ডুবুরিরা রোবোট যান ব্যবহার করে জাভা সাগরের প্রায় ৩০ মিটার পানির তলায় ফ্লাইট কিইজেড ৮৫০১-এর ‘টেইল' বা লেজের একাংশ খুঁজে পেয়েছেন৷ এবার ব্ল্যাক বক্সগুলি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা আশা৷
বিজ্ঞাপন
দশ দিন আগে বিমানটি ১৬২ জন আরোহী নিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়৷ এ যাবৎ ৪০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ বাকি মৃতদেহগুলি গত দশ দিন ধরে পানিতে, কাজেই শনাক্তকরণ আরো শক্ত হয়ে পড়বে৷ যে ১২০টির বেশি মৃতদেহ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, সেগুলি বিমানের ফিউজেলাজ-এ পাওয়া যাবে, বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা৷
ওদিকে জোরালো স্রোত আর ঘোলাজলের ফলে উদ্ধারকার্য পূর্বাপর ব্যাহত হচ্ছে৷ অনুসন্ধানকারীরা বিমানটির ধ্বংসাবশেষের একটি ছবি তুলেছেন বিমানের শেষ সংকেত পাঠানোর স্থান থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে – এ কথা বলেছেন ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় সন্ধান ও ত্রাণ কর্তৃপক্ষের প্রধান হেনরি বামবাং সুলিস্তিও৷ অপরদিকে রয়টার্স প্রমুখ সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, বিমানের পুচ্ছটি আবিষ্কৃত হয়েছে বিমানের সর্বশেষ জ্ঞাত অবস্থান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে৷
বিমান-পুচ্ছ আবিষ্কারের ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ কেননা ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার এই লেজ বা পুচ্ছতেই রাখা থাকে৷ ইতিপূর্বে বিমানের আসন কিংবা আপৎকালীন দরজা ইত্যাদি সাগরে ভাসতে দেখা গিয়েছিল৷ ‘সোনার' দিয়ে সাগরবক্ষে ছ'টি বড় টুকরোর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলি অনুসন্ধান করে দেখা এ যাবৎ সম্ভব হয়নি৷ কাজেই ব্ল্যাক বক্সগুলি থেকে যে তথ্য পাওয়া যাবে, তার গুরুত্ব অসীম৷
দুর্ঘটনার সময় বিমানটি সোজাসুজি এবং ওপর থেকে নীচে কোন গতিতে যাচ্ছিল, তা জানা যাবে এই ব্ল্যাক বক্স থেকে; এছাড়া জানা যাবে ইঞ্জিনের তাপমাত্রা এবং শোনা যাবে বিমানের ক্যাপ্টেন ও তাঁর কো-পাইলটের মধ্যে কথোপকথনের রেকর্ডিং৷ ব্ল্যাক বক্সগুলির ‘বিকন' থেকে যে ‘পিং' সংকেতটি প্রেরিত হয়, তা প্রায় বিশ দিন চালু থাকে – তারপর ব্যাটারিগুলি অচল হয়ে পড়ে৷ সাগরে ঢেউ বেশি থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলি তাদের ‘পিং-লোকেটর' দিয়ে সাগরবক্ষ চষে ফেলতে পারছে না৷ ভারী বৃষ্টি, উঁচু ঢেউ, এ সব সত্ত্বেও জাভা সাগরে একটি নিখোঁজ বিমানের অনুসন্ধান করা অপেক্ষাকৃত সহজ, কেননা জল এখানে গভীর নয়৷
ফিরে দেখা: ২০১৪ সালের কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা
রবিবার সকালে এয়ারএশিয়ার কিউজেড৮৫০১ বিমানটি সিঙ্গাপুরের পথে জাভা সাগরের উপরে রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ ২০১৪ সালে এ রকম আরো কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ সেগুলো নিয়েই এ ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Pleul
রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
এয়ারএশিয়ার এয়ারবাসটি ইন্দোনিশেয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল৷ উড্ডয়নের ৪০ মিনিট পর রবিবার ভোরে বিমানটির সঙ্গে এয়ার ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ আর সেই সময়ের পর থেকে বিমানটির আর কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি৷ উদ্ধার অভিযান চলছে৷ বিমানটিতে ১৬২ জন আরোহী রয়েছেন৷
ছবি: Reuters/E. Nuraheni
জাভা সাগরের উপর থেকে হাওয়া
বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার আগে বৈমানিক বিরূপ আবহাওয়া এড়াতে বিমানটির গতিপথ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ বিমানটির দুর্ঘটনা সবাইকে মার্চের এক স্মৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে৷ সেসময় মালয়েশিয়ার এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ বিমানটি হারিয়ে যায়৷
ছবি: Aditya/AFP/Getty Images
বিপদের ওপর বিপদ
২০১৪ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স তাদের দু’টি বোয়িং ৭৭৭ বিমান হারিয়েছে৷ এর মধ্যে একটি এখনো ‘মিসিং’৷ ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায় সেই বিমানটি৷ রুটিন মাফিক একটি রেডিও ম্যাসেজ দেয়ার পরই বিমানটি রাডার থেকে গায়েব হয়ে যায়৷ এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বিমানটি ভারত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়৷
এমএইচ৩৭০ হারিয়ে যাওয়ার পর, স্যাটেলাইটে ওঠা বিভিন্ন বস্তুর ছবি বিশ্লেষণ করে বিমানটি খোঁজার চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু জানা গেছে, ছবিগুলো আসলে সমুদ্র ভেসে থাকা আবর্জনার, বিমানের ধ্বংসাবশেষ নয়৷ জাহাজ এবং ডুবোজাহাজ ব্যবহার করে বিমানটির ফ্লাইট রেকর্ডারের সিগন্যালও খোঁজা হয়েছে৷ কিন্তু সাফল্য আসেনি৷ তাই বিমানের ২৩৯ জন আরোহীর ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা আজও অজানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিরপরাধ ভুক্তভোগীরা
২০১৪ সালের ১৭ জুলাই মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের অপর একটি বিমান এমএইচ১৭ বিধ্বস্ত হয়৷ ইউক্রেনের উত্তরাংশে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় বলে অভিযোগ৷ আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাচ্ছিল বিমানটি৷
ছবি: Reuters
উদ্ধার তৎপরতায় বাধা
বিমানটি দুর্ঘটনার পর মরদেহ উদ্ধার এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে৷ প্রথমদিকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অবস্থানরত বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল এবং দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞদের দুর্ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেয়৷
ছবি: Reuters
দায়ী কে?
দুর্ঘটনার পর প্রথম পাঁচদিন বিমানটির ফ্লাইট রেকর্ডার নিজেদের কাছে রেখে দেয় বিদ্রোহীরা৷ এরপর সেটি মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ প্রাথমিক ফলাফলে বিমানটি ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে বলে অনেক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ তবে বিমানটি – বিদ্রোহী, রাশিয়া, না ইউক্রেন – কাদের সোনাদের গোলাতে ভূপাতিত হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি৷
ছবি: Reuters
গতিপথ বদলানোর অনুরোধ
২৪ জুলাই স্প্যানিশ কোম্পানি সুইফটএয়ারের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া এয়ার আলজেরিয়ার একটি বিমান মালিতে ১১৬ যাত্রীসহ বিধ্বস্ত হয়৷ বিমানটি বুর্কিনা ফাসো থেকে আলজিয়ার্স যাচ্ছিল৷ এয়ারএশিয়ার মতো সেই বিমানের পাইলটও গতিপথ বদলাতে চেয়েছিলেন৷
ছবি: cc-by-sa/Dura-Ace/curimedia
ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়
বিমানটি দৃশ্যত প্রচণ্ড গতিতে ভুমিতে আছড়ে পড়ে৷ বুর্কিনা ফাসোর সীমান্তের কাছে সেটি ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়৷ সম্ভবত ঝড়ের কারণে সেটি বিধ্বস্ত হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/Sia Kambou
মারাত্মক রণকৌশল
২০১৪ সালের ২৩ জুন জার্মানির সাওয়ারল্যান্ড অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ চলাকালে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়৷ জার্মান এয়ার ফোর্সের একটি ইউরোফাইটারের সঙ্গে লেয়ারজেটের একটি বিমানের ধাক্কা লাগে বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bernd Wüstneck
খুব কাছে
ধারণা করা হচ্ছে লেয়ারজেটটি এয়ারফোর্স প্লেনের খুব কাছ থেকে যাচ্ছিল৷ ফলে ধাক্কা লাগে৷ প্রশিক্ষণের জন্য ভাড়া নেয়া বেসামরিক বিমানটি কোলনের একটি গ্রামে ভূপাতিত হয়৷ সেটির পাইলট এবং কো-পাইলট প্রাণ হারান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BS f. Flugunfalluntersuchung
ক্ষতি সত্ত্বে নিরাপদে অবতরণ
মধ্য আকাশে সংঘর্ষে ইউরোফাইটার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটি নিরাপদে অবতরণে সক্ষম হয়৷ বিমানটি চালাচ্ছিলেন ৩৩ বছর বয়সি একজন বৈমানিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BS f. Flugunfalluntersuchung