজন এবং পরেরজন সে কারণেই যথাযথ প্রস্তুতি না নিতে পারায় অংশ নেননি৷ ডমিনিক থিয়েম ও নাওমি ওসাকা হয়েছেন ইউএস ওপেনের নতুন রাজা-রানি৷
ছবি: Getty Images/M. Stockman
18 ছবি1 | 18
ডয়চে বান-এর অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে টিকেট কিনলাম৷ বুক করলাম ফ্যামিলি অ্যান্ড চিলড্রেন কম্পার্টমেন্ট, অর্থাৎ, যেখানে আমরা ছাড়া আর কেউ যাতে না থাকে৷
এয়ারবিএনবিতে একটি অ্যাপার্টমেন্ট বুক করা হলো গ্রামের প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র ৯০০ মিটার দূরে৷ যাওয়ার আগে বেশ কিছু জীবানুনাশক স্প্রে, দস্তানা, লোশন, টিস্যু পেপার কেনা হলো৷ যাত্রার জন্য বেছে নিলাম সোম থেকে শুক্রবার৷ কারণ, সপ্তাহান্তে ভিড় বেশি হতে পারে, সেটা এড়াতে৷
যথা সময়ে ট্রেন স্টেশন পোঁছে মাস্ক পরে নিলাম৷ কারণ, স্টেশনের ভেতরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক৷ ট্রেনে ওঠার সময়ও মাস্ক পরেই থাকতে হবে৷ নির্দিষ্ট কম্পার্টমেন্টে উঠে দেখলাম ছোট্ট ছিমছাম একটা ঘরের মতো৷ বাচ্চাদের জন্য ছবি আঁকা আছে, পাশেই টয়লেট, যেখানে ন্যাপকিন বদলানোর ব্যবস্থা আছে৷ উঠেই আমরা জীবানুনাশক স্প্রে দিয়ে পুরো কক্ষের সব কিছু মুছে ফেললাম৷ যেহেতু ওই রুমে আর কেউ নেই, তাই মাস্ক পরে থাকার শাস্তি থেকে মুক্তি পেলাম৷ তবে রুমের বাইরে গেলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামুলক৷ একটা বগি পরেই ট্রেনের রেস্তোরাঁ, সেখানে যেতে যেতে দেখলাম অন্য বগিতে প্রত্যেক যাত্রী মাস্ক পরে রয়েছেন, তবে একই পরিবার বা দলের না হলে আসন ছেড়ে রেখে বসেছেন৷ মাস্ক পরাটা যে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তা দেখেই বোঝা যায়৷ ট্রেনের প্রতিটা স্টপে বার বার ঘোষণা হচ্ছিল মাস্ক পরে থাকার জন্য এবং সর স্বাস্থ্যবিধি যথাসম্ভব মানার জন্য৷ রেস্তোরাঁতেও এসব নির্দেশনা লেখা ছিল৷
একটানা ৭ ঘণ্টার যাত্রা শেষে আমরা জালসবুর্গ স্টেশনে পৌঁছালাম৷ সেখানে দেখলাম সবাই আরো বেশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে৷ অর্থাৎ, বন শহরে আমরা রাস্তাঘাটে মাস্ক পরি না৷ দোকানপাটে গেলে পরি৷ এখানে রাস্তাঘাটেও সবাই মাস্ক পরে আছেন৷ আর চেষ্টা করছেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার৷
অস্ট্রিয়ার যা কিছু মুগ্ধ করে
ভিয়েনা, ওয়াইন এবং অসাধারণ সব দৃশ্য৷ একশ’ বছর আগে নিজেদের প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল অস্ট্রিয়া৷ চলুন দেশটি সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জেনে নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Ludwig
অসাধারণ প্রকৃতির দেশ অস্ট্রিয়া
বার্গেনল্যান্ড থেকে লেক কন্সটান্সের মধ্যকার দেশটির নয়টি রাজ্যে ৮ দশমিক আট মিলিয়ন মানুষের বসবাস৷ দেশটির অধিকাংশ অংশই আসলে পাহাড়ি অঞ্চল৷ ছবিটি অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের ফোরার্লব্যার্গ রাজ্য থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Ludwig
রাজধানী ভিয়েনা
ভিয়েনায় শ্যোনবর্ন প্যালেসের মতো অস্ট্রিয়ান এম্পায়ারের আর কোনো বড় প্রতীক নেই৷ ১৯১৮ সাল অবধি এটা ছিল হাবর্সবর্গ শাসকদের গ্রীষ্মকালীন আবাস৷ পরবর্তীতে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে ইউনেস্কো৷ বর্তমানে বছরে প্রায় ৪০ লাখ পর্যটক এই স্থাপনাটি দেখতে আসেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Wrba
ওয়াইনপ্রেমীরা গ্রীষ্মে যেখানে ছুটে যান
গ্রীষ্মে ভিয়েনার বাসিন্দারা শহরের বাইরে দেশটির সবুজ গ্রামাঞ্চলে ছুটে যান৷ লোয়ার অস্ট্রিয়ার ভাইনফিয়ার্টেল ওয়াইন উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত৷ অনেকেই এই অঞ্চলে যান সরাসরি ওয়াইন উৎপাদকদের কাছ থেকে ওয়াইন পানের আশায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Giovannini
‘লেক অব লাভ’
অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে নিম্নাঞ্চল হচ্ছে বার্গেনল্যান্ড৷ সেখানে লেক নয়েসিডলের অবস্থান, যেখানে দুর্লভ সব পাখির দেখা মেলে৷ এলাকাটি বিশ্বের সবচেয়ে শান্ত ইলেক্ট্রো-পপ উৎসব ‘লেক অফ লাভ’- এর জন্যও বিখ্যাত৷ সেই উৎসবের সংগীত সবাই একত্রে শুনলেও কানে পৌঁছায় আলাদা আলাদা হেডফোনে৷ ফলে শান্ত না হয়ে উপায় কী বলুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Haasmann
যেখানে সবাই শুধু ছবি তোলে
একসময় লবনের জন্য বিখ্যাত আপার অস্ট্রিয়ার হালস্টাট এখন অধিকাংশ সময় পর্যটকে পূর্ণ থাকে৷ বিশেষ করে চীনা নববিবাহিতরা কোনো এক বিশেষ কারণে এই এলাকা ভ্রমণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Siepmann
মোসার্ট আর সংগীতের শহর সালৎসবুর্গ
অস্ট্রিয়া ভ্রমণে গেলে সালৎসবুর্গকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই৷ সালৎসবুর্গের বাৎসরিক উৎসবে অংশ নেন অনেকে৷ তবে কেউ যদি সেই উৎসবে অংশ নেয়ার সুযোগ না পান, তবুও সালৎসবুর্গ ভ্রমণ মন্দ হবার কারণ নেই৷ এই শহরেই জন্মেছেন প্রখ্যাত সংগীত স্রষ্টা ভল্ফগাং আমাডেয়ুস মোৎসার্ট৷
ছবি: Tourismus Salzburg/G.Breitegger
আর হ্যাঁ, হাইকিংয়ের স্বর্গ
হাইকিংয় প্রেমীদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য অস্ট্রিয়া৷ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রীষ্মে হাইকিংয়ের সময় স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ঐতিহ্যগত বিষয়াদি জানার বিষয় আছে৷ তবে ছবি তুলতে ভালোবাসেন যারা, তারা দয়া করে ক্যামেরার জন্য বাড়তি ব্যাটারি নিতে ভুলবেন না৷ সেখানকার ল্যান্ডস্কেপ এত সুন্দর যে ছবি তুলে শেষ করা দায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jansen
7 ছবি1 | 7
জালসবুর্গ থেকে হালস্টাট যেতে তিনটি পথ আছে, একটি হলো বাস, যা দুইবার পরিবর্তন করতে হবে, অন্যটি ট্রেন সেটি একবার পরিবর্তনের পর ফেরি করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে আর তৃতীয়টি গাড়ি৷ আমরা আগে থেকে অনলাইনে চালকসহ একটি গাড়ি ভাড়া করেছিলাম৷ স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন চেকপ্রজাতন্ত্রের চালক মাইকেল৷ চেক প্রজাতন্ত্রের বলে এই সার্ভিসে ট্যাক্সির তুলনায় ভাড়া কম৷ গাড়ির সামনের ও পেছনের আসনের মাঝে প্লেক্সিগ্লাসের আবরণ, চালক মাস্ক পরলেন, আমরাও পরে নিলাম৷ এরপর টানা দেড় ঘণ্টার যাত্রা৷ টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে হঠাৎ হঠাৎ উঁকি দিচ্ছিলো আল্পসের চূড়া৷
অপূর্ব ছোট ছোট সবুজে ঘেরা গ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম হালস্টাটে৷ তখন সেখানেও বৃষ্টি৷ সন্ধ্যা নামার অপেক্ষা৷ এআরবিএনবির মাধ্যমে যে অ্যাপার্টমেন্টটি বুক করা হয়েছিল ড্রাইভার আমাদের ঠিক সেখানে পৌঁছে দিলো৷ হোস্ট ভদ্রমহিলা ওই বাড়িতেই থাকেন উপরতলায়৷ আর আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে নীচতলায়৷ উনি উপরতলা থেকে নেমে এসে আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন মুখে মাস্ক ছাড়াই, তবে হাত মেলালেন না সঙ্গত কারণে৷ তিনি আমাদের চাবিসহ সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে উপরে চলে গেলেন, বললেন কোনো দরকারে উপরে ডাক দিলেই হবে৷ আমরা ড্রাইভারকে বিদায় জানিয়ে ঘরে ঢুকলাম৷ জানালা খুলতেই দেখা দিলো বিশাল পাহাড় আর পাহাড়ের গায়ে গায়ে মেঘ জড়িয়ে আছে, কী অপূর্ব সেই দৃশ্য৷ বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ছোট্ট পাহাড়ি নদী৷ তার কলকল শব্দ এখনো যেন কানে বাজে৷
আমরা যাত্রার সব পোশাক ছেড়ে সেগুলো আলাদা একটা ব্যাগে রেখে প্রথমে বাচ্চাকে গরম পানিতে গা মুছিয়ে একে একে গোসল করে নিলাম৷ তারপর খেয়ে দেয়ে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিলাম বিছানায়, এরপর আর কিছু মনে নেই৷
পরদিন সকালে উঠে জানালা দিয়ে আবারো পাহাড়ের দেখা মিলল৷ এবার তার অন্য রূপ৷ আমাদের সকালের খাবার ব্যবস্থা ছিল ওই অ্যাপার্টমেন্টেই৷ তাই নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লাম গ্রাম দেখতে৷ প্রথমে একটি ম্যাপ নিয়ে বুঝে নিলাম কোথায় কী আছে৷ তারপর হাঁটা শুরু করলাম৷ সময় তখন সকাল সাড়ে ৯টা৷ খুব সুন্দর রোদ উঠেছে, তেমন ঠান্ডা নেই৷ অথচ রাস্তাঘাটে মানুষজন নেই বললেই চলে৷
এই গ্রামটি বিখ্যাত সাত হাজার বছরের পুরোনো লবণ খনির জন্য৷ সেই খনিতে উঠতে হয় কেবল কারে করে, যেটি আমাদের এয়ারবিএনবি’র একেবারেই পাশে৷ যেহেতু আমাদের পাঁচ দিনের ঘোরার পরিকল্পনা৷ তাই লবণ খনিটি দেখার জন্য শেষের দিনটি ঠিক করলাম৷ আর আজ এলোমেলোভাবে ঘোরা হবে ঠিক হলো৷ হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম একটা পার্কে যেখানে শিশুদের খেলার জায়গা৷ আমাদের বাচ্চা সেখানে গিয়ে আনন্দে আত্মহারা৷ পাশেই হালস্টাট লেক৷ পুরো গ্রামটি সেখান থেকে দেখা যায়৷ সেখানে গিয়ে দেখি, একটি মাত্র শিশু তার দাদা-দাদির সাথে খেলতে এসেছে৷ শিশুটি যে রাইডেই চড়ছে তার দাদা স্যানিটাইজার দিয়ে তা আগে মুছে দিচ্ছেন৷ আমরাও তাই করলাম৷
ইউরোপের সবচেয়ে রোমহর্ষক স্কাইওয়াক
আকাশছোঁয়া উচ্চতায় কাচের বারান্দার ওপর দাঁড়িয়ে নীচের দিকে তাকানো... কিংবা ঝোলানো ব্রিজের দোল খাওয়া... এ সবই হল ইউরোপের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ স্কাইওয়াকগুলোর অঙ্গ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-J. Hildenbrand
‘পাঁচ আঙুল’
অস্ট্রিয়ার আল্পস অঞ্চলের হোহেন কিপেনস্টাইনে যে স্কাইওয়াকটি আছে, তার নাম ‘ফাইভ ফিংগার্স’৷ মাটি থেকে চারশো মিটার উচ্চতায় গড়া এই প্ল্যাটফর্মটা থেকে চারদিকের পাহাড়ের দৃশ্য দেখা যায় - যদি সাহস থাকে! ছবি তো তুলতেই হবে, তাই বাঁ দিকের ‘আঙুলটিতে’ একটি ছবির ফ্রেমও বসানো আছে৷
ছবি: Dachstein im Salzkammergut | Leo Himsl
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ প্যানোরামা
অস্ট্রিয়ার সালৎসকামারগুট এলাকায় দেখতে পাওয়া যাবে হালস্টাট-ডাখস্টাইন অঞ্চলের এই প্যানোরামা৷ ‘হালস্টেটার জে’ বা হালস্টাট হ্রদের ৩৬০ মিটার ওপরে যেন বাতাসে ভেসে রয়েছে এই প্ল্যাটফর্মটি, যা দেখলে একটি জাহাজের সামনের বাঁকানো অংশটার কথা মনে পড়ে৷ ইউনেস্কো হালস্টাট-ডাখস্টাইন অঞ্চলকে বিশ্ব উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে৷
ছবি: Salzwelten Hallstatt/Torsten Kraft
ইউরোপের সর্বোচ্চ ঝুলন্ত সেতু
সুইজারল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক আল্পস পর্বতমালায় ঢাকা৷ ‘টিটলিস ক্লিফ ওয়াক’ নামের ঝুলন্ত সেতুটি ৩,০৪১ মিটার উচ্চতায় টিটলিস হিমবাহ পার হয়েছে৷ সেতুর দৈর্ঘ্য একশো মিটারের বেশি - কিন্তু প্রস্থে মাত্র এক মিটার৷ কাজেই অন্য দিক থেকে কেউ এলে অসুবিধে হয় বৈকি!
ছবি: Imago/imagebroker
হ্যোলেনটাল উপত্যকার উপরে ‘এক্স’
জার্মানির আল্পস পর্বতাঞ্চলে ‘আল্পস-পিক্স’ নাম দিয়ে ১৩ মিটার লম্বা একটি ইস্পাতের কাঠামো বানানো হয়েছে, যা জমির অনেক ওপরে বাতাসে ভেসে রয়েছে৷ এক্স-এর বাহুগুলির শেষে কাচ দেওয়া আছে, যাতে এক হাজার মিটার নীচে পড়ে থাকা মাঠঘাট-জনপদ ভরা উপত্যকার একটা সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Gebert
কাচের বাক্স থেকে
ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের লা গোমেরায় একটি কাচের স্কাইওয়াক আছে, যা পাহাড়ের গা থেকে সাত মিটার বেরিয়ে৷ ‘ওয়াক’-টির মালিক হল মিরাদর দে আব্রান্তে রেস্তরাঁ৷ কাচের বাক্স থেকে নীচের দিকে তাকালে চোখ চলে যাবে সরাসরি ৬০০ মিটার৷ অথচ সামনে দিগন্ত জুড়ে নীল অতলান্তিক৷ নীচের উপত্যকায় আগুলো গ্রাম৷
ছবি: Imago/imagebroker
ফিয়র্ড-এর অনেক ওপরে
নরওয়ে অঞ্চলে হিমবাহ সরে পাথর ক্ষয় হয়ে যে ধরনের খাল বা নদীপথ সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে বলে ফিয়র্ড৷ আউরলান্ড এলাকায় মাটি থেকে ৩০ মিটার উচ্চতায় একটি কাঠের ব়্যাম্প তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে ৬৫০ মিটার নীচে ফিয়র্ডের দৃশ্য চেখে পড়ে৷ এই ‘স্টেগাস্টাইন’-এর শেষে একটি কাচের পাত বসানো আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.P.Tschauner
এক অদ্ভুত কাঠামো
চেক প্রজাতন্ত্রের ডলনি মোরাভায় ২০১৫ সালে এই ঘোরানো স্কাইওয়াকটি তৈরি করা হয়৷ একশো মিটার লম্বা স্লিপ-এর সঙ্গে জাল, তা’ও আবার ৫৫ মিটার উচ্চতায়৷ জালের মধ্যে শুয়ে পড়লে জালের ফাঁক দিয়ে একেবারে নীচ অবধি দেখা যায়৷
ছবি: Lenka Strculová
পাহাড় দেখার ‘দুরবিন’
ইটালির মেরান-এর বটানিকাল গার্ডেনে একটি সুবিশাল ‘দুরবিন’ আছে, যা থেকে আল্পস পর্বতমালার দৃশ্য উপভোগ করা যায়৷ তবে মনে রাখবেন, ‘দুরবিনের’ শেষ ধাপ অবধি পৌঁছনোর সিঁড়িগুলোর ফাঁক দিয়ে কিন্তু নীচের গহ্বর নজরে পড়বে৷ কাজেই উঁচুতে যাদের ভয়, এ তাদের জন্য নয়৷
ছবি: Die Gärten von Schloss Trauttmansdorff
বাঁধের ওপর থেকে
অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে উঁচু বাঁধ, ২০০ মিটার উঁচু ক্যোলনব্রাইনস্পেরে বাঁধের গায়ে ঝোলানো স্কাইওয়াকটি যেন কোনো জলপ্রপাতের কথা মনে করিয়ে দেয়৷
ছবি: Imago/imagebroker
ঝুলন্ত সিঁড়ি বেয়ে তীর থেকে দ্বীপে
উত্তর আয়ারল্যান্ডের আনট্রিম কাউন্টিতে ‘ক্যারিক-আ-রিড’ ঝুলন্ত ব্রিজটি মূল ভূখণ্ড থেকে একটি পাথুরে দ্বীপ অবধি গিয়েছে৷ সেতুটি ঝুলে রয়েছে সাগরের পানির ৩০ মিটার ওপরে৷ এককালে জেলেরা এই পথে দ্বীপে যেতো স্যালমন মাছ ধরতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Baumgart
জেমস বন্ড যেখানে গিয়েছিলেন
‘অন হার ম্যাজেস্টিস সিক্রেট সার্ভিস’ ছবিটির শুটিং হয়েছিল সুইজারল্যান্ডের আল্পস অঞ্চলে৷ অর্থাৎ ১৯৬৮-৬৯ সালে এজেন্ট জিরো-জিরো-সেভেন ওরফে জর্জ ল্যাজেনবি এখানেই শুটিং করেছিলেন৷ শিল্টহর্ন স্কাইওয়াকের মজাটাই আসলে সেখানে - নাকি আল্পস পর্বতমালার অপরূপ সৌন্দর্য্যে?
ছবি: Schilthornbahn AG/Foto: Markus Zimmermann
11 ছবি1 | 11
এরপর রওনা দিলাম গ্রামের কেন্দ্রে, যেটিকে বলে মার্কট, অর্থাৎ বাজারের কেন্দ্র৷ উদ্দেশ্য দুপুরের খাওয়া৷ দেখলাম, সব রেস্তোরাঁয় নির্দেশনা দেয়া- আগে বাইরে দূরত্ব মেনে দাঁড়াতে হবে৷ এরপর ওয়েটার এসে একজন করে নিয়ে যাবে৷ কারণ, যে অতিথি খেয়ে গেছেন, সেই টেবিল তারা জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার করে তারপর অতিথিদের বসতে দিচ্ছিলেন৷ রেস্তোরাঁতেও যথারীতি খাওয়ার আগ পর্যন্ত মাস্ক পরে থাকতে হলো, ওয়েটাররা সবাই মাস্ক পরে ছিলেন৷ লেকের মাছ দিয়ে তৃপ্তির সাথে খাওয়া শেষ করলাম৷
এরপর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সেখানকার বিশেষ ক্রিমরোল খাওয়ার জন্য লম্বা লাইন ধরতে হলো৷ ক্রিমরোল খেয়ে দিনের শেষ ফেরিতে চেপে বসলাম, উদ্দেশ্য লেক ভ্রমণ৷ ছোট্ট জাহাজের টিকেট কাউন্টারে লেখা ছিল, অল্প জায়গা বলে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা না গেলে পুরোটা সময় সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে হবে৷ কিন্তু দিনের শেষ ফেরি বলে লোকজন খুব একটা ছিল না৷ তাই মাস্কবিহীন আমরা আরামেই একঘণ্টা নৌবিহার করলাম৷
এরপর রাতের জন্য খাবার বেঁধে নিয়ে চলে গেলাম অ্যাপার্টমেন্টে৷ এই গ্রামটি এত ছোট যে, কেউ যদি পাহাড়ে না ঘুরে কেবল গ্রামটা হেঁটে ঘুরে দেখতে চায় তাহলে একদিনই যথেষ্ট৷ এ কারণে এখানে অতিথিরা রাত কাটান কম৷ অন্য শহর থেকে এখানে এসে ঘুরে আবার ফিরে যান৷ এ কারণে সন্ধ্যা ৬টার পর দোকানপাট, এমনকি রেস্তোরাঁও বন্ধ হয়ে যায়৷
তবে করোনার কারণে মানুষজন একেবারেই কম৷ এখানকার লোকজন বলছিলেন, করোনার আগে প্রতিদিন মানুষের ভিড়ে হাঁটাই কষ্টকর ছিল, গাড়ি পার্ক করার জায়গা পাওয়া ছিল দুষ্কর, বেশিরভাগই চীনা পর্যটক৷ অথচ এবার কেবল পূর্ব ইউরোপের মানুষজনই বেশি দেখলাম এখানে৷ হালস্টাটের কাছেই চেকপ্রজাতন্ত্রের সীমান্ত৷
পরদিন পুরোদিন বৃষ্টি হলো৷ বিকেলের দিকে বৃষ্টি ধরে এলে হাঁটতে হাঁটতে শহরের কেন্দ্রে গিয়ে দেখি পর্যটক না আসায় দোকানপাট আগেই বন্ধ করে দিয়েছে৷
তৃতীয় দিন সকালে উঠেই ভালো আবহাওয়া দেখে ঠিক হলো লবণ খনি দেখতে যাবো৷ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে কেবল কার চালু হয়, আমরা পৌনে দশটায় পৌঁছে দেখি আর মাত্র দুইজন আছে সেখানে৷ একটা কেবল কারে দুটো ভাগ৷ একটাতে আমরা তিনজন এবং অন্যপাশে আরো দুইজন মাস্ক পরে রওনা দিলাম৷
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নেয়া হালস্টাটের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ এই লবণ খনি, যেটি স্থলভাগ থেকে ৩৬০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত৷ উপর থেকে ৬০ বর্গ কিলোমিটারের ছোট হালস্টাটকে আরো অপূর্ব লাগছিল৷ সেখানে রেস্তোরাঁতেও সবাই সামাজিক দূরত্ব মেনে বসছিলেন৷ তবে স্কাইওয়াকের যে জায়গাটি থেকে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় ছবি তোলার জন্য অনেকেই ভুলে গিয়েছিলেন মাস্ক ও সামাজিক দূরত্বের কথা৷ উপরের এই স্বর্গীয় সৌন্দর্য আসলে হয়ত সবাইকে ভুলিয়ে দিয়েছিল করোনার কথা৷
এদিন বিকেলে ষোড়শ শতাব্দীর কাঠের বাড়িগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয়েছিল আমরাও যেন সেই সময়ে আটকে গেছি৷ রাস্তায় শুধু আমরাই৷ সামনে স্থানীয় এক বৃদ্ধা হেসে আমাদের বাচ্চাকে একগোছা ফুল ধরিয়ে দিলো৷ মনে হলো যেন বললো আবারও পৃথিবীটা স্বাভাবিক হবে, ভয় পেয়ো না৷