মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমান এবং তাতে থাকা ২৩৯ জন আরোহীকে বিমার টাকা দিতে শুরু করেছে জার্মান কোম্পানি ‘আলিয়ান্স’৷ প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউরো পাচ্ছে বিমান কোম্পানি ও আরোহীদের পরিবার৷
বিজ্ঞাপন
সাধারণত আন্তর্জাতিক রুটে চলা সব বিমান এবং তার আরোহীরা বিমার আওতায় থাকেন৷ বিমানের মূল কাঠামোর পাশাপাশি প্রতি সিট হিসেবে ‘প্যাসেঞ্জার লায়াবেলিটি ইন্স্যুরেন্স' করা হয়৷ ফলে কোনো বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে বিমানটির মালিক কর্তৃপক্ষ এবং আরোহীরা – দু'পক্ষই বিমা কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পান৷ তবে দুর্ঘটনায় বিমান আরোহীর কেউ নিহত হলে তাঁর পরিবার টাকা পেয়ে থাকেন বিমার আওতায়৷
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি এবং আরোহীরাও বিমার আওতায় আছেন৷ এয়ারলাইন্সটির মূল বিমাকারক প্রতিষ্ঠান আলিয়ান্স৷ মঙ্গলবার রাতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এমএইচ৩৭০ উড়ালের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিমান এবং সেটির আরোহীদের বিমার আওতায় টাকা দিতে শুরু করেছে তারা৷ চলতি সপ্তাহের মধ্যেই টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া শেষ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে আলিয়ান্স৷
মালয়েশিয়ার বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমানটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি৷ এটি নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা৷ চলুন জানা যাক বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো৷
ছবি: Reuters
কেন নিখোঁজ?
২০১৪ সালের ৮ই মার্চ নিখোঁজ হওয়া এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি নিয়ে এখন যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পাইলট কি নিকটবর্তী কোনো স্থানে বিমানটি অবতরণ করাতে চয়েছিলেন? বিমানটি কি অন্য একটি বিমানের রাডার সিগন্যালের আড়ালে চলতে চয়েছিল? বা এটি কি সত্যিই মালদ্বীপ পর্যন্ত উড়ে গিয়েছিল?
ছবি: Reuters
দ্রুত অবতরণের চেষ্টা
মালয়েশিয়ার এই বিমানটি নিখোঁজের ১২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত কারণগুলোর একটি হচ্ছে, বিমানটির ককপিটে কোনো কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে এবং সেকারণে পাইলট এটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দ্রুত কাছাকাছি কোনো বিমানক্ষেত্রে অবতরণের চেষ্টা করেছিলেন৷ এ জন্যই হয়ত বিমানটি গতিপথ বদলে ছিল৷
ছবি: Reuters
ছিনতাই চেষ্টা
বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ছিনতাইকে এখনো উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না৷ অনেকে সন্দেহ করছেন, বিমানের পাইলট বা ছিনতাইকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানের কমিউনিকেশন সিস্টেমে ভিন্ন একটি ঠিকানা প্রবেশ করিয়েছিলেন৷ ফলে উড়ালের এক পর্যায়ের বিমানটি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়৷ অনেকের সঙ্গে মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকও এমন ধারণা করছেন৷
ছবি: Reuters
অন্য বিমানের আড়ালে চলার চেষ্টা
এ ধারণাটি অবশ্য হলিউড ছবির জন্য চমৎকার প্লট হতে পারে৷ কেউ কেউ মনে করছেন, এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের বেশ কাছাকাছি থেকে কিছুক্ষণ উড়েছিল, যাতে করে সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের রাডার সিস্টেমের ছায়াতলে অবস্থান করে নিজেদের পরিচয় কিছু সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখা যায়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
উল্কার আঘাতে বাষ্পীভূত
মালয়েশিয়ার এই বিমানটিতে থাকা ২৩৯ জন আরোহীর দুই তৃতীয়াংশই চীনা নাগরিক৷ চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে যে, উল্কার আঘাতে বিমানটি ধ্বংস এবং বাষ্পীভূত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
মালদ্বীপ থেকে দেখা গেছে বিমানটি
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের একটি ছোট্ট দ্বীপের বাসিন্দারা ৮ই মার্চ সকালে খুব নীচু থেকে উড়ে যাওয়া একটি বিমান দেখেছেন বলে দাবি করেছেন৷ বিমানটি সাদা রংয়ের এবং এতে লাল রংয়ের লাইন আঁকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা, যা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সঙ্গে মিলে যায়৷ বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখছেন মালদ্বীপ পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিমান খুঁজছেন কয়েক লাখ মানুষ
এমএইচ৩৭০ উড়ালের এই বিমানটি ইন্টারনেটে খুঁজছেন কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ৷ স্যাটেলাইট সংস্থা ‘ডিজিটালগ্লোব’ জানিয়েছে, বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে তাদের অনলাইন ম্যাপ দেখা হয়েছে ২৫৭ মিলিয়ন বার৷
ছবি: NASA/dpa
আসলে কি কেউ কিছু জানে?
বিমানটি খোঁজার অগ্রগতি সম্পর্কে এক মালয়েশীয় কর্মকর্তা জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই৷’’ বুধবার (১৯.০৩.১৪) পর্যন্ত এটাই বাস্তবতা৷ ফলে বিমান নিখোঁজ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ক্রমশই বাড়ছে, যার কোনটি সত্য কেউ জানে না! (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
বলা বাহুল্য, অর্থনীতি বিষয়ক জার্মান পত্রিকা ‘হান্ডেল্সব্লাট'-এর আগে বিমার টাকা পরিশোধের খবর প্রকাশ করে৷ এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেছে আলিয়ান্স৷ পত্রিকাটির বুধবারের সংস্করণে জানানো হয়েছে, বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমান এবং তাতে থাকা ২৩৯ জন আরোহীর পরিবারের জন্য ১০০ মিলিয়ন ইউরোর মতো দেবে জার্মান এই বিমা কোম্পানি৷
অবশ্য মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের মূল বিমাকারক আলিয়ান্স হলেও অন্যান্য বিমা কোম্পানিও এক্ষেত্রে সম্পৃক্ত রয়েছে৷ তাই অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে আলিয়ান্সকে সহায়তা করছে অন্যান্য কোম্পানি৷ এই সহায়তার পরিমাণ সম্পর্কে কোনো তথ্য জানায়নি আলিয়ান্স৷ এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বর্তমান ‘মার্কেট প্র্যাকটিস' এবং বিমানটি নিখোঁজ থাকার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই অর্থ ছাড়া হচ্ছে৷
উল্লেখ্য, কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে ৮ই মার্চ নিখোঁজ হয় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমানটি৷ মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে, ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানটির গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও কয়েক ঘণ্টা উড়ালটি আকাশে ওড়ে৷ বিমানটির খোঁজে এখন ২৬টি দেশ জলে এবং স্থলে তল্লাশি চালাচ্ছে৷ তবে বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সঠিক কারণ এখনো শনাক্ত করা যায়নি৷