চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এসেন শহরে তাঁর সিডিইউ দলের সম্মেলনে সরকারের উদ্বাস্তু নীতিতে আরো কড়াকড়ির আভাস দিয়েছেন৷ এর পাশাপাশি নিকাব নিষিদ্ধ করারও ডাক দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
ম্যার্কেল উপস্থিত ১,০০১ জন প্রতিনিধিকে বলেন, গত বছর বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু যেভাবে সীমান্ত পার হয়ে জার্মানিতে প্রবেশ করেন, তা আর ঘটতে দেওয়া চলে না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘২০১৫ সালের গ্রীষ্মের মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেওয়া উচিত নয়৷ সেটাই আমাদের ঘোষিত রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল ও থাকবে৷'' কিন্তু সবচেয়ে বেশি করতালি পড়ে ম্যার্কেল যখন বলেন, ‘‘যেখানে আইনগতভাবে সম্ভব, সেখানেই পুরোপুরি মুখ ঢাকা (অর্থাৎ নিকাব) নিষিদ্ধ করতে হবে৷''
ম্যার্কেল বলেছেন, ‘‘আমরা কোনো সমান্তরাল (অর্থাৎ বিকল্প) সমাজ (গড়ে উঠতে দিতে) চাই না এবং যেখানে এ ধরনের সমাজ আছে, আমাদের তার মোকাবিলা করতে হবে৷ পারিবারিক মান-সম্মানের নীতিমালা, সম্প্রদায় বা পরিবারগত রীতিনীতি এবং শরিয়ার চেয়ে আমাদের আইন অগ্রাধিকার পাবে৷ সেটা খুব স্পষ্টভাবে বলে দিতে হবে৷ এর অর্থ এই যে, মানুষ ও মানুষের মধ্যে আদানপ্রদানে আমাদের মুখ দেখাতে হয়, যা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এ কারণে নিকাব যথাযথ নয় এবং যেখানে আইনগতভাবে সম্ভব, সেখানেই তা নিষিদ্ধ করা উচিত৷ ওটা আমাদের (সংস্কৃতির) অংশ নয়৷''
ম্যার্কেলের এই বক্তব্য নিয়ে ব্রিটিশ ইউকিপ দলের সাবেক প্রধান নাইজেল ফারাজ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘বড় দেরি হয়ে গেছে৷ ঘোড়া পালিয়েছে৷''
জার্মানিতে প্রতিক্রিয়া তীব্র ও প্রত্যাশিত৷ অভিবাসনবিরোধী এএফডি দলের বক্তব্য হলো, ম্যার্কেল তাদের নীতিই আত্মসাৎ করেছেন৷ আর বামদলের বক্তব্য, যেসব দেশে বোরখা চালু আছে, সেসব দেশে অস্ত্র রপ্তানি করে স্বদেশে নিকাব নিষিদ্ধ করার ডাক দেওয়াটা ভণ্ডামি৷
২০১৫ সালে প্রায় দশ লক্ষ উদ্বাস্তু জার্মানিতে আসে৷ তারপর থেকে পাঁচটি প্রাদেশিক নির্বাচনে সিডিইউ দলকে হারতে হয়েছে প্রধানত ম্যার্কেলের উদার উদ্বাস্তু নীতির জন্য৷ সেই কারণে ম্যার্কেলের এই ‘দিক পরিবর্তন' তাঁর সিডিইউ দলকেও অন্তত কিছুটা নতুন প্রেরণা দিয়েছে, নয়তো ম্যার্কেল এসেনের সভায় ১১ মিনিটের স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেতেন না৷
অপরদিকে ম্যার্কেল চ্যান্সেলর হিসেবে চতুর্থ কর্মকালের জন্য দলের সমর্থন পেলেও প্রতিনিধিদের ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ তাঁর পক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ ২০১৪ সালে দলে তাঁর সমর্থন ছিল ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ৷
এসি/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷
মুসলিম নারীরা যেসব উপায়ে ‘পর্দা’ করে
হিজাব, বোরকা বা নিকাবের মতো নারীদের জন্য বিভিন্ন ইসলামি পোশাক নিয়ে ইউরোপে এখন তুমুল বিতর্ক চলছে৷ কোনো কোনো দেশ এ সব পোশাক নিষিদ্ধের পক্ষে৷ মুসলমান নারীদের শরীর ঢাকার পোশাকগুলি কী কী – চলুন জেনে নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হিজাব
দেশ এবং সংস্কৃতিভেদে অনেক মুসলমান নারী হিজাব পরিধান করেন৷ মূলত মাথা, চুল এবং গলা এবং ঘাড়ের খোলা অংশ ঢাকা হয় এই পোশাক দিয়ে৷ বিভিন্ন ডিজাইনের এবং রঙের হিজাব পাওয়া যায় যেগুলো পরলে চেহারা পুরোটাই দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Seyllou
নিকাব
নিকাব পরলে নারীর পুরো শরীর ঢেকে যায়, শুধু চোখ দু’টো খোলা থাকে৷ সাধারণত পুরোপুরি রক্ষণশীল মুসলমান নারীরা নিকাব পরেন৷ নিকাব মূলত কালো রঙের হলেও অন্যান্য রঙের নিকাবও ইদানীং দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
দোপাট্টা
দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় দোপাট্টা বা ওড়না৷ নিকাব বা বোরকার মতো না হলেও এই পোশাকেও নারীর শরীর অনেকটা ঢাকা থাকে৷ তবে চুলের কিছুটা, চেহারা এবং গলা দেখা যায়৷ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য ধর্মের মেয়েরাও দোপাট্টা পরেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Jaiswal
আল-আমিরা
মূলত দুই টুকরো কাপড় দিয়ে আল-আমিরা তৈরি করা হয়৷ একটি টুকরো দিয়ে চুল পুরোপুরি ঢেকে দেয়া হয় আর অন্য টুকরোটা হিজাবের মতো জড়িয়ে দেয়া হয়৷ কম বয়সি মুসলিম নারীদের মধ্যে এই আল-আমিরা বেশ জনপ্রিয়৷
শায়লা
শায়লা হচ্ছে লম্বা, চারকোনা এক ধরনের স্কার্ফ, যা গল্ফ অঞ্চলের মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়৷ এটি সাধারণত কালো রঙের হয় এবং কাঁধের কাছে পিন দিয়ে আটকাতে হয় এটিকে৷ তবে হিজাবের মতো সবকিছু ঢেকে রাখে না শায়লা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A.Rochman
এশার্প
অনেকটা হিজাবের মতো হলেই এসার্প তৈরি হয় সিল্ক দিয়ে এবং বেশ উজ্জ্বল রঙের হয়৷ মূলত তুরস্কের মুসলিম নারীরা এটা পরিধান করেন৷ এটি বিভিন্ন রং এবং ডিজাইনে পাওয়া যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
কেরুডুং আর টুডুং
ইন্দোনেশিয়ার আধুনিক মেয়েরা আজকাল যে হিজাব ব্যবহার করছে, তার নাম কেরুডুং৷ আর প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ায় নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় টুডুং৷ এই দু’টি অনেকটা চাদরের মতো হলেও, একটি অংশে সুন্দর প্যার্টার্ন থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে বিভিন্ন রঙের শেডও৷ হিজাবের মতো টুডুং বা কেরুডুং-ও চুল, গলা এবং কাঁধ পুরোপুরি ঢেকে ফেলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Khan
চাদর
ইরানের মেয়েদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় চাদর৷ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সাধারণত সে দেশের নারীরা চাদর পরে নেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Mehri
বোরকা
মুসলিম নারীরা সারা চেহারা এবং সারা শরীর পুরোপুরি ঢেকে ফেলে বোরকা পরিধান করেন৷ ক্ষেত্রবিশেষে বোরকার চোখের অংশে জাল দেয়া থাকে, যাতে তারা দেখতে পারেন৷ কালো ছাড়াও বিভিন্ন রংঙের বোরকা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Arshad Arbab
জিলবুবস
সারা শরীর ঢেকে রেখেও নারীর স্তন এবং পশ্চাতদেশের আকার ফুটিয়ে তোলা যায় এই পোশাকে৷ এ জন্যই একে জিলবুবস বলা হয়৷ ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পোশাকের ব্যবহার দেখা যায়৷ তবে এই পোশাক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ দ্রষ্টব্য: মুসলিম নারীদের পোশাক সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷