মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানের ব্ল্যাক বক্স সংকেত পাঠানো শীঘ্রই বন্ধ করে দেবে৷ তার খোঁজে যোগ দিচ্ছে বিশেষ জাহাজ ও সাবমেরিন৷ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এখনো হাল ছাড়তে রাজি নন৷
বিজ্ঞাপন
সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে যাচ্ছে, বিশ্বের এতগুলি দেশের ক্ষমতা একসঙ্গে কাজে লাগিয়েও একটি মাত্র বিমানের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে কোনো একটি এলাকায় বিমানটি সমুদ্রে তলিয়ে গেছে – এমন অনুমান করা হলেও এখনো পর্যন্ত তার একটি অংশও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি৷ অনেকে মনে করছেন, অদূর ভবিষ্যতে তার কোনো সম্ভাবনাও নেই৷
কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নয় বাকিরা৷ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বৃহস্পতিবার বলেছেন, এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটের রহস্যের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিশ্রাম নেবেন না৷ বিমানটি না পাওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের আত্মীয় স্বজনরা শেষ আশা ছেড়ে শোক পালন করতে পারছেন না৷ তাঁদের মনের অবস্থা কল্পনা করাও কঠিন, বলেন তিনি৷
মালয়েশিয়ার বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমানটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি৷ এটি নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা৷ চলুন জানা যাক বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো৷
ছবি: Reuters
কেন নিখোঁজ?
২০১৪ সালের ৮ই মার্চ নিখোঁজ হওয়া এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি নিয়ে এখন যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পাইলট কি নিকটবর্তী কোনো স্থানে বিমানটি অবতরণ করাতে চয়েছিলেন? বিমানটি কি অন্য একটি বিমানের রাডার সিগন্যালের আড়ালে চলতে চয়েছিল? বা এটি কি সত্যিই মালদ্বীপ পর্যন্ত উড়ে গিয়েছিল?
ছবি: Reuters
দ্রুত অবতরণের চেষ্টা
মালয়েশিয়ার এই বিমানটি নিখোঁজের ১২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত কারণগুলোর একটি হচ্ছে, বিমানটির ককপিটে কোনো কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে এবং সেকারণে পাইলট এটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দ্রুত কাছাকাছি কোনো বিমানক্ষেত্রে অবতরণের চেষ্টা করেছিলেন৷ এ জন্যই হয়ত বিমানটি গতিপথ বদলে ছিল৷
ছবি: Reuters
ছিনতাই চেষ্টা
বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ছিনতাইকে এখনো উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না৷ অনেকে সন্দেহ করছেন, বিমানের পাইলট বা ছিনতাইকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানের কমিউনিকেশন সিস্টেমে ভিন্ন একটি ঠিকানা প্রবেশ করিয়েছিলেন৷ ফলে উড়ালের এক পর্যায়ের বিমানটি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়৷ অনেকের সঙ্গে মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকও এমন ধারণা করছেন৷
ছবি: Reuters
অন্য বিমানের আড়ালে চলার চেষ্টা
এ ধারণাটি অবশ্য হলিউড ছবির জন্য চমৎকার প্লট হতে পারে৷ কেউ কেউ মনে করছেন, এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের বেশ কাছাকাছি থেকে কিছুক্ষণ উড়েছিল, যাতে করে সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের রাডার সিস্টেমের ছায়াতলে অবস্থান করে নিজেদের পরিচয় কিছু সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখা যায়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
উল্কার আঘাতে বাষ্পীভূত
মালয়েশিয়ার এই বিমানটিতে থাকা ২৩৯ জন আরোহীর দুই তৃতীয়াংশই চীনা নাগরিক৷ চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে যে, উল্কার আঘাতে বিমানটি ধ্বংস এবং বাষ্পীভূত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
মালদ্বীপ থেকে দেখা গেছে বিমানটি
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের একটি ছোট্ট দ্বীপের বাসিন্দারা ৮ই মার্চ সকালে খুব নীচু থেকে উড়ে যাওয়া একটি বিমান দেখেছেন বলে দাবি করেছেন৷ বিমানটি সাদা রংয়ের এবং এতে লাল রংয়ের লাইন আঁকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা, যা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সঙ্গে মিলে যায়৷ বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখছেন মালদ্বীপ পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিমান খুঁজছেন কয়েক লাখ মানুষ
এমএইচ৩৭০ উড়ালের এই বিমানটি ইন্টারনেটে খুঁজছেন কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ৷ স্যাটেলাইট সংস্থা ‘ডিজিটালগ্লোব’ জানিয়েছে, বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে তাদের অনলাইন ম্যাপ দেখা হয়েছে ২৫৭ মিলিয়ন বার৷
ছবি: NASA/dpa
আসলে কি কেউ কিছু জানে?
বিমানটি খোঁজার অগ্রগতি সম্পর্কে এক মালয়েশীয় কর্মকর্তা জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই৷’’ বুধবার (১৯.০৩.১৪) পর্যন্ত এটাই বাস্তবতা৷ ফলে বিমান নিখোঁজ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ক্রমশই বাড়ছে, যার কোনটি সত্য কেউ জানে না! (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরের সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করতে এসে নাজিব রাজাক সন্ধানের কাজে সক্রিয় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন৷ এই প্রচেষ্টাকে তিনি মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন অনুসন্ধান অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেন৷ তবে এমন পেশাদারি প্রচেষ্টার ফল অবশ্যই পাওয়া যাবে বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেন৷
গোটা ঘটনাকে ঘিরে মালয়েশিয়ার সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা বন্ধ হচ্ছে না৷ অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া যেভাবে অনুসন্ধানের কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সার্বিকভাবে সেই উদ্যোগের প্রশংসা শোনা যাচ্ছে৷ তবে সমুদ্রের বিশাল এলাকায় অনুসন্ধানের ক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও সে দেশের প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট বলেছেন, এর আগে এত কঠিন কাজ কখনো করতে হয়নি৷
উল্লেখ্য, যে আটটি দেশ এই কঠিন কাজে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থায় তাদের মধ্যে সহযোগিতার এমন মাত্রা দেখা যায় না৷ অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, চীন, জাপান, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী পরস্পরের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিমানটির খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ পার্থ শহর থেকে প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার দূরে প্রায় ২৩৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে এই সব দেশগুলির ৮টি বিমান ও ৯টি জাহাজ৷ বুধবার ব্রিটেনের একটি নিউক্লিয়ার সাবমেরিনও অনুসন্ধানের কাজে যোগ দিয়েছে৷ শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার একটি জাহাজ সেখানে যাচ্ছে, যার মধ্যে বিমানের ব্ল্যাক বক্স শনাক্ত করার বিশেষ যন্ত্র বসানো রয়েছে৷ তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করা সম্ভব হয় নি, যেখানে আরও মনোযোগ দিয়ে খোঁজ চালানো যেতে পারে৷ তাছাড়া আর প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে ব্ল্যাক বক্স সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেবে৷