এমএইচ৩৭০ উড়ালের ‘নিখোঁজ’ বিমান সম্পর্কিত স্যাটেলাইট তথ্য মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে যে, বিমানটি ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে বিধ্বস্ত হয়েছে৷ যদিও এখনও কোনো ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি৷
বিজ্ঞাপন
মালয়েশিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহন দপ্তর ডিসিএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্যাটেলাইট তথ্য প্রকাশের জন্য ব্রিটিশ স্যাটেলাইট অপারেটর ‘ইনমারস্যাট’-এর সঙ্গে কাজ করেছে তারা৷ প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে কিছু ব্যাখ্যা যোগ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সেগুলো বুঝতে পারে৷
তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘অত্যন্ত জটিল’ এ সব প্রাথমিক তথ্য পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সময় লাগবে৷
মূলত বিমানটিতে থাকা ২৩৯ আরোহী এবং কেবিন ক্রুদের পরিবারের দাবির ভিত্তিতে এ সব তথ্য প্রকাশ করলো মালয়েশিয়া৷ ১১ সপ্তাহ আগে বিমানটি কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং-এর পথে যাত্রা করেছিল৷ কিন্তু যাত্রার মাঝপথেই রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যায় সেটি৷ আর এখন অবধি বিমানটির কোনো ধ্বংসাবশেষ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
বিমানটির সম্ভাব্য গতিপথ খুঁজে পেতে ‘ডপ্লার এফেক্ট’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে৷ ইনমারস্যাটের রেকর্ড করা তথ্য ডিসিএ, মার্কিন জাতীয় পরিবহন সুরক্ষা বোর্ড, ব্রিটিশ বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত শাখা এবং চীনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখেছে৷
তবে ৮ই মার্চ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিমানটির কিছুই খুঁজে না পাওয়া যাওয়ায় অনেকের সন্দেহ দূর হচ্ছে না৷ বিশেষ করে, বিমানটির আরোহীদের পরিবারের সদস্যরা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বক্তব্যের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না৷ পরিবারের সদস্যদের কথা হচ্ছে, ‘‘ঠিক কিসের ভিত্তিতে ইনমারস্যাটের দেয়া তথ্যকে নির্ভুল এবং বিশ্বাসযোগ্য মনে করে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে ব্যাপক উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়৷’’
সিঙ্গাপুর নির্ভর বিমান চলাচল বিষয়ক প্রকাশনা ‘ফ্লাইগ্লোবাল’-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক গ্রেগ ভালড্রন এ বিষয়ে বলেন, ‘‘ইনমারস্যাটের দেয়া তথ্যে মূলত ভারত মহাসাগরের উপরে অবস্থানকালে বিমানটির সঙ্গে স্যাটেলাইটের যোগাযোগের সময়গুলো উল্লেখ রয়েছে৷ এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে এখন যেখানে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে সেটি সঠিক জায়গা কিনা – সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশের সুযোগ রয়েছে৷’’
উল্লেখ্য, ভারত মহাসাগরে বর্তমানে বিমানটি খোঁজায় নেতৃত্ব দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া৷ এই উদ্ধার কর্মকাণ্ডের পেছনে দু’বছর মেয়াদে ৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি৷
এআই/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)
মালয়েশিয়ার বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমানটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি৷ এটি নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা৷ চলুন জানা যাক বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো৷
ছবি: Reuters
কেন নিখোঁজ?
২০১৪ সালের ৮ই মার্চ নিখোঁজ হওয়া এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি নিয়ে এখন যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পাইলট কি নিকটবর্তী কোনো স্থানে বিমানটি অবতরণ করাতে চয়েছিলেন? বিমানটি কি অন্য একটি বিমানের রাডার সিগন্যালের আড়ালে চলতে চয়েছিল? বা এটি কি সত্যিই মালদ্বীপ পর্যন্ত উড়ে গিয়েছিল?
ছবি: Reuters
দ্রুত অবতরণের চেষ্টা
মালয়েশিয়ার এই বিমানটি নিখোঁজের ১২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত কারণগুলোর একটি হচ্ছে, বিমানটির ককপিটে কোনো কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে এবং সেকারণে পাইলট এটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দ্রুত কাছাকাছি কোনো বিমানক্ষেত্রে অবতরণের চেষ্টা করেছিলেন৷ এ জন্যই হয়ত বিমানটি গতিপথ বদলে ছিল৷
ছবি: Reuters
ছিনতাই চেষ্টা
বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ছিনতাইকে এখনো উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না৷ অনেকে সন্দেহ করছেন, বিমানের পাইলট বা ছিনতাইকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানের কমিউনিকেশন সিস্টেমে ভিন্ন একটি ঠিকানা প্রবেশ করিয়েছিলেন৷ ফলে উড়ালের এক পর্যায়ের বিমানটি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়৷ অনেকের সঙ্গে মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকও এমন ধারণা করছেন৷
ছবি: Reuters
অন্য বিমানের আড়ালে চলার চেষ্টা
এ ধারণাটি অবশ্য হলিউড ছবির জন্য চমৎকার প্লট হতে পারে৷ কেউ কেউ মনে করছেন, এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের বেশ কাছাকাছি থেকে কিছুক্ষণ উড়েছিল, যাতে করে সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের রাডার সিস্টেমের ছায়াতলে অবস্থান করে নিজেদের পরিচয় কিছু সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখা যায়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
উল্কার আঘাতে বাষ্পীভূত
মালয়েশিয়ার এই বিমানটিতে থাকা ২৩৯ জন আরোহীর দুই তৃতীয়াংশই চীনা নাগরিক৷ চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে যে, উল্কার আঘাতে বিমানটি ধ্বংস এবং বাষ্পীভূত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
মালদ্বীপ থেকে দেখা গেছে বিমানটি
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের একটি ছোট্ট দ্বীপের বাসিন্দারা ৮ই মার্চ সকালে খুব নীচু থেকে উড়ে যাওয়া একটি বিমান দেখেছেন বলে দাবি করেছেন৷ বিমানটি সাদা রংয়ের এবং এতে লাল রংয়ের লাইন আঁকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা, যা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সঙ্গে মিলে যায়৷ বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখছেন মালদ্বীপ পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিমান খুঁজছেন কয়েক লাখ মানুষ
এমএইচ৩৭০ উড়ালের এই বিমানটি ইন্টারনেটে খুঁজছেন কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ৷ স্যাটেলাইট সংস্থা ‘ডিজিটালগ্লোব’ জানিয়েছে, বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে তাদের অনলাইন ম্যাপ দেখা হয়েছে ২৫৭ মিলিয়ন বার৷
ছবি: NASA/dpa
আসলে কি কেউ কিছু জানে?
বিমানটি খোঁজার অগ্রগতি সম্পর্কে এক মালয়েশীয় কর্মকর্তা জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই৷’’ বুধবার (১৯.০৩.১৪) পর্যন্ত এটাই বাস্তবতা৷ ফলে বিমান নিখোঁজ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ক্রমশই বাড়ছে, যার কোনটি সত্য কেউ জানে না! (ফাইল ফটো)