মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি রাডারের পর্দা থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর অন্তত চার ঘণ্টা ধরে আকাশে ছিল, বলে মার্কিন তদন্তকারীদের বিশ্বাস৷ অপর একটি ধাঁধা: চীনা স্যাটেলাইটের ছবিতে সাগরে ভাসমান ধ্বংসাবশেষ৷
বিজ্ঞাপন
ইতিমধ্যেই বিমানযাত্রার ইতিহাসে জটিলতম রহস্যগুলির মধ্যে গণ্য হচ্ছে মালয়েশীয় বিমানটির অন্তর্ধান৷ শনিবার যাবৎ খোঁজ চলেছে – আপাতত ১২টি দেশের ৪২টি জাহাজ ও ৩৯টি বিমান সেই খোঁজ চালাচ্ছে হাঙ্গেরির আয়তনের একটি এলাকা জুড়ে৷ চীনের মতো দেশ যে তার স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবির অন্তত অস্পষ্ট সংস্করণটি প্রকাশ করেছে, সেটাই মার্কিন বিশেষজ্ঞদের কাছে পরমাশ্চর্য৷ তবে নিখোঁজ বিমানটির যাত্রীদের অধিকাংশই চীনা নাগরিক; সেটা একটা কারণ হতে পারে৷
এমএইচ৩৭০ নাকি মোট পাঁচ ঘণ্টা ধরে ওড়ে, এমন প্রমাণ আছে৷ বোয়িং ৭৭৭-টির ইঞ্জিন একটি স্ট্যান্ডার্ড মনিটরিং প্রোগ্রামের অঙ্গ হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে ডাটা ডাউনলোড করে ভূপৃষ্ঠে পাঠায়, তা থেকেই নাকি এটা জানা গেছে, বলে জানিয়েছেন মার্কিন তদন্তকারীরা৷ ঐ বাড়তি চার ঘণ্টায় বিমানটি আরো সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার উড়তে পারতো – অর্থাৎ পাকিস্তান কিংবা মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছতে পারতো! বোয়িং বিমানটির রোল্স রয়েস ট্রেন্ট ইঞ্জিনগুলি নাকি উধাও হবার সময় থেকেই মনিটরিং সিগনাল পাঠানো বন্ধ করে, ইতিপূর্বে বলেছে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স৷ রোল্স রয়েস-এর তরফ থেকে এ নিয়ে এ যাবৎ কোনো মন্তব্য করা হয়নি৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
ট্রান্সপন্ডার বনাম স্যাটেলাইট?
ওদিকে চীন সরকারের তরফ থেকে খবর দেওয়া হয়েছে যে, তাদের একটি স্যাটেলাইট রবিবার দক্ষিণ চীন সাগরে তিনটি ‘‘সন্দেহজনক ভাসমান বস্তুর'' ছবি তুলেছে৷ স্থানটি মালয়েশীয় বিমানটি যেখান থেকে উধাও হয়, তার কাছেই৷ কিন্তু ভিয়েতনামী ও মালয়েশীয় বিমান অঞ্চলটি বারংবার ঘুরে দেখেও নিখোঁজ বিমানের কোনো হদিশ পায়নি৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ দপ্তরের কর্মকর্তারা এ সম্ভাবনাও বিচার করে দেখছেন যে, বিমানটির পাইলট অথবা অন্য কোনো আরোহী প্লেনটিকে পরিকল্পিতভাবে অন্য কোনো গন্তব্য অভিমুখে নিয়ে গেছে – এবং দিক পরিবর্তনের আগে বিমানের ট্রান্সপন্ডারগুলি জেনেশুনে বন্ধ করে দিয়েছে, যা-তে রাডারে এ সব গতিবিধি ধরা না পড়ে৷ মার্কিন ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল' পত্রিকা সংশ্লিষ্ট এক তদন্তকারীর সূত্রে এ কথা জানিয়েছে৷
মালয়েশীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে বিমানটি মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলে রাডারে ধরা পড়ার যে খবর দিয়েছিল – এবং পরে অস্বীকার করেছিল – তা অনুযায়ী বিমানটি প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে উড়ে থাই উপসাগরের ঐ অঞ্চলে পৌঁছায়: শুধুমাত্র ৫,০০০ ফিট উচ্চতা হারিয়ে৷ এর অর্থ, বিমানটি তার আদত যাত্রাপথ থেকে হঠাৎ পশ্চিমমুখে মোড় নিয়ে থাই উপসাগর থেকে আন্দামান সাগর অবধি উড়ে যায়৷
মোট কথা, কোনো তত্ত্বই পুরোপুরি বাদ দেওয়া যাচ্ছে না: বিমানটি রাডার থেকে উধাও হওয়ার সময়েই দুর্ঘটনায় পতিত হয়; অথবা অন্তত আন্দামান সাগর অবধি যাত্রা করে; অথবা তার গন্তব্য আরো দূরে, আরো রহস্যময় কোথাও৷