মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া সম্ভাবনা একেবারেই কম বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ৷ তাই সমুদ্র তলদেশের বেশ খানিকটা এলাকায় এখন তল্লাশি অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট বলেন, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ উড়ালের নিখোঁজ বিমানটির ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ হয়ে এসেছে৷ নিখোঁজ হওয়ার পর গত ৫২ দিন ধরে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলের অনেকটা অংশেই ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে জানান তিনি৷
টনি অ্যাবোট বলেন, ‘‘আমি দুঃখিত যে আকাশ, জল, স্থল সব জায়গা চষেও কোনো ফল হয়নি৷ এমনকি সমুদ্র তলদেশেও ধ্বংসাবশেষের চিহ্নই পাওয়া যায়নি৷ ৪৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে, কিন্তু বিমানটির একটি টুকরোও পাওয়া যায়নি৷ এটা আসলেই হতাশার৷ ৫২ দিনের এই অনুসন্ধানে এটাই বোঝা যায় ধ্বংসাবশেষগুলো আর ভেসে নেই এগুলো তলিয়ে গেছে সমুদ্র গর্ভে৷''
এ কারণে বিমানটির অনুসন্ধানে নতুন মাত্রা যোগ করতে চান অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ৷ আর তা হলো সমুদ্র তলদেশে ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এবার অনুসন্ধান চালাবেন তারা৷ স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে তারা তল্লাশির স্থান নির্ধারণ করেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী৷
তল্লাশিতে সাত-আট মাস লাগবে
অনুসন্ধান কাজে সহযোগিতার জন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকার মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছে এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য এর সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে৷ কেননা ছয় থেকে আট মাস ধরে যদি এই অভিযান চলে, তবে এতে খরচ হবে ৬০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার৷ এখন পর্যন্ত আটটি দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিচ্ছে৷ মালয়েশিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা চোখ রাখছেন কোথায় কোথায় তল্লাশি চালানো উচিত৷ ব্লুফিন-২১ এবং বেশ কয়েকটি জাহাজ এখনও ভারত মহাগরের দক্ষিণে টহল দিয়ে যাচ্ছে৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
টনি অ্যাবোট বলেন, ‘‘বিমান হারিয়ে যাওয়ার এই রহস্য সমাধানে মানুষের পক্ষে যতটা করা সম্ভব, সব ধরনের চেষ্টাই করা হবে৷'' অস্ট্রেলিয়ার মেরিটাইম সেফটি অথরিটির প্রধান আঙ্গুস হিউস্টন বলেছেন, যদি সবকিছু ঠিকভাবে চলে তবে আগামী সাত-আট মাসের মধ্যে সাফল্য আসতে পারে৷
ওবামার মালয়েশিয়া সফর
রবিবার মালয়েশিয়া সফর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ নিখোঁজ বিমানের সন্ধানে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের সহায়তার জন্য প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ সেখানে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি৷ ওবামা বলেন, ‘‘এটা ভীষণ বড় একটা চ্যালেঞ্জ এবং এতে দীর্ঘ সময় লাগবে৷''
২৩৯ জন আরোহী নিয়ে ৮ই মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ উড়ালের এই বিমানটি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়৷ বিভিন্ন স্যাটেলাইটে ধ্বংসাবশেষের চিহ্নের চিত্র ধরা পড়েছে দাবি করা হলেও, পরবর্তীতে সেসব দাবির যথার্থতা মেলেনি৷